নিজস্ব প্রতিবেদক, কমলগঞ্জ
আপডেট: ১৭:৩৯, ৩ নভেম্বর ২০২২
সংসার সামলেই সফল খামারি কমলগঞ্জের মেহেরুন্নেছা
মেহেরুন্নেছা এবং তার স্বপ্নের খামার
মৌলভীবাজারের সীমান্তবর্তী কমলগঞ্জ উপজেলার প্রান্তিক এক গৃহবধু মেহেরুন্নেছা। সংসার সামলানোর পাশাপাশি শ্বশুরের অনুপ্রেরণায় বাড়ির পাশেই গড়ে তোলেছেন বিশা এক গরুর খামার। খামার, বাহারি জাতের গাছ-গাছালি, পশু-পাখি সব মিলিয়ে কমলগঞ্জের মেহেরুন্নেছা এখন একজন সফল খামারি। মাত্র ১২টি গরু দিয়ে যাত্রা শুরু করা মেহেরুন্নেছার এখন চারটি শেড ভরা গরু থাকে। দৈনিক কয়েকশ লিটার দুধ উৎপাদন হয় তার খামারে। গ্রামের কয়েকজনের কর্মসংস্থানও জুগিয়েছেন এই সফল নারী খামারি।
স্বামীর হাত ধরে ২০০২ সালে স্নাতক সম্পন্ন করার পর মেহেরুন্নেছার বিয়ে হয় পাশের গ্রাম জালালপুরের হাজী আসদ্দর আলীর ছেলে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হানিফুর রহমান বেলালের সাথে।
বিয়ের পর স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ী, ভাসুর, ননদদের উৎসাহে মেহেরুন্নেছা বেগম পা রেখেছিলেন নতুন সংসারে। সংসারটা একটু গুছিয়ে নেওয়ার পর ঘর কন্নার পাশাপাশি গড়ে তোলেন গরুর খামার। তার এ কাজে উৎসাহ যোগান স্বামী হানিফুর রহমান। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হানিফুর রহমান হাজারো ব্যস্ততার কারণে সময় দিতে পারেন না স্ত্রীকে। তাই মেহেরুন্নেছার স্বপ্নযাত্রায় অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেন শ্বশুর হাজী আসদ্দর আলী।
মেহেরুন্নেছার খামারের গরু
দুই ভাসুর আলতাফুর রহমান ও আলাল মিয়া ভাতৃবধূর কর্মযজ্ঞে সঙ্গী হন। ২০১৪ সালে ১২টি গরু নিয়ে যে স্বপ্নের যাত্রা শুরু হয়েছিল, তা আজ বিশাল কর্মক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। একটি শেডের ছায়া দিয়ে শুরু হওয়া সেই খামারে এখন ছায়া দেয় ৪টি শেড। খামারটি থেকে প্রতিদিন গড়ে এখন সাড়ে ৪শ থেকে ৬শ লিটার দুধ উৎপাদন হয়।
মাংসের যোগানও দেয় খামারটি। প্রতিবছর কোরবানির ঈদে ৮/১০টি ষাঁড় বিক্রি করতে পারেন মেহেরুন্নেছা। সব মিলিয়ে গড়ে প্রতিমাসে কয়েক লাখ টাকা আয় হয় খামার থেকে। স্বামী চাকুরিজীবী। নিজেও স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। একটু চেষ্টা করলে হয়তো নিজেও একটা চাকুরি জুটিয়ে নিতে পারতেন মেহেরুন্নেছা। তিনি সে পথে হাঁটেননি। শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবেননি তিনি। তার হাত ধরে আরও কিছু মানুষের ভাগ্যকেও বদলে দিতে চান তিনি। সে স্বপ্ন থেকেই খামারটির প্রতিষ্ঠা।
এখন তার এ খামার থেকে গোটা বিশেক পরিবারের জীবিকার যোগান হয়। ছোট পরিসরে খামারটি শুরু করার পর শাহজালাল ইসলামি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কেনেন আরও ১৯টি গরু। তারপর এগিয়ে চলে তার স্বপ্নযাত্রা। স্বামী, শ্বশুর ভাসুররাতো সঙ্গেই আছেন- মেহেরুন্নেছা তার এ স্বপ্নের সাথে জড়িয়ে রেখেছেন তার শাশুড়িকেও।
খামারের নামের সাথে যুক্ত করেছেন শাশুড়ির নাম। রহমান মরিয়ম (আরএম) ডেইরি ফার্ম অ্যান্ড অ্যাগ্রোফিসারিজের মরিয়ম হচ্ছেন তার শাশুড়ি। আর এম ডেইরিফার্ম অ্যান্ড অ্যাগ্রোফিসারিজের অবস্থান চায়ের দেশ কমলগঞ্জের আদমপুরে। ধীরে ধীরে খামারের পরিসর যখন বাড়তে থাকে তখন বাড়তি লোকবলের প্রয়োজন দেখা দেয়। লোকবল নিয়োগে স্থানীয় বেকার যুবকদের প্রাধান্য দেওয়া হয়। সকলের পরিশ্রমে সাফল্যের পথে হাঁটতে থাকে আর এম ডেইরিফার্ম।
২০১৪ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৮ বছরে খামারটি পরিণত হয় একটি আদর্শ খামারে। উৎপাদন বাড়ে, গরুরসংখ্যা বেড়ে হয় দেড় শতাধিক। উৎপাদন বাড়ার সাথে সাথে খামারের পরিসরও বাড়ে। গরুর খামারের সাথে যুক্ত হয় মাছের খামারও। ফলের বাগানও যুক্ত হয় খামারের পরিসরে। এগিয়ে যাওয়ার এ যাত্রায় সঙ্গী হয় পূবালী ব্যাংকও। খামারের উন্নয়নে ঋণ দেয় ব্যাংকটি।
টিনের শেড দিয়ে তৈরির গরুর থাকার জায়গা
ব্যাংকটির আদমপুর বাজার শাখা ব্যবস্থাপক সুমিত সেন জানান, মূলতঃ সে ঋণের উপর ভর করে আরও দুইটি শেড নির্মাণের কাজ চলছে খামারে। পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়েই তৈরি করা হয় অবকাঠামো। শেডগুলোর পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা, গরুবাছুরের খাবারের সুবিধা, বিশ্রামের জন্য পর্যাপ্ত পরিসর এবং বেলা শেষে মুক্ত পরিবেশে গোচারণের ব্যবস্থা রয়েছে এই খামারে। যা গরুগুলোকে সুস্থতায় বেড়ে উঠতে সহায়তা করছে।
খামারের দক্ষিণ সীমানায় নির্মাণ করা হয়েছে আধুনিক সুবিধা সংবলিত দ্বিতল ফার্ম হাউজ। ফার্ম ব্যবস্থাপনায় কার্যালয়, রেস্ট হাউজসহ নামাজের স্থান রাখা হয়েছে এখানে। খামারে রয়েছে ৩টি পুকুর। যাতে মাছচাষ করা হয়। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাকিটা বিক্রিও করা হয়। পুকুর পাড়ে নারকেল, সুপারি, লেবু, পেয়ারা, আম, জাম, লিচু, কাঁঠালসহ নানা জাতের ফলদ গাছ লাগানো হয়েছে। বিশেষ করে চলতি মৌসুমে পুকুরপারে পরীক্ষামূলকভাবে ড্রাগন ফলের চাষ করে আশাতীত ফলন মিলেছে।
খামারের ভেতরে বনজবৃক্ষও রোপণ করা হয়েছে। পুকুর পাড়ের একটি ঘরে পরীক্ষামূলকভাবে পালন করা হচ্ছে কবুতর। আছে তিতির, টার্কিও।
মেহেরুননেছার সাথে কথা হয় তার স্বপ্নের খামার নিয়ে। তিনি বললেন, ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের আদর্শে অনুপ্রাাণিত হয়েই আমি এ খামার প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হই। নিজেকে স্বাবলম্বী করার পাশাপাশি কিছু মানুষের জীবিকার সংস্থান করতে পারছি এটাই আমার বড় পাওয়া। আমার স্বামী তার কর্মব্যস্ততার ফাঁকেও আমাকে সহযোগিতা করে চলেছেন। আমার শ্বশুর-ভাসুররা আমাকে সাহস না যোগালে আমার একার পক্ষে এ কর্মযজ্ঞ চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হত না।
কমলগঞ্জ উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মঈন উদ্দিন আইনিউজের প্রতিবেদককে বলেন, আমার জানামতে মেহেরুননেছা বেগমের এ খামারটি মৌলভীবাজার জেলার একটি শ্রেষ্ঠ ও বৃহৎখামার। পরিবেশের কোনরকম ক্ষতি না করেই এ রকম একটি উদ্যোগ যেমন স্থানীয় বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে, তেমনি এলাকার পুষ্টিজাত চাহিদা মিটিয়ে কমলগঞ্জের বাইরেও প্রতিদিন দুধ বিক্রি হচ্ছে।
তিনি বলেন, ঘর সংসার সামলেও মেহেরুননেছা এতো বড় একটি খামার পরিচালনা করছেন তা দেশের অন্যান্য নারীদেরও উৎসাহিত করবে। আমরা সবসময় তার পাশে আছি।
আইনিউজ/এইচএ
আইনিউজে আরও পড়ুন-
- কোমরে বাশি, হাতে তালি — গানই মদিনা ভাই’র জীবন-মরণ
- ‘গাছ হেংলানেছে- পয়সা মিলেগা’ : চা শ্রমিক ও চা শিল্প
- পোশাক নয়, নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ জরুরি
দুবাইয়ে লটারি জিতে একরাতে কোটিপতি বাংলাদেশী যুবক | দুবাই প্রবাসী
মানুষ হত্যা করেছে মা হাতিকে, দুধের জন্য কাঁদছে বাচ্চা হাতিটি
মৌলভীবাজারের সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী ভারত সরকারের পদ্মভূষণ পদকে ভূষিত
প্রকৃতির সন্তান খাসি - খাসিয়া জনগোষ্ঠী
৪০ লক্ষ টাকায় বিক্রি হলো একটি মাছ, রাতরাতি ধনী জেলে
- এলাচ চাষ করবেন যেভাবে
- প্লাস্টিক বোতলে সহজেই চাষ করুন পুঁই শাক
- কমলগঞ্জে,
আমন ধানে মাজরা পোকার আক্রমণ, চিন্তায় আছেন কৃষকরা - বঙ্গবন্ধু ব্রি ধান ১০০ চাষে সময় কম লাগে, খরচ বাঁচে
- ঔষধি গুণধর কালো মোরগের চাষ হচ্ছে বাংলাদেশেও
- বাড়ির টবে ক্যাপসিকাম চাষ পদ্ধতি
- বাড়ির ছাদে ড্রাগন ফলের চাষ পদ্ধতি
- দেশের বাজারে সারের দাম বেড়েছে আরও ৬ টাকা
- মাটি ছাড়া শুধু পানি দিয়ে ঘাস চাষ
- ভাদ্র মাসে চাষ করতে পারেন যেসব সবজি