Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, সোমবার   ২১ এপ্রিল ২০২৫,   বৈশাখ ৮ ১৪৩২

আই নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৮:৪৬, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

যেভাবে এসএসসি পরীক্ষার দিচ্ছে চুনারুঘাটের জন্মান্ধ লিমা 

শ্রুতি লেখকের সহায়তায় এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে লিমা। ছবি- আই নিউজ

শ্রুতি লেখকের সহায়তায় এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে লিমা। ছবি- আই নিউজ

চুনারুঘাটের দরিদ্র এক পরিবারের জন্মান্ধ মেয়ে লিমা। জন্ম থেকে চোখে দেখতে না পেলেও শিক্ষা অর্জনের ব্যাপারে আগ্রহ হারায় নি কিশোরী লিমা। বরং, এসএসসি পরীক্ষার মতো আয়োজনে অন্য শিক্ষার্থীদের মতোই এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে লিমা। শ্রুতি লেখকের সহায়তায় অন্যদের মতো লিমাও প্রশ্নপত্রের উত্তর লিখে আসছে। 

হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার  চন্ডিছড়া চা বাগানের দরিদ্র পরিবারে। পিতা দেলোয়ার মিয়া। লিমার আরেকটি বোনোও এবছর এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। পরিবারে অভাব, অনটনের টানাটানি থাকলেও পড়াশোনা থেকে পিছপা হননি এই দুই অদম্য বোন।  

লিমার পড়াশোনার প্রতি এই আগ্রহ দেখে এগিয়ে আসছেন হৃদয়বান মানুষরাও। তাঁদের সহযোগিতায় লিমা এবছর এসএসসি পরীক্ষায় বসেছে। সে স্বপ্ন দেখে জন্মান্ধ হলেও সে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে তাঁর পরিবারের পাশে দাঁড়াবে। লিমাকে পড়াশোনা করতে হয় তাঁর বড় বোনের সাহায্যে। তাঁর বড় বোনের পড়া শোনে শোনে পড়া মনে রাখেন লিমা।  ইচ্ছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া।

এসএসসি পরীক্ষার প্রথম দিন বাংলা দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা শেষে লিমা জানায়, তার পরীক্ষা ভালো হয়েছে। সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। কোন সমস্যা হয়নি,আমার সহযোগী নন্দিনী বাকতি আমার খাতায় খুব ভালো লিখেছে আশা করি। লিমার শ্রুতিলেখক নন্দিনি জানালেন, লিমা আপার প্রস্তুতি ভালো ছিলো, পরীক্ষা ভালো হয়েছে। আমারও পরীক্ষার ভীতি কমেছে। 

লিমা জানায়, পুরো পড়াশুনাটাই করতে হয়- শুনে শুনে। সে কাজে তার বড়বোন সহায়তা করেছে। পরীক্ষায় তার কথা শুনে আরেক জনকে লিখতে হয়। পুরো উল্টো। স্বাভাবিকদের তুলনায় কিছুটা গতি হারায় সে। তবে পরীক্ষা ভালো হয়েছে। 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সত্যেন্দ্র চন্দ্র দেব জানান, শ্রুতি লেখকের সহায়তা নিয়ে পরীক্ষা দিতে অনুমতি আনা হয়েছে সিলেট শিক্ষাবোর্ড থেকে। শ্রুতি লেখক নন্দিনি একই বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। সাধারণত শ্রুতি লেখকদের পরীক্ষার্থীদের চেয়ে নিচের ক্লাসের ছাত্র হতে হয়। 

তিনি জানান, দৃষ্টিহীন লিমার আর্থিক অবস্থা অত্যেন্ত খারাপ। ফরম ফিলাপ এর সময় আমি আর্থিক সহায়তা দিয়ে ফরম ফিলাম করিয়েছি। তার আরো এক বড় বোন পরীক্ষা দিচ্ছে। 

অগ্রণী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব নুরুল ইসলাম জানান, শ্রুতিলেখক নিয়োগের জন্য শ্রুতিলেখকের অভিভাবক এবং তার প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমতি প্রয়োজন। যারা শ্রুতি লেখক হয়ে পরীক্ষায় অংশ নেন, তাদেরকে পরীক্ষার্থীর চেয়ে নিচের ক্লাসের হতে হয়। এখানে তাই করা হয়েছে। নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী দিয়ে সে পরীক্ষা দিচ্ছে। তাকে আইন অনুযায়ী ২০ মিনিট সময়ও বেশি দেওয়া হচ্ছে। 

পরীক্ষার্থী লিমা জানায়, আমার পড়া শুনায় তেমন সমস্যা হয়নি। আমি আমার বড়বোনের পড়া শুনে শুনে শিখি ও মুখস্থ করি। চোঁখে না দেখা বিষয়টিতে আমার অভ্যস্ত হয়ে গেছে। কিন্তু পরীক্ষার আগে শ্রুতি লেখক খুঁজে বের করতে সমস্যা হয়। প্রথমে যাকে শ্রুতি লেখক নিয়েছিলাম সে না আসায় পরে নন্দিনীকে অনুরোধ করার পর রাজি হয়, পরীক্ষায় বসতে।

আই নিউজ/এইচএ 

Green Tea
সিলেট বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়