মিশকাতুল জান্নাত রেশমা
আপডেট: ১৬:০১, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
২১শে ফেব্রুয়ারি একটি জীবন্ত ইতিহাস
মিশকাতুল জান্নাত রেশমা
২১ শে ফেব্রুয়ারি কোনো বিশেষ দিন, ক্ষণ বা তিথি নয়, একটি জীবন্ত ইতিহাস। এ ইতিহাস অগ্নিগর্ভ যেন সজীব লাভা স্রাবক আগ্নেয়গিরি, কখন ও অনৃতদারহে গর্জন করছে, আর কখন ও চারদিকে অগ্নি ছড়াচ্ছে। সত্যি এ ইতিহাস মৃত নয় একেবারে জীবন্ত। - ডক্টর মুহাম্মদ এনামুল হক
একুশে ফেব্রুয়ারি শুধু বাংলা ভাষাকে স্বমর্যাদায় আসীন করার বিচ্ছিন্ন সংগ্রাম নয়, আত্মচেতনা সমৃদ্ধ জাতীয় জাগরণের উন্মোষ মুহূর্ত। শোষকের বিরুদ্ধে ন্যায়ের,কূপমন্ডুকতা ও সংকীর্ণতার বিরুদ্ধে উদার মানসিকতার, খন্ডিত অধিকারের বিরুদ্ধে সংগ্রামের স্মারক একুশ।
বাঙালি জাতির এই আত্মত্যাগ আমাদের বাংলা ভাষাকে বিশ্ব দরবারে সমুন্নত করেছে। বাঙালি জনগণের ভাষা আন্দোলনের মর্মন্তুদ ও গৌরবোজ্জ্বল স্মৃতি বিজড়িত একটি দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। এই অমর বীর গাঁথা আজ কেবল এই ভূ-খণ্ডের সীমানায় আবদ্ধ নেই। বাঙালির আত্মত্যাগ স্মরণে সারা বিশ্বব্যাপী ২১ শে ফেব্রুয়ারীকে "আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস " হিসেবে পালন করা হয়।
মূলত বাঙালির এই প্রতিবাদী আন্দোলনের শুরু ১৯৪৮ সালে। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারী হত্যার মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে এবং বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করার মাধ্যমে শেষ হয়। ঐ দিন সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৪৪ ধারা অমান্য করে রাজপথে বেরিয়ে এলে পুলিশ তাদের ওপর গুলি চালায়। এতে আবুল বরকত, আবদুল জব্বার, আবদুস সালাম সহ কয়েকজন ছাত্রযুবা হতাহত হন। ভাষা আন্দোলনে কতজন শহিদ হয়েছিলেন সে বিষয়ে সঠিক সংখ্যা এখনো পাওয়া যায়না। এই হত্যাকান্ড মাতৃভাষার অধিকারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনকে দমিয়ে দেয় নি। এই আন্দোলনেই পরিষ্কার হয়ে উঠেছিল যে দুই হাজার কি.মি দুরত্বে অবস্থিত দুটি ভূ-খণ্ডের দুটি ভিন্ন ভাষার জাতিসত্তাকে মিলিয়ে সৃষ্টি করা রাষ্ট্রের অধিবাসীদের মনে এক হওয়ার অনুভূতি সম্ভবত জাগ্রত হবে না।
তবে এই ঘটনার পর ও দুই বছরের বেশি সময় পরে, ১৯৫৪ সালের ৭ মে পাকিস্তান সংসদ বাংলাকে একটি রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকার করে প্রস্তাব গ্রহণ করে। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি কার্যকর হতে লেগেছিল আর ও দুই বছর। মাতৃভাষা নিয়ে এই আন্দোলনেই বীজ বপন হয়েছিল পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের।
ভাষা শহিদদের এই আত্মত্যাগ স্মরণে ২১শে ফেব্রুয়ারিকে 'শহিদ দিবস' হিসেবে পালন করা হতো।ইউনেস্কো এর ৩০ তম অধিবেশনে মায়ের ভাষার জন্য বাঙালি জাতির আত্মত্যাগের এমন বিরল দৃষ্টান্ত এর জন্য ১৯৯৯ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আজ বাঙালি জাতি এই ত্যাগের বিনিময়ে মায়ের ভাষায় কথা বলে।
পরিশেষে এইটুকুই বলতে চাই, যতদিন রইবে এই বাংলা; রয়ে যাবে সকল ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগের গাঁথা এবং তাদের বীর বিক্রমের কাহিনী!!
ভাষা দিবসের প্রাক্কালে বীর শহীদদের জানাই সশ্রদ্ধ সালাম। নিজের ভিতর ধারণ করি তাদের অপরাজেয় শক্তিকে।
তাইতো 'প্রতুল মুখোপাধ্যায় '-এর বিখ্যাত সেই গানের ভাষায় বলতে চাই,
'আমি বাংলায় গান গাই,আমি বাংলার গান গাই
আমি আমার আমিকে চিরদিন -এই বাংলায় খুঁজে পাই।'
মিশকাতুল জান্নাত রেশমা, ইংরেজি বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
- খোলা জানালা বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। eyenews.news-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে eyenews.news আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
দেখুন আইনিউজের ইউটিউব ভিডিও চ্যানেল
হানিফ সংকেত যেভাবে কিংবদন্তি উপস্থাপক হলেন | Biography | hanif sanket life documentary | EYE NEWS
- বাংলাদেশে শিশু শ্রম: কারণ ও করণীয়
- ২০২৩ সালে কী সত্যিই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আসছে?
- পনেরো আগস্ট পরবর্তী রাজনৈতিক দ্বন্ধ
মোশতাক বললেও মন্ত্রীদের কেউ সেদিন বঙ্গবন্ধুর লাশের সঙ্গে যায়নি! - করোনা যেভাবে চিকিৎসকদের শ্রেণীচ্যুত করলো
- চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সমস্যা এবং সম্ভাবনা
- ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কুকুর স্থানান্তরকরণ ও ভবিষ্যৎ
- শরীফার গল্প পড়তে আমাদের এতো কেন সমস্যা?
- ফিলিস্তিনে প্রাণ হারাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা
- মহান মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী গণমাধ্যমের ভূমিকা
- রেমডেসিভির একটি অপ্রমাণিত ট্রায়াল ড্রাগ