Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, সোমবার   ২১ এপ্রিল ২০২৫,   বৈশাখ ৮ ১৪৩২

আই নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:৪৬, ২৭ জুলাই ২০২৩

নজিরবিহীন মুদ্রাস্ফীতির লাগাম কীভাবে টানলো যুক্তরাষ্ট্র?

করোনাভাইরাস মহামারি আর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় যুক্তরাষ্ট্রে মুদ্রাস্ফীতি যত দ্রুত বেড়েছিল, ঠিক সেভাবেই কমেছে। টানা চার দশকের মধ্যে দেশটির মুদ্রাস্ফীতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানোর পর গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে সেটি ৯ দশমিক এক শতাংশ থেকে নেমে তিন শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট গ্রুপ অব সেভেনের (জি-৭) মধ্যে সবার আগে জীবনযাত্রার ব্যয় কমিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আগে জি-৭ ভূক্ত দেশের মধ্যে জীবনযাত্রার ব্যয় সর্বোচ্চ ছিল যুক্তরাষ্ট্রে। বাকি ধনী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি, কানাডা এবং জাপান।

ওয়েন্ডি এডেলবার্গ যিনি হ্যামিলটন প্রজেক্টের পরিচালক এবং ব্রুকিংস ইন্সটিটিউট নামে একটি থিংক ট্যাংক প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র ফেলো, তিনি বলেন, ‘মুদ্রাস্ফীতি কমাতে যুক্তরাষ্ট্রের সফলতাকে ত্বরান্বিত করেছে জ্বালানির দাম।’

ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব ইউরোপের তুলনায় আমেরিকার ওপর কিছুটা ভিন্নভাবে পড়েছিল। রাশিয়ার সরাসরি সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল থাকার কারণে ইউরোপীয় দেশগুলোতে এই প্রভাব গুরুতর ছিল।

ধারণা করা হচ্ছে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশটি মুদ্রাস্ফীতির চাপ বেশ ভালোভাবেই সামাল দিতে পেরেছে। কিন্তু বাস্তবে কাজটি যত সহজ মনে হচ্ছে, তার চেয়ে অনেক জটিল ছিল বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

বিবিসি মুন্ডোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এডেলবার্গ বলেন, জ্বালানি ও খাদ্যমূল্য ছাড়া, মুদ্রাস্ফীতির মূল বা অন্তর্নিহিত কারণগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে যেসব জটিলতা দেখা যাচ্ছিল, তা নিয়ে কিছু দিন আগ পর্যন্ত আমরা খুব হতাশ এবং উদ্বিঘ্ন ছিলাম।

‘এখন এটা যৌক্তিক বলে প্রতীয়মান হচ্ছে,’ বলেন তিনি।

• সুদহার বৃদ্ধি

যুক্তরাষ্ট্রে পণ্যের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে সেসব পণ্যের দামও তরতরিয়ে বাড়ছিল। মনে হচ্ছিল যেন প্রতি সপ্তাহেই একটা করে বড় দিনের উৎসব হচ্ছে, বলছেন বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি সেই চাহিদা কিছুটা কমেছে, যাকে মনে করা হচ্ছে চাহিদার তীব্রগতির ট্রেনটি এখন নিম্নমুখী বাঁক নিচ্ছে।

এর সাথে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সমতুল্য প্রতিষ্ঠান মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ বা ফেডের আর্থিক নীতির বড় সম্পর্ক রয়েছে। সংস্থাটি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের জন্য সুদের হার ক্রমাগত ব্যাপকভাবে বাড়িয়েছে।

পিটারসন ইন্সটিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনোমিক্স অ্যান্ড ব্লুমবার্গ ইকোনোমিক্সের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ডেভিড উইলকক্স বলেছেন, ফেড মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য অস্বাভাবিক মাত্রায় আগ্রাসীভাবে সুদের হার বাড়িয়েছে। এর ফলে বাড়ি বা গাড়ি কেনার ঋণ গ্রহণ বা নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগের মতো বিষয়গুলো বেশ ব্যয়বহুল হয়ে গেছে। এটি মুদ্রাস্ফীতির সর্পিল রেখার ক্রমাগত বৃদ্ধি ঠেকাতে ব্যয়ের ওপর এক ধরনের ‘ব্রেক’ হিসাবে কাজ করেছে।

মুদ্রাস্ফীতির এই ঘোড়া যদি খুব দ্রুতগামী হয়, তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার গতি টেনে ধরার জন্য এরকমই লাগামের ব্যবস্থা করে। এ নীতি একই সময়ে লাতিন আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে বহুবার ব্যবহার করা হয়েছে।

• হরেক রকম পণ্য

বিবিসিকে উইলকক্স বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে জীবনযাত্রার উচ্চ ব্যয় হ্রাসের পেছনে আরেকটি বিষয় প্রভাব ফেলেছে; তা হচ্ছে কোভিড মহামারির কারণে সৃষ্ট বিপর্যয়ের পরে বাণিজ্যিকভাবে সহজলভ্য পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা হয়েছে।

এ কারণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সাপ্লাই চেইনে কিছু পণ্যের সংকট ও আকাশচুম্বী পরিবহন খরচের কারণে যে ‘কন্টেইনার সংকট’ তৈরি হয়েছিল, সে সমস্যার সমাধান হওয়া শুরু হয়। এভাবে পণ্যের একটি পর্যাপ্ত সরবরাহ মূল্যস্ফীতির চাপ কমায় এবং স্বাস্থ্য সংকট থেকে উদ্ভূত বাণিজ্যিক বিশৃঙ্খলা দূর করতে সহায়তা করে।

সবকিছু যখন ঠিক হয়ে যাচ্ছিল, ঠিক তখনই ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হয় এবং এটি মুদ্রাস্ফীতির আগুনে ঘি ঢালে। রাশিয়ার জ্বালানির ওপর কম নির্ভরতা থাকার কারণে এটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সহায়ক হয় এবং যদিও যুদ্ধ শুরু হওয়ার কয়েক মাস পরে মুদ্রাস্ফীতি আকাশচুম্বী হয়েছিল, তারপরও সরকারের ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করার পদক্ষেপ এবং ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক মুদ্রাস্ফীতির গতিতে ব্রেক কষার কারণে তা দ্রুতই কমে আসে।

তবে পরিস্থিতি এখনো পুরোপুরি শান্ত হয়নি। অর্থনীতিবিদ উইলকক্স বলেন, আমি মনে করি না যে আমরা পুরোপুরি মুদ্রাস্ফীতি এবং অর্থনীতির সাধারণ অবস্থায় ফিরে এসেছি।

• যুক্তরাষ্ট্রে কি মন্দা দেখা দিতে পারে?

অর্থনীতিবিদরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হার ব্যাপকভাবে বাড়ানো হলে তা অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। সাধারণত সুদের উচ্চ হার অর্থনৈতিক বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে এবং বেকারত্ব বাড়ায়।

তবে আশ্চর্যজনকভাবে, সেটি এখনও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে ঘটেনি। কর্মসংস্থান শক্তিশালী রয়েছে এবং আপাতত নিকট ভবিষ্যতে মন্দার কোনও আশঙ্কা নেই। অর্থনীতিবিদদের জন্য এ পরিস্থিতি একটি অমীমাংসিত রহস্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তবে অর্থনীতিবিদ উইলকক্স বলছেন, গল্প এখনও শেষ হয়নি, বরং এটা টিভি সিরিজের মতো ব্যাপার। যার মাত্র প্রথম সিজনটা আমরা দেখেছি। আমরা জানি না, শেষ দৃশ্য লেখক কীভাবে পরিকল্পনা করছেন।

এছাড়া বর্তমান পরিস্থিতিতে শ্রম বাজারের এমন ভালো অবস্থাও খুবই অদ্ভূত বলে মনে হচ্ছে। এডেলবার্গের মতে, শ্রমিকের চাহিদা কম হওয়ার প্রথম লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করেছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য গুরুতর প্রভাব ফেলবে এমন মন্দার মুখে হঠাৎ করে পড়ার বদলে, বরং মার্কিন অর্থনীতির গতি ধীরে ধীরে নিজের দিকে নামবে।

‘আমি মনে করি, যদি তাই হয়, তাহলে হালকা মন্দা পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে,’ বলছেন এই অর্থনীতিবিদ। আর তার ফলে হয়ত দেশটি একটি গভীর অর্থনৈতিক সংকোচন বা উচ্চ মাত্রায় বেকারত্ব এড়াতে পারবে।

সূত্রঃ বিবিসি বাংলা 

আইনিউজ/ইউএ 

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়