রাজশাহীর চেয়েও গ্রীন-ক্লিন শহর হবে সিলেট: আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী

সিলেটের মানুষের প্রত্যাশা পূরণে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি রাজশাহী শহরের চেয়েও সিলেট শহরকে গ্রীন, ক্লিন ও স্মার্ট শহর হিসেবে রূপান্তর করা হবে। এতে দেখা যায় দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোর মধ্যে গ্রীন-ক্লিনের অন্যতম উদাহরণ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি)। বর্তমানে দেশের পাশাপাশি বৈশ্বিক পর্যায়েও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ছড়িয়ে পড়ছে। একদিন দেশের শীর্ষ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে শাবিপ্রবি। 

গত সোমবার (০৪ মার্চ) শাবি প্রেসক্লাব কর্তৃক আয়োজিত ১৯তম কার্যনির্বাহী পরিষদের অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।

শুরুতে নবগঠিত কমিটিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে মেয়র বলেন, শাবি প্রেসক্লাবের সাথে যারা জড়িত তাদের শুভেচ্ছা জানাই। এ মহতী অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পেরে আমি আনন্দিত। আমরা এ বিশ্ববিদ্যালয়কে লালন করি, গর্বিত আমি এ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সিলেটের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে বর্তমান উপাচার্য যেভাবে কাজ করে তাতে আমরা কৃতজ্ঞ।

আমরা যখন অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দিকে তাকালে দেখতে পাই ময়লা, আবর্জনা স্তূপে পরিপূর্ণ। সেখানে এই বিশ্ববিদ্যলয় ব্যতিক্রম। এখানে ঢুকেই আমি দেখেছি, এতো সুন্দর পরিবেশ! গ্রীন, ক্লিন সাস্ট! মাঝেমধ্যে নিজেরও আপসোস হয় এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে না পারায়! তবে তৎকালীন স্পিকার হূমায়ুন রশীদ চৌধুরীর অনস্বীকার্য অবদান, অনেকের ত্যাগ তিতিক্ষার মধ্যে দিয়ে আজ এ অবস্থানে আমাদের প্রিয় প্রতিষ্ঠানটি। আমরা সিটি কর্পোরেশন এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে চাই।

শাবি প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, সাংবাদিকরা আমাদের সমাজের দর্পণ, আপনারা সততা ও বস্তুনিষ্ঠার সাথে সংবাদ পরিবেশন করবেন। আমার নিজেরও কোন ভুলত্রুটি থাকলে সেগুলো বস্তুনিষ্ঠতার সাথে লিখবেন। পাশাপাশি ভালো কাজগুলোকেও আপনারা সংবাদ মাধ্যমে তুলে ধরবেন। দেশ এখন স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, তাই আপনাদের সেভাবে এগিয়ে যেতে হবে। আমি আশা রাখছি, এই সংগঠনের সদস্যরা একদিন দেশের প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবেন। দেশের মানুষ, সিলেটের মানুষের কথা তুলে ধরবেন। আপনাদের সহযোগিতা নিয়ে আমরা সিলেটকে একটি সুন্দর, স্মার্ট ও আলোকিত শহর  হিসেবে গড়ে তোলতে চাই।

তিনি বলেন, এই বিশ্ববিদ্যাললেয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী সকলে আমাদের বুদ্ধি ও পরামর্শ দিবেন, আমরা সেই অনুযায়ী মাঠে কাজ করব। এই প্রক্রিয়ায় উন্নয়নের ভারসাম্য বজায় থাকবে এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে। তবে সমাজের সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের সামনে নিয়ে আসতে পারলে তখনই সত্যিকার অর্থে দেশ এগিয়ে যাবে। এতে আপনাদের (সাংবাদিক) অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করতে হবে।  

স্মার্ট সিটি বিনির্মাণ সম্পর্কে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আমাদের সিটিতে ২৪ ঘণ্টা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার কাজ করবো, এটা আমার প্রতিজ্ঞা। সিলেট সিটিকে রাজশাহী সিটির চেয়েও অধিক ক্লিন, গ্রীন ও স্মার্ট সিটিতে রূপান্তরিত করা হবে। আমরা সে লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। আমি দীর্ঘদিন দেশের বাইরে ছিলাম, এবারই প্রথম আমি নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। এতে আমাদের অনেক বড় বড় চ্যালেঞ্জগুলো আছে, এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করে সিলেটের মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হবে। পরিশেষে শাবি প্রেসক্লাবের এ অগ্রযাত্রা বজায় রাখতে নেতৃবৃন্দে প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান তিনি। এরপর আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দসহ শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের বাৎসরিক ম্যাগাজিন ‘কথন-৪’ এর মোড়ক উন্মোচন করেন সিসিক মেয়র।

অনুষ্ঠানে শাবি প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. নুরুল ইসলাম রুদ্রের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক হাসান নাঈমের সঞ্চালনায় গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শাবিপ্রবির উপাচার্য ও শাবি প্রেসক্লাবের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. কবির হোসেন, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আমিনা পারভীন, সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকী, জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসিনা বেগম চৌধুরী। অনুষ্ঠানে কি-নোট স্পিকার হিসেবে বক্তব্য রাখেন দৈনিক 'আজকের পত্রিকা'র সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. গোলাম রহমান।

নবগঠিত কমিটিকে অভিনন্দন জানিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ লেখনীর মাধ্যমে এ বিশ্ববিদ্যালয়কে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শাবি প্রেসক্লাব নতুন মিশন হচ্ছে এ বিশ্ববিদ্যালয়কে  একটি অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া। এতে শিক্ষক- শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছি। উপাচার্য বলেন, সমাজের উন্নয়নগত ও পলিসিগত কাজগুলোতে সাংবাদিকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সুষ্ঠু ও সুন্দর সমাজ গড়ার কারিগর সাংবাদিকরা। পেশাজীবি এই সংগঠন শুধু তথ্য সংগ্রহ করে না, তথ্য বিশ্লেষণের পাশাপাশি জ্ঞানের জগতকে প্রসারিত করতে সহযোগিতা করে। তাতেই বস্তুনিষ্ঠতা উঠে হয়ে আসে। বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে সংম্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন উপাচার্য।

• শাবির ''স্পোর্টস সাস্ট ফুটবল চ্যালেঞ্জ ২০২৪'' অনুষ্ঠিত 

প্রধান আলোচকের বক্তব্যে আজকের পত্রিকার সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. গোলাম রহমান বলেন, সাংস্কৃতিক বিপ্লবের মুল কারিগর সাংবাদিকরা। আমাদের দেশের উন্নয়নশীল দেশকে উন্নতির জন্য সংবাদ উপস্থাপন করাই হচ্ছে প্রকৃত সাংবাদিকতা। বাংলাদেশের অগ্রগতিতে সাংবাদিকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাই সামাজিকভাবে সাংবাদিকদের মূল্যায়ন করা উচিত। আশা করছি শাবি প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা সততা ও নিষ্ঠার সাথে তাদের কথা লেখনীতে ফুটিয়ে তুলবেন।

অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ, ছাত্র উপদেষ্টা, প্রক্টর, বিভাগীয় প্রধান, দপ্তর প্রধান, হল প্রভোস্ট, বিভাগের শিক্ষক, গুণীজন, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, শুভাকাঙ্ক্ষী, বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ক্যারিয়ার ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে শাবি প্রেসক্লাবের সদ্য সাবেক সদস্য, আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। এছাড়া প্রেসক্লাবের নতুন কমিটি ও নতুন সদস্যদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। আয়োজনের শুরুতে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘শিকড়’। এরপর ঢাকার বেইলী রোডের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত ও শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এই অনুষ্ঠানব্যাপী স্থিরচিত্র ধারণ করের বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ফটোগ্রাফি বিষয়ক সংগঠন ‘সুপা’র সদস্যরা।

আই নিউজ/এইচএ