নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট: ২২:১১, ৬ নভেম্বর ২০২২
‘ও গাড়ি হর্ন থামাও, পড়তে দাও’- স্কুল শিক্ষার্থীদের আকুতি
শব্দদূষণ বন্ধের দাবিতে রাজধানীর খিলগাঁও উড়ালসড়কের প্ল্যাকার্ড হাতে স্কুল শিক্ষার্থীরা।
স্কুল ছেড়ে রাস্তায় নেমে এসেছে শিক্ষার্থীরা। হাতে প্ল্যাকার্ড। তাতে লেখা- ‘ও গাড়ি হর্ন থামাও, আমাকে পড়তে দাও’।
এটা রোববার (৬ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে বারোটার চিত্র। রাজধানীর খিলগাঁও উড়ালসড়কের (ফ্লাইওভার) ঢালে প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে আছে জনা পঞ্চাশেক শিক্ষার্থী। প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘পড়তে চাই, জানতে চাই, ভেঁপু (হর্ন) থেকে বাঁচতে চাই’, ‘ও গাড়ি আমাকে পড়তে দাও, ভেঁপু থামাও’ ইত্যাদি স্লোগান।
আমার প্রিয় একজন বন্ধু, একজন বিদেশিনী আমার দেশকে নিয়ে কতোটা ভাবে! কতোটা ভালোবাসে আমাদের শিশুদের।
শিক্ষার্থীরা বলছে, তাদের বিদ্যালয় সংলগ্ন সড়ক উচ্চশব্দে যানবাহন চলাচল করে। শব্দের কারণে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে ব্যাঘাত ঘটে। এর প্রতিবাদ করতেই খিলগাঁও ফ্লাইওভারের ঢালে প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়েছে খিলগাঁও স্টাফ কোয়ার্টার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সঙ্গে ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকেরাও।
প্রতিষ্ঠানটিই এ মানববন্ধনের উদ্যোগ নিয়েছে। মানববন্ধন চলাকালে উচ্চশব্দ রোধে সচেতনতামূলক স্টিকার বিভিন্ন যানবাহনে সেঁটে দেয় শিক্ষার্থীরা।
মানববন্ধনে কথা হয় খিলগাঁও স্টাফ কোয়ার্টার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মারিয়া আক্তারের সঙ্গে।
মারিয়া বলে, ‘হর্নের কারণে আমাদের মাথাব্যথা করে। আমরা চাই, হর্ন বাজানো বন্ধ হোক। হর্নের কারণে নানা সমস্যা হয়। ক্লাসে শিক্ষকদের কথা শুনতে কষ্ট হয়, মনোযোগ দিতে পারি না।’
উচ্চশব্দের কারণে শ্রেণিকক্ষে একই সমস্যার কথা জানায় আরেক শিক্ষার্থী মো. নাইম। তার হাতে ছিল ‘ও গাড়ি আমাকে পড়তে দাও, ভেঁপু থামাও’ লেখা প্ল্যাকার্ড।
নাইম বলে, ‘আমাদের সকালে ক্লাস হয়। দোতলায় আমাদের ক্লাসরুম। ক্লাস থেকেই হর্নের আওয়াজ শুনতে পাই। শিক্ষকদের কথা শুনতে পাই না। মাথা ভারি লাগে, কান ধরে থাকে।’
এ উদ্যোগে ব্যাপারে আই নিউজের সাথে কথা বলেছেন- খিলগাঁও স্টাফ কোয়ার্টার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফারজানা হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমি একজন সহকারী শিক্ষক। আমি জানতাম শিশু আর শ্রেণিকক্ষই আমার গণ্ডি। আমার চাকুরিজীবনে অনেক প্রশিক্ষণ পেয়েছি। সেই সুবাদে পরিচিত হয়েছি দেশ ও বিদেশের কিছু মহৎপ্রাণ মানুষের সাথে। তেমনই একজন Wendy Naylor। যিনি জন্মসূত্রে বৃটিশ। বর্তমানে নেদারল্যান্ডসের রেডবোড ইউনিভার্সিটিতে একজন শিক্ষক। যিনি ২০২০ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত British Council-এর অধীন TMTE কোর্সে আমার প্রশিক্ষক ছিলেন।
Wendy ছুটি কাটাতে গত জুলাইয়ের শেষে আবার এসেছিলেন আমাদের দেশে। তাঁর অনেক আইডিয়া আমি স্কুলে শ্রেণিকক্ষে যখনই প্রয়োগ করতাম। সে ফলাফল আমি তাঁর সাথে শেয়ার করতাম। সেই থেকেই আমার স্কুল দেখা এবং আমার স্কুলের শিশুদের পড়ার দক্ষতা বাড়ানো জন্য তাঁর বই দিয়ে স্কুলকে সমৃদ্ধ করার কাজ শুরু। বেড়াতে এসেও সে আমাদের স্কুলে এলো। আমার পাঠদান পর্যবেক্ষণ করলো। স্কুল দেখার পর তাঁর একটা প্রতিক্রিয়া হলো: শিক্ষক ও শিক্ষার্থী আন্তরিক কিন্তু শব্দদূষণটাই বড় একটা বাধা। সে কিছু আইডিয়া শেয়ার করলো এবং এটাও বললো এই খরচে নিজেও অংশীদার হতে চায়, যদি আমরা চাই। আমি যখন তাকে বললাম যে শব্দদূষণ নিয়ে সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড এবং সচেতনতামূলক র্যা লি আমাদের দেশে অনেক আগে থেকেই হয়েছে, করা হচ্ছে; কিন্তু লাভ হয়নি কিছুই। আসলে আমাদের সচেতনতায় একটু ঘাটতি আছে।
Wendy বললো, সে জানে। বললো, যদি শিশুর পিতা ড্রাইভার হোন, সেক্ষেত্রে সে বাসায় গিয়ে আলাপ করবে। হয়তো কিছু মানুষ মোটিভেট হতে পারে। গাড়ির পেছনে যখন স্টিকার দেয়া হবে হয়তো কিছু চালক চিন্তা করতেও পারেন। আবার যে শিশু প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে দাঁড়াবে সে যদি ভবিষ্যতে ড্রাইভ করে এই কথাটি তাকে নাড়া দেবে। সে হয়তো এ কাজটি করবে না।
আমি কিছু বলতে গিয়েও আর বললাম না। কারণ আমার প্রিয় একজন বন্ধু, একজন বিদেশিনী আমার দেশকে নিয়ে কতোটা ভাবে! কতোটা ভালোবাসে আমাদের শিশুদের। এটা ভেবেই আপ্লুত হলাম আর তাঁর দেয়া আইডিয়াগুলো নিয়ে কাজ করতে লাগলাম। বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই মৌলভীবাজারের আলী আমজদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পূর্ণা রায় ভৌমিককে স্লোগানগুলো লেখায় সাহায্য করার জন্য।
খিলগাঁও স্টাফ কোয়ার্টার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওয়াহিদা নারগিস মানববন্ধনে বলেন, ‘শব্দদূষণের প্রতিবাদে এ কর্মসূচি। শব্দদূষণের জন্য ঠিকমতো ক্লাস নিতে পারি না, শিশুদেরও নানা সমস্যা হয়। চালকদের আরও সচেতন হতে হবে। তারা অহেতুক হর্ন দেয়। আমাদের স্কুলটি সড়কের পাশে হওয়ায় উচ্চশব্দ আরও আতঙ্কের কারণ।’
খিলগাঁওয়ে সামাজিক সংগঠন পল্লীমা সংসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হাফিজুর রহমান ময়না বলেন, ‘শারীরিক ও মানসিক বিকাশের অন্তরায় উচ্চশব্দ। শিশুদের শেখাতে হবে উচ্চশব্দ কত খারাপ। প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে দাবি তুলতে হবে। মানুষ যদি আরও সচেতন হয়, তাহলেই উচ্চশব্দ কমবে।
পল্লীমা সংসদের সাধারণ সম্পাদক এরশাদ মনসুর বলেন, ‘এই উড়ালসড়কের ঢালেই প্রাথমিক বিদ্যালয়। তাই যানবাহনগুলোর উচিত হর্ন না দেয়া এবং গতি কমানো। চালকদের প্রতি অনুরোধ বিদ্যালয়টির সামনে দিয়ে যাওয়া-আসার সময় অযাচিত হর্ন বাজাবেন না এ পথে। শিশুদের পরিবেশ দেয়া আমাদের দায়িত্ব।’
পল্লীমা সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আউয়াল কামরুজ্জামান বলেন, ‘শব্দদূষণের ক্ষতি বোঝা যায় না। শব্দদূষণ রোধে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় আইন মানা হয় না। দীর্ঘদিন উচ্চশব্দের মধ্যে থাকলে মানুষ বধির হয়ে যেতে পারে। উচ্চশব্দের কারণে অবসাদ আসে, পড়ালেখায় মনোযোগ কম থাকে। এ প্রতিষ্ঠানের সামনে উচ্চশব্দ রোধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনের উদ্যোগ নেয়া উচিত।’
- মাস্টার্স পরীক্ষার ফলাফল ২০২৩
- এসএসসি বোর্ড চ্যালেঞ্জ এর রেজাল্ট ২০২৩
- এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট ২০২৩ | এসএসসি ফলাফল
- অনার্স ১ম বর্ষ পরীক্ষা রুটিন ২০২৩
- এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট ২০২৩ কবে হবে
- চবি ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট ২০২৩
- ‘বাঁচতে চাইলে পরীক্ষায় এ্যাটেন্ড কর’, ছাত্রীকে শাবি শিক্ষক
- ওসমানী মেডিকেলে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, আন্দোলনে ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা
- স্বপ্ন চার্টার্ড একাউন্টেন্ট হওয়া
টিউশনী করে পরীক্ষা দিয়ে গোল্ডেন এ প্লাস পেল সরকারি কলেজের সুমাইয়া - গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট ২০২৩