আই নিউজ প্রতিবেদক
যুক্তরাজ্যে এবার বিপাকে পড়তে যাচ্ছেন বৈধ অভিবাসীরাও
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে আশ্রয়ের জন্য আবেদন বাতিল হয়েছে প্রায় ১১ হাজারের মতো বাংলাদেশির। এদের সবাইকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাচ্ছে যুক্তরাজ্য সরকার। কিন্তু, আশ্রয় আবেদনকারীদের পর এবার দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে যুক্তরাজ্যের নিয়মিত বৈধ অভিবাসীরাও।
জানা গেছে, অভিবাসন ইস্যুতে চাপের মধ্যে থাকা সে দেশের রক্ষণশীল সরকার এবার নিয়মিত অভিবাসীদের সংখ্যা কমাতে নতুন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।
যুক্তরাজ্যে পরিবার নিয়ে থাকতে হলে অভিবাসী কর্মীদের ন্যূনতম বেতনসীমা এক তৃতীয়াংশ বাড়াতে হবে বলে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে দেশটির সরকার। রেকর্ড নেট মাইগ্রেশন-এর পর প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সরকার চলতি মাসে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যখাতে কর্মরত অভিবাসীরা এক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় পাবেন। কিন্তু তারা তাদের পরিবারকে যুক্তরাজ্যে আনতে পারবেন না। যুক্তরাজ্যে আসা কোনো শিক্ষার্থীও তার নির্ভরশীলকে দেশটিতে আনতে পারবেন না।
গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ব্রিটেনের রাজনীতিতে নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করে চলেছে নিয়মিতভাবে দেশটিতে আসা অভিবাসীরা। ২০১৬ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে আসার ক্ষেত্রেও এটি ছিল অন্যতম একটি কারণ।
আগামী বছর দেশটিতে সাধারণ নির্বাচন। নির্বাচনের আগে জনমত জরিপে বিরোধী লেবার পার্টির তুলনায় পিছিয়ে আছেন ক্ষমতাসীনেরা। এর মধ্যে দেশটিতে নেট মাইগ্রেশন (ব্রিটেন ছেড়ে যাওয়া ও ব্রিটেনে আসা মানুষের মধ্যে পার্থক্য) রেকর্ড পর্যায়ে উন্নীত হওয়ায় নিজ দলের আইনপ্রণেতাদের তোপের মুখে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। ফলে, পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সুনাক।
প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের কার্যালয় এসব প্রস্তাবকে ‘এখন পর্যন্ত আইনি অভিবাসনের সবচেয়ে বড় বাধা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। কিন্তু সমালোচকেরা বলেছেন- এর ফলে কর্মী ঘাটতিতে থাকা রাষ্ট্রচালিত ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস) ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সরকারের নতুন এই ঘোষণার সমালোচনা করেছে বাণিজ্য ও ট্রেড ইউনিয়নগুলো।
এক পরিসংখ্যান দেখা গেছে, ২০২২ সালে যুক্তরাজ্যের বার্ষিক নেট মাইগ্রেশন সাত লাখ ৪৫ হাজারে উন্নীত হয়েছে। এখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিবর্তে ভারত, নাইজেরিয়া এবং চীনের মতো দেশ থেকে অভিবাসীরা আসছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি বলেছেন, সরকারের নেয়া নতুন পদক্ষেপ নেট মাইগ্রেশনকে তিন লাখে নামিয়ে আনতে পারে।
যুক্তরাজ্যে অনিয়মিত পথে আসা অভিবাসীদের রুয়ান্ডায় স্থানান্তরের চেষ্টারত সরকারপ্রধান ঋষি সুনাক বলেন, ‘‘অভিবাসনের মাত্রা খুব বেশি। এটিকে নামিয়ে আনার জন্য আজকে আমরা আমূল পদক্ষেপ নিচ্ছি।’’
ক্লেভারলি বলেছেন, পরিবার নিয়ে যুক্তরাজ্য থাকতে হলে বিদেশী দক্ষ কর্মীদের ন্যূনতম বেতন ২৬ হাজার ২০০ পাউন্ড থেকে বাড়িয়ে ৩৮ হাজার ৭০০ পাউন্ডে নিয়ে যেতে চায় সরকার।
অন্যান্য পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে, বিদেশি স্বাস্থ্যকর্মীরা তাদের পরিবারের সদস্যদের আনতে পারবেন না, যুক্তরাজ্যে স্বাস্থ্যসেবা নিতে অভিবাসীদের সারচার্জের পরিমাণ বাড়ানো।
ব্রেক্সিটের কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নাগরিকদের অবাধ যাতায়াত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শ্রমবাজারে ঘাটতি মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে যুক্তরাজ্যের ব্যবসায়ীদের। এর মধ্যে সরকারের এমন পদক্ষেপে সেই সংকট আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে।
অক্টোবরে সরকারের ইনডিপেনডেন্ট মাইগ্রেশন অ্যাডভাইজর শ্রমঘাটতির তালিকাটি বাতিলের সুপারিশ করেছিলেন৷ অথচ এটি ছিল গুরুতর কর্মী ঘাটতি রয়েছে এমন খাতে অভিবাসী শ্রমিকদের নিয়োগে অন্যতম একটি পথ।
আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্লেভারলি বলেন, ‘‘আমরা ব্রিটিশ কর্মীদের বেতন কমিয়ে অভিবাসন বন্ধ করব। আমরা কমসংখ্যক পেশাসহ একটি নতুন অভিবাসন বেতন তালিকা তৈরি করব।’’
বাণিজ্যিক সংস্থা ইউকে হসপিটালিটির প্রধান নির্বাহী কেট নিকোলস বলেছেন, ‘‘এই পরিবর্তনগুলো ট্যালেন্ট পুলকে আরো সংকুচিত করবে, সেবাকেন্দ্রিক বাণিজ্যগুলো আরো ক্ষতির মুখে পড়বে।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমাদের জরুরিভাবে একটি অভিবাসন ব্যবস্থা প্রয়োজন যা বাণিজ্যের প্রসার এবং শ্রমঘাটতি দূর করতে কাজে আসবে। বর্তমান ব্যবস্থাটি প্রয়োজন মেটাতে পারছে না।’’
ব্যাঙ্ক অব ইংল্যান্ড গত মাসে বলেছে, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়োগপ্রক্রিয়াকে সহজ করার চেষ্টা করছে এবং কিছু খাতে দক্ষতার ঘাটতি রয়ে গেছে।
এদিকে ট্রেড ইউনিয়নগুলোও ক্লেভারলির পরিকল্পনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ইউনিসন-এর জেনারেল সেক্রেটারি ক্রিস্টিনা ম্যাকআনিয়া বলেন, এসব সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্য পরিষেবায় ‘সম্পূর্ণ বিপর্যয়’ এর ইঙ্গিত দিচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘‘অভিবাসীরা এখানে তাদের পরিবার ছাড়া বাঁচতে বাধ্য হওয়ার বদলে যেখানে তাদের স্বাগত জানাবে সেখানে চলে যাবেন।’’
ছোট ছোটো নৌকা নিয়ে উত্তর ফ্রান্স থেকে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে আসা অনিয়মিত অভিবাসীদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণেও বেগ পোহাতে হচ্ছে সুনাক সরকারকে৷ অথচ, ইংলিশ চ্যানেলে অভিবাসীবাহী নৌকা ঠেকানো ছিল তার প্রধান অঙ্গীকারের একটি৷
চলতি বছর চ্যানেল পাড়ি দিয়ে অন্তত ৩০ হাজার অভিবাসী এসেছেন যুক্তরাজ্যে। সরকার চ্যানেল পাড়ি দিয়ে আসাকে ‘বেআইনি’ বলে আখ্যা দিয়েছ। অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিরুৎসাহিত করতে আশ্রয়প্রার্থীদের রুয়ান্ডায় স্থানান্তরে চুক্তিও করেছিল দেশটি। অনেক আইনি লড়াইয়ের পর নভেম্বরে সরকারের সিদ্ধান্তটিকে বেআইনি বলে রায় দিয়েছে যুক্তরাজ্যের সর্বোচ্চ আদালত।
তবে, তাতেও অবশ্য দমবার পাত্র নন ঋষি সুনাক। রুয়ান্ডায় আশ্রয়প্রার্থী স্থানান্তরের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নতুন কৌশল করছেন তিনি ও তার সরকার৷ ফলে, যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি চলতি সপ্তাহে কিগালি সফরে যেতে পারেন। কারণ, আগামী বসন্ত থেকে আশ্রয়প্রার্থীদের রুয়ান্ডায় পাঠাতে চান তারা।
আই নিউজ/এইচএ
- ডিভি লটারি আবেদনের নিয়ম
- ইউরোপ যাওয়ার আগে যা জানা প্রয়োজন
- লন্ডনের ওয়ার্ক পারমিট ভিসা তথ্য ২০২৩
- গ্রিসে নিখোঁজের দেড় মাসেও খোঁজ মিলেনি হবিগঞ্জের ওয়াহিদ আলীর
- অস্ট্রেলিয়া ওয়ার্ক ভিসা ২০২৪ আবেদন করবেন যেভাবে
- বিনা খরচে জার্মানি ওয়ার্ক ভিসা ২৬ হাজার কর্মী নিচ্ছে জার্মানি
- মৌলভীবাজারের জুনেদ পেলেন ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের সম্মাননা
- বিদেশে বসে ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করা হচ্ছে: আমিরাতে তথ্যমন্ত্রী
- ভুয়া বিয়ের নিমন্ত্রণে কানাডায় যাওয়ার পথে আটক ৪২ বাংলাদেশি
- স্বচ্ছতা আনতে উন্মুক্ত লটারীর মাধ্যমে ভাতা কার্ডের তালিকা তৈরি