আদিত্য কিশোর
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী হেনস্তা এবং কয়েকটি কথা
২১০০ একরের ভূমি নিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যে পরিমাণ আবেগ, একটি ভাঙাচোরা শাটল নিয়ে যে পরিমাণ পীরিত, বোধহয় তারা দু'জাহানের অশেষ কোনো সম্পত্তির একচ্ছত্র অধিপতি হয়ে গেলো। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের মানদণ্ড নির্ভর করে- প্রতিবছর কি পরিমাণ শিক্ষার্থী গবেষণায় যুক্ত হলো, কি পরিমাণ শিক্ষক গবেষণা করলো। নতুন কোনো তত্ত্ব অনুসন্ধান করলো কিনা, আবিষ্কার করলো কিনা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাহাড় আছে, গাছ আছে, পাখি আছে, আর কি কি আছে তা সকলেই জানেন। যা জানেন না- তা হলো ছাত্র-শিক্ষক সুসম্পর্ক নেই। নেই ছাত্র অধিকার পরিষদ, নেই ছাত্র অধিকার। রাজনীতি আছে, তবে এক ছাত্রলীগ ছাড়া এখানে কেউ ক্যাম্পাসে এসে নিন্দা পর্যন্ত জানানোর সাহস করে না। ছাত্রলীগ আবার শতো বিভক্ত ছাত্রলীগ।
এই যে প্রক্টোরিয়াল বডি, নিরাপত্তা দপ্তর, এদের কাজ কি? শাটলে বগিবৃদ্ধি হয় না, খোদ রেলমন্ত্রী এসে ঘোষণা দিলেন- এসিবগিভিত্তিক ট্রেন দেওয়া হবে, তারপর বাচ্চারা ট্রেন পাবে দূরে থাক, করোনার পর থেকে ডেমু ট্রেনগুলো গায়েব। বগি বাড়ানোর মতো ধৃষ্টতা রেলমন্ত্রী, বা, প্রশাসন দেখান নি। শাটলে নিরাপত্তার জন্য নেই উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পুলিশ, বহিরাগতরা ঢিল ছোঁড়ে, শিক্ষার্থীরা রক্তাক্ত হয়। বহিরাগতরা ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টা করে, প্রশাসন লিখিত অভিযোগ চান। অতএব, লিখিত অভিযোগ দিতে দিতে ছাত্রী হয়তো খুনও হতে পারেন, তাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কিছু ক্ষতি নেই।
আছে মানহীন খাবার, আছে মানহীন চিকিৎসা সেবা, আছে নিম্নমানের সিস্টেমের লাইব্রেরি। আছে হোটেল সিন্ডিকেট, আছে সিএনজিওয়ালা কর্পোরেশন, আরো আছে- আগাছার মতো শিক্ষক রাজনীতি। এসব আমার পাঁচ বছরের ক্যাম্পাস জীবনের অভিজ্ঞতা। এসব কেউ বলে না, বলবে না। আমি লিখছি, এতে হয়তো নজরে আসলে আমার উপরও কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট চড়াও হবেন। ছাত্রত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা হবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো একেকটি থিয়েটার, থিয়েটারে শুধু অভিনয় হয়, এখানে তফাত যে- হলগুলোর শিক্ষার্থীরা দর্শকমাত্র, অভিনেতা নেই। বিশ্ববিদ্যালয় সর্বশেষ ছাত্রদের জন্য সিট বরাদ্দ দিয়েছিলো ৬ বছর আগে। এরপর আর কোনোদিন জেনারেলি ছাত্ররা হলে উঠতে পারেনি। আমি বা, আমার মতো দু'চারজন হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পেশাল পার্মিশন পেয়ে হলে থাকতে পারছে। মেয়েরা প্রথমে গণরুমে, তারপর ডাব্লিং, ক্ষেত্রবিশেষে একইরুমে সিটের চেয়েও বেশি সংখ্যক থাকতে পারছে। তবে প্রথম বর্ষ থেকে একমাত্র রাজনীতি করা ছাড়া কেউই হলে সিট পায়না।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের ছাদগুলো মারাত্মক নেশার জায়গা, সন্ধ্যা হলে বিশ্ববিদ্যালয় রেলস্টেশনে গাঁজার আসর বসে। তাতে যোগ দেন প্রগতিশীল ছাত্র-ছাত্রী। তাদের পরনের পোশাক-আশাক অন্যদের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন ও স্বতন্ত্র। আমি পোশাকের স্বাধীনতা খর্ব করছি না, তবে গাঁজার আসরে যোগ দেওয়া প্রায় প্রত্যেকেই নিজেদের প্রগতিবাদী মনে করেন। তাদের এই দৃষ্টিকোণ নিয়ে আমার সমস্যা আছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আড্ডার প্রধান জায়গা- রেলস্টেশন, জিরো পয়েন্ট, শহীদ-মিনার, সেন্ট্রাল ফিল্ড, বিভিন্ন ঝুপড়ী। ক্ষেত্রবিশেষে প্রেমিক-প্রেমিকাদের লাইব্রেরি চত্ত্বর, ফরেস্ট্রি রোড, বোটানিক্যাল গার্ডেনে দেখা যায়। তারা রাত-বিরেতেও অনেকে এসব জায়গায় অবস্থান করেন। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ধরাবাঁধা আইন থাকবে না, পূর্ণ স্বাধীনতা পাবে সকলেই, অতএব, এসব ব্যাপারে কারোর কারোর আপত্তি থাকলেও আমিসহ প্রায় প্রত্যেকেই সুবিধাভোগী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আছে প্রক্টোরিয়াল বডি, তারা বিভিন্নসময়ে টহল দেন। জিরো পয়েন্টে আছে পুলিশ, ছেলেদের হলের পাশে আছে পুলিশ ফাঁড়ি। কিন্তু তারা কোনো উল্লেখযোগ্য মুহূর্তে ছাত্রদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ, আমরা বহুবার দেখেছি- ছাত্ররা স্থানীয়দের সাথে দ্বন্দ্বে অথবা, অভ্যন্তরীণ সমস্যায় প্রক্টোরিয়াল বডিকে কল দিলেও তারা রেসপন্স করেন না। যেইমুহূর্তে ছাত্রদের উদ্ধার করা জরুরি- তখন তারা লিখিত অভিযোগের জন্য উপদেশ দেন। দেখা গেলো বৃহস্পতিবার রাতে আপনি সমস্যায় পড়েছেন- শুক্রবার, শনিবার অফ ডে বিধায় আপনাকে রবিবার পর্যন্ত অপেক্ষা করে লিখিত অভিযোগ করতে হচ্ছে। আবার অভিযোগের পর আপনি হয়তো অনার্স-মাস্টার্স সার্টিফিকেট পেয়ে যাবেন, কিন্তু অভিযোগ অভিযোগ বাক্সেই পড়ে রবে, এবং সর্বশেষ তা প্রাক্তন প্রেমিকার প্রতি যেমন অভিমান, তেমনি রাগ-অভিমানে রূপ নিবে।
এই যে প্রক্টোরিয়াল বডি, নিরাপত্তা দপ্তর, এদের কাজ কি? শাটলে বগিবৃদ্ধি হয় না, খোদ রেলমন্ত্রী এসে ঘোষণা দিলেন- এসিবগিভিত্তিক ট্রেন দেওয়া হবে, তারপর বাচ্চারা ট্রেন পাবে দূরে থাক, করোনার পর থেকে ডেমু ট্রেনগুলো গায়েব। বগি বাড়ানোর মতো ধৃষ্টতা রেলমন্ত্রী, বা, প্রশাসন দেখান নি। শাটলে নিরাপত্তার জন্য নেই উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পুলিশ, বহিরাগতরা ঢিল ছোঁড়ে, শিক্ষার্থীরা রক্তাক্ত হয়। বহিরাগতরা ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টা করে, প্রশাসন লিখিত অভিযোগ চান। অতএব, লিখিত অভিযোগ দিতে দিতে ছাত্রী হয়তো খুনও হতে পারেন, তাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কিছু ক্ষতি নেই।
গত দুই একদিন আগে, একজন ছাত্র ও ছাত্রীকে রাতের বেলা রাস্তায় আটক করে ৫ জন শিক্ষার্থী। ভুক্তভোগী ছাত্রী জানান- তাকে ধরে নগ্ন করে ভিডিও ধারণ করে তারা, তার সাথের বন্ধুটিকে শারীরিক নির্যাতন করা হয়৷ হতে পারে তারা প্রেমিক-প্রেমিকা ছিলো। সেই ভুক্তভোগী ছাত্রী নাম প্রকাশ করেন নি, তবে প্রশাসনের সাথে তার খোলামেলা কথাবার্তা হয়েছে। প্রশাসনের প্রশংসনীয় স্টেপ ছিলো- আজ থেকে মেয়েদের হলে রাত ১০ টার ভিতরে প্রবেশ করতে হবে। অথচ যেই স্থানে ঘটনা ঘটেছে, তার আশেপাশের সিসি ফুটেজ চেক করলে ঘটনার জন্য কারা দায়ী জানা সম্ভব। হয়তো জেনেছেও প্রশাসন, কিন্তু তারা কোনোরূপ স্টেপ নিতে অপারগ৷ কেনো অপারগ তা আমরা কেউ জানি না। যদি তারা ছাত্রলীগ কর্মীও হয়, তবুও তারা শাস্তিযোগ্য। অপরাধীকে ছাড় দেওয়ার এই অসভ্য মানসিকতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মেরুদণ্ড বলে কিছু নেই তা প্রমাণ করে।
সর্বশেষ- যেহেতু চাকসু নির্বাচন নেই। ছাত্র অধিকার পরিষদ নেই। ছাত্রদের জন্য রাস্তায় দাঁড়ানোর কেউ নেই। ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ইউনিটি নেই। এইরকম বহু-ঘটনার শিকার হবে বিশ্ববিদ্যালয় তাতে দুঃখ প্রকাশ করা অনুচিত। তাই আমি লজ্জিত বা, দুঃখিত হলাম না। ধন্যবাদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
লেখক: আদিত্য কিশোর (মূল নাম অনিক দেব) শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
- নড়াইলে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা: ৫ জন রিমান্ডে
- সুনামগঞ্জে ভেলায় ভাসলো মায়ের লাশ, লিখে দিলেন ‘শুকনো জায়গায় মাকে কবর দিও’
- দেশে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ২৩৪ জন
দেখুন আইনিউজের ভিডিও গ্যালারি
মৌলভীবাজারে কেমন চলছে রেলওয়ে সেবা, মিলছে কী টিকেট?
লাউয়াছড়ার ভেতর দিয়ে ট্রেন, যেভাবে উপভোগ করে পর্যটকরা
সড়কের দু`পাশে ফুটেছে আগুন রাঙ্গা ফুল | নতুন দর্শনীয় স্থান | Beautiful places | Flowers || Eye News
রাস্তায় অবৈধভাবে সিএনজি-কার-মোটরসাইকেল পার্কিং করলেই আইনগত ব্যবস্থা | Moulvibazar | Eye News
- মাস্টার্স পরীক্ষার ফলাফল ২০২৩
- এসএসসি বোর্ড চ্যালেঞ্জ এর রেজাল্ট ২০২৩
- এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট ২০২৩ | এসএসসি ফলাফল
- অনার্স ১ম বর্ষ পরীক্ষা রুটিন ২০২৩
- এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট ২০২৩ কবে হবে
- চবি ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট ২০২৩
- ‘বাঁচতে চাইলে পরীক্ষায় এ্যাটেন্ড কর’, ছাত্রীকে শাবি শিক্ষক
- ওসমানী মেডিকেলে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, আন্দোলনে ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা
- স্বপ্ন চার্টার্ড একাউন্টেন্ট হওয়া
টিউশনী করে পরীক্ষা দিয়ে গোল্ডেন এ প্লাস পেল সরকারি কলেজের সুমাইয়া - গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট ২০২৩