সাইফুর রহমান তুহিন
টেস্ট ক্রিকেটে ভালো করতে চাই আকর্ষণীয় ফার্স্টক্লাস ক্রিকেট
ছবি- সংগৃহীত
২০০০ সালের ২৬ জুন টেস্ট স্ট্যাটাস তথা আইসিসির পূর্ণ সদস্যপদ লাভের পর থেকেই সবসময় আলোচনায় থেকেছে বাংলাদেশের ঘরোয়া ফার্স্টক্লাস ক্রিকেট। শুরু থেকেই জাতীয় ক্রিকেট লিগ (এনসিএল) নামের টুর্নামেন্টটির গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বার বার। খুবই মন্থর পিচে খেলা হওয়া, প্রতিদ্বন্দ্বিতার আমেজ কম থাকা, ম্যাচ ফি ও প্রাইজমানি অনেক কম হওয়ায় খেলোয়াড়দের জীবিকার সম্পূর্ণ নিশ্চয়তা না থাকা, জাতীয় দলের তারকাদের অংশগ্রহণ কমতে কমতে প্রায় শূন্যতে নেমে আসা- এসব কারণে অনেকেই এটিকে ‘পিকনিক লিগ’ আখ্যায়িত করে থাকেন।
‘বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ’ (বিসিএল) নামে চার দলের অন্য আরেকটি লিগ প্রায় এক যুগ আগে শুরু হলেও এটিও জমজমাট হয়ে উঠতে পারেনি, ম্যাচসংখ্যাও কম। আর এর যে প্রভাব পড়াটা অবধারিত তা হলো টেস্ট ক্রিকেটে ২৪ বছরের বেশি অতিক্রান্ত হওয়ার পরও আমরা র্যাংকিংয়ের তলানিতে পড়ে আছি। ২০২২ সালের শুরুতে নিউজিল্যান্ডের
মাটিতে একটি টেস্ট জেতা এবং সম্প্রতি পাকিস্তানের বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ জেতা বাদ দিলে বিদেশে আমাদের রেকর্ড একবারেই সন্তোষজনক নয়। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য যথাযথ কর্মপন্থা সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিম্নে উত্থাপন করা হলো :
ফার্স্টক্লাস ক্রিকেটে পরিবর্তন আনা
জাতীয় ক্রিকেট লিগে দুটি গ্রুপে সাতটি বিভাগীয় দলের সাথে ঢাকা মেট্রো অংশ নেয়। টায়ার ওয়ানে খেলে শীর্ষ চারটি দল এবং এবং টায়ার টু-তে খেলে নিচের সারির চারটি দল। রেলিগেশনের নিয়মও আছে। তবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মোট ম্যাচের সংখ্যা। টায়ার ওয়ান ও টু-তে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ভিত্তিতে সর্বোচ্চ ছয়টি ম্যাচ খেলা যায় যা যথেষ্ট নয়। হয়তো চার ম্যাচ খেলে একজন ব্যাটার কিংবা বোলার ছন্দে ফিরলো কিন্তু এরপর আর দুটি মাত্র ম্যাচ।
আর বিসিএল-এ তো সর্বমোট ম্যাচই মাত্র সাতটি। তবে সম্প্রতি দেশের অন্যতম সেরা ক্রিকেট মস্তিষ্ক হিসেবে পরিচিত জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু বিসিবি’র প্রধান নির্বাচক হিসেবে আসীন হওয়ার পর
জাতীয় ক্রিকেট লিগের আলাদা দুটি স্তর তুলে দিয়ে আট দলের হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে লিগের প্রস্তাব দিয়েছেন। আর এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে তা হবে চমৎকার এবং একটি দল পাবে কমপক্ষে ১৪টি করে ম্যাচ। এরপর আর বিসিএল-এর
দরকার নেই, এটিকে টি-টোয়েন্টিতে রূপ দিলে বরং তা হতে পারে ফ্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টি-টোয়েন্টি লিগ বিপিএল এর একটি ব্যাকআপ টুর্নামেন্ট।
প্রয়োজন ভালো মানের ভেন্যু
নতুন কাঠামোর জাতীয় লিগে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে মানেই আটটি ভেন্যুতে খেলা। আমাদের ঘরোয়া ফার্স্টক্লাস ক্রিকেটে একটি বিষয় খুবই নিয়মিত আর তা হলো স্পোর্টিং পিচের পরিবর্তে মন্থর এবং স্পিন সহায়ক পিচে খেলা। আর এর ফলে দেশে ও বিদেশে টেস্ট ম্যাচে আমাদের ভরাডুবি একটি নিয়মিত ঘটনা। প্রতিটি ভেন্যুতে সন্তোষজনক বেতনে দক্ষ এবং অভিজ্ঞ পিচ কিউরেটর দেওয়া এখন সময়ের দাবি। দেশের কিউরেটরদের মান বাড়ানোর জন্য উঁচুমানের বিদেশি কিউরেটরকে দিয়ে স্থানীয় কিউরেটরদের প্রশিক্ষণ পরিচালনা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।
২০২৩ সালের জুলাই মাসে অস্ট্রেলিয়া থেকে খ্যাতিমান কিউরেটর টনি হেমিংকে দুই বছরের চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হলেও সম্প্রতি বিসিবি’র সাথে মতবিরোধের জের ধরে মেয়াদের প্রায় অর্ধেক বাকি থাকতেই চাকরি ছেড়ে পাকিস্তানে পাড়ি জমিয়েছেন হেমিং। অস্ট্রেলিয়ার পার্থের ওয়াকা গ্রাউন্ড এবং অপটাস স্টেডিয়ামের সাবেক কিউরেটর হেমিং কাজ করেছেন আইসিসির দুবাইস্থ ক্রিকেট একাডেমির প্রধান কিউরেটর হিসেবেও। আমাদের স্থানীয় ২০/২৫ জন কিউরেটরের জন্য মাস দুয়েকের প্রশিক্ষণ কর্মশালা পরিচালনার জন্য হেমিংয়ের চেয়ে উপযুক্ত আর কে হতে পারতেন ? এখন বিকল্প কাউকে আনতে হবে এবং খরচ কমানোর জন্য আনা যায় ভারতীয় একজন হাইপ্রোফাইল কিউরেটরকে।
প্রাইজমানি ও ম্যাচ ফি
জাতীয় লিগ খেলে ক্রিকেটাররা যাতে পরিবার চালাতে পারেন তার জন্য তাদের ম্যচ ফি ও প্রাইজমানি আকর্ষণীয় হওয়া উচিত। আর ম্যাচ ফি দেওয়ার ক্ষেত্রে ‘এ’ ক্যাটাগরির খেলোয়াড়ের পারিশ্রমিক হতে পারে ১,৫০,০০০/- টাকা,‘বি’ ক্যাটাগরির খেলোয়াড়দের বেতন হতে পারে ১,২৫,০০০/- টাকা এবং ‘সি’ ক্যাটাগরির খেলোয়াড়রা পেতে পারেন ১,০০.০০০/- টাকা। তবে আলোচনা সাপেক্ষে এটি একটু কম-বেশি হতে পারে।
আর চ্যাম্পিয়ন দলের প্রাইজমানি হতে পারে ৪০ লাখের মতো, রানার্সআপ দল পেতে পারে ২৫ লাখ এবং ৩/৪ বছর বছর পর পর টাকার পরিমাণ একটু বাড়তে পারে। ম্যান অব দ্য ম্যাচ, সর্বোচ্চ রান এবং সর্বোচ্চ উইকেটের জন্যও আকর্ষণীয় পুরস্কার থাকতে হবে। এরকম ম্যাচ ফি ও প্রাইজমানি তারকা খেলোয়াড়দের চারদিনের ম্যাচ খেলতে আগ্রহী করবে। কোনো পৃষ্ঠপোষক পাওয়া গেলে তাদের নামেই লিগের নামকরণ করা যেতে পারে। প্রতি দলে একজন বিদেশি খেলোয়াড়কে খেলার অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা যায় তবে তাকে অবশ্যই কমপক্ষে ২০টি টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হতে হবে।
পয়েন্ট সিস্টেম
ফার্স্টক্লাস ক্রিকেট নিয়ে দর্শকদের আগ্রহ ইংল্যান্ড ছাড়া অন্যান্য দেশে তেমন একটা নেই এবং এসব দেশ এই বাস্তবতা মেনে নিয়েই একটির পর একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে। তবে লিগের পয়েন্ট সিস্টেম আকর্ষণীয় হলে দলগুলো আক্রমণাত্মক ক্রিকেটে আগ্রহী হয় এবং মাঠে উপস্থিত দর্শকরাও বিনোদন পান। যেমন- সরাসরি জয়ের জন্য ১২ পয়েন্ট এবং টাই হওয়া ম্যাচে উভয় দলের জন্য ৬ পয়েন্ট থাকতে পারে আর ড্র-র জন্য কোনো পয়েন্ট না থাকলে ভালো। এর পাশাপাশি ইনিংস ব্যবধানে জয়ের জন্য এবং নির্দিষ্ট ওভারে নির্দিষ্টসংখ্যক রানের জন্যও বোনাস পয়েন্ট রাখা যায়। এছাড়া বোলিং বোনাস পয়েন্ট থাকতে পারে নির্দিষ্টসংখ্যক ওভারে প্রতিপক্ষকে অলআউট করার জন্যও।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)-কে ঢাকায় বসে দূর-দূরান্তের ক্রিকেটকে নিয়ন্ত্রণ করতে দেখাটা একঘেয়ে ও বিরক্তিকর। ক্রিকেটকে বিকেন্দ্রীকরণের জন্য আঞ্চলিক ক্রিকেট এসোসিয়েশন গঠনের উদ্যোগ অনেক দেরিতে হলেও নেওয়া হয়েছে তবে এটির বাস্তবায়নের গতি খুবই মন্থর। তাড়াতাড়ি উদ্যোগটির শতভাগ বাস্তবায়ন করে নিজেদের এলাকার ক্রিকেটের উন্নয়ন কর্মকান্ড দেখভাল করার দায়িত্বটাও বুঝিয়ে দিতে হবে স্থানীয়দের হাতে।
এসব ক্রিকেট সংস্থার সভাপতি যে-ই হোন না কেনো প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব পেতে পারেন কোনো সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার যিনি ঐ এলাকারই সন্তান। সভাপতির পদ হবে আলংকারিক এবং প্রশাসনিক দায়িত্ব থাকবে প্রধান নির্বাহীর হাতে। আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা গঠনের আরেকটি সুবিধা হলো ঢাকার বাইরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আয়োজনের খুব একটা তদারকি বিসিবিকে করতে হবে না।
সবশেষে বলা যায় যে, টি-টোয়েন্টি এবং ওয়ানডে ক্রিকেট মাঠের এবং টিভির দর্শকদের জন্য অনেক বেশি উপভোগ্য হলেও টেস্টই ক্রিকেটের অভিজাত ও বনেদী ফরম্যাট। টেস্টের একটি দুর্দান্ত ডাবল কিংবা ট্রিপল সেঞ্চুরি অথবা ম্যাচ
উইনিং বোলিং স্পেল সহজে মানুষের মন থেকে মুছে যায় না। একজন সুনীল গাভাস্কার সবার এতো প্রিয় মানুষ তার অসাধারণ টেস্ট রেকর্ডের জন্য, শেন ওয়ার্নও অমরত্ব পেয়েছেন ৭০৮টি টেস্ট উইকেটের জন্যই। তাই আমাদেরকে বড়
দৈর্ঘ্যরে ক্রিকেট নিয়ে আরও সিরিয়াস হতে হবে এবং ফার্স্টক্লাস ক্রিকেটকে করতে হবে আকর্ষণীয় ও শক্তিশালী। তাহলেই হয়তো একদিন দেখা মিলবে বাংলাদেশি সুনীল গাভাস্কার, শেন ওয়ার্ন, জেমস অ্যান্ডারসনদের।
লেখক : সাইফুর রহমান তুহিন, সাংবাদিক ও ক্রীড়া লেখক
- বরিশালে সন্ধ্যা নদীতে জেলের জালে ধরা পড়লো হাঙর
- বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ২০২৩ ফলাফল : নৌকা ৮৭৭৫৩, হাতপাখা ৩৪৩৪৫
- গাজীপুর সিটি নির্বাচন প্রাপ্ত ফলাফল
- বাড়িতে ফোন দিয়ে জানলেন তিনি বাঘের থাবায় মারা গেছেন, চলছে দাফনের প্রস্তুতি
- প্রেমের টানে বরিশালে, ‘দেশি প্রেমিকের’ হাতে মার খেয়ে পালালেন ভারতীয় প্রেমকান্ত
- কুড়িয়ে পাওয়া পাঁচ লক্ষ টাকার প্রকৃত মালিককে খুঁজতে এলাকায় মাইকিং
- চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে কর্মচারীরা
- সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জেতা স্বপ্ন-সোহাগী ঠাকুরগাঁওয়ের গর্ব
- দেলোয়ার হোসেন সাঈদী মারা গেছেন
- নির্বাচন ফলাফল লাইভ ২০২৪ | BD election result 2024