আই নিউজ ডেস্ক
কিনব্রিজে লোহার বেষ্টনী দিয়েও আটকানো যাচ্ছে না পথচারীদের
ছবি- সংগৃহীত
সিলেটের ঐতিহ্যসের সঙ্গে মিশে যাওয়া কিনব্রিজ দীর্ঘ জটিলতার পর শুরু হয়েছে সংস্কারকাজ। ক্ষতিগ্রস্থ এ ব্রিজের সংস্কার কাজ শুরু হলেও দেখা দিয়েছে নতুন সমস্যা। সংস্কারের জন্য দুই মাস কিনব্রিজে চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পরও ব্রিজের ওপর দিয়ে থামানো যাচ্ছে না মানুষের চলাচল। ব্রিজের দুই পাশে লোহার বেষ্টনী দিয়ে প্রতিবন্ধক দেয়া হলেও পথচারীরা বেষ্টনী ডিঙিয়েই যাতায়াত করছেন সংস্কারাধীন কিনব্রিজ দিয়ে।
শুক্রবার (১৮ আগস্ট) সকালে কিনব্রিজ ঘুরে দেখা যায়, ব্রিজের উত্তর পাশ থেকে মেরামতকাজ শুরু হয়েছে। পাঁচজন শ্রমিক ব্রিজের উত্তর পাশে ঢালাই ভাঙার কাজ করছিলেন। এর পাশ কেটে চলাচল করছিলেন পথচারীরা। এদিকে ব্রিজের নিচে সারি সারি রাখা ছিল স্টিলের পাত। এর মধ্যে একটি পাত ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করছিলেন আরেক শ্রমিক। এর পাশে কাঠ দিয়ে ব্রিজে পথ বন্ধ করতে দরজা বানাচ্ছিলেন আরেক শ্রমিক। পাশে বসা ছিলেন ব্রিজ মেরামতকাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি মো. শিপন।
তিনি বলেন, বিজ্ঞপ্তি দিয়েও পথচারীদের চলাচল বন্ধ করা যাচ্ছে না। মেরামত চলাকালে ব্রিজ দিয়ে চলাচলের ঝুঁকি আছে। এ জন্য কাঠ দিয়ে পথচারীদের চলাচল বন্ধ করতে দরজার মতো করে কাঠামো বানানো হচ্ছে।
শিপন বলেন, ব্রিজটি মেরামতের কাজ পেয়েছে ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি আরও কয়েকটি স্টিলের ব্রিজ মেরামত করেছে। ব্রিজের মেরামতকাজ করার জন্য অনেক আগেই মালামাল আনা হয়েছে। তবে পথচারী ও যানবাহন চলাচল বন্ধ না করায় কাজ শুরু করা যাচ্ছিল না। অবশেষে বুধবার থেকে বন্ধ করার পর বৃহস্পতিবার থেকে কাজ শুরু করা হয়েছে। তবে এর আগেই ব্রিজের নিচে স্টিলের পাত দিয়ে বিভিন্ন কাজ এগিয়ে রাখা হয়েছে। স্টিলের পাত যে স্থানগুলোতে ক্ষয় হয়েছে, সেগুলোতে নতুন পাত লাগানো হবে। এ ছাড়া নিচের কিছু ঢালাই অংশ তোলা হবে। সেগুলোতে নতুন করে ঢালাই করা হবে। স্টিলের ব্রিজটির যেসব নাট-বল্টু ক্ষয় হয়েছে, সেগুলো সংযোজন করা হবে। পরে রং করার কাজ করা হবে। সব কাজ শেষ হলে ব্রিজটি আরও মজবুত ও দৃষ্টিনন্দন হবে।
স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিলেট শহরকেন্দ্রিক সুরমা নদীর ওপর পাঁচটি সেতু আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো ও ব্যস্ততম সেতু কিনব্রিজ। ব্রিজটির এক কিলোমিটারের মধ্যে আছে আরও দুটি সেতু। বর্তমানে দুটি সেতু দিয়ে বিকল্প হিসেবে চলাচল করতে হচ্ছে পথচারীদের। এর মধ্যে কিনব্রিজ মেরামতকালে নগরের মেন্দিবাগ এলাকা দিয়ে শাহজালাল সেতু এবং নগরের কাজীর বাজার এলাকার কাজীর বাজার সেতু বিকল্প পথ হিসেবে ব্যবহার করছেন পথচারীরা।
কিনব্রিজ দিয়ে সকালে দক্ষিণ সুরমার ভার্থখলা থেকে বন্দরবাজারের দিকে আসা পথচারী মো. শেখ অপু বলেন, কিনব্রিজ পাড়ি দিলেই ভার্থখলা। ব্যবসার সূত্র ধরে প্রতিদিনই কিনব্রিজ দিয়ে যাতায়াত করতে হয় তাকে। অন্য ব্রিজগুলো অনেকটা দূরে। এ জন্য মেরামতকাজ চললেও সুরমা নদীর কিনব্রিজ দিয়ে চলাচল করছেন তিনি। তবে একেবারেই বন্ধ হয়ে গেলে বিকল্প সেতু দিয়ে বাধ্য হয়ে চলাচল করতে হবে তাকে।
এদিকে ব্রিজ মেরামতের কাজ চললেও ব্রিজের ওপর হকারদের পসরা সাজিয়ে বসে থাকতে দেখা গেছে। হকাররা বলেন, ব্রিজের ওপর পথচারী চলাচল বেশি থাকায় বেচাকেনা ভালো। এ জন্য তারা এখানেই বেচাকেনা করেন। গতকাল থেকে ব্রিজ বন্ধ হলেও পথচারী চলাচল রয়েছে।
গত মঙ্গলবার রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল প্রকৌশল বিভাগ থেকে ব্রিজের দুই পাশে বিজ্ঞপ্তি টাঙানো হয়। এতে আগামী ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত ব্রিজটি বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়। যদিও এর আগে ২৪ জুলাই রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রকৌশল বিভাগ থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দুই মাসের জন্য কিনব্রিজ সংস্কারের জন্য বন্ধ রাখার কথা জানানো হয়েছিল। তবে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরও সংস্কারকাজ শুরু না হওয়ায় এত দিন ব্রিজটি দিয়ে স্বাভাবিকভাবেই যান চলাচল করছিল।
কিনব্রিজের তদারককারী প্রতিষ্ঠান সিলেট সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)। আর সংস্কারকাজ করছে রেলওয়ের সেতু বিভাগ।
সওজ সূত্রে জানা গেছে, জরাজীর্ণ কিনব্রিজ সংস্কারের বিষয়ে ২০২০ সালে সিলেট বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের সমন্বয় সভায় আলোচনা করা হয়। সেখানে সেতু সংস্কারের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তিন সদস্যের একটি কমিটি করে দেওয়া হয়। পরে সওজের পক্ষ থেকে সেতুটি সংস্কারে মন্ত্রণালয়ের কাছে অর্থ বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ পায় সওজ সিলেট। ওই বছরের জুন মাসে বরাদ্দের টাকা রেলওয়ের সেতু বিভাগকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। তবে নানা জটিলতায় সংস্কারকাজ হচ্ছিল না।
এর আগে ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর সেতুটি নড়বড়ে হয়ে পড়লে দুই দিকে লোহার বেষ্টনী দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে সিলেট সিটি করপোরেশন। তবে নাগরিকদের প্রতিবাদের মুখে ৫২ দিন পর যান চলাচলের জন্য সেতুটি খুলে দিতে হয়েছিল।
রেলওয়ের সেতু বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (পূর্বাঞ্চল) জীষাণ দত্ত বলেন, প্রায় দুই কোটি টাকার সংস্কারকাজ করা হবে ব্রিজটির। মেরামতকাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে ব্রিজটি সচল হবে বলে আশা তার।
সিলেট শহরকে উত্তর ও দক্ষিণ দুই ভাগে বিভক্ত করেছে সুরমা নদী। দুই অংশকে সংযুক্ত করতে নদীর ওপর ১৯৩৬ সালে ধনুকের মতো বাঁকা একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। ১ হাজার ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৮ ফুট প্রস্থের লোহার তৈরি এই সেতুর নাম কিনব্রিজ। এটি এখন দেশ-বিদেশে সিলেটের প্রতীক হিসেবে পরিচিত। তবে যানবাহনের ভার বহন করে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাটি টিকিয়ে রাখার স্বার্থে কয়েক বছর আগে এখান দিয়ে সব ধরনের ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এখন সেতু দিয়ে হালকা যানবাহন চলাচল করে।
আই নিউজ/এইচএ
- মাস্টার্স পরীক্ষার ফলাফল ২০২৩
- এসএসসি বোর্ড চ্যালেঞ্জ এর রেজাল্ট ২০২৩
- এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট ২০২৩ | এসএসসি ফলাফল
- অনার্স ১ম বর্ষ পরীক্ষা রুটিন ২০২৩
- এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট ২০২৩ কবে হবে
- চবি ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট ২০২৩
- ‘বাঁচতে চাইলে পরীক্ষায় এ্যাটেন্ড কর’, ছাত্রীকে শাবি শিক্ষক
- ওসমানী মেডিকেলে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, আন্দোলনে ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা
- স্বপ্ন চার্টার্ড একাউন্টেন্ট হওয়া
টিউশনী করে পরীক্ষা দিয়ে গোল্ডেন এ প্লাস পেল সরকারি কলেজের সুমাইয়া - গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট ২০২৩