Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, সোমবার   ২১ এপ্রিল ২০২৫,   বৈশাখ ৮ ১৪৩২

রুপম আচার্য্য

প্রকাশিত: ১৭:৩৫, ৩ নভেম্বর ২০২৪

বিক্ষোভ সমাবেশ

আমরার পেটে আগুন লাগছে, আমরা রাজপথে নামছি: চা শ্রমিক

এনটিসির শতাধিক চা শ্রমিকেরা জড়ো হয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। ছবি: আই নিউজ

এনটিসির শতাধিক চা শ্রমিকেরা জড়ো হয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। ছবি: আই নিউজ

আট সপ্তাহের বকেয়া মজুরি পরিশোধ, রেশন ও ১৭ মাস যাবৎ চা শ্রমিকদের পিএফ অর্থ পিএফ অফিস ফান্ডে জমা প্রদানের দাবীতে মানববন্ধন ও বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের অফিসের সামনে অবস্থান ও বিক্ষোভ সমাবেশ পালন করেছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) চা-শ্রমিকেরা। 

‘আমরার পেটে আগুন লাগছে, আমরা রাজপথে নামছি, এই নামছি আমরারে গুলি করিয়া মারি দেও, আমি মরি যাইমু। কেউ আমাদের পাশে দাঁড়ায় না। আমরা ৬ সপ্তাহ ধরে মজুরি পাচ্ছি না, আমরার বাচ্চা কাচ্চা কান্দে আর সহ্য হয় না।’ বলেন, নারী চা শ্রমিক।

রোববার দুপুরে শ্রীমঙ্গলের মৌলভীবাজার রোডস্থ বাংলাদেশ শা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কার্যালয় (লেবার হাউস) হতে শতাধিক চা শ্রমিকেরা জড়ো হয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ পালন করেন। পরে চা শ্রমিকেরা চৌমুহনী চত্তর হয়ে ভানুগাছ রোডস্থ বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের অফিসের সামনে অবস্থান নেয় চা শ্রমিকেরা।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন জানায়, ‘রাষ্ট্রমালিকানাধীন ন্যাশনাল টি কোম্পানি লিমিটেড (এনটিসি) মালিকানাধীন দেশে সিলেট, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলা জুড়ে অবস্থিত চা বাগানের চা শ্রমিকদের মজুরী, রেশন, নায্য পাওনাদী মালিকপক্ষ কর্তৃক বিগত ০৮ সপ্তাহ যাবৎ অপরিশোধীত ও ১৭ মাস যাবৎ চা শ্রমিকদের পিএফ অর্থ পিএফ অফিস ফান্ডে জমা প্রদান না করার কারনে চা শ্রমিকগন নিদারুন কষ্টে দিনযাপন করছেন। ফাঁড়ি বাগানসহ ১৯টি চা বাগানের স্থায়ী ও অস্থায়ী শ্রমিক মোট ১৫ হাজার।’

চা শ্রমিক ইউনিয়ন আরও জানায়, ‘নারী ও পুরুষ শ্রমিকের হাত ধরে নির্ভরশীল ও পৌষ্য শ্রমিকসহ আনুমানিক ৬০ থেকে ৭০ হাজার চা জনগোষ্ঠি আজ অনাহারে ভোগান্তীর স্বীকার হচ্ছেন। চা বাগান গুলোর বিদ্যমান সমস্যা নিষ্পতির লক্ষ্যে বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের উপ-পরিচালকের সাথে মালিকপক্ষের প্রতিনিধিদের সাথে ইউনিয়ন ও চা শ্রমিকদের মাঝে একাধীকবার আলোচনা-বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও এযাবৎ শ্রমিকদের অনুকূলে যথাযথ ব্যবস্থা আসেনি। যার ফলেই বিদ্যমান শ্রম পরিস্থিতি দৃশ্যমান। যা পরবর্তীতে বিদ্যমান শ্রম অসন্তোষ ফুসে উঠতে পারে।’

কুরমা চা বাগানের শ্রমিক লাইলী বেগম বলেন, ‘আমাদের ৮ সপ্তাহ হইযাইতেছে, আমরা কাজ করিয়াও টাকা পাই না। কেনে পাইনা? আমরা কি খাইয়া কাজ করমু। আমাদের বাচ্চা আছে ৪টা ছোট ছোট বাচ্চা। আমরা কচু শাকটা আনিয়া, এরা কচু শাকটাও খুঁজে না। একজনা রজি আমরা, সাতজনা খানাওয়ালা পরিবারে। এগুলো কিতা কেউ দেখে না আমরার। কোন দোকান মাজনেরা আমাদের খরচ দেয় না। বাকিও দেয় না, আমরা কি কাইয়া চলমু।’

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরি বলেন, ‘এনটিসি বাগানের চা শ্রমিকেরা ৮ সপ্তাহ যাবত মজুরি পাচ্ছে না। কোম্পানির শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা কাটার পরেও মালিকপক্ষ সেটাকে হস্তমজুদ করে রেখেছে, তারা পিএফ অফিসে জমা দেয়নাই। এছাড়া শ্রমিকদের বাড়িঘর, আবাসনের ব্যবস্থা, পানি ও চিকিৎসা ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন রকমের সমস্যা নিমজ্জিত করে রেখেছেন এনটিসি কোম্পানির চা শ্রমিকদের। ১২ টি ও ফাঁড়ি বাগানসহ ১৯ টি চা বাগান এবং শ্রমিক সংখ্যা প্রায় ১২ হাজারের মতো। তাদের মজুরি দিচ্ছে না, বাগান বন্ধ হয়ে গেছে। খুব অসহায় অবস্থায় না খেয়ে রয়েছে শ্রমিকেরা।’

তিনি আরো বলেন, ‘এই এনটিসি কোম্পানির অব্যবস্থাপনার কারণে তাঁদের ব্যক্তিগতভাবে দায়িত্ব পালনে তাদের অক্ষমতা, দূর্বলতা এবং তাদের বিভিন্ন ত্রুটির কারণে কোম্পানির বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে এর আগে যাঁরা দায়িত্বে ছিল তারা। কোম্পানির বারোটা বাজিয়েছে আর আমাদের শ্রমিকদের বাজিয়ে দিয়ে চব্বিশটা। শ্রমিকেরা আজ অসহায় অবস্থায় পরে রয়েছে।’

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা বলেন, ‘এনটিসির ১২ টি চা বাগান ও ফাঁড়িসহ ১৯ টি চা বাগানের শ্রমিকেরা না খেয়ে উপবাস রয়েছে। ৮ মাস ধরে তলব দিচ্ছে না। রেশন দিচ্ছে না। এবং তাদের যে রক্তের টাকা, তারা যে অর্জন করছে প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা। সে টাকা ১৭ মাস ধরে দিচ্ছে না। এতে করে শ্রমিকেরা বঞ্চিত হচ্ছে। যারা বৃদ্ধ হয়েছে, অবসরপ্রাপ্ত হয়েছেন তারা কিন্তু ফান্ডের টাকা পাচ্ছে না। তারা তাদের রুজি করা টাকা না পেয়েও মৃত্যুবরণ করছে। এতো বড় একটা কোম্পানি কাজ করছে, কিন্তু টাকা পাচ্ছে না। বেতন না পেয়েও দীর্ঘদিন শ্রমিকরা কাজ করেছে। শ্রমিকেরা বেতন, রেশন না পেয়ে রাজপথে নামতে বাধ্য হয়েছে।’

এছাড়া দ্রুততম সময়ের মধ্যে এনটিসি মালিকানাধীন কর্তৃপক্ষের সাথে বিদ্যমান সৃষ্ট সমস্যা নিষ্পতিতে এবং চা শিল্পের উৎপাদন অব্যাহত চা শ্রমিক স্বার্থ রক্ষার্থে উত্থাপিত শ্রম পরিস্থিতি নিরসনের দাবি জানানো হয়। পরে শ্রীমঙ্গলস্থ বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নাহিদুল ইসলামের মাধ্যমে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়ের সচিব বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দ।

আই নিউজ

Green Tea
সারাবাংলা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়