আলী আমজাদ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় : স্কুল ডে-২০২৩

নারী শিক্ষার মহান ব্রত নিয়ে ১৯৩২ সালে আলী আমজাদ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর পদচারণায় প্রতিদিন বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ মুখরিত হয়। শতশত স্বপ্নের বীজ বুনে দেওয়া হয় শ্রেণীকক্ষে। আর শিক্ষার্থীদের বর্তমান বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যোগ্য ও সুনাগরিক করে গড়ে তুলতে ও মূল্যবোধ সম্পন্ন মানবিক মানুষরূপে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যও চলে নানা আয়োজন। এ রকম বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যে স্কুল ডে - ২০২৩ একটি ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন। 

বিগত ২৬ সেপ্টেম্বর ও ২৭ সেপ্টেম্বর স্কুল ডে-২০২৩ অনুষ্ঠিত হয়েছ। এই দুইদিনব্যাপী স্কুল ডে শব্দটির সাথে যতটুকু আবেগ-অনুভূতি জড়িয়ে আছে সেটা একত্র করলে এক আকাশ সমান হবে। 

আলী আমজাদ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে আমাদের মাঝে যোগ দিয়েছিলেন মৌলভীবাজার জেলার সুযোগ্য জেলা প্রশাসক এ জেলার অভিভাবক ড. উর্মি বিনতে সালাম। 

সভাপতিত্ব করেন আমাদের প্রিয় বিদ্যাপীঠের পরম শ্রদ্ধেয় প্রধান শিক্ষক মো. মইনুল হক। যিনি এ বিদ্যাপীঠের সুশিক্ষা ও নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের একজন রূপকার। শুধু তাই নয়, আমাদের প্রধান শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কীভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে নেওয়া যায় সেই সূক্ষ্ম চিন্তাশীল ব্যক্তিত্বের অধিকারী। 

বিশেষ অতিথি হিসেবে আমাদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) বর্ণালী পাল। যিনি বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে সাহসী পদক্ষেপের স্বপ্নের অংশীদার। বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন এ জেলার মাধ্যমিক শিক্ষা পরিবারের অভিভাবক জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ফজলুর রহমান। জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা মো. জসীম উদ্দিন মাসুদ, যিনি হাজারো শিশুর প্রতিভা অন্বেষণ করে লক্ষ্যে পৌঁছে দেয়ার কারিগর। বাংলাদেশ টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি ও আই নিউজের সম্পাদক হাসানাত কামাল, রেডিও পল্লীকন্ঠের সিনিয়র স্টেশন ম্যানেজার মেহেদী হাসান, অত্র বিদ্যালয়ের প্রভাতী ও দিবা শাখার শিফট ইনচার্জদ্বয়। এছাড়া, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া সহ আরো ও অনেক গুণীজন উপস্থিত ছিলেন।

স্কুল ডে- ২০২৩ উদযাপনে আমজাদিয়ানদের মানসিক অবস্থা ছিল এমন-

“কোথা ও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা
মনে মনে
মেলে দিলেম গানের সুরে এই ডানা
মনে মনে ”

আমার প্রিয় বিদ্যাপীঠের মনোরম পরিবেশে প্রতিটি ক্লাসরুমে স্মার্ট টিভি,মাল্টিমিডিয়ায় ক্লাস, সমৃদ্ধ ব্যবহারিক ল্যাব, শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব ইত্যাদি মাধ্যমে শিখন নিশ্চিত করা হয়। ছাত্রীদের সুস্বাস্থ্য ও অধিকার সচেতন করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে জেনারেশন ব্রেকথ্রু প্রোগ্রামের নিয়মিত অনুশীলনও চলে অপরাজিতা কর্ণারে। এমন পরিবেশে শিক্ষা গ্রহণ করে আমরা খুবই আনন্দিত। বর্তমান বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদেরকে ভবিষ্যতের জন্য যোগ্য করে তোলার সকল প্রচেষ্টা আমাদের বিদ্যালয়ে করা হচ্ছে। মূল্যবোধ সম্পন্ন মানবিক মানুষ গড়ার প্রচেষ্টাটুকু নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।

এ রকম পরিবেশ ও শিখন পদ্ধতি উপহার দেওয়ার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ প্রধান শিক্ষক স্যারসহ অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দের কাছে। গুণীজনের কদর করে গুণীজন প্রস্তুত করতে সদা জাগ্রত আমজাদিয়ান কর্তৃপক্ষ। তারই অংশ হিসেবে প্রথম দিনে জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার প্রাপ্তদের ক্রেস্ট বিতরণ করা হয়। আড়ম্বরতার মধ্য দিয়ে উপভোগ করা হয় তাদের অর্জনের মাধ্যমগুলোকে। 

স্কুল ডে- ২০২৩ আলী আমজাদ সরকারি বলিকা উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত একটি ব্যতিক্রমধর্মী অনুষ্ঠান উপহার দেওয়া হয়েছে। যেখানে ছিল বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড, বিজ্ঞান প্রজেক্ট, বির্তক প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক উৎসব, ক্লাস পারফরমেন্স, পিঠা উৎসব, বই কর্ণার ইত্যাদির মিশেলে আয়োজিত স্কুল ডে আমাদেরকে দিচ্ছে ভয়কে জয় করে বিজয় ছিনিয়ে আনার এক অন্তহীন প্রয়াস। যদি একটু পিছনে ফিরে যাই। তবেই না অনুষ্ঠানগুলোর সফলতা দেখতে পাই। এই অনুষ্ঠানের পরোক্ষ প্রভাবের ফলে আমরা ২০২২ উপজেলা পর্যায়ে ১ম এবং জেলা পর্যায়ে বিজযী হয়েছি। 

জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ, শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় নৃত্য, গান, চিত্রাংকন, কবিতা, বির্তকে আমজাদিয়ানরা জাতীয় পর্যায়েও রেখেছে তাদের মেধার সাক্ষর। আর স্কুল ডে উদযাপনের মধ্য দিয়ে আমাদের মধ্যে যে প্রেরণা সৃষ্টি হয়েছে তার মাধ্যমে আমরা ভবিষ্যতে নিজেদের যোগ্য করে গড়ে তোলার প্রয়াস পাচ্ছি।

বর্তমার যুগ বিজ্ঞানের যুগ। বিজ্ঞানের নানা আবিষ্কারের সূত্র ধরেই আমরা বর্তমানে এসে হাজির হয়েছি। যুগ যুগান্তরের শ্রম, অক্লান্ত সাধনার ফসল দিয়ে মানুষ সাফল্যের এই বিশাল ইমারতটি গড়ে তুলেছে। বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে অনিঃশেষ শক্তির অপরিমেয় অহমিকা। ঘুচিয়ে দিয়েছে স্থানিক ও মানসিক সংকীর্ণতা। আর বর্তমানে এই বিজ্ঞানকে নিয়েই মানুষের হাজারো জল্পনা কল্পনা। ‘বিজ্ঞান দিয়েছে বেগ,কেড়ে নিয়েছে আবেগ’, সময় হয়েছে তার পরিবর্তন করার। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে আমাদের বলতে ইচ্ছে হয়, ‘বিজ্ঞান দিয়েছে সুফল, রোধ করেছে কুফল’। আর এই বিষয়কে বাস্তবায়ন করতেই আমার অনুজ ও সহপাঠীরা, বিদ্যুৎ উৎপাদান, স্মার্ট সিটি, গ্রিন সিটি, পরিবেশ বান্ধব জ্বালানি ইত্যাদিসহ তাদের জটিল সমস্যার সমাধান নিয়ে উপস্থাপন করেছিল ৬৩ টি প্রজেক্ট। এর মাধ্যমে তারা নিজেদের ঘুমন্ত সত্ত্বাকে জাগ্রত করার এক অসাধারণ সুযোগ লাভ পেয়েছিল। 

• আলী আমজাদ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে স্কুল ডে অনুষ্ঠিত

• ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‍্যাংকিংয়ে দেশ সেরা ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়

• শামসুর রাহমানের আম্রবৃক্ষ ও পাড়াতলী গ্রাম

তাছাড়া, কিছুক্ষণের জন্য হলেও নিজেদেরকে বিজ্ঞানী ভাবার সুখ আর ক'জন-ই বা উপভোগ করতে পাবে। অনুষ্ঠানের আরেকটি বড় আর্কষণ বাংলা ও ইংরেজি বির্তক। সত্যি বলতে, বির্তকে অংশ্রগহণের মাধ্যমে নিজেকে সাহিত্য বিশারদের মতো মনে হয়েছিল। সৈয়দ নজরুল ইসলামের মতে ‘যারা প্রশ্ন করতে শেখে না তারা আধুনিক মানুষ নয়। বিতার্কিকরা প্রশ্ন করতে শিখে। তাই তারা আধুনিক মানুষ।’ বির্তক কেবল একটি আলোকিত বিষয়ের সমাধান খুঁজে দেয় না বরং আমাদের জীবনে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে রাখে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তাৎক্ষণিক চিন্তা ভাবনার বিকাশ, কোনো বিষয়ের সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ করতে নিজেদেরকে করে তোলে সক্ষম। 

‘আমরা নুতন আমরা কুঁড়ি নিখিল বন– নন্দনে, ওষ্ঠে রাঙা হাসির রেখা, জীবন জাগে স্পন্দনে।’ যুগে যুগে মানুষকে উন্নতির শিখরে পৌছে দিতে ভেবেছেন অনেকেই। আর বিশেষ করে নারীদেরকে উন্নতির শিখরে যোগ্য মানুষ রূপে গড়ে তোলার ভাবনার তালিকায় অনেক রয়েছেন। বিফল হয়নি সেই মহামানবদের ভাবনা কিংবা যোগ্য করে গড়ে তোলার সে আপ্রাণ প্রচেষ্ঠা। দেখতে গেলে এ দেশের প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, জাতীয় সংসদ স্পীকার সকলেই নারী। আরো ভাবতে সুখকর লেগেছিল স্কুল ডে- ২০২৩ এই মহতী অনুষ্ঠানে প্রধান ও বিশেষ অতিথি ছিলেন নারী।

আমাদেরকে নিয়ে ভাবনা কিংবা যোগ্য করে তোলার এক অনন্য প্রয়াস ছিল স্কুল ডে-২০২৩ এ আয়োজিত বিভিন্ন কর্মসূচী। এই অনুষ্ঠানের নেপথ্যের মহানায়ক ও স্বপ্নদ্রষ্টা হলেন আমাদের বিদ্যাপীঠ আলী আমজাদ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এর সুযোগ্য প্রধান শিক্ষক মো. মইনুল হক স্যার। আর বাকি শিক্ষকগণ হলেন এই স্বপ্ন জয়ের সারথি। দিন যাাবে, সময় গড়াবে। এক সময় রঙ ফিকে হয়ে আসবে। কিন্তু স্কুল ডে-২০২৩ এর সুখময় মুহূর্তগুলো আমাদের স্মৃতির পাতায় চিরণবীণা হয়ে থাকবে।

লেখক: নুজহাত মুশতারী যুহা, শিক্ষার্থী, দশম শ্রেণি (বিজ্ঞান), আলী আমজাদ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মৌলভীবাজার