হেলাল আহমেদ
পাহাড়ি মেয়েরা বাংলাদেশকে পৌঁছে দিলো হিমালয় শিখরে
নেপালের বিপক্ষে ফাইনালে ২ গোলে জিতেছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল
পাহাড়ি বলে, আদিবাসী বলে এই ফুটবলার মেয়েদেরই জ্ঞাতী, ভাই, বাপ, দাদাদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ করে সেসব জায়গায় ফাইভ স্টার, থ্রি স্টার রেস্তোরাঁ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। অথচ এই পাহাড়ি, আদিবাসী মেয়েগুলোই আজকে দেশের হয়ে বয়ে এনেছে শিরোপা জেতার সম্মান। বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের পতাকা আবার গৌরবের সাথে উড়েছে এই পাহাড়ি মেয়েগুলোর কারণেই।
ফাইনাল খেলা, প্রতিপক্ষ ছিলো নেপাল। এর আগে এবারের সাফের আসরে ভারত, ভুটান, পাকিস্তানের মতো দলকে রীতিমত তুলোধুনো করেই হারিয়েছে, ভাসিয়েছে বাংলার মেয়েরা। ভারতের মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে হারিয়েছে রেকর্ড তৈরি করে। সবমিলিয়ে এই আসরে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল যেন দাপিয়ে বেড়িয়েছে। শিরোপা জয়ের যে আক্ষেপ নিয়ে এতোদিন ঘুরছিলো বাংলাদেশ সে আক্ষেপ ঘুচিয়ে বাংলাদেশকে হিমালয় শিখরে পৌঁছে দিয়েছে পাহাড়ি এই মেয়েগুলো।
পাহাড়ি বলছি কারণ আমাদের জাতীয় নারী ফুটবল দলের বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই পার্বত্য অঞ্চলের, আদিবাসী সম্প্রদায়ের। পাহাড়ি বলে পরিচয় দিচ্ছি কারণ আজকে যে সম্প্রদায়ের অধিকাংশ মেয়ে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের ইতিহাসে শিরোপা জয় করে এলাহী কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলেছে তাদের নিয়ে সরকারি, বেসরকারি হয়রানি, অত্যাচার আর নানাবিধ নির্যাতনের খবর প্রায়শই গণমাধ্যমে ভাসতে দেখা যায়। পাহাড়ি বলে, আদিবাসী বলে এই ফুটবলার মেয়েদেরই জ্ঞাতী, ভাই, বাপ, দাদাদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ করে সেসব জায়গায় ফাইভ স্টার, থ্রি স্টার রেস্তোরাঁ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়।
অথচ এই পাহাড়ি, আদিবাসী মেয়েগুলোই আজকে দেশের হয়ে বয়ে এনেছে শিরোপা জেতার সম্মান। বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের পতাকা আবার গৌরবের সাথে উড়েছে এই পাহাড়ি মেয়েগুলোর কারণেই। আজকে যারা আমাদেরকে এই জয় এনে দিলো সেই মেয়েদেরকেই শুনতে হয়েছে সমাজের নানা স্তরের মানুষের টিম্পনি, সহ্য করতে হয়েছে নানা মানসিক নির্যাতন।
বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের অন্যতম সদস্য সানজিদা আকতার নেপালের বিপক্ষে মাঠে নামবার আগে নিজের ফেসবুকে যে পোস্টটি দিয়েছেন, তার যে লেখাটি লাখো মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে; সেই লেখায় সানজিদাও বলেছেন সেই সময়ের কথা যখন ফুটবল খেলার জন্য মানুষ তাকে কথা শুনিয়েছে।
তিনি আরও কিছু কথা লিখেছেন যা মন ছুঁয়ে যায় সত্যই। তিনি লিখেছেন- 'পাহাড়ের কাছাকাছি স্থানে বাড়ি আমার। পাহাড়ি ভাইবোনদের লড়াকু মানসিকতা, গ্রাম বাংলার দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষদের হার না মানা জীবনের প্রতি পরত খুব কাছাকাছি থেকে দেখা আমার। ফাইনালে আমরা একজন ফুটবলারের চরিত্রে মাঠে লড়বো এমন নয়, এগারোজনের যোদ্ধাদল মাঠে থাকবে, যে দলের অনেকে এই পর্যন্ত এসেছে বাবাকে হারিয়ে, মায়ের শেষ সম্বল নিয়ে, বোনের অলংকার বিক্রি করে, অনেকে পরিবারের একমাত্র আয়ের অবলম্বন হয়ে।'
শুধু বাইরের মানুষ কেন, খোদ ফুটবল ফেডারেশনের ভেতরেই বাংলার এই বাঘিনীরা কম হয়রানির শিকার হন না। অন্যান্য দেশের ফুটবলারদের জন্য যেখানে আলাদা পরিবহণের ব্যবস্থা থাকে সেখানে বাংলাদেশ দলের এই শিরোপা বিজয়ী মেয়েগুলোকেই খেলা শেষে ঘরে ফিরতে হয় লোকাল বাসে চেপে। এমন খবরও গণমাধ্যমেই দেখেছে দেসবাসী। বুঝাই যায়, এই মেয়েগুলোর প্রতি অবহেলার বিষয়টি।
তবু তারা সে মান বুকে পোষে থেমে যায়নি; বরং আজকে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে সব দলকে হারিয়ে শিরোপা জিতে সেসব অবহেলারই কঠিন জবাব যেন দিয়েছে তারা। সানজিদারা যে যুদ্ধ জেতার আত্মবিশ্বাসে মাঠে নেমেছিলেন সে যুদ্ধে তারা অবশেষে জয়লাভ করেছে। এতোগুলো বছর ধরে শিরোপা না জেতার যে আক্ষেপ বুকে নিয়ে প্রহর কাটছিলো সেই দুঃখ হরণ করেছে এই মেয়েরা। বাংলাদেশকে সত্যিই এরা পৌঁছে দিয়েছে হিমালয় শিখরে।
লেখক হেলাল আহমেদ, কবি ও গনমাধ্যমকর্মী।
- খোলা জানালা বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। eyenews.news-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে eyenews.news আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
- বাংলাদেশে শিশু শ্রম: কারণ ও করণীয়
- ২০২৩ সালে কী সত্যিই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আসছে?
- পনেরো আগস্ট পরবর্তী রাজনৈতিক দ্বন্ধ
মোশতাক বললেও মন্ত্রীদের কেউ সেদিন বঙ্গবন্ধুর লাশের সঙ্গে যায়নি! - করোনা যেভাবে চিকিৎসকদের শ্রেণীচ্যুত করলো
- চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সমস্যা এবং সম্ভাবনা
- ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কুকুর স্থানান্তরকরণ ও ভবিষ্যৎ
- শরীফার গল্প পড়তে আমাদের এতো কেন সমস্যা?
- ফিলিস্তিনে প্রাণ হারাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা
- মহান মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী গণমাধ্যমের ভূমিকা
- রেমডেসিভির একটি অপ্রমাণিত ট্রায়াল ড্রাগ