মহিউদ্দিন কাউসার
আপডেট: ২১:৫১, ৩০ এপ্রিল ২০২১
দায়মুক্তি চাই সব চোরের
ডা. মহিউদ্দিন কাউসার
চুরি করার পরও কৃতকর্মের ব্যাপারে চোরের নিজস্ব কিছু যুক্তি থাকে। পুলিশ চোরকে জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি বলছ ক্ষুধার্ত ছিলে বলে রেস্টুরেন্টে চুরি করেছ। অথচ তুমি চুরি করলে ক্যাশ টাকা! খিদে লাগলে তো তোমার চুরি করার কথা ছিল খাবার, তাই না?’
চোর বলল, ‘খাবার খেয়ে পয়সা না দেওয়াটা আমার জন্য অত্যন্ত অপমানজনক মনে হয়েছিল, স্যার!’
আজিমপুর কবরস্থানের সামনে সেদিন এক গাড়িচোরকে ধরে গণধোলাই দেওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে গাড়ির মালিক জিজ্ঞেস করল, ‘ব্যাটা, তুমি আমার নতুন গাড়িটা চুরি করতে গেলে কেন?’
চোর বলল, ‘ভাই, আমি দেখলাম, গাড়িটা কবরস্থানের গেটের সামনে রাখা! ভাবলাম, গাড়ি মালিকের তো আর গাড়িটা লাগবে না, আমিই নিয়ে চালাই!’
কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানোর আগে এক ছোট্ট ছেলেকে পুলিশ জিজ্ঞেস করল, ‘তোমার বয়স কত?’
ছেলেটি বলল, ‘বারো বছর, স্যার।’ পুলিশ অবাক হয়ে বলল, ‘এতটুকু বয়সেই চুরি করা শুরু করেছ!’
ছেলেটি এবার তাকে আরও অবাক করে দিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘তাহলে আপনিই বইলা দেন, ঠিক কত বছর বয়স থেইকা আমি চুরি করা শুরু করব?’
ইদানীং কিছু চোর দেখলে মনে হয়, শুধু চোরের মায়ের নয়, চোরের গলাও কম বড় হয় না! অনেক দিন ধরে চলা এক মামলায় একটা সময় পর চোর তার অপরাধ স্বীকার করল!
বিচারক খানিকটা অবাক হয়ে বললেন, ‘স্বীকারই যদি করবে, তাহলে এত দিন সবাইকে ভুগিয়ে করলে কেন?’
আসামির উত্তর, ‘স্যার, আমি নিজেই নিশ্চিত ছিলাম নাকি? এত দিন সাক্ষীদের বয়ান আর মিডিয়ায় নিউজ–টিউজ দেখে তবেই না নিশ্চিত হলাম যে, চুরিটা আমিই করেছিলাম!’
.
এমন ঘটনা এটাই প্রথম কিংবা এটাই শেষ নয়! মিডিয়াকর্মীরা নকল টাকা বানানোর মেশিন দিয়ে টাকা বানানোর সময় হাতেনাতে এক লোককে ধরল, ‘আপনি নকল টাকা বানাচ্ছিলেন কেন? আপনার অনুভূতি কী?’
লোকটি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জবাব দিল, ‘আসল টাকা বানানোর মেশিন পাই নাই যে!’
এমন দোষীর তো বিচার সহজ। হাতেনাতে ধরা পড়লে এ আর এমন কী কঠিন হবে, বলুন! তারপরও বিচারক তাকে আবার জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনি কি দোষী, না নির্দোষ?’
আসামির অকপট জবাব, ‘রায় দেওয়ার জন্য আপনি বেতন পান, নাকি আমি? রায় কী দেবেন, সেটা আমার কাছে জানতে চান কেন?’
.
আরেক দিনের কথা। পুলিশ চোরকে জিজ্ঞেস করল, ‘কী ব্যাপার, বারবার থানায় আসতে লজ্জা করে না?’ এমন প্রশ্নের কত রকম জবাবই তো হতে পারে, তাই বলে এমন জবাব, ‘আমি তো মাঝে মাঝে আসি, আর আপনি তো মাসের ত্রিশটা দিনই এখানে আসেন!’
এদের প্রতি মায়া না থাকলেও ক্ষেত্রবিশেষে কোনো কোনো চোরের প্রতি আপনার কিছু মায়া জন্মাতেই পারে! যদি শোনেন, সে তালা ভাঙতে গিয়ে ধরা পড়ে গেছে! বেচারা চুরিই করতে পারেনি, তার আগেই ধরা!
এমন চোরকে ধরার পর পুলিশ জানতে চাইল, ‘কী হে, তুমি ভদ্রলোকের বাড়ির তালা ভাঙতে গেলে কেন?’ চোর বলল, ‘কী করব স্যার, ওই তালার চাবিটা তো আমার কাছে ছিল না!’ সেই চোরের নিশ্চয়ই শাস্তি হয়েছিল!
.
কিন্তু তালাটা যদি সামান্য একটা বাড়ির দরজার না হয়ে অনেক বড় কিছুর হতো, তাহলে হয়তো তাকে শাস্তি পেতে হতো না! কেন জানেন? কারণ, তাদের জন্য একটি কমিশন আছে, নাম ‘দুর্নীতি দায়মুক্তি কমিশন’! খুবই কর্মতৎপর একটি প্রতিষ্ঠান!
.
তাদের বিরুদ্ধে কেবল একটাই অভিযোগ—তারা অসাম্যবাদী! তারা বড় চোরদের দায়মুক্তির জন্য যতটা আগ্রহী, ছোটদের বেলায় ততটাই অনাগ্রহী!
ছোট চোরেরা তাই ওই দপ্তরের সামনে একটা আবৃত্তিসন্ধ্যার আয়োজন করতে পারে। যেখানে দাঁড়িয়ে ছোট চোরেরা আবৃত্তি করবে, ‘গাহি সাম্যের গান, যেখানে আসিয়া এক হয়ে যাবে সব বাধা আর ব্যবধান!’
ডা. মহিউদ্দিন কাউসার, চিকিৎসক, লেখক ও পারসোনাল ডেভেলপমেন্ট এন্থুসিয়াস্ট।