মো. রওশান উজ্জামান রনি
আপডেট: ০৪:০৬, ২৯ জানুয়ারি ২০২৪
কানাডায় ভিজিট ভিসায় স্থায়ী হওয়ার সহজ উপায়
canada 2024 । ছবি আই নিউজ
কানাডায় ভিজিট বিসায় স্থায়ীভাবে বসবাসের শ্রেষ্ঠ একটা সময় হচ্ছে ২০২৪ সাল। যেহেতু এখন ভিসা রিসিও অনেক ভালো আপনারা অন্য যে কোনও সময়ের তুলনায় খুব সহজেই ভিজিট ভিসা পেয়ে যাচ্ছেন। তাই যদি আপনারা সঠিক প্ল্যান এর মাধ্যমে আগান তাহলে চাইলে কানাডায় এসে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারবেন।
আপনারা জানেন যারা ভিজিট ভিসায় কানাডা যায় তারা একটানা ছয় মাসের বেশি অবস্থান করতে পারেন না। বাধ্যতামূলক ত্যাগ করতে হয়। পরবর্তীতে আবার আসতে হয়। আর তারা কিন্তু কাজের অনুমতি পান না। তাই কিভাবে আপনারা কানাডায় এসে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারবেন, কাজ করতে পারবেন এ নিয়ে যতগুলো উপায় আছে সবগুলো আজকে বিস্তারিত আলোচনা করব। পাশাপাশি কী কী ডকুমেন্টস আপনারা কানাডায় নিয়ে আসবেন সেগুলো নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
LMIA জব কি? কাজ করতে হলে আপনাদেরকে একটা ওয়ার্ক পারমিট ম্যানেজ করতে হবে। ওয়ার্ক পারমিট ম্যানেজ করার প্রথম যে উপায় সেটা হচ্ছে LMIA একটা জব ম্যানেজ করা। যারা জানেন না LMIA কি? LMIA এর মানে হচ্ছে লেবার মার্কেট ইম্প্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট। অর্থাৎ কানাডার কোন প্রতিষ্ঠান যদি তাদের যোগ্য লোককে খুজে না পায় তাহলে সরকারের সাথে আলোচনা করে তাদের যোগ্য লোকটাকে ভিসা দিয়ে কানাডাতে নিয়ে আসে। এই জব গুলো কে বলা হয় LMIA জব। কানাডার সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত যদি কেউ ভিজিট ভিসায় কানাডায় এসে LMIA বেস্ট একটা জব ম্যানেজ করতে পারে, তাহলে সে ভিজিট ভিসাটাকে কনভার্ট করে ওয়ার্ক পারমিটে নিয়ে যেতে পারবে এবং সে কাজ করতে পারবে।
LMIA বেস্ট জব আপনারা কীভাবে খুঁজে পাবেন? প্রথমত আপনার যে সব যোগ্যতা আছে এই রিলেটেড জব আপনারা কানাডার বিভিন্ন জব মার্কেটে খুজে অ্যাপ্লাই করবেন। অবশ্যই সেই জব গুলো LMIA হতে হবে। অনলাইনের পাশাপাশি আপনারা সরাসরিও বিভিন্ন কোম্পানির অফিসে গিয়ে আপনাদের সার্টিফিকেট জব এক্সপেরিয়েন্স লেটার এগুলো দেখাতে পারেন। অনেকগুলোতে যদি আপনারা দেখান আপনাদের ভাগ্য ভালো থাকলে তারা আপনাকে ইন্টারভিউতে ডাকবে এবং আপনাদেরকে নিয়ে নিতে পারে। গত কয়েকদিন আগে একটা ইউটিউবে ভিডিওতে আপনারা হয়তো দেখেছেন। সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশের এক ভাই কনস্ট্রাকশনের কাজ করত অনেকদিন ধরে। তার যে কাজের অভিজ্ঞতা আছে সেটা সে নিয়ে কানাডায় ভিজিট ভিসায় এসে বিভিন্ন অফিসে এসে ইন্টারভিউ দিয়েছে। তার সার্টিফিকেট এবং জব এক্সপেরিয়েন্স দেখিয়েছে। একটা কম্পানি তাকে হায়ার করে ফেলেছে ভ্যানকুভারে।
LMIA জব কত টাকায় বিক্রি হয়? অনেকেই বলে থাকেন, যে LMIA জব কেনাবেচা হয় কিনা। কানাডার অনেক জব এজেন্সি এবং ইমিগ্রেশন নিয়ে কাজ করে এরকম ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান LMIA জব পেতে আপনাকে সাহায্য করবে এটা সত্য। তাদের সার্ভিস ফি $30,000 বা তার চেয়েও বেশি। প্রথমে তারা 30 পার্সেন্টের মতো টাকা নিয়ে আপনার কাজটা শুরু করবে। কয়েক মাস পর যখন আপনার ওয়ার্ক পারমিট বের হবে বাকি টাকাটা আপনাকে দিতে হবে। এটা সত্য যে, বিনা লাভে কেউ আপনাকে কোনও কাজ করে দেবে না। কিন্তু এই যে ফ্রিটা নিচ্ছে সেটাও অনেক বেশি বলে আমার কাছে মনে হয়। এই যে টাকাগুলো দিচ্ছে এই টাকাগুলো দিয়ে সবাই যে উপকৃত হচ্ছে তা না। অনেকে আবার প্রতারিত হচ্ছে। LMIA জব সব কাজের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না।
Caregivers জব কি? আপনারা যদি কেয়ারগিভিং কাজের অভিজ্ঞতা থাকে। যেমন বাসাবাড়িতে কাজ করা গৃহস্থালি বা কোনও বাচ্চা বা বৃদ্ধকে রাখা। এই রিলেটেড কোন কাজের অভিজ্ঞতা যদি সার্টিফিকেট আপনাদের থাকে, প্রফেশনাল লেভেলে। আপনাদের যদি কোনও নার্সিং রিলেটেড কোনো কোর্স করা থাকে বা কোন সার্টিফিকেট থাকে তাহলে এগুলো একসাথে করে আপনারা কানাডাতে এসে বিভিন্ন কেয়ারগিভিং রিলেটেড যে অফিস আছে তাদের সাথে কথা বলে আপনারা কিন্তু দেখতে পারেন৷ অনেক সময় দেখা গেছে যে তারা হায়ার করতে পারে। Caregivers জবের একটা সুবিধা হচ্ছে এই জবে LMIA লাগে না। যে কন একটা জব পেলেই ওয়ার্ক পারমিটে কনভারট করতে পারবেন।
কানাডায় ভিজিট ভিসায় স্থায়ী হতে চাইলে কানাডা আসার আগে আপনারা যে সমস্ত ডকুমেন্টস গুলো সাথে নিয়ে যাবেন।
প্রথমত আপনারা চেষ্টা করবেন ইংরেজি ভাষার জন্য আই এল এস পরীক্ষা দিতে। অন্তত আই এল এস স্কোর ফাইভ যেনো থাকে। তবে সব জবে আই এল এস চাবে তা না। কোন কোন কোম্পানিতে হয়তো আই এল এস বাধ্যতামূলক নেই। তবে আপনারা কানাডাতে এক বছর জব করার পর যখন পি আর এর জন্য আবেদন করবেন তখন কিন্তু আপনাদেরকে মিনিমাম আই এল এস ফাইভ রাখতে হবে। এরপর ইসিএ লাগবে। এটার মানে হচ্ছে আপনি বাংলাদেশে বা পৃথিবীর অন্য জায়গায় যে লেখাপড়া করেছেন তার সাথে কানাডার যে লেখাপড়া এটার মান কেমন এটা শো করতে হবে সার্টিফিকেটটা। এর পরে আসতেছে আপনার পূর্ব অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট। আপনি যে জব করেছিলেন ফিল্ডে তার একটা সার্টিফিকেট নিয়ে আসবেন। এর পরে কানাডিয়ান স্টাইলে সি বি এবং কাভার লেটার তৈরি করে নিয়ে আসবেন। যেখানে আপনার এই রিলেটেড কাজের বর্ণনা এবং এক্সপেরিয়েন্স থাকবে। কানাডিয়ান স্টাইলে হতে হবে।
কানাডায় ভিজিট ভিসায় এসে সবচেয়ে সহজে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পেতে চাইলে আপনাদেরকে লেখাপড়া করতে হবে। এর জন্য আপনাদের আসলে আই এল এস বাধ্যতামূলক না। যদি আপনাদের আই এল এস থাকে তাহলে আপনারা সরাসরি একটা ভার্সিটি বা কলেজে অফার লেটারের জন্য অ্যাপ্লাই করবেন। যদি আই এল এস না থাকে তাহলে অনেক কলেজ আছে ইউনিভার্সিটি আছে যেখানে ল্যাঙ্গোয়েজ কোর্স আছে। আপনারা চার মাস বা আট মাস ল্যাঙ্গুয়েজ শেখার পর ইংরেজি ভাষা এর পর আপনারা মেন কোর্সে যাবেন। কারণ ইংরেজি ভাষাটা যদি আপনারা না জানেন আপনারা কিন্তু লাইফে অনেক পিছিয়ে থাকবেন। বিশেষ করে কানাডার মতো দেশে। আর যাদের বাংলাদেশে ব্যাচেলর করা আছে কোন ইউনিভার্সিটি থেকে এবং সেখানে ইংরেজি ভাষায় লেখাপড়া করানো হয়েছে৷ অর্থাৎ মিডিয়াম অফ ইনস্ট্রাকশন ইংলিশ তাদের কিন্তু ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্সে ভর্তি হওয়া লাগবে না আই এল এস দরকার নেই। অনেক কলেজ আছে ইউনিভার্সিটি আছে যারা এই মিডিয়াম অফ ইনস্ট্রাকশন দেখে আপনাকে অফার লেটার দিবে।
কানাডায় পাবলিক কলেজ বা ইউনিভার্সিটির টিউশন ফি কিন্তু অনেক বেশি। যাদের আপনাদের টাকা পয়সার সমস্যা আছে কিন্তু লেখাপড়া করতে চাচ্ছেন তাদেরকে বলব আপনারা প্রাইভেট কলেজ বেছে নেবেন। কানাডাতে বিভিন্ন শহরে প্রাইভেট কলেজ আছে যেগুলোতে লেখাপড়ার চাপ অনেক কম এবং টিউশন ফি কিন্তু অনেক কম। আপনারা এ সব কলেজ খুঁজে বের করে অ্যাপ্লাই করবেন। আপনারা সহজে সেখান থেকে অফার লেটার পেয়ে যাবেন। অফার লেটার পাওয়ার পর আপনি যদি পর্যাপ্ত টাকা পয়সা ব্যাঙ্কের দেখাতে পারেন। আপনি কিন্তু স্টাডি পারমিটের জন্য অ্যাপ্লাই করলে অনেক ভাল সম্ভাবনা আছে আপনি স্টাডি পারমিট পেয়ে যাবেন কানাডাতে বসেই। আপনার যদি ডিপেন্ডেন্ট থাকে অর্থাৎ কোন স্ত্রী বা স্বামী থাকে সে কিন্তু ফুল টাইম ওয়ার্ক পারমিট পাচ্ছে। উনি ফুলটাইম কাজ করতে পারবে। আপনি পার্টটাইম ২০ ঘণ্টা কাজ করলেন। লেখাপড়া শেষে আপনি তিন বছরের ওয়ার্ক পারমিট পেলেন। এক বছর যখন আপনি জব করবেন এরপর এই অভিজ্ঞতাটা দেখিয়ে আপনি পরিবারসহ কানাডায় স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পাবেন। এটা খুবই সহজ একটা উপায়। আপনারা চাইলে এই ভাবে কানাডায় স্থায়ী বসবাসের রাস্তা বের করতে পারেন। কলেজ বা ভার্সিটিতে অ্যাপ্লাই করতে কী কী ডকুমেন্টস লাগে সেগুলো আপনারা তাদের ওয়েবসাইটে পাবেন।
আরও একটা অপসন আছে সেটা হচ্ছে এসাইলেম। এটা হচ্ছে মূলত যারা ভিকটিম তাদেরকে কানাডা আশ্রয় দেবে যদি তারা সত্যিকারের ভিকটিম হয়। তাদের পর্যাপ্ত ডকুমেন্টস সাপোর্ট তারা দিতে পারে। একটা সময় ছিল এটা প্রসেসটা অনেক সহজ ছিল। বর্তমানে প্রচুর ভিজিটর এসে এসাইলেম ক্লেম করায় অনেক বেশি ফাইল জমা হয়ে গেছে। অনেক লম্বা একটা প্রসেস হয়ে গেছে। যারা সত্যিকারের ভিকটিম তারাও আসলে অ্যাপ্লাই করে বছরের পর বছর এখন অপেক্ষা করতে হচ্ছে। আমি বলব, এসাইলেম সংক্রান্ত কোনো তথ্য যদি আপনাদের জানতে হয় তাহলে আপনারা কোনো ইমিগ্রেশন লয়ার বা হচ্ছে আপনারা আর সি সি সাথে যোগাযোগ করবেন। এই ধরনের অনেক ভিডিও হচ্ছে আপনারা ইউটিউবে পাবেন। তবে সবার ভিডিওগুলো বিশ্বাস না করে কোন একজন অথেন্টিক পার্সন আর সি সি বা ইমিগ্রেশন লয়ার তাদের সাথে কথা বলে পুরো প্রসেসটা জেনে নিবেন।
আই নিউজ/আর
আরও পড়ুন
- ডিভি লটারি আবেদনের নিয়ম
- ইউরোপ যাওয়ার আগে যা জানা প্রয়োজন
- লন্ডনের ওয়ার্ক পারমিট ভিসা তথ্য ২০২৩
- গ্রিসে নিখোঁজের দেড় মাসেও খোঁজ মিলেনি হবিগঞ্জের ওয়াহিদ আলীর
- অস্ট্রেলিয়া ওয়ার্ক ভিসা ২০২৪ আবেদন করবেন যেভাবে
- বিনা খরচে জার্মানি ওয়ার্ক ভিসা ২৬ হাজার কর্মী নিচ্ছে জার্মানি
- মৌলভীবাজারের জুনেদ পেলেন ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের সম্মাননা
- বিদেশে বসে ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করা হচ্ছে: আমিরাতে তথ্যমন্ত্রী
- ভুয়া বিয়ের নিমন্ত্রণে কানাডায় যাওয়ার পথে আটক ৪২ বাংলাদেশি
- স্বচ্ছতা আনতে উন্মুক্ত লটারীর মাধ্যমে ভাতা কার্ডের তালিকা তৈরি