Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, বুধবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৫,   বৈশাখ ৯ ১৪৩২

আজিজুল আম্বিয়া

প্রকাশিত: ২২:৫৯, ১৭ মার্চ ২০২২
আপডেট: ২৩:০৩, ১৭ মার্চ ২০২২

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের গৌরবের ইতিহাস

আজিজুল আম্বিয়া

আজিজুল আম্বিয়া

১৯৭০ সালের ৭ ই ডিসেম্বর তৎকালীন অবিভক্ত পাকিস্তানের প্রথম এবং শেষ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তাতে আওয়ামীলীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু আওয়ামীলীগকে সরকার গঠনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়। ভয় দেখানো হয় জেল জুলুমের । বাঙ্গালীদের দাবিয়ে রাখার বিভিন্ন পায়তারা তারা খুজতে থাকে। শুরু হয় তাদের আইনের অপপ্রয়োগ। পশ্চিমারা কারফিউ দিয়ে চেষ্টা করে বাঙ্গালীদেরকে দমিয়ে রাখতে।

১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে ব্রিটিশ ভারত ভেঙ্গে জন্ম নিয়েছিল দুটি নতুন রাষ্ট্রের। তার একটির নাম হয় ভারত আর অন্যটির নাম হয় পাকিস্তান। আর এই পাকিস্তান রাষ্ট্র পূর্ব ও পশ্চিম নামে দুইটি অংশ নিয়ে গঠিত হয়েছিল। তার একটির নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান এবং অন্যটির নাম ছিল পশ্চিম পাকিস্তান।

এখন জেনে নেই এর ইতিহাস। তৎকালীন সময়ে ভারতে ব্রিটেনের সর্বশেষ ভাইসবয় লর্ড মাউনটব্যাটেন কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের নেতাদের সাথে এক বৈঠকে ব্রিটিশ সরকারের পরিকল্পনা সম্বলিত ‘হোয়াইট পেপার’ বা ‘শ্বেতপত্র’প্রকাশ করেন। আর এই শ্বেতপত্রে ভারতবর্ষ বিভক্তির রূপরেখা তুলে ধরা হয়ছিল। সব দল মেনে নেয়ার কারণে এটি সহজ হয়ে যায়। তাই শাসন ক্ষমতা হস্তান্তর ব্রিটিশ আইন অনুযায়ী ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করে। আর ভারত স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করে ১৫ আগস্ট।

পূর্ব বাংলা হয় পাকিস্তানের অংশ। এর নাম হয় পূর্ব-পাকিস্তান। আর এটি হল বর্তমান বাংলাদেশ। মুসলিম লীগের প্রধান মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পাকিস্তানের প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান হন, ১৭ আগস্ট পাকিস্তানের করাচিতে গভর্নর জেনারেল হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। যদিও মানুষ ভেবেছিল তাদের সব আশা-আকাঙ্ক্ষা এরার হয়ত পূরণ হবে, তাদের স্বাধীন চিন্তা অনুযায়ী দেশ চলবে। কিন্তু এই নতুন রাষ্ট্রের জন্মের পর থেকে যখন বাঙ্গালীরা বারবার তাদের নায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল ঠিক সে সময়ে বাঙালিদের মনে যে স্বাধীনতার স্বপ্ন বুনেছিল সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু হয় এই স্বাধীনতা দিবসে।

এই দিনটি পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মত বিশেষ গুরুত্য বহন করে এই কারণে যে, এই দিন থেকেই বাঙ্গালীরা স্বাধীনতার জন্য তৈরি হয়, করে দেশ রক্ষার শপথ গ্রহণ, হাতে তুলে নেয় অস্ত্র। যার ফলশ্রুতিতে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক একটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়। আর বাঙ্গালীরা পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র এবং ট্রেনিং প্রাপ্ত না হয়েও দীর্ঘ নয়মাস যুদ্ধ করে ৩০ লাখ মানুষের জীবনের বিনিময়ে এবং ৩ লাখ নারীর সম্ভ্রব, বাংলার বিশাল সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির মধ্য দিয়ে লাভ করে তাদের এই স্বাধীনতা নামক মহা কাব্যটির। সেই থেকে এই কাব্যটির সত্ত্বাধিকারী হল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ও তার জনগণ। আসুন আমরা জানতে চেষ্টা করব কি প্রয়োজন ছিল এই যুদ্ধের ? পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তান নামে দুইটি অঞ্চল নিয়ে দেশ গঠিত হওয়ার পর দুইটি অঞ্চলই সমান সুযোগ সুবিধা পাওয়ার কথা থাকলেও বর্তমান বাংলাদেশের সাথে তাদের বিমাতা সুলভ আচরণ শুরু হয় সেই শুরু থেকেই। যার প্রকাশ্য রূপ মানুষ দেখতে ফেল, তখন যখন ১৯৪৮ সালের ২৪ শে মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষণা দেন ‘উর্দু হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা।‘ ঠিক সেই সময় প্রতিবাদী ছাত্ররা ঘটনাস্তলে তাদের প্রতিবাদের মাধ্যমে জানিয়ে দেয় আমরা ভিন দেশী ভাষা গ্রহণ করব না। শুরু হয় বাঙ্গালীর স্বাধীনচেতা কার্যক্রমের। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনে শহীদ হয় সালাম, বরকত, রফিক , জব্বার। আহত এবং গ্রেফতার ও হন অনেকে।

এই ভাষা আন্দোলন বাঙ্গালীর মনে প্রেরণা জাগায়। যার ফলশুতিতে ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে পূর্ববঙ্গে যুক্তফ্রন্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সরকার গঠন করে। ১৯৬৬ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারী লাহোরে বিরোধী দলের সম্মেলনে শেখ মুজিবুর রহমান ৬ দফার দাবি পেশ করেন, তাতে পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতির চিত্র তুলে ধরা হয়। এবং তাদের বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে এটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় মানুষের মাঝে ।পূর্ব-বাংলার স্বায়ত্তশাসনের দাবীতে ঐক্য বদ্ধ বাঙ্গালীর আন্দলের মুখে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি জেনারেল আইয়ুব খান সামরিক শাসন জারি করে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ইয়াহিয়া খানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বাধ্য হন ।

১৯৭০ সালের ৭ ই ডিসেম্বর তৎকালীন অবিভক্ত পাকিস্তানের প্রথম এবং শেষ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তাতে আওয়ামীলীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু আওয়ামীলীগকে সরকার গঠনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়। ভয় দেখানো হয় জেল জুলুমের । বাঙ্গালীদের দাবিয়ে রাখার বিভিন্ন পায়তারা তারা খুজতে থাকে। শুরু হয় তাদের আইনের অপপ্রয়োগ। পশ্চিমারা কারফিউ দিয়ে চেষ্টা করে বাঙ্গালীদেরকে দমিয়ে রাখতে।

কিন্তু ২রা মার্চ কারফিউ ভেঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে আয়োজিত ছাত্র-জনতার সমাবেশে তৎকালীন ডাকসুর ভিপি আসম আব্দুর রবের নেতৃত্বে সর্ব প্রথম উত্তোলন করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকার। ৭ ই মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ১৮ মিনিটের বক্তব্যে,বঙ্গবন্ধু কৌশলে সাবধানতা অবলম্বন করে সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা না দিলেও তিনি সেদিন বলেছিলেন, “এবারের সংগ্রাম,মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম”। তাই অনেকে এরকম অভিমত পোষণ করে যে, এটাই যে স্বাধীনতার ঘোষণা তা বলার অপেক্ষা  রাখেনা। সেখান থেকেই বাজতে শুরু হয় যুদ্ধের দামামা।

১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ মধ্য রাতে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী গণহত্যা শুরু করে। এই রাতের হামলার সামরিক নাম দিয়েছিল পশ্চিমারা অপারেশন সার্চলাইট। সেই রাতে গ্রেফতার করা হয় শেখ মুজিবুর রহমানকে। গ্রেফতার পূর্ব অবস্থায় শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র লিখে যান। পরবর্তীতে চট্টগ্রামের কালুরঘাটে স্পাপিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ হান্নান শেখ মুজিবুর রহমানের লিখিত পত্রটি  পাঠ করেন। এর আগে সেটি পাকিস্তান রেডিওর  চট্টগ্রাম কেন্দ্র থেকেও পাঠ করেছিলেন। পরের দিন ২৭ শে মার্চ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে রাতের অধিবেশনে সাবেক মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে লিখিত বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি পাঠ করেন।এই যুদ্ধে এক সময় ভারতীয় মিত্রবাহিনী ও আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করেছিল পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে।

দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের সর্বাধিনায়ক আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজী তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণের দলিলে সই করেন। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বাঙ্গালীরা লাভ করে আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। আর এই স্বাধীনতার মূল্য দিতে হয়েহে কারো পিতা, মাতা, স্বামী কিংবা সন্তানের প্রাণ দিয়ে, আর  মা, বোনের ইজ্জত দিয়ে। তাই এর মূল্য অত্যধিক এদেশের মানুষের কাছে। সোনার বাংলার সম্পদ লুণ্ঠন, বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা, এগুলি আজো আমাদের মনে খুব দুঃখ দেয়। আমরা আর ফিরে যেতে চাইনা এই বিভীষিকাময় অতিথে। তাই এ দেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবীর মুহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানীসহ যে বীর সন্তানরা ত্যাগ করেছিলেন  তাদের জীবনের সোনালি সময়। তাদের  জন্য শ্রদ্ধা ও শুভকামনা নিরন্তর।

আজিজুল আম্বিয়া, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট

আইনিউজে দেখুন আরও ভিডিও খবর

বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মহসিন আলী

মনে আছে অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের কথা? (ভিডিও) 

ঘুরে আসুন মৌলভীবাজারের পাথারিয়া পাহাড়

মৌলভীবাজারের বিস্ময় বালিকা : ১৯৫ দেশের রাজধানীর নাম বলতে পারে

মৌলভীবাজারের সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী ভারত সরকারের পদ্মভূষণ পদকে ভূষিত

এছাড়াও যে কোনও ভিডিও সংবাদের জন্য ভিজিট করুন আইনিউজের ভিডিও আর্কাইভস

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়