নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট: ০১:৪৪, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
টি রিসোর্ট অ্যান্ড মিউজিয়াম
রাতারাতি বাড়ি-গাড়ির মালিক শামসুদ্দোহা!
টি রিসোর্ট এন্ড মিউজিয়ামের মূল ফটক। ছবি: আই নিউজ
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বাংলাদেশ চা বোর্ডের আওতাধীন টি রিসোর্ট এন্ড মিউজিয়ামের ম্যানেজার মো. শামসুদ্দোহা দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকারী অর্থ আত্মসাৎ, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির আখড়ার মতো কর্মকাণ্ড চালিয়ে রাতারাতি গাড়ি-বাড়ি ও কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন।
দীর্ঘ এক মাসের অনুসন্ধানে টি রিসোর্ট এন্ড মিউজিয়ামের ভিতর চলমান এসব অনিয়ম ও দূর্নীতির চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে। যা দীর্ঘদিন ধরে চলছে। রিসোর্টের কোন কর্মচারি দূর্নীতির বিষয়ে মুখ খুলতে চাইলেই সাবেক ছাত্রলীগের কেন্দ্রিয় কমিটির সভাপতি মো. রেজোয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের আপন ভাই বলে ভয় দেখাতেন।
এদিকে হুন্ডির মাধ্যমে দুবাই টাকা পাঠানোর বিষয়ে সত্যতা যাচাই করতে কথা হয় ওই ব্যক্তির সাথে (যিনি টাকা পাঠিয়েছেন)। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, ‘২০২৩ সালে তাঁর মাধ্যমেই ৮ লাখ টাকা দুবাই পাঠিয়েছেন টি রিসোর্ট এন্ড মিউজিয়ামের ম্যানেজার মো. শামসুদ্দোহা।’
বাংলাদেশ চা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আব্দুস সালাম ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসের (১১, ১২ ও ১৩ তারিখ) তিন রাত্রি টি রিসোর্ট এ অবস্থান করেন। তিনি তিনদিনের খাবার বিল বাবদ ৩ লাখ ২৬ হাজার ৩১ টাকা এবং বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতের জন্য গাড়ী ভাড়া বাবদ ১৪ হাজার ৭০০ টাকা পরিশোধ করেন। কিন্তু অফিসের ফাইনাল বিলে শামসুদ্দোহা খাবার বিল বাবদ ৩ লাখ ১ হাজার ২৮৩ টাকা এবং গাড়ী ভাড়া বাবদ ৯ হাজার ৬৬১ টাকা জমা করেন। খাবার ও গাড়ী ভাড়ার ব্যবধানকৃত ২৯ হাজার ৭৮৭ টাকা তিনি তার প্যাকেটে ভরেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২৩ সালের ৪ এপ্রিল টি রিসোর্ট এন্ড মিউজিয়ামে মুকুল, এসআইবিএল নামে কয়েকটি বাংলো বুকিং ছিল। তাদের খাবার ও অন্যান্য বিলের জন্য তাঁরা ৭৮ হাজার ৯১৬ টাকা পরিশোধ করেছেন। কিন্তু অফিসের ফাইনাল বিলে শামসুদ্দোহা ৭৪ হাজার ৫৯৬ টাকা জমা করেন। এতে অবশিষ্ট ৪ হাজার ৩২০ টাকা তিনি তার প্যাকেটে নিয়ে নেন। চলতি বছরের আগস্টের ২৪ তারিখ আকিব খান নামে একজন গেস্ট আসেন। তিনি ভোর ৫ টার দিকে আসায়, অর্ধেক বেলার চার্জ (অর্থ) নেন ম্যানেজার। সেই অর্ধেক বেলার চার্জের ৪ হাজার ৮৩০ টাকা নিজের প্যাকেটে ঢুকিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ম্যানেজার মো. শামসুদ্দোহা অফিসের মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট নাম্বার থাকা সত্বেও অফিসে গেস্টদের সাথে কথোপকথনের জন্য ব্যবহৃত নাম্বারে (01712071502) লেনদেন করেছেন। টি রিসোর্ট এন্ড মিউজিয়াম এর ম্যানেজার মো. শামসুদ্দোহা (সাবেক ছাত্রলীগের কেন্দ্রিয় কমিটির সভাপতি মো. রেজোয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এর ভাই)। তবে শোভনের বিষয়ে অস্বীকার করে তিনি বলেন, শোভন তাঁর আপন ভাই নয়, এলাকার ছোট ভাই বলে জানিয়েছেন মো. শামসুদ্দোহা।
২০২৩ সালের আগস্ট মাসের ২৬ তারিখ গৌরাঙ্গ রায় রিসোর্টের বাংলোতে অবস্থান করেন। তিনি এবং তার বন্ধুবান্ধব মিলে ঘরোয়া পরিবেশে বিনোদনের আয়োজন করলে রিসোর্ট ম্যানেজার শামসুদ্দোহা তাঁদের থেকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন। উক্ত অর্থ তিনি (শামসুদ্দোহা) অফিসে জমা না করে নিজের প্যাকেটে ভরেন।
এদিকে রিসোর্টটির ম্যানেজার পদ শূন্য থাকায়, গত ২০১৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর বণিক বার্তা পত্রিকায় শিক্ষাগত যোগ্যতা ডিগ্রি পাশ (বিএ) চেয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। কিন্তু এইচএসসি পাশ শিক্ষাগত যোগ্যতায় রিসোর্টের ম্যানেজার পদে নিয়োগ পান মো. শামসুদ্দোহা। যেখানে প্রতিদিন দেশের স্বনামধন্য ভিভিআইপি অতিথিরা, সরকারী, বেসরকারী উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাগণ এসে থাকেন। সেখানে কিভাবে এত অল্প শিক্ষিত এরকম একজন অযোগ্য লোক নিয়োগ পায়। তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। এজন্য প্রতিষ্ঠানের সুনাম, ব্যবসায়িক ক্ষতি ও সরকারী প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তী নষ্ট হচ্ছে বলে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গরা প্রশ্ন তুলেছেন।
ওই রিসোর্টের একাধিক কর্মচারী সুত্রে জানা যায়, গত ২০২৩ সালের মে মাসের ৬ তারিখে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের ৬০জন কর্মকর্তা টি রিসোর্টে দুপুরের খাবার সম্পন্ন করেন। কিন্তু ভোক্তা অধিকার অফিস উক্ত খাবার বিল পরিশোধ করলেও তার অর্থ টি রিসোর্ট খাতে জমা হয়নি। যা বিলের অর্থ শামসুদ্দোহা আত্মসাৎ করেন। তাছাড়া অনেক বুকিং অগ্রিম মানি বুকিং বাতিল হওয়ার পর নিয়মমত তা ফেরত না দিয়ে তিনি নিজে আত্মসাৎ করেন।
সুত্র বলছে, টি রিসোর্ট এন্ড মিউজিয়ামের ম্যানেজার শামসুদ্দোহা বিগত ছয় বছর যাবৎ চাকুরি করে অনেক অর্থ অবৈধভাবে হাতিয়ে নিয়েছেন। তিনি ১০লক্ষ টাকা ব্যয়ে টয়োটা ফানকার্গো ঢাকা মেট্রো -খ ১২-১৫২৬ সিরিয়ালের ১টি প্রাইভেট কার ক্রয় করেন। গত বছর (২০২৩) সালে তাঁর স্ত্রী ও মেয়েকে ৩ মাসের জন্য দুবাই ট্যুরিস্ট ভিসায় বেড়াতে পাঠান এবং দেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে প্রায় ৮ লক্ষ টাকা দুবাই পাঠিয়েছেন। তাছাড়া গতবছরের ২০২৩ সালে রংপুরে তাঁর নিজ গ্রামের বাড়ীতে অর্ধ কোটি টাকা মুল্যের সম্পত্তি ক্রয় করেন।
এদিকে টি রিসোর্ট এন্ড মিউজিয়ামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী ও বিভিন্ন ব্যক্তিরা জানান, রিসোর্ট -এর তাঁর এলাকার নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীদের খাওয়া দাওয়া থেকে শুরু করে যাবতীয় বৈধ অবৈধ যাবতীয় সুযোগ সুবিধা নিয়মিত দিচ্ছেন। কিন্তু অন্যদের প্রতি তিনি খুবই দুর্ব্যবহার করে থাকেন। তিনি (শামসুদ্দোহা) বলে বেড়ান, চা বোর্ড চেয়ারম্যান আমার এলাকার। তাছাড়া চেয়ারম্যান ও টি রিসোর্টের সিইও এর ক্ষমতা ব্যবহার করে তিনি রিসোর্ট এ আগত অতিথিদের সাথে এবং অন্য সব কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে খুবই খারাপ আচরণ করে থাকেন। চেয়ারম্যানের দাপট দেখিয়ে সব অপকর্ম করে যাচ্ছেন বলে রয়েছে অভিযোগ। শামসুদ্দোহার অত্যাচারে এ পর্যন্ত প্রায় ৯ থেকে ১০ জন কর্মচারীকে চাকুরী ছাড়তে বাধ্য করেছেন।
রিসোর্টটিতে থাকা একাধিক কর্মচারীরা জানায়, ম্যানেজারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে তাঁর হাজিরা কেটে দেয়। গেইট বন্ধ করে দেয়, কাজে আসতে দেয় না। ছুটি মঞ্জুর করে ছুটি কাটালেও বেতন কর্তন করে দেয়। কিন্তু তার এলাকার কর্মচারীদের এবং অন্যান্য কর্মচারী যারা রয়েছেন, তাঁদের বেতন কর্তন করা হয় না। একদিন যদি অসুস্থ থাকে, ছুটি কাটায় তাহলে তিনদিনের বেতন কেটে নেয়।
চাকরিচ্যুত হওয়া টি রিসোর্টের সাবেক হেড কুক মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘সেইদিন ছিলো ২০১৯ সালের ১৯ই সেপ্টেম্বর। হঠাৎ টি রিসোর্টে ম্যানেজার মো. শামসুদ্দোহার সাথে একটু তর্কবিতর্ক হয়। ২০ তারিখ থেকে ২৫ তারিখ পর্যন্ত আমার কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আমি কাজ করেছি, তবে আমার বেতন দেওয়া হয়নি। ২৬ তারিখে পুনরায় কাজে যোগদান করি। ঐ দিন থেকে ১৫০ জনের একটা টিম ছিলো (গেস্ট) ৭ অক্টোবর পযন্ত ছিলেন রিসোর্টে। ১ নভেম্বর থেকে পুনরায় আমার কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখন মো. শামসুদ্দোহাকে জিজ্ঞেসা করি কেন আমি কাজ করতে পারব না? তখন তিনি বলেন রিসোর্টে আপনাকে প্রয়োজন নেই। তারপরও আমি কাজ করি।’
তিনি বলেন, ‘রিসোর্টের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিতে গেলে হাজিরা খাতা ওনার অফিসে রেখে দেওয়া হয়। আমি স্বাক্ষর দিতে পারিনি। তখন আবার তাকে বলি; আমার কাজ বন্ধ করে আবার পূনরায় কাজে নেওয়া হলো কেন? তখন ওনি বলেন আমার প্রয়োজন ছিলো নিছি, এখন প্রয়োজন নেই আমি বন্ধ করে দিয়েছি। তবে আমি যে কাজ করেছি, তার প্রমাণ আমার কাছে আছে।’
কামাল আরো বলেন, ‘আমাকে বেতনও দেওয়া হয়নি। তাঁর উদ্দেশ্য ছিলো আমাকে বের করে দেওয়া। তাঁর কারণ হলো আমি তাদের বিষয়ে সবকিছু জানতাম, তাদের অনিয়মের বিষয়। তারা যে কি পরিমাণ লুটপাট করেছে এই রিসোর্ট থেকে। আর এটাই একমাত্র উদ্দেশ্য আমাকে বের করার। আমি নিরীহ, তাই কোন প্রতিবাদ করেনি। তারপরও মো. শামসুদ্দোহারকে অনুরোধ করেছিলাম কিন্তু তিনি আমার কোন কথা শুনেননি। আমি যে এই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছি, তার একটা অভিজ্ঞতা সার্টিফিকেট চেয়েছিলাম। কিন্তু তাও আমাকে দেওয়া হয়নি। আমার বাসায় গ্যাস লাইন, বিদ্যুৎ লাইন কেটে দেওয়া হয়। বিনা অপরাধে আমাকে চাকরিচ্যুত করেছে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’
এসব অনিয়ম, দূর্নীতির বিষয়ে জানতে চেয়ে শামসুদ্দোহার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সকল অনিয়ম দূর্নীতি অস্বীকার করে বলেন, ‘তিনি ২০১৮ সালে নিয়োগ পান এবং তিনি ডিগ্রি পাস। ১২ লাখ টাকায় বাড়ির জায়গা বিক্রি করে ৮ লাখ টাকায় গাড়ি কিনেছেন বলে তিনি জানান। দুবাইতে ব্যাংকের মাধ্যমে প্রায় দেড়-দুই লাখ টাকার মতো পাঠান। অবৈধ কোন পথে টাকা পাঠাননি।’
পরিবারের দুবাই ট্যুরের বিষয়ে শামসুদ্দোহা বলেন, ‘শ্বশুর বাড়ির সম্পর্কের আত্মীয় দুবাই থাকেন, তিনি স্পন্সর করে নিয়ে গেছে আমার পরিবরকে। তাছাড়া টি রিসোর্টে আসা গেস্টদের বিলের হিসাবের সকল ডকুমেন্টস অফিসে রয়েছে। তিনদিনের গেস্ট থাকার খরচের বিষয়ে একটি হিসেব চাইলে তিনি অফিসে ডাইরেক্টরের সাথে কথা বলার জন্য বলেন।’
আই নিউজ/আরএ
- বরিশালে সন্ধ্যা নদীতে জেলের জালে ধরা পড়লো হাঙর
- বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ২০২৩ ফলাফল : নৌকা ৮৭৭৫৩, হাতপাখা ৩৪৩৪৫
- গাজীপুর সিটি নির্বাচন প্রাপ্ত ফলাফল
- বাড়িতে ফোন দিয়ে জানলেন তিনি বাঘের থাবায় মারা গেছেন, চলছে দাফনের প্রস্তুতি
- প্রেমের টানে বরিশালে, ‘দেশি প্রেমিকের’ হাতে মার খেয়ে পালালেন ভারতীয় প্রেমকান্ত
- কুড়িয়ে পাওয়া পাঁচ লক্ষ টাকার প্রকৃত মালিককে খুঁজতে এলাকায় মাইকিং
- চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে কর্মচারীরা
- সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জেতা স্বপ্ন-সোহাগী ঠাকুরগাঁওয়ের গর্ব
- দেলোয়ার হোসেন সাঈদী মারা গেছেন
- নির্বাচন ফলাফল লাইভ ২০২৪ | BD election result 2024