আন্তর্জাতিক ডেস্ক
তুরস্কের জনপ্রিয় ‘নজর বোনচু’ তাবিজ নিষিদ্ধ
ছবি: moroccoworldnews
তুরস্ক দেশে ঘুরতে গেলে একটি জিনিস পর্যটকদের চোখে পড়বেই। সেটিকে স্থানীয়রা বলেন ‘নজর বোনচু’। প্রায় ৫ হাজার বছর ধরে চলে আসা তুরস্ক সমাজে এই ‘নজর বোনচু’ তাবিজটি দেশটির ঐতিহ্যের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে আজকের দিনে।
কিন্তু তুরস্কের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় (দিয়ানাত) যা এক ফতোয়ার মাধ্যমে হাজার বছরের ঐতিহ্য এই প্রচলিত তাবিজ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর দেশটিতে এর জের ধরে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
তুরস্কের জনগণ ‘বিশ্বাস’ করে ‘নজর বনজু’ নামে নীল-সাদা প্রতীক (তাবিজ) দুষ্ট নজর থেকে সুরক্ষা দেয়। বিষয়টি তুরস্কে এতটাই জনপ্রিয় যে দেশটির সবখানে এই প্রতীক (তাবিজ) চোখে পড়ে। সেই সঙ্গে যেসব বিদেশি পর্যটক তুরস্কে আসেন তারাও দেশটি থেকে এই প্রতীক (তাবিজ) সংগ্রহ করার চেষ্টা করেন। দুর্ভাগ্য-বদ নজর এবং হিংসাত্মক আচরণ এড়াতে ‘ইভিল আই’ তাবিজ বহুল ব্যবহার তুরস্কে। ৩ হাজার ৩০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দ থেকে অঞ্চলটিতে জনপ্রিয় এ পাথর। যা দিয়ে অলংকার, তৈজসপত্র ছাড়াও বানানো হয় তসবিহ।
সম্প্রতি প্রকাশিত একটি ফতোয়ায় ‘দিয়ানাত’ স্থানীয়ভাবে ব্যাপক প্রচলিত ‘নজর বনজু’ প্রতীকের অলঙ্কারগুলির ব্যবহারকে কঠোর সমালোচনা করেছে। তাদের দেওয়া ফতোয়াতে তারা বলেছেন, ‘নজর বনজু’ বা শয়তানের চোখ আসলে কি কাজ করে তা জানা যায়নি। জনগণের মধ্যে এটির ব্যাপক ব্যবহার ধর্ম বিশ্বাসে আঘাত হানতে পারে।
তারা আরও বলেন, ইসলাম ধর্মে ভালো কিছুর জন্যে আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো কিছুর ওপর বিশ্বাস এবং তার ব্যবহার একেবারেই নিষিদ্ধ। আল্লাহ তাআলাকে ছাড়া অন্য কাউকে ইবাদতের উপযুক্ত মনে করে তার উপাসনা করা; অন্য কাউকে আল্লাহর মতো ভালোবাসা; আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে পশু কুরবানি বা মানত করা; কল্যাণ ও ক্ষতি সাধনের মালিক হিসেবে অন্য কাউকে বিশ্বাস করাসহ এ রকম অসংখ্য বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপনই হলো শিরক।
এ কারণেই ওই ধরনের বিষয়ে কাছ থেকে উপকার লাভের আশায় শরীরে এই তথাকথিত ‘শয়তানের তাবিজ’ বা নজর বনজু নামে এই অলঙ্কার গলার আশেপাশে বা কোথাও পরা কোনোভাবেই বৈধ নয়।'
কী এই নজর বনজু তাবিজ
শুভ-অশুভ, প্রাকৃত-অতিপ্রাকৃত শক্তি নিয়ে চর্চা হয় যুগে যুগে। বিশ্বে হাজারো বিশ্বাস, ধারণা, ইতিহাস। ঠিক এভাবেই প্রায় ৫ হাজার বছর আগে থেকে মেসোপটেমিয়া এবং মধ্য এসিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে শয়তান বা খারাপ শক্তি থেকে বাঁচতে এই ইভিল আই বা শয়তানের চোখ ব্যবহারের রেওয়াজ রয়েছে। তারই সূত্র ধরে প্রায় ৩ হাজার ৩০০ খৃষ্ট পূর্বাব্দ থেকে এখন পর্যন্ত তুরস্কে এটি ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয়ে আসছে। প্রচলিত বিশ্বাস মতে, ব্লু ইভিল আই মানে সত্য ও বিশ্বাসের প্রতীক।
নীল মানে আকাশের রঙ, তাই নীল চোখ হল ভালো কর্ম উদার মন ও শুভ শক্তির প্রতীক। তুরস্কের ইস্তাম্বুলের বাহসেসিহির বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক বলেন, এই ইভিল আইয়ের অলঙ্কারের নীল রঙ মধ্য এশিয়ার সেলজুক তুর্ক জাতির দেবতা গোক টেংড়ি যিনি আকাশের দেবতা নামে পরিচিত, তার সঙ্গে সম্পর্কিত। সেলজুকরা ইসলাম গ্রহণের পরেও তারা এই রঙের ব্যবহার তাদের বিভিন্ন স্থাপত্য এবং অলঙ্কারে অব্যাহত রেখেছিলেন।
এদিকে ‘দিয়ানাত’ এর দেয়া এমন ফতোয়ায় তুরস্কের জনমনে প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেক তুর্কি প্রশ্ন করেছেন ‘দিয়ানাত’ হঠাৎ করে গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয় এমন বিষয় নিয়ে প্রতিক্রিয়া কেন দেখাল! এদের মধ্যে একজন আঙ্কারার ছোট্ট উপহারের দোকানের মালিক আয়েসগুল আয়েকতিন আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, এই ‘ইভিল আই’ আমরা সাজসজ্জায় শুধু ব্যবহার করি আর কিছুই নয়।
তিনি আরও বলেন, আমার দোকান থেকে এই ‘অলঙ্কার’ অনেক বিক্রি হয়। এগুলোর কোনো শক্তি আছে এমন বিশ্বাস মানুষ করে না। এটা শুধুমাত্রই পুরনো এক ঐতিহ্য এবং সাজসজ্জার জন্যে অনেক ভালো।
অবশ্য ৫৮ বছর বয়সী মাহমুদ সুর যিনি তুরস্কের ইজমিরের বাসিন্দা তার ফ্যাক্টরিতে এই ইভিল আই অলঙ্কার তৈরি করেন। তিনি জানিয়েছেন, এটি একটি বিশ্বাস। এটি এমন এক সংস্কৃতির অংশ, যা আমাকে ৩ হাজার বছর পেছনে ফিরে নিয়ে যায়।
অন্যদিকে বেশ কয়েকজন জানিয়েছেন, যে বিষয়টি আল্লাহর সঙ্গে শিরক হয় তা নিষিদ্ধ করাই উত্তম। কারণ আমাদের ধর্ম কখনো মহান আল্লাহতালার সঙ্গে কোনো কিছু শিরক করা একেবারেই নিষিদ্ধ।
- জার্মানিতে গাঁজা খাওয়ার চাকরি, বেতন ৮৮ লক্ষ টাকা!
- কিভাবে আসলো চায়ে দুধ মিশিয়ে ‘দুধ-চা’ বানানোর আইডিয়া?
- পাকিস্তান পুলিশের শীর্ষপদে প্রথম হিন্দু নারী মনীষা
- চিড়িয়াখানায় সিংহের থাবায় প্রাণ গেলো যুবকের
- সাপের দংশন ও চিকিৎসা
- বাস্তবে কি জলপরী আছে?
- বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার ইতিহাস
- ওড়িশা (ODISHA)ভারতের অন্যতম রাজ্য
- বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি বঙ্গোপসাগরেই কেন?
- বিভিন্ন দেশের সূর্যগ্রহণ দেখুন ছবিতে