Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, বুধবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৫,   বৈশাখ ১০ ১৪৩২

হুমায়ুন কবির, ঠাকুরগাঁও

প্রকাশিত: ১২:০৪, ২৮ নভেম্বর ২০২৪

ভারতীয় দার্জিলিং জাতের কমলা এখন ঠাকুরগাঁওয়ে, দর্শনার্থীদের ভীড় 

কমলার ভারে হেলে পড়েছে গাছের ডালপালা। ছবি- আই নিউজ

কমলার ভারে হেলে পড়েছে গাছের ডালপালা। ছবি- আই নিউজ

ভারতীয় দার্জিলিং জাতের কমলা এখন ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার মালঞ্চা অরেঞ্জ ভ্যালিতে পাওয়া যাচ্ছে।  গত কয়েক বছর ধরে এ কমলা বাগানে শত শত মন দার্জিলিং জাতের কমলা উৎপাদন করে দেশব্যাপী ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন ওই এলাকার মো. জুয়েল নামে এক কমলা বাগান মালিক। পাশাপাশি গড়ে তুলতেছেন দর্শনার্থীদের জন্য ঘুরাফেরার মনোরম পরিবেশ।

গত ২০ নভেম্বর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় থাকা দর্শনার্থীদের জন্য এটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। খুলে দেয়ার প্রথম দিনেই ব্যাপক সারা ফেলেছে গোটা এলাকা জুড়ে। মালঞ্চা গ্রামের অরেঞ্জ ভ্যালিতে দার্জিলিং জাতের কমলাগাছের ডালে ডালে এবারও থোকায় থোকায় ঝুলছে ছোট-বড় সবুজ কমলা। কমলার ভারে হেলে পড়েছে গাছের ডালপালা। কমলার পাশাপাশি এবার সেখানে চাষ করা হয়েছে মাল্টাও। 

দেশের বিভিন্ন স্থানে মাল্টার আবাদ করা হলেও সবখানেই দেখা গেছে সবুজ রংয়ে কিন্তু  এখানকার মালটা গুলো কমলার মত রঙ। আবার কিছু রয়েছে সবুজ রংয়ের।  সবুজ রংয়ের মাল্টা গুলো কিছুটা টক হলেও হলুদ জাতের এই মাল্টা গুলো দারুণ মিষ্টি। নয়নাভিরাম এ কমলা বাগান দেখতে প্রথম দিনেই দেখা মিলে দূর-দূরান্ত থেকে হাজারো দর্শনার্থীর। তাদের আগ্রহ দেখে মনে হয়েছে যেন তারা আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা ছিল কবে এই অরেঞ্জ ভ্যালি খুলে দেয়া হবে। দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থী আসতে শুরু করেছে বাগানে। 

মিষ্টি এবং রসালো এ কমলা ও মাল্টা বাগানেই বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা কেজি দরে। তবে বাগান মালিক আশা করছেন ফলন কম হলেও দামে এবার তা পুষিয়ে যাবে। বাগান থেকে এবার প্রায় ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার কেজি কমলা বিক্রি হবে প্রায়৩০ লাখ টাকায়। 

পীরগঞ্জ উপজেলার কোষারানীগঞ্জ ইউনিয়নের মালঞ্চা গ্রামের আড়াই বিঘা জমির ওপর ভারতীয় দার্জিলিং জাতের কমলার বাগান করেছেন পীরগঞ্জ উপজেলার বীরহলি গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা আবু জাহিদ ইবনুল ইকরাম জুয়েল। বাগানটিতে আড়াইশোর মতো কমলাগাছ রয়েছে। নবমবারের মতো তাঁর এ বাগানের গাছে এবার কিছুটা কম কমলা ধরেছে। তবে কমলার আকার অন্যান্য বারের চেয়ে ভাল। 

তিনি জানান, গত ১১ বছর আগে ঠাকুরগাঁও জেলা হর্টিকালচার থেকে প্রতি চারা ৫ টাকা করে ক্রয় করে রোপণ করেন জুয়েল। যদিও তার এ বাগান করার ইচ্ছা ছিল না। শুধু হর্টিকালচার সেন্টারের কর্মকর্তাদের অনুরোধে তিনি কমলার চারাগুলো কিনেছিলেন। এখন সেই আড়াইশো গাছ থেকে বার্ষিক প্রায় ৩০ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করছেন তিনি।

উদ্যোক্তা জুয়েল জানান, তাঁর বাগানে দার্জিলিং জাতের কমলা বারী-৪ জাতের হলুদ রং এর মাল্টা চাষ হয়। এ বাগানের কমলা মাল্টা স্বাদে দার্জিলিংয়ের কমলা ও মাল্টার মতো। অর্গানিক পদ্ধতিতে তিনি এ বাগান করেছেন। কোনো কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। বাগানের কমলা ৪০০ ও মাল্টা ৩০০ গাছ রয়েছে। এবার ১০ হাজার কেজি কমলা ও ৭হাজার মাল্টা উৎপাদন হবে বলে বাগানের মালিক জুয়েল জানিয়েছেন। ভারতীয় দার্জিলিং জাতের কমলাগাছ ৫০ বছর পর্যন্ত ফল দেয়। এটি একটি অর্থকরী ফসল, যা খুব সহজে ও স্বল্প খরচে উৎপাদন করা যায় বলে জানান তিনি। 

তিনি আরও বলেন, কেউ যদি এমন বাগান করতে চায়, তাহলে তার পক্ষ থেকে কমলা চাষ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করবেন বলেও জানান সফল এ উদ্যোক্তা। 

বাগানে ঘুরতে আসা সেতাবগঞ্জ এলাকার মো. গোলাম রাব্বানী জানান, স্ব পরিবারের ঘুরতে এসেছি, সত্যিই ভারতীয় দার্জিলিং জাতের কমলা চাষ করে জুয়েল সাহেব একটি অনন্য উদহারণ সৃষ্টি করছেন,যেমনি কমলা গুলো দেখতে সুন্দর, তেমনি রসালো, সুস্বাদু ও মিষ্টি সম্পন্ন। 

স্থানীয়রা জানান, এবার কমলার সঙ্গে বিক্রি করা হচ্ছে হলুদ মাল্টা। দিন যত যাবে দর্শনার্থীদের ভিড় ততই বাড়ছে। আর এই চাপ সামলাতে এবার আগের ভাগেই বাড়তি ব্যবস্থা নিয়েছেন মালিক। কড়া নিরাপত্তা সহ বাগানে প্রবেশের জন্য ৪০ টাকা মূল্যের টিকিটের ব্যবস্থা করেছেন। কমলা বাগান দেখতে এসে বাগানের সৌন্দর্য অবলোকন করার পাশাপাশি দর্শনার্থীরা যাতে ক্লান্তি দুর করতে পারেন সে জন্য এবার বাগানে ক্যাফে যুক্ত করা হয়েছে পারবেন। শিশুদের বিনোদনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে প্লেজোন। রয়েছে গাছ দিয়ে সাজানো অসংখ্য সেলফি বুথ।

আই নিউজ/এইচএ 

Green Tea
সারাবাংলা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়