Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, রোববার   ২০ এপ্রিল ২০২৫,   বৈশাখ ৬ ১৪৩২

অনিক দেব

প্রকাশিত: ১৫:৩১, ১৪ আগস্ট ২০২২
আপডেট: ১৭:০৮, ১৪ আগস্ট ২০২২

চা-শ্রমিকের মজুরি বাড়ানো উচিৎ কি-না একটু ভাবুন

লেখক- অনিক দেব, শিক্ষার্থী

লেখক- অনিক দেব, শিক্ষার্থী

দাসদেরকে মজুরি দেওয়া হতো না, চা শ্রমিকদের মজুরি দেওয়া হয় এটুকুই তফাৎ। কিন্তু খাটা-খাটুনিতে অথবা, অধিকারের প্রশ্নে চা শ্রমিকদের অবস্থা এই সময়ে সবচেয়ে করুণ। চা বাগানগুলোতে স্থায়ী শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৯০ হাজার। অস্থায়ীভাবে কাজ করছে প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক। বাংলাদেশ সরকারের সাথে ২০০৯ সালে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী বর্তমানে বাগানের শ্রেণীভেদে শ্রমিকেরা যথাক্রমে দৈনিক ৪৮.৪৬ টাকা ও ৪৫ টাকা হারে মজুরি পায়।


স্বাধীনতার অর্ধশতক পেরিয়ে গেলেও দেশের সাধারণ মানুষের অবস্থা কি- সেটা এখন প্রধান আলোচ্য বিষয় হওয়া উচিৎ। এই দুখী মানুষের মুখে হাসি ফুটানোর আকাঙ্ক্ষা নিয়েই এসেছে বাংলার স্বাধীনতা, উদয় হয়েছে সবুজের বুকে লাল বিপ্লবের সূর্য। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারাটি জীবন স্বপ্ন দেখেছেন সাধারণ মানুষকে নিয়ে, সংগ্রাম করেছেন খেটে খাওয়া কৃষক-শ্রমিক দুখী মানুষের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য। বহির্বিশ্বে বাংলার মানুষকে- দুখী মানুষ বলেই এখনো চেনে সবাই।

বাংলাদেশের অন্যতম রপ্তানিমুখী বৃহৎ শিল্প চা। দেশে আনুমানিক ১৬৭ টিরও বেশি চা বাগান রয়েছে, তন্মধ্যে মৌলভীবাজার জেলায় ৯১টি, চট্টগ্রামে ২১টি, সিলেটে ১৯টি, হবিগঞ্জে ২৫টি, পঞ্চগড়ে ৮টি ও রাঙামাটি, ঠাকুরগাঁওয়ে কিছু চা বাগান রয়েছে।

বাংলাদেশের চা উৎপাদনের বার্ষিক মোট পরিমাণ চা অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী- ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে চা উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৩১.৩৮ মিলিয়ন কেজি। ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে ৮৫.০৫ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হয়, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে ৮২.১২ মিলিয়ন কেজি এবং ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে রেকর্ড পরিমাণ ৯৬.০৭ মিলিয়ন কেজি এবং ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে ৮৬.৩৯ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হয়। এছাড়া ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে রেকর্ড পরিমাণ ২.১৭ মিলিয়ন কেজি চা রপ্তানি হয়। এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামীতে চা আমদানির প্রয়োজন হবে না বরং রপ্তানির ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হবে।

তবে দুঃখের বিষয়- চা শ্রমিকের জীবন এই উত্তর আধুনিক যুগেও যেনো আদি ও মধ্যযুগীয় দাসদের মতো। দাসদেরকে মজুরি দেওয়া হতো না, চা শ্রমিকদের মজুরি দেওয়া হয় এটুকুই তফাৎ। কিন্তু খাটা-খাটুনিতে অথবা, অধিকারের প্রশ্নে চা শ্রমিকদের অবস্থা এই সময়ে সবচেয়ে করুণ। চা বাগানগুলোতে স্থায়ী শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৯০ হাজার। অস্থায়ীভাবে কাজ করছে প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক। বাংলাদেশ সরকারের সাথে ২০০৯ সালে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী বর্তমানে বাগানের শ্রেণীভেদে শ্রমিকেরা যথাক্রমে দৈনিক ৪৮.৪৬ টাকা ও ৪৫ টাকা হারে মজুরি পায়। স্থায়ী শ্রমিকদেরকে রেশন হিসেবে প্রতিদিন আধা-কেজি চাউল অথবা আটা দেওয়া হয়। বর্তমান তথ্য অনুযায়ী সর্বসাকুল্যে একজন চা শ্রমিকের দৈনিক আয় ১২০ টাকা।

পৃথিবীর ইতিহাসে নিপীড়নের এমন নজির আর আছে কিনা আমার জানা নেই। বাংলাদেশ সরকারের চা শ্রমিকের প্রতি এমন দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি আমি ক্ষোভ প্রকাশ করি। চা বাগানের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ অনেক করুণ, চা শ্রমিকদের ঘরের দিকে তাকালে মনে হয় যেনো- স্বয়ং ঈশ্বরও তাদের উপর রুষ্ট। যেখানে এক কেজি ভোজ্য তেলের দাম ১৯০ টাকা, চালের কেজি ৬০-৭০ টাকা, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস-পত্রের দাম আকাশছোঁয়া, তখন এই চা শ্রমিকের জীবনযাত্রা কিভাবে যাচ্ছে। তাদের জীবনমান কতোটুকু নিচু্তে অবস্থান করছে তা সত্যিই ভাবনার বিষয়।

বাংলাদেশ সরকার চা শ্রমিকদের বারবার আন্দোলনকে পাত্তা না দিয়ে মানবাধিকার লংঘন করছে কিনা সেটাও এখন ভাববার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আফসোসের জায়গাটা হচ্ছে যাদের এ নিয়ে ভাবার কথা তারা ভাবছেন না, যাদের এ নিয়ে লেখার কথা লিখছেন না। ফলে এদের মানবেতর পরিস্থিতিগুলো নাগরিক মহলের কাছে অদেখা-ই থেকে যাচ্ছে।

চা শ্রমিকেরা এই দেশের পূর্ণ নাগরিক এবং স্বয়ং ভূমিপুত্র। তাদের অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করা বা, উপেক্ষা করে যাওয়া গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। প্রতিবারের মতো গতকালও চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গলে চা শ্রমিকেরা দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে ৩০০ টাকাতে বৃদ্ধির জন্য আন্দোলন করেছে, সেখানে পুলিশের বন্দুকের নল তাক করা মানে রাষ্ট্রের সংবিধান লঙ্গন করা। এই চা শ্রমিকদের ঘাম ও রক্তের উপর অনেকাংশে নির্ভর করে বাংলাদেশের অর্থনীতি, এই শ্রমিকেরা যদি তাদের প্রাপ্য অধিকার না পায়, যদি অস্ত্রের মুখে তাদেরকে দাবানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়, তব এই চা শ্রমিকদের কান্না আর অভিশাপে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের অর্থনীতি দাবানলের মতো পুড়বে।

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় যদি সোনার মানুষ, খাঁটি মানুষগুলো উপেক্ষিত হয়, এই বাংলা আর কোনোদিন সোনার বাংলা হবে না। দেশের বৃহৎ শিল্প বাঁচাতে, দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে চা শ্রমিকের শ্রমের মূল্যায়ন রাষ্ট্রের আশু দায়িত্ব। চা শ্রমিকের অধিকার বুঝিয়ে দিন, অতি দ্রুত চা শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি করুন। দেশকে বাঁচান, মানুষকে বাঁচান।

লেখক- অনিক দেব, শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

লেখকের আরও লেখা-


আইনিউজে আরও পড়ুন-


বিশ্বের মজার মজার গল্প আর তথ্য সম্বলিত আইনিউজের ফিচার পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

দেখুন আইনিউজের ভিডিও গ্যালারি

দিনমজুর বাবার ছেলে মাহির বুয়েটে পড়ার সুযোগ || BUET success story of Mahfujur Rhaman || EYE NEWS

হানিফ সংকেত যেভাবে কিংবদন্তি উপস্থাপক হলেন | Biography | hanif sanket life documentary | EYE NEWS

আশ্চর্য এন্টার্কটিকা মহাদেশের অজানা তথ্য | Antarctica continent countries | facts। Eye News

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়