শাহরিয়ার খান সাকিব, মৌলভীবাজার
মৌলভীবাজারে উত্তপ্ত সড়কে শুয়ে চা শ্রমিকদের বিক্ষোভ
পিচ ঢালা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে এভাবেই শুয়ে সড়ক অবরোধ করে চা শ্রমিকের বিক্ষোভ। - ছবি : আইনিউজ
দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে অনড় চা শ্রমিকরা। মৌলভীবাজার শহরে তীব্র তাপদাহে সড়কে শুয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন চা শ্রমিকরা। বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) দুপুরের পর থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শহরের বেরিরপাড় পয়েন্টে এ আন্দোলন করেন চা শ্রমিকরা।
এসময় বিভিন্ন চা বাগানের শ্রমিকরা মিছিল করে সড়ক অবরোধ করলে শ্রীমঙ্গল-মৌলভীবাজার-শেরপুর আঞ্চলিক সড়ক বেরিপাড় রাস্তায় আটকা পড়ে হাজারো ছোট-বড় যানবাহন। এতে চরম দূর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ। এ সময় চা শ্রমিকরা বলেন, ঘরে খাবার নেই, নেতারাও পাশে নেই। ৩০০ টাকা মজুরি ছাড়া ঘরে ফিরবো না।
আমরা তাদের (চা শ্রমিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ) নেতা বানিয়েছি। কিন্তু তারা যদি আমাদের সমস্যা না বুঝেন তাহলে তাদের নেতা থাকার দরকার নেই। আমাদের মাঠে নামিয়ে তারা উধাও হয়ে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী টিভিতে এসে ৩০০ টাকা মজুরি হবে— এই ঘোষণা দিলে আমরা আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়াব। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমারা না খেয়ে দিন-রাত আন্দোলন চালিয়ে যাবো। ‘রাতের অন্ধকারের সিদ্ধান্ত’ মানেন না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন চা-শ্রমিকরা।
সড়ক অবরোধ চলাকালে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান, অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার জিয়াউর রহমান, সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াছিনুল হক। প্রশাসনের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেন চা শ্রমিকরা।
এসময় চা শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, ‘আপনারা গত ১১দিন যাবৎ যে কষ্ট করছেন সে কষ্টের সাথে সরকারও একাত্ম। আপনাদের এই কষ্টটা আরও আগে সমাধান হয়ে যেতো যদি আপনাদের নেতৃবৃন্দের সাথে যে সমাধান করা হয়েছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাদেরকে কাজে যোগদান করার জন্য অনুরোধ করেছেন। আপনারা কেউ কেউ যোগদান করেছেন, আবাব কেউ কেউ যোগদান করেন নাই।’ যেটা হয়েছে- চা শ্রমিক এখানে যারা সবাই উপস্থিত আছেন সাধারণ চা শ্রমিক ভাই-বোনরা আছেন।
কিন্তু কোথাও কোথাও আমরা দেখেছি চা শ্রমিকদের নামে বেশকিছু বাইরের লোকজন ঢুকে গেছে। যারা সমাধান চায় না এই সমাধান তাঁরা চায় না বলেই আপনাদের দাবি বাস্তবায়নে দেরি হচ্ছে। প্রতিদিন একটা করে দিন যাচ্ছে আপনারা কষ্ট বাড়ছে। আপনারা যারা আছেন সবাই তো সমাধান চান। সমাধান যদি চান আপনাদের আজকে থাকার কথা বাগানে।
আপনার এই পিচঢালা রাস্তায় বসে কষ্ট করছেন। এই কষ্ট আমরা চাইনা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও চান না। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে আপনাদের সাথে কথা বলার জন্য তৈরি করা হচ্ছে কাগজপত্র। আর আপনাদেরকে আমার মাধ্যমে অনুরোধ করেছেন আপনাদেরকে কাজে যোগদান করার জন্য। এটি আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ আপনারা শান্ত থাকেন। এটা খুব দ্রুত সময়ে সমাধান হবে। আমাদের চাপ প্রয়োগ করলে সমাধান হবে না। আপনারা বরাবারে মতো আপনাদের নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপর আস্থা রাখেন। সেভাবেই সমাধান হবে।
গত ২১ আগস্ট রাত ৯টায় মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে প্রশাসন ও চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের মধ্যে বৈঠক শুরু হয়। দীর্ঘ সেই বৈঠক শেষ হয় রাত তিনটার দিকে। মূলত সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে শ্রমিক অসন্তোষ দূর করতে এই বৈঠক ডাকে স্থানীয় প্রশাসন। মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানের সভাপতিত্বে বৈঠকে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া, বিভাগীয় শ্রম দপ্তর শ্রীমঙ্গল কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ নাহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল, সহসভাপতি পঙ্কজ কন্দ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে জানানো হয়। মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসকের প্যাডে দেওয়া বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা রেখে তাঁর সম্মানে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন তাদের ধর্মঘট প্রত্যাহার করে আজ সোমবার কাজে যোগ দেবে। আপাতত চলমান মজুরি ১২০ টাকা হারেই শ্রমিকেরা কাজ করবেন।
কিন্তু বৈঠকে কাজে যোগ দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তা প্রত্যাখান করেন সাধারণ শ্রমিকরা। এর আগে গত ১৬ আগস্ট বেলা ১২টায়।মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে বিভাগীয় উপ- শ্রম পরিচালকের কার্যালয়ে চলমান আন্দোলনের সামাধানের সিদ্ধান্তের জন্য চা-শ্রমিক ইউনিয়ন নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে করেন শ্রম অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী। তবে চা বাগানের শ্রমিকেরা ১২০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা দৈনিক মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছেন।
এদিকে শ্রমিকদের আন্দোলনের কারণে চা বাগানগুলোতে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এতে চা পাতার কুঁড়ি গাছেই নষ্ট হচ্ছে। ফলে চা উৎপাদনের ভরা মৌসুমে বিরাট অঙ্কের আর্থিক ক্ষতিতে পড়বে বলে ধারণা করা যাচ্ছে দেশের চা শিল্প।
উল্লেখ্য- গত ৯ আগস্ট থেকে দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবিতে সিলেট, মৌলভীবাজার, শ্রীমঙ্গল, হবিগঞ্জসহ সারাদেশের ১৬৭টি চা-বাগানে আন্দোলন করছেন চা-শ্রমিকরা। এরপর ১৩ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত তারা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি (ধর্মঘট) পালনসহ বিক্ষোভ কর্মসূচি ও সড়ক অবরোধ করছেন।
আইনিউজ/এসকেএস
দেখুন আইনিউজের ভিডিও গ্যালারি
নৌযান বানিয়ে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন ছোট কিশোর হাকিমুল || Eye News || Moulvibazar || Bout
চা শ্রমিক মা কিভাবে ছেলেকে পড়ালেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, শুনুন সেই সংগ্রামের গল্প || Eye News
দিনমজুর বাবার ছেলে মাহির বুয়েটে পড়ার সুযোগ || BUET success story of Mahfujur Rhaman || EYE NEWS
সিরিজ বোমা হামলা দিবসে মৌলভীবাজারে আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ মিছিল || Eye News || Awami League || Moulvibazar
মৌলভীবাজারে জাতির পিতার পদচিহ্ন নিয়ে ‘খুঁজে ফিরি পিতার পদচিহ্ন’
বিস্ময় ছোট বালিকা দেয়ালিকা চৌধুরী বলতে পারে ১৯৫ দেশের রাজধানীর নাম | Deyalika | Eye News
- মেয়ের বাড়িতে ইফতার: সিলেটি প্রথার বিলুপ্তি চায় নতুন প্রজন্ম
- অবশেষে ক্লাস করার অনুমতি পেল শ্রীমঙ্গলের শিশু শিক্ষার্থী নাঈম
- দেশের চতুর্থ ধনী বিভাগ সিলেট
- শ্রীমঙ্গল টু কাতারে গড়ে তুলেছেন শক্তিশালি নেটওয়ার্ক
মৌলভীবাজারে অনলাইন জুয়ায় রাতারাতি কোটিপতি সাগর - এসএসসির ফলাফলে বিভাগে ৩য় স্থানে মৌলভীবাজার
- বিজ্ঞাপন
মৌলভীবাজারে হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসায় লাইফ লাইন হাসপাতাল (ভিডিও) - মৌলভীবাজারে ট্যুরিস্ট বাসের উদ্বোধন বৃহস্পতিবার
- ১ ঘন্টার জন্য মৌলভীবাজারে শিশু কর্মকর্তা হলেন তুলনা ধর তুষ্টি
- মৌলভীবাজার শহরে একদিনে ৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত
- বন্ধ থাকবে মৌলভীবাজারের ‘এমবি’