মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি
বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে রণক্ষেত্র মুন্সীগঞ্জ, গুলিবিদ্ধ ২
সংঘর্ষে যুবদলের দুই কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বুধবার বিকেল ঘণ্টাব্যাপী চলা এ সংঘর্ষের ফলে মুন্সীগঞ্জের মুকারপুর এলাকা ভয়ংকর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) সাড়ে ৩টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত চলা এ সংঘর্ষে বিএনপি নেতাকর্মীরা চারদিক থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে মুহুর্মুহু ইটপাটেকল ছোড়ে। পুলিশ ও সাংবাদিকদের অন্তত ছয়টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয় বিএনপি কর্মীরা। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশও পাল্টা ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল ছোড়ে।
বিএনপি নেতাদের দাবি, পুলিশের ছোড়া টিয়ারশেল, গুলি ও রাবার বুলেটে তাদের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছে। অন্যদিকে পুলিশ কর্মকর্তাদের ভাষ্য, বিএনপি নেতাকর্মীদের হামলায় তাদের অন্তত ১৫ সদস্য আহত হয়।
এ ছাড়া সংঘর্ষের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে আহত হয়েছেন তিন সংবাদকর্মী। এদিকে মুন্সীগঞ্জে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশের হামলার অভিযোগে গতকাল সন্ধ্যায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করে বিএনপি নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনও করা হয়।
মুন্সীগঞ্জের বিএনপি নেতাদের দাবি, পুলিশের এক কর্মকর্তা তাদের কর্মসূচির ব্যানার ছিঁড়ে ফেলায় সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। তবে পুলিশ দাবি করেছে, বিএনপি নেতাকর্মীরা পরিকল্পিতভাবে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছুড়েছে।
জানা গেছে, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সদর উপজেলা, মুন্সীগঞ্জ শহর ও মিরকাদিম পৌর বিএনপি শহরের মুক্তারপুর এলাকার পুরাতন ফেরিঘাটে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে। এতে অংশ নিতে দুপুর আড়াইটা থেকে মুক্তারপুর এলাকার আশপাশে বিএনপি নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকে।
বিএনপির বিক্ষোভ মিছিলের খবর পুলিশ সদস্যরাও আগে থেকে অবগত থাকায় তারা মুক্তারপুর পুরাতন ফেরিঘাট এলাকায় অবস্থান নেয়। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সদর উপজেলার আহ্বায়ক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ এবং শহর শাখার আহ্বায়ক সাবেক পৌর মেয়র একেএম ইরাদত মানুর নেতৃত্বে বিএনপি নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পুরাতন ফেরিঘাট এলাকায় আসে।
এরপর বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুস সালাম ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব কামরুজ্জামান রতনের নেতৃত্বে বিএনপি নেতাকর্মীরা আরেকটি মিছিল নিয়ে সেখানে যায়। এ সময় বিএনপি নেতারা ট্রাকের ওপর দাঁড়িয়ে সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এরই মধ্যে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে পুরাতন ফেরিঘাট এলাকায় আসতে শুরু করলে পুলিশ বাধা দিতে এগিয়ে যায়।
পুলিশ সদস্যরা একটি মিছিলের ব্যানার ছিনিয়ে নিলে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে বিএনপি নেতাকর্মীরা। এক পর্যায়ে চারদিক থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করে তারা। প্রাণ বাঁচাতে পুলিশ সদস্যরাও ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল ছুড়তে থাকে। সবমিলিয়ে ওই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে রয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মিনহাজ-উল-ইসলাম, সদর থানার ওসি তারিকুজ্জামান, পরিদর্শক (অপারেশন) মোজাম্মেল হক, এসআই কাজল দাস, এসআই মাঈনউদ্দিন, এসআই সুকান্ত বাউল, এসআই আমিনুল হাসান, এসআই অজিত, এসআই ইলিয়াস, কনস্টেবল রায়হান, দৈনিক সমকালের জেলা প্রতিনিধি কাজী সাব্বির আহমেদ দীপু, দৈনিক দিনকালের জেলা প্রতিনিধি গোলজার হোসেন এবং দৈনিক কালবেলার মো. রুবেল। তাদের মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
- নির্বাচনে বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য প্রার্থী হবেন মেয়র আরিফ!
- হবিগঞ্জে জমিতে পানি সেচ দেওয়া নিয়ে সংঘর্ষে হতাহত ৪০
অন্যদিকে আহত বিএনপি নেতাকর্মীদের বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সংঘর্ষে যুবদলের দুই কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তারা হলেন সদর উপজেলার চরকেওয়ার ইউনিয়নের দক্ষিণ গুহেরকান্দি গ্রামের জাহাঙ্গীর মাদবর ও মিরকাদিম পৌরসভার মুরমা গ্রামের শাওন। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সদর থানার ওসি তারিকুজ্জামান বলেন, ‘বিএনপি সমাবেশ করার জন্য অনুমতি নেয়নি। তারপরও তারা মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে। মিছিল নিয়ে শত শত নেতাকর্মী মুক্তারপুর পুরাতন ফেরিঘাট এলাকায় আসতে থাকলে পুলিশ বাধা দেয়। এক পর্যায়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা পরিকল্পিতভাবে পুলিশের ওপর হামলা করে।’
তবে পরিকল্পিতভাবে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সদর উপজেলা, মুন্সীগঞ্জ শহর ও মিরকাদিম পৌর বিএনপির নেতাকর্মীরা মুক্তারপুর ফেরিঘাট এলাকায় জড়ো হচ্ছিল। এ সময় দুদিক থেকে দুটি মিছিল আসছিল। হঠাৎ পুলিশ আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। মিছিলের ব্যানার কেড়ে নেয় ও লাঠিচার্জ করে। এতে নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়। পুলিশের ওপর হামলা হয়েছে এমন কথা আমার জানা নেই।’
পুলিশের হামলায় বিএনপির অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলেও দাবি করেন বিএনপির এই নেতা। তবে তিনি আহত নেতাকর্মীদের নামের তালিকা দিতে পারেননি।
নয়াপল্টনে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল: মুন্সীগঞ্জে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগে গতকাল সন্ধ্যায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করে বিএনপির নেতাকর্মীরা। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে কাকরাইল নাইটিঙ্গেল মোড় ঘুরে আবারও দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে মিছিলে বিএনপি নেতাদের মধ্যে অংশ নেন কেন্দ্রীয় নেতা আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, আব্দুল মোনায়েম মুন্না, খন্দকার এনামুল হক এনাম, ডা. জাহেদুল কবির জাহিদ, ছাত্রদলের কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণসহ শতাধিক নেতাকর্মী। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির সমাবেশে হামলার প্রতিবাদে তারা সরকারবিরোধী স্লোগান দেন।
মুন্সীগঞ্জের ঘটনার প্রতিবাদে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনও করা হয়। সেখানে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘মুন্সীগঞ্জ শহরের মুক্তারপুরে বিএনপির সমাবেশে জনগণ ও নেতাকর্মীরা জমায়েত হলে বিনা উসকানিতে পুলিশ হামলা চালিয়ে ও নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে শতাধিক নেতাকর্মীকে গুরুতর আহত করেছে। পুলিশের এই নির্মম হামলায় সাংবাদিকরাও রেহাই পাননি।’
আইনিউজ/এইচএ
আইনিউজে আরও পড়ুন-
- ২০ হাজার গানের জনক গাজী মাজহারুল আনোয়ার ও তার কীর্তি
- প্রেম-ভালোবাসার ১০ উপকারিতা : শ্রেষ্ঠ কিছু প্রেমের গল্প
- কোমরে বাশি, হাতে তালি — গানই মদিনা ভাই’র জীবন-মরণ
দেখুন আইনিউজের ভিডিও গ্যালারি
সৌদি আরবে মেয়েকে নির্যাতনের খবরে মায়ের আহাজারি-কান্না
গ্রিসের বস্তিতে বাংলাদেশীদের মানবেতর জীবন, অধিকাংশই সিলেটি
গ্রিসে পাঁচ বছরের ভিসা পাবে বাংলাদেশিরা
- বরিশালে সন্ধ্যা নদীতে জেলের জালে ধরা পড়লো হাঙর
- বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ২০২৩ ফলাফল : নৌকা ৮৭৭৫৩, হাতপাখা ৩৪৩৪৫
- গাজীপুর সিটি নির্বাচন প্রাপ্ত ফলাফল
- বাড়িতে ফোন দিয়ে জানলেন তিনি বাঘের থাবায় মারা গেছেন, চলছে দাফনের প্রস্তুতি
- প্রেমের টানে বরিশালে, ‘দেশি প্রেমিকের’ হাতে মার খেয়ে পালালেন ভারতীয় প্রেমকান্ত
- কুড়িয়ে পাওয়া পাঁচ লক্ষ টাকার প্রকৃত মালিককে খুঁজতে এলাকায় মাইকিং
- চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে কর্মচারীরা
- সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জেতা স্বপ্ন-সোহাগী ঠাকুরগাঁওয়ের গর্ব
- দেলোয়ার হোসেন সাঈদী মারা গেছেন
- নির্বাচন ফলাফল লাইভ ২০২৪ | BD election result 2024