Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৮ এপ্রিল ২০২৫,   চৈত্র ২৪ ১৪৩১

আই নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:৩৩, ৫ আগস্ট ২০২৩

অস্ট্রেলিয়ায় ‘চিল ফেস্ট’!

শীতকালে পৃথিবীর সব দেশেই বিভিন্ন রকমের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আবহমান গ্রাম বাংলায় শীতকালে এখনও যাত্রাগান, সার্কাস এবং বিভিন্ন রকমের মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। অস্ট্রেলিয়াতেও শীতকালে অনেক রকমের মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এগুলোর নামকরণ করা হয় সাধারণত ‘উইন্টার ফেস্ট’ বা ‘চিল ফেস্ট’। বেশ কিছুদিন ধরে চলে মেলাগুলো। প্রায় প্রতিটি সিটি কাউন্সিলই তাদের অধীনে এরকম এক বা একাধিক মেলার আয়োজন করে থাকে। তেমনই একটা মেলার আয়োজন করা হয়েছিল সিডনির দক্ষিণ পশ্চিমের সিটি কাউন্সিল ক্যাম্বেলটাউনের উদ্যোগে। ৩০ জুন শুরু হয়ে এ মেলা চলেছিল ১৬ জুলাই পর্যন্ত। ক্যাম্বেলটাউন সিটি কাউন্সিলের কোশিগায়া পার্কে আয়োজন করা হয় এ মেলার।

এখানে বিভিন্ন রকমের বিনোদনের উপাদান রাখা হয়েছিল। ছিল অনেক রকমের রোমাঞ্চকর রাইড। সেখানে চড়ে আনন্দ করার সুযোগ ছিল সবার। তবে প্রতিটা রাইডে ঢোকার মুখেই একটা সাইনবোর্ডে তির চিহ্ন দিয়ে দেখানো হয়েছিল, কত উচ্চতার বাচ্চারা এই রাইডের উপযুক্ত। আর রাইডে চড়তে হলে মেলার মাঝে অবস্থিত টিকেট কাউন্টার থেকে টিকেট করে নিতে হবে। প্রতিটা টিকেটের আলাদা আলাদা দাম একটু বেশি। তবে ৩০টা টিকেট একসঙ্গে কিনলে সেটা পঞ্চাশ টাকায় পাওয়া যায়। আমরা তাই শুরুতেই ত্রিশটা টিকেট কিনে নিলাম। অবশ্য পরে আমাদের আরও ত্রিশটা টিকেট কিনতে হয়েছিল বাচ্চাদের আবদারে।

গতানুগতিক রাইডের পাশাপাশি এখানে রাখা হয়েছিল ‘আইস স্কেটিং’–এর ব্যবস্থা। অবশ্য সেটার টিকেট আলাদাভাবে কিনতে হয়েছিল। সেখানে সব বয়সের মানুষই অংশ নিতে পারে। ছোট রায়ান গত বছর আইস স্কেটিং করতে গিয়ে অনেকবার আছাড় খেয়েছিল, তাই সে এবার আর স্কেটিং করতে রাজি হলো না। তাহিয়াকে টিকেট কিনে আইস স্কেটিংয়ের জুতা পরিয়ে দিয়ে আমরা বাইরে এসে দাঁড়ালাম। ও শুরুতে দেয়াল ধরে ধরে এগোচ্ছিল। শেষের দিকে দেয়াল ছেড়ে দিয়ে খালি হাতে এগোতে শুরু করল। অবশ্য সেই সময়ের মধ্যে দুই–তিনবার আছাড় খেয়ে পড়ল। কিন্তু বাইরে থেকে আমি আর রায়ান উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছিলাম।

এখানে ছোটদের জন্য আলাদাভাবে পেঙ্গুইন পাখির ব্যবস্থা আছে। সেটা ধরে তারা স্কেটিং করতে পারে। আমাদের সামনে দুই তরুণী স্কেটিং করছিল। তার মধ্যে একজন অভিজ্ঞ অন্যজন আনাড়ি। অভিজ্ঞজন আনাড়িকে সাহায্য করছিল, তবুও আনাড়ি বেশকয়েকবার ধপাস করে পড়ে গেল। সেটা দেখে আমি বললাম, আছাড়টা দারুণ উপভোগ্য ছিল। ওরা আমার রসিকতাটা ধরতে পেরে বলল, কেউ কি সেটা ভিডিও করেছে? আমি দেখতে চাই সেটা। আমি বললাম, আমি ভিডিও করতে পারিনি তবে একটা ছবি তুলেছি। সেটা দেখাতেই দুজনেই হেসে গড়াগড়ি দিচ্ছিল। সেখান থেকে বের হয়ে পাশেই আমরা ‘আইস স্লাইডিং’–এ গেলাম। চারটা টিকেটের বিনিময়ে একবার করে স্লাইড করা যাচ্ছিল। রায়ান দুবার এবং তাহিয়া একবার স্লাইড করল।

বিভিন্ন রাইড আর আইস স্কেটিং এবং স্লাইড করে ওদের খিদে পেয়ে গিয়েছিল। তখন আমরা ভেতরের বাহারি সব খাবারের দোকানের সামনের লাইনে দাঁড়িয়ে গেলাম। 

খাবার নিয়ে পাশেই রাখা বেঞ্চে বসে খেতে শুরু করলাম। মেলার মাঝের গাছপালাকেও মেলা উপলক্ষে বাহারি রঙের আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছিল। তাছাড়াও ছিল অনেক বৈদ্যুতিক কৃত্রিম আলোর গাছ। আর এবার একটা নতুন জিনিস যোগ করা হয়েছিল। একটা জায়গায় পলিথিন দিয়ে ছোট ছোট ঘর তৈরি করা হয়েছিল বরফের দেশের ঘর ‘ইগলু’র আদলে। সেসব ঘরের মধ্যে পুরো পরিবারসহ খাওয়াদাওয়া করা যাচ্ছিল কিন্তু তার জন্য আবার আলাদাভাবে টিকেট করতে হবে তাই আর আমরা সেদিকে গেলাম না।  

মেলার বিভিন্ন জায়গায় গা গরম করার জন্য ছিল হিটারের ব্যবস্থা। আর মেলার ঠিক কেন্দ্রস্থলে ছিল সাঁজাল তাপানোর ব্যবস্থা। একটা ছোট চৌচালা ঘরের নিচে একটা বড় টিনের কড়াইয়ের মধ্যে কাঠের গুঁড়ি জ্বালিয়ে আগুনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আর নিরাপত্তার জন্য তার চারপাশে কোমর সমান উঁচু বেড়া দেওয়া ছিল, যাতে কেউ আগুনের কাছাকাছি যেতে না পারেন। মেলা ঘুরতে ঘুরতে সবাই একবার করে হলেও এখানে এসে হাত–পা সেঁকে নিচ্ছিলেন। আমরাও ওখানে দাঁড়িয়ে হাত–পা গরম করে নিলাম। এখানে মাটির চুলার ‘খোঁচানি’র মতো টিনের লম্বা লম্বা ফাঁপা লাঠি রাখা ছিল। 

দোকান থেকে বাংলাদেশের কদমার মতো একধরনের মিষ্টান্ন ‘মার্শমেলো’ কিনে সেটাকে এই আগুনে পুড়িয়ে খেতে হয়। গতবার আমরা কিনে আর সেগুলো আর শেষ করতে পারিনি তাই আর এবার কেনা হলো না। 

এরপর আমরা ফেইরি ফ্লসের দোকান থেকে এক বালতি ফেইরি ফ্লস কিনলাম। ফেইরি ফ্লস আসলে বাংলাদেশের দিল্লির লাড্ডু। ছোটবেলায় আমাদের পাড়ায় এক চাচা আসতেন, এগুলো ফেরি করতে। কাচের দেয়ালঘেরা টিনের বাক্সে থাকত ছোট ছোট তুলতুলে লাল বল। সেগুলোর নাম ছিল দিল্লির লাড্ডু। দাম ছিল মাত্র দশ পয়সা কিস্তু স্বাদ ছিল অমৃত। ঐ বয়সে এই খাবারটা ছিল আমাদের কাছে প্রচণ্ড রকমের প্রিয়। 

একেকটা বল মুখের মধ্যে দিলেই হাওয়া হয়ে যেতো কিন্তু স্বাদটা জিভে লেগে থাকত। এই জন্যই বোধহয় দিল্লির লাড্ডু নিয়ে বহুল প্রচলিত প্রবাদ হলো, দিল্লির লাড্ডু, যে খায় সে পস্তায়, আবার যে না খায়, সেও পস্তায়।

ফেইরি ফ্লস কিনে আমরা ফেরার পথ ধরলাম। কনকনে শীতের রাত্রে এমন মেলাগুলো মানুষের মনে বাড়তি আনন্দের জোগান দেয়। বাচ্চারা এই মেলাগুলোতে অনেক আনন্দ পায়। আর বড়রা কিছু সময়ের জন্য হলেও ফিরে যায় নিজের শৈশব–কৈশোরের দুরন্ত সময়ে। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে আমরা যেমন শীতের সকাল এবং সন্ধ্যায় খড়কুটা জ্বালিয়ে সাঁজাল তাপিয়ে শরীরটা উষ্ণ রাখার চেষ্টা করি। ঠিক তেমনি অস্ট্রেলিয়ার এই মেলাগুলোতে গিয়ে আপনি সাঁজাল তাপিয়ে কিছু সময়ের জন্য শীতের তীব্রতা ভুলে যেতে পারেন। আমি তাই এই মেলাগুলোকে বলি সাঁজাল তাপানোর দিন।

আইনিউজ/ইউএ

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়