ইউটিউবে ভিডিও দেখে মাটির খাদ্যের যোগান দিতে এবং মাছ ও হাস-মুরগের খামারে পুষ্টিকর খাবারের চাহিদা পুরণে মৌলভীবাজারের এক যুবক প্রতিষ্ঠিত করেছেন প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষাকারী পোকা ব্ল্যাক সৌলজার ফ্লাই (Black Soldier Fly) বা কলো সৈনিক মাছির খামার। এটি শুধু মাটি, হাঁস-মোরগের খাবারই নয়, এটির খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে মানুষের উচ্ছিষ্ট এবং পঁচা ফলমূল ও তরিতরকারী। যা পরিবেশ রক্ষায়ও রাখছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বারন্তী গ্রামের বেকার যুবক সুমন আহমদ। মোবাইল ফোনে ইউটিউব চ্যানেলগুলো সার্চ করার সময় হঠাৎ চোখে পড়ে ব্ল্যাক সৌলজার ফ্লাই ও তার লার্ভার উপকারিতার বিষয়টি। এ থেকে উৎসাহিত হয়ে সংগ্রহ করেন দুই কেজি প্যারেট পোকার পিউপা। আর শ্রীমঙ্গল কলেজ রোডস্থ ময়লার ভাগারে ৬ মাস আগে শুরু করেন এ খামার। বর্তমানে তার পিউপার পরিমান প্রায় তিনশত কেজি।

বিশেষজ্ঞরা জানান, ব্ল্যাক সৌলজারের লাইফ সার্কেল পুরোটাই পৃথিবীর জন্য উপকারী। এর একটি স্ত্রী পোকা প্রতিমাসে পাঁচ থেকে আটশত ডিম দেয়। এই ডিম রাখতে হয়ে ময়লা বা মানুষের উচ্ছিষ্ঠে। এই উচ্ছিষ্ঠ খাবার খেয়ে কয়েকদিনেই তারা লার্ভায় পরিণত হয়। ২১ দিন পর এই লার্ভা হাঁস-মোরগ ও মাছের খাবারের উপযুক্ত হয়। এই সময়ে লার্ভা যে মল ত্যাগ করে তা মাটিকে উর্ভরা করার উত্তম ‍উপাদান।যা জৈব সার হিসেবে শাকসবজী ও ফসলের মাঠে ব্যবহার হয়। এই লার্ভা থেকে হয় পিউপা অর্থাৎ, মাতৃ পোকা। এই সময় থেকে তারা খাবার বন্ধ করে দেয় এবং এদের চামড়া শক্ত হয়। পরে খোলস ছাড়িয়ে পরিপূর্ণ ব্ল্যাক সৌলজার হিসেবে বেড়িয়ে আসে পৃথিবীতে।

ডিম পাড়ার পূর্ব মুহুর্তে ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই

সুমন মাত্র দুই কেজি ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাইর পিউপা দিয়ে খামার শুরু হলেও মাত্র ৬ মাসে লার্ভা, মাতৃপোকা ও জৈবসারের পরিমাণ হাজার কেজি ছাড়িয়েছে। এ ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই বা প্যারেট পোকায় রয়েছে ৪০ শতাংশ প্রোটিন ও ২০ শতাংশ ফ্যাট।  যা হাঁস- মুরগের প্রোটিনযুক্ত খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা যায়।

সুমন আহমদ জানান, কয়েক বছর আগে থেকেই বাংলাদেশে বিদেশে থেকেই পোল্ট্রি খাদ্য হিসেবে ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই সংগ্রহ করা হয়। ইতিমধ্যে বাংলাদেশেও হাতেগোনা কয়েকটি এলাকায় এর উৎপাদন শুরু হলেও চাহিদার তুলনায় এখনও অনেক কম।

ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই এর ডিম দেখছেন একদল বিশেষজ্ঞ।

তিনি জানান, সিলেট বিভাগে তার প্রতিষ্ঠান দ্বিতীয়। এর একটি সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে এবং একটি তাঁর।

এ ব্যাপারে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. শাখাওয়াত হোসেন জানান, এ পোকার মাধ্যমে হাঁস ও পোল্ট্রিশিল্পে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা সম্ভব। তিনি জানান,‘বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে এ  ব্ল্যাক সৌলজার এর চাষাবাদ বৃদ্ধি করার পাশাপাশি খামারিদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করতে সরকারের মৎস্য, কৃষি ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়  যৌথভাবে কাজ করা দরকার। কারণ এটি থেকে মাছ পাবে পুষ্ঠিকর খবার, এতে মাছের উৎপাদন বাড়বে। বাড়বে মাছ মাংস ও ডিমের উৎপাদন। অন্যদিকে এর মল থেকে উৎপাদিত জৈব সার ‍কৃষিজপন্যের দ্বিগুণ উৎপাদনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

শ্রীমঙ্গলের অবসরপ্রাপ্ত চা বিজ্ঞানী ফারুখ আহমদ জানান, এই পোকা চাষ পরিবেশের জন্যও ‍উপকারী। আমাদের খাদ্যের উচ্ছিষ্ট ও মানবসৃষ্ট ময়লা আবর্জনা তাদের প্রধান খাবার। যা সহজেই পাওয়া যায়। শ্রীমঙ্গল পৌরসভার ময়লার ডাম্পিং ষ্টেশনে সুমন আহমদের এই খামারটি তিনি পরিদর্শন করেছেন। সেখান থেকে সার এনেছেন যা অন্য যে কোন জৈব সারের চেয়ে ভালো।

• আরও পড়ুন- মাল্টা চাষে সফল রাজনগরের আল আমিন

তিনি জানান, এটি চাষের জন্য আমাদের ময়লা ব্যবস্থাপনা আপডেট করতে হবে। বিশেষ করে পলিথিন ও শক্ত ময়লা আলাদা করে ও পঁচনশীল পণ্যের জন্য আলাদা ময়লার ডাম্পিং স্টেশন করা উচিৎ।

• আরও পড়ুন- রাস্তায় ভ্যান রাখায় চালককে মারলেন মেয়র আরিফ, সমালোচনার ঝড়

খামারি সুমন আহমদ আরও জানান, তার খামার থেকে প্রতি কেজি লার্ভা বিক্রি হয় ৫০ টাকা, মাতৃপোকা পিউপা বিক্রিহয় দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা এবং পোকা থেকে উৎপাদিত জৈব সার বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে।

• আরও পড়ুন- লাউ চাষে দ্বিগুন লাভবান রাজনগরের লেচু মিয়া

তিনি জানান, এটি পোল্ট্রি খামারিরা নিজেরাই করলে ভালো। এতে মড়ক কম, খাদ্যের খরচ কম, লাভ বেশি। সরকার এর উপকারীতা নিয়ে যুব সমাজকে উৎসাহিত করলে বেকার সমস্যা দুরত্বের পাশাপাশি দেশ হবে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ।

আইনিউজ/বিকুল চক্রবর্তী/এসডি

আইনিউজ ভিডিও

দুবাইয়ে লটারি জিতে একরাতে কোটিপতি বাংলাদেশী যুবক | দুবাই প্রবাসী

মানুষ হত্যা করেছে মা হাতিকে, দুধের জন্য কাঁদছে বাচ্চা হাতিটি

মৌলভীবাজারের সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী ভারত সরকারের পদ্মভূষণ পদকে ভূষিত

প্রকৃতির সন্তান খাসি - খাসিয়া জনগোষ্ঠী

৪০ লক্ষ টাকায় বিক্রি হলো একটি মাছ, রাতরাতি ধনী জেলে