হেলাল আহমেদ
আপডেট: ১৮:২৪, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২২
দামী নাকি কমদামী কোন সিগারেটে ক্ষতি বেশি?
ধূপপান ছাড়লে মাত্র আট ঘণ্টার মধ্যে শ্বাসকষ্টের সমস্যা কমতে শুরু করে
বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস-২০২২ উপলক্ষে মানস (মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা)-এর এক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে বিশ্বে ১১০ কোটি ধূমপায়ী রয়েছেন। এর মধ্যে সবাই যে একই ব্রান্ডের সিগারেট পান করেন তা কিন্তু নয়। কেউ কেউ আছেন যারা বেশি দাম দিয়ে সিগারেট কিনেন আবার কেউ স্বল্পমূল্যের নিম্ন মানের সিগারেট কিনে ধূমপান করেন। কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা আসলে কোন সিগারেটে ক্ষতি বেশি? দামি সিগারেট নাকি কমদামী সিগারেটে।
আজকের আইনিউজের প্রতিবেদনে কথা বলবো কমদামী সিগারেট এবং দামী সিগারেটে কোনটায় ক্ষতির পরিমাণ কতোটুকু।
প্রথমেই বলা রাখা ভালো সিগারেটে লাভ-ক্ষতি নির্ভর করে সিগারেটে কী পরিমাণ তামাক বা নিকোটিন আছে তার উপর। আমাদের দেশের মত অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে যে সব সিগারেট বিক্রয় করা হয় তাতে তামাকজাত উপাদান অনেক বেশি থাকার ফলে ফলে ঐসব অঞ্চলে ধূমপানজনিত ক্ষতি বা রোগসমূহ অনেক বেশি হয়।
দামী সিগারেটে নিকোটিন কম থাকে!
আমাদের দেশে যে সকল সিগারেট সাধারণত পাওয়া যায় তাদের অধিকাংশই দামে সস্তা থাকে তাই নিকোটিন তথা তামাকের গুণ-মান নির্ধারিত থাকে না। কিন্তু যেসব সিগারেট তুলনামূলক দামী সেগুলো একটু হালকা বা লাইট হয়ে থাকে। অর্থাৎত,এসব সিগারেটে নিকোটিনের পরিমাণ কম থাকে। তাই ক্ষতির পরিমান একটু হলেও কম হওয়ার সম্ভাবনা অবান্তর নয়।
কিন্তু ক্ষতি কম হলেও তো ক্ষতি। এমন নয় যে, দামী সিগারেট পান করলে আপনার ফুসফুস আক্রান্ত হবে না। বিশ্বে অনেক কোটিপতিদের কথা চিন্তা করুন। তারা কিন্তু সব দামী দামী সিগারেট পান করেন। তবু তাদের ফুসফুসেও তামাকজনিত কারণে সমস্যা দেখা দেয়।
দীর্ঘসময় বসে থাকা কতোখানি ক্ষতিকর?
উন্নত বিশ্বে তামাকের মান-দাম দুটোই বেশি
উন্নতদেশে আমাদের দেশের তুলনায় সিগারেট বা তামাকজাত দ্রব্যের দাম অনেক বেশি হয়। এর কারণ, বিদেশী তামাক বা সিগারেটের মান। সাথে তাদের কোন সিগারেটে কি পরিমান নিকোটিন থাকে তা উল্লেখ করে দেওয়া বাধ্যতামূলক যা আমাদের দেশে সাধারণত আপনি আপনার নিকোটিনের প্রয়োজন তথা চাহিদা অনুসারে ধুমপান করতে পারবেন। যদিও সেখানে দামের ব্যাপারটা গৌণ কারন আমাদের দেশের তুলনায় উন্নতদেশ অর্থাৎ বিদেশে সব সিগারেটের দামই বেশি।
সিগারেট তামাক পাতা থেকেই তৈরি করা হয়। তামাক পাতা বা তামাকের নিয়মিত ব্যবহারের ফলে মানব স্বাস্থ্যের উপর এর যে ক্ষতিকর কাজ রয়েছে সেগুলোকেই বুঝায়। প্রাথমিকভাবে গবেষণা মূলত তামাক ধূমপান বিষয়ের উপর করা হয়েছে। ১৯৫০ সালে Richard Doll নামক বিজ্ঞানী ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে একটি গবেষণা প্রকাশ করেন যেখানে তিনি ধূমপান ও ফুসফুস ক্যান্সারের একটি সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন।
তামাক নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাপত্র
এর ঠিক চার বছর পর ১৯৫৪ সালে ব্রিটিশ ডক্টরস স্টাডি নামক আরেকটি গবেষণা প্রকাশ পত্র করা হয় যা চল্লিশ হাজার ডাক্তারের কুড়ি বছর ধরে করা গবেষণার ফলাফল। সেখানে ধূমপানের সাথে ফুসফুসের সম্পর্কের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয় যার উপর ভিত্তি করে সরকার ঘোষণা করে যে ধূমপানের ফলে ফুসফুস ক্যান্সারের হার বৃদ্ধি পায়।
যেসমস্ত বস্তুর ব্যবহার বাদ দিলে অকাল মৃত্যু ঝুঁকি হ্রাস করা যায় তামাক বা সিগারেট এর মধ্যে শীর্ষে। যতো লোক সিগারেট বা ধুমপান করে তার প্রায় অর্ধেকই এর ক্ষতিকর প্রভাবে মৃত্যুবরণ করে।
বেশিরভাগ লোকই জানেনা, তেঁতুলের ইংরেজি কী?
বাংলাদেশে কমেছে ধূমপায়ীর সংখ্যা
মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা-র প্রতিবেদন বলছে, দেশে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে ৮ শতাংশ ধূমপায়ী কমেছে। ২০০৯ সালে ৪৩ দশমিক ৩ থেকে ৮ শতাংশ কমে বর্তমানে ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশে নেমেছে।
বিশ্বের ১১০ কোটি ধূমপায়ীর মধ্যে ৮০ কোটির অবস্থানই নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশ। অর্থাৎ দরিদ্র দেশেই ধূমপায়ী মানুষের সংখ্যা বেশি।
গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে-২০১৭ এর তথ্য বলছে- বাংলাদেশে ১৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে ৩৫.৩ শতাংশ (৩ কোটি ৭৮ লাখ) মানুষ তামাকজাত দ্রব্য সেবন করে। ২০০৯ সালে তামাকসেবী ছিল ৪৩.৩ শতাংশ। তামাক সেবনের শতকরা হার নিম্নগামী হয়েছে, যা আশার কথা। পক্ষান্তরে, এমন কিছু অসামঞ্জস্যতা ও প্রতিবন্ধকতা রয়েছে যা তামাক নিয়ন্ত্রণে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে।
ইলেক্ট্রিক সিগারেট: বাড়ছে ই-সিগারেটের চাহিদা
দেশে অনেকেই তামাকজাত সিগারেটের পরিবর্তে বেছে নিচ্ছেন ই-সিগারেট বা চার্জেবল ইলেক্ট্রিক সিগারেট। অনেকেই যদিও বলছেন ই-সিগারেটে ফুসফুসের ক্ষতির ঝুঁকি কম থাকে; তবে চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে তামাকজাত সিগারেট এবং ই-সিগারেট দুটোই সমানভাবে ক্ষতিকর।
অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে জানান অরুণ রতন চৌধুরী। বাংলাদেশে প্রতি বছর আড়াই লাখ মানুষ নতুন করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন।
ধূমপান ছাড়লে মিলে নগদ উপকারিতা
ধূপপান ছাড়লে মাত্র আট ঘণ্টার মধ্যেি শ্বাসকষ্টের সমস্যা কমতে শুরু করে। এক সপ্তাহে অনেক কমে যায়। আর পাঁচ বছরের মধ্যে ২৫টি রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
তাছাড়া, আগের তুলনায় ফুসফুস শতকরা ৩০ ভাগ বেশি অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে এবং কাশিভাবও কমতে শুরু করে। ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার এক বছর, ১০ বছর বা ১৫ বছর পর: ধূমপান ছেড়ে দেয়ার এক বছর পর থেকেই হৃদরোগের ঝুঁকি অর্ধেক কমে যায়।
জেনে নিন আপনি সামাজিক মাধ্যমে আসক্তি কি না
দশ বছর ধূমপান না করলে একজন ধূমপায়ীর ফুসফুসের ক্যানসারে মারা যাওয়ার ঝুঁকির তুলনায় অর্ধেক কমে যায়।
ধূমপান ছাড়ার উপায়
নোনতা চিপস, বিস্কিট বা জিভে সামান্য লবণ লাগাতে। নিলেও সিগারেট খাওয়ার ইচ্ছা চলে যাবে। নেশা কমবে। সিগারেট খেতে ইচ্ছা হলে মুখে এক কুচি আদা রেখে চিবোতে থাকুন। অবিলম্বে সিগারেট খাওয়ার ইচ্ছা চলে যাবে।
নিকোটিনের মতো টক্সিনের সঙ্গে লড়াই করতে প্রতিদিন ভিটামিন এ, সি ও ই সমৃদ্ধ ক্যাপসুল অথবা খাবার খান। এতে সিগারেটের নেশা কমে যাবে।
সিগারেটের নেশা ছাড়াতে ওটস খেতে পারেন। ২ কাপ ফোটানো পানির সঙ্গে ১ চামচ ওটস মিশিয়ে সারা রাত রেখে দিন। পর দিন সকালে পুনরায় ১০ মিনিট ফুটিয়ে নিয়ে প্রতিটি খাবারের পর অল্প করে খেতে থাকুন। এতে শরীর থেকে নিকোটিন বেরিয়ে যাবে। সেই সঙ্গে কমে যাবে সিগারেট খাওয়ার ইচ্ছাও।
আইনিউজ/এইচএ
আইনিউজে আরও পড়ুন-
- ২০ হাজার গানের জনক গাজী মাজহারুল আনোয়ার ও তার কীর্তি
- প্রেম-ভালোবাসার ১০ উপকারিতা : শ্রেষ্ঠ কিছু প্রেমের গল্প
- কোমরে বাশি, হাতে তালি — গানই মদিনা ভাই’র জীবন-মরণ
দেখুন আইনিউজের ভিডিও গ্যালারি
সৌদি আরবে মেয়েকে নির্যাতনের খবরে মায়ের আহাজারি-কান্না
গ্রিসের বস্তিতে বাংলাদেশীদের মানবেতর জীবন, অধিকাংশই সিলেটি
গ্রিসে পাঁচ বছরের ভিসা পাবে বাংলাদেশিরা
- জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কোনটি ভালো?
- দামী নাকি কমদামী কোন সিগারেটে ক্ষতি বেশি?
- ডিম ভাজি না সেদ্ধ, কোনটা বেশি উপকারী?
- প্রোটিন জাতীয় খাবার কোন খাদ্যে বেশি-কোন খাদ্যে কম?
- হার্টের ব্লক খোলার সবচেয়ে কার্যকরী উপায় রিং বা স্ট্যান্ট
- বডিবিল্ডিং: সাপ্লিমেন্টের গুরুত্ব এবং যেভাবে শুরু করবেন
- কানের ভেতর হঠাৎ পোকা বা কিছু ঢুকে গেলে
- বাচ্চাদের গুড়াকৃমি প্রতিরোধে কী খাওয়াবেন?
- ওসিডি কী? জেনে নিন লক্ষণ
- ফার্মেসি রাত ১২টায় বন্ধের সিদ্ধান্তে বিস্ময় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর