নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট: ১৪:৩৮, ৩০ জুন ২০২২
ছাত্রীর কাছে হিরোইজম দেখাতে শিক্ষককে স্ট্যাম্প দিয়ে পেটায় জিতু

আশরাফুল আহসান জিতু
সাভারের আশুলিয়ার হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষকতার পাশাপাশি শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন উৎপল সরকার। শিক্ষার্থীদের ইউনিফর্ম, ইভটিজিং, ধূমপানসহ শৃঙ্খলাভঙ্গজনিত বিষয়গুলোও দেখভাল করতেন তিনি। দশম শ্রেণির ছাত্র আশরাফুল আহসান জিতুকেও তিনি অযাচিত ঘোরাফেরা করতে নিষেধ করেছিলেন। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে জিতু শিক্ষক উৎপল কুমারকে স্ট্যাম্প দিয়ে বেধড়ক মারধর করে।
র্যাব বলছে, আশরাফুল আহসান জিতু স্কুলের ছাত্র হলেও সে ওই প্রতিষ্ঠানের কলেজ পর্যায়ের একজন ছাত্রীর সঙ্গে অযাচিতভাবে ঘোরাফেরা করে বেড়াতো। বিষয়টি শিক্ষক উৎপল সরকারের চোখে পড়ে। তিনি জিতুকে এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেন। এতে ওই ছাত্রীর কাছে নিজের হিরোইজম দেখাতে উৎপল সরকারকে মারধর করে জিতু। এতেই ওই শিক্ষকের মৃত্যু হয়।
বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
ঘটনার পর জিতু পালিয়ে যায়। সে দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে। বুধবার (২৯ জুন) র্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র্যাব-১ ও র্যাব-৪-এর যৌথ অভিযানে গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকা থেকে আশরাফুল আহসান জিতু ওরফে জিতু দাদাকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারের জিতুকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করেছে র্যাব। জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, ঘটনার কয়েকদিন আগে জিতুকে ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীর সঙ্গে অযাচিতভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখেন শিক্ষক উৎপল সরকার। এসময় তিনি তাকে অযাচিত ঘোরাফেরা থেকে বিরত থাকতে বলেন। এ ঘটনায় জিতু শিক্ষকের ওপর ক্ষুব্ধ হয়। ওই ছাত্রীর কাছে নিজের হিরোইজম দেখাতে শিক্ষকের ওপর হামলার পরিকল্পনা করে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২৫ জুন ক্রিকেট স্ট্যাম্প স্কুলে নিয়ে আসে এবং তা শ্রেণিকক্ষের পেছনে লুকিয়ে রাখে। পরে কলেজ মাঠে ছাত্রীদের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলাকালীন শিক্ষক উৎপল কুমারকে মাঠের এক কোণে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জিতু স্ট্যাম্প দিয়ে তাকে বেধড়ক মারপিট করে।
র্যাবের এ কর্মকর্তা আরও জানান, জিতু শিক্ষক উৎপল সরকারকে প্রথমে পেছন থেকে মাথায় আঘাত করে। পরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে গুরুতর জখম করে, যার ফলে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন উৎপল সরকার মারা যান। ঘটনার দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত জিতু এলাকায় থাকলেও পরে গ্রেফতার এড়াতে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। সে প্রথমে বাসে করে মানিকগঞ্জে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে যায়। সেখানে এক রাত থেকে পরদিন আরিচা ফেরিঘাটে যায়। সেখান থেকে ট্রলারে নদী পার হয়ে পাবনার আতাইকুলাতে তার পরিচিত একজনের বাড়িতে আত্মগোপন করে।
‘পরদিন ভোরে সে আবারো তার অবস্থান পরিবর্তন করতে আতাইকুলা থেকে বাসে কাজীরহাট লঞ্চ টার্মিনালে আসে। লঞ্চে করে আরিচাঘাট পৌঁছে। সেখান থেকে বাসে গাজীপুরের শ্রীপুরে ধনুয়া গ্রামে এক বন্ধুর বাড়িতে আত্মগোপন করে। সেখান থেকেই জিতুকে গ্রেফতার করে র্যাব।’
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘জিতু প্রথমে স্কুল পড়াশোনা করতো। পরে সে মাদরাসায় ভর্তি হয়। এরপর আবার সে স্কুলে ভর্তি হয়। জিতু স্কুলের নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে বর্তমানে দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। জিতুর জেএসসির সার্টিফিকেট অনুযায়ী বয়স ১৯ বছর। কিন্তু মামলার এজাহারে তার বয়স ১৬ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সে স্কুলে সবার কাছে একজন উচ্ছৃঙ্খল ছাত্র হিসেবে পরিচিত। বিভিন্ন সময় শৃঙ্খলাভঙ্গ, মারামারিসহ স্কুলের পরিবেশ নষ্টের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। স্কুলে যাওয়া-আসার পথে ও স্কুল চলাকালীন ছাত্রীদের ইভটিজিং করতো জিতু। স্কুলে সবার সামনে ধূমপান, ইউনিফর্ম ছাড়া স্কুলে আসা-যাওয়া, মোটরসাইকেল নিয়ে বেপরোয়াভাবে চলাফেরা করতো।’
তিনি আরও বলেন, ‘জিতু তার নেতৃত্বে এলাকায় জিতু দাদা নামে একটি কিশোর গ্যাং গড়ে তোলে। গ্যাং সদস্যদের নিয়ে মাইক্রোবাসে বিভিন্ন এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতো। পরিবারের কাছে তার বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করলে জিতু তার অনুসারী গ্যাং সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে তাদের ওপর চড়াও হতো।’
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘নিহত শিক্ষক উৎপল সরকার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। তিনি ২০১৩ সালে আশুলিয়ার হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। তিনি ওই কলেজের শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। ফলে তিনি বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের স্কুল ইউনিফর্ম, ধূমপান ও ইভটিজিংসহ বিভিন্ন শৃঙ্খলাভঙ্গজনিত বিষয়ে পরামর্শ দিতেন। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খেলাধুলা পরিচালনা করানোসহ শিক্ষার্থীদের সুপরামর্শ, মোটিভেশন ও কাউন্সিলিংয়ে মাধ্যমে সৃজনশীলতা বিকাশেও ভূমিকা রাখতেন তিনি।’
জিতুর বাবাকে গ্রেফতার ও রিমান্ডে নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তদন্ত কর্মকর্তা মনে করেছেন তদন্তের স্বার্থে তাকে রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন। তাই জিতুর বাবাকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়েছেন। আমরা জিতুকে গ্রেফতারের আগে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তবে র্যাব সবসময় প্রকৃত আসামিকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করে। সেই ধারাবাহিকতায় আমরা প্রকৃত আসামি জিতুকে গ্রেফতার করেছি। তাকে থানায় হস্তান্তর করা হবে।’
জিতুর পরিবার থেকে শিক্ষক উৎপল সরকারের পরিবারকে হুমকি-ধামকির বিষয়ে র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা উৎপল সরকারের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু এমন কোনো হুমকি-ধামকির বিষয়ে তথ্য পাইনি।’
আইনিউজ/এসডিপি
- বরিশালে সন্ধ্যা নদীতে জেলের জালে ধরা পড়লো হাঙর
- বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ২০২৩ ফলাফল : নৌকা ৮৭৭৫৩, হাতপাখা ৩৪৩৪৫
- গাজীপুর সিটি নির্বাচন প্রাপ্ত ফলাফল
- প্রেমের টানে বরিশালে, ‘দেশি প্রেমিকের’ হাতে মার খেয়ে পালালেন ভারতীয় প্রেমকান্ত
- কুড়িয়ে পাওয়া পাঁচ লক্ষ টাকার প্রকৃত মালিককে খুঁজতে এলাকায় মাইকিং
- বাড়িতে ফোন দিয়ে জানলেন তিনি বাঘের থাবায় মারা গেছেন, চলছে দাফনের প্রস্তুতি
- চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে কর্মচারীরা
- সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জেতা স্বপ্ন-সোহাগী ঠাকুরগাঁওয়ের গর্ব
- দেলোয়ার হোসেন সাঈদী মারা গেছেন
- নির্বাচন ফলাফল লাইভ ২০২৪ | BD election result 2024