Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, শনিবার   ১২ এপ্রিল ২০২৫,   চৈত্র ২৯ ১৪৩১

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ৩ জুলাই ২০১৯
আপডেট: ০৬:০৭, ৩ জুলাই ২০১৯

দ্বিতীয় আসামি রিফাত ফরাজী গ্রেফতার

বরগুনা : আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার দ্বিতীয় আসামি রিফাত ফরাজীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার (৩ জুলাই) সকাল ৯টায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মরুফ হোসেন। তবে তাকে কোথা থেকে কখন গ্রেফতার করা হয়েছে তা জানানো হয়নি। পুলিশ সুপার বলেন, ‘পরে সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।’ মঙ্গলবার (২ জুলাই) ভোরে এ মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। গ্রেফতার রিফাত ফরাজী নিহত নয়ন বন্ডের অন্যতম সহযোগী। গত  ২৬ জুন (বুধবার) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাত শরীফকে প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজীসহ দুর্বৃত্তরা। রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়শা আক্তার মিন্নি হামলাকারীদের বাধা দিয়েও স্বামীকে রক্ষা করতে পারেননি। রিফাতকে কুপিয়ে অস্ত্র উঁচিয়ে এলাকা ত্যাগ করে হামলাকারীরা। গুরুতর আহত রিফাতকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ওই দিন বিকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রিফাত শরীফকে কোপানোর একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। ওই ভিডিওতে নয়ন ও রিফাত ফরাজীকে রামদা দিয়ে রিফাত শরীফকে কোপাতে দেখা যায়। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতার রিফাত ফরাজী বরগুনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য দেলোয়ার হোসেনের ভায়রার ছেলে। রিফাত ফরাজীর ভাই রিশান ফরাজীও এ মামলার আসামি।তারা দুজনেই সহোদর। একসঙ্গেই তারা সব অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতো। বরগুনা পৌরসভার ধানসিঁড়ি সড়ক এলাকার দুলাল ফরাজীর বড় ছেলে রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজী। ধানসিঁড়ি সড়কের রিফাত ফরাজী ও রিশান বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির মূল ফটক ও বাসার দরজা তালাবদ্ধ। ওই এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, রিফাত শরীফ খুন হওয়ার পর থেকে রিফাত ফরাজীদের ঘরের দরজা তালাবদ্ধ ও বাড়ির গেট ভেতর থেকে আটকানো দেখতে পান তারা। ধানসিঁড়ি সড়কের কয়েকজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নয়ন বন্ডের ডান হাত ও বাম হাত হিসেবে কাজ করতো এই দুই ভাই। মাদক সেবন  মাদক ব্যবসাই ছিল তাদের মূল নেশা এবং পেশা। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক ছিনতাই ও ছাত্রদের মেসে ঢুকে মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই সন্ধ্যায় তরিকুল ইসলাম (২১) নামে এক প্রতিবেশীকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে রিফাত ফরাজী। এছাড়া, এই গ্রুপের নিয়মিত সদস্য ছিল আমতলার পাড় এলাকার চন্দন, বরগুনা পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ধানসিঁড়ি রোড এলাকার মো. মুসা, কেওড়াবুনিয়া এলাকার কালাম আকনের ছেলে রাব্বি আকন, কলেজিয়েট স্কুল রোড এলাকার মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, কেজি স্কুল এলাকার রায়হান, একই এলাকার মো. হাসান, সোনালীপাড়া এলাকার রিফাত, একই এলাকার অলি ও টিকটক হৃদয়।
এলাকাবাসী ও সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা বলছেন, নয়ন ও রিফাত দীর্ঘদিন ধরে নানা অপরাধে জড়িত থাকলেও ভয়ে কেউ মুখ খুলতো না। বারবার আইনের ফাঁক বেয়ে বের হয়ে ফের অপরাধে জড়িয়ে পড়তো তারা। গত বুধবার রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রিফাত ও নয়নের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন ভুক্তভোগীরা। ভুক্তভোগী তরিকুল জানান, একদিন তার সঙ্গে রিফাত ফরাজীর সামান্য কথা কাটাকাটি হয়। তখন রিফাত ফরাজী তাকে কুপানোর হুমকি দেয়। রিফাত ফরাজীর ভয়ে তিনি দেড় মাস ওই সন্ত্রাসীর বাসার সামনে দিয়ে না গিয়ে আধা কিলোমিটার পথ ঘুরে নিজ বাসায় যাওয়া-আসা করতেন। তবে এতেও ক্ষোভ কমেনি রিফাত ফরাজীর। হুমকি দেওয়ার দেড় মাসের মাথায় একদিন সন্ধ্যায় তরিকুল তার বাসার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় হামলার শিকার হন। এ সময় রিফাত দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তরিকুলের মাথায় গুরুতর জখম করে। এ ঘটনায় তরিকুলের বাবা বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। ২০১৭ সালে বরগুনার হোমিও চিকিৎসক ডা. আলাউদ্দিন আহমেদের ডিকেপি রোডের বাসার ছাত্র মেসে গিয়ে ধারালো অস্ত্রের মুখে বাসায় থাকা সব ছাত্রকে জিম্মি করে তাদের ১৪টি মোবাইল ছিনতাই করে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ করা হলে পুলিশ রিফাত ফরাজীর বাবা দুলাল ফরাজীকে আটক করে মোবাইলগুলো উদ্ধার করে। এ বিষয়ে ডা. আলাউদ্দিন আহমেদের ছেলে ডা. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, ‘ডিকেপি রোডে আমাদের ভাড়া দেওয়া বরগুনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মেসে গিয়ে ধারালো অস্ত্রের মুখে ১৪টি মোবাইল ছিনতাই করে রিফাত ফরাজী। এ ঘটনা জানার পর আমি বরগুনা সদর থানায় গিয়ে অভিযোগ করায় রিফাতের বাবা দুলাল ফরাজীকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। পরে তিনি রিফাতের কাছ থেকে ছিনতাই করা ১৪টি মোবাইলের মধ্যে ১১টি উদ্ধার করেন। আর বাকি তিনটি মোবাইল উদ্ধার করতে না পেরে নতুন মোবাইল কিনে দিয়ে থানা থেকে মুক্তি পান।’ নয়ন চিহ্নিত অপরাধী হিসেবে পরিচিত হলেও অজ্ঞাত কারণে তাকেও বেশিদিন কারাগারে আটক থাকতে হয়নি। ঘটনার পরদিন ২৭ জুন ১২ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন নিহত রিফাতের বাবা মো. আ. হালিম দুলাল শরীফ। আসামিরা হলো—সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড (২৫), মো. রিফাত ফরাজী (২৩), রিফাত ফরাজীর ভাই মো. রিশান ফরাজী (২০), চন্দন (২১), মো. মুসা, মো. রাব্বি আকন (১৯), মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত (১৯), রায়হান (১৯), মো. হাসান (১৯), রিফাত (২০), অলি (২২) ও টিকটক হৃদয় (২১)। বাকি পাঁচ থেকে ছয় জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। এ মামলায় এজাহারভুক্ত ১২ আসামির মধ্যে রিফাত ফরাজীসহ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অন্য দুই আসামি হলো—চন্দন ও মো. হাসান। এছাড়া, সন্দেহভাজন আরও চার জনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলো—তানভীর, মো. সাগর, কামরুল হাসান সাইমুন ও মো. নাজমুল হাসান। আর বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় প্রধান আসামি নয়ন বন্ড। এসএ/ইএন
Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়