ইমরান আল মামুন
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গাজীপুর নোটিশ বোর্ড
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় (National University of Bangladesh) বাংলাদেশের একটি অন্যতম বৃহৎ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যা দেশের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখে আসছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়টি ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এর সদর দপ্তর গাজীপুর জেলার বোর্ড বাজারে অবস্থিত। এটি একটি অধিভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় যা দেশের বিভিন্ন কলেজ ও ইনস্টিটিউটগুলোকে অধিভুক্ত করে তাদের পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে থাকে। মূলত স্নাতক (অনার্স), স্নাতকোত্তর, এবং বিভিন্ন প্রফেশনাল কোর্স পরিচালনা করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা ও ইতিহাস
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯২ সালের ২১ অক্টোবর, এবং এর যাত্রা শুরু হয় দেশের শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন ও উচ্চশিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে। এর উদ্দেশ্য ছিল দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা কলেজগুলোকে অধিভুক্ত করে তাদের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাপনা করা। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা যাতে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পায় এবং উচ্চশিক্ষার মান বজায় থাকে, সে উদ্দেশ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তার কার্যক্রমকে বিস্তৃত করতে থাকে এবং বর্তমানে এটি দেশের সর্ববৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে। এতে প্রায় ২,২০০টি কলেজ অধিভুক্ত, যা থেকে লক্ষাধিক শিক্ষার্থী স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষা গ্রহণ করে।
একাডেমিক প্রোগ্রাম ও কাঠামো
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন স্তরের উচ্চশিক্ষার সুযোগ প্রদান করে থাকে। এর অধীনে স্নাতক (পাস কোর্স এবং অনার্স), স্নাতকোত্তর, এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়া হয়। এর অধিভুক্ত কলেজগুলোতে স্নাতক পর্যায়ে সাধারণ শিক্ষা, ব্যবসায় শিক্ষা, বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান, এবং কলা বিভাগে শিক্ষা দেওয়া হয়। এছাড়াও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে শিক্ষক প্রশিক্ষণ, ব্যবসায় প্রশাসন (এমবিএ), আইন, ফাইন্যান্সসহ বিভিন্ন পেশাদার কোর্স চালু রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কাঠামোতে রয়েছে তিনটি বড় ডিগ্রি স্তর:
স্নাতক ডিগ্রি (বিএ/বিএসসি/বিকম): সাধারণত চার বছরের এই প্রোগ্রামটি শিক্ষার্থীদের একটি বিশেষ বিষয়ে গভীর জ্ঞান প্রদান করে থাকে। দেশের বিভিন্ন কলেজে এই প্রোগ্রামটি পরিচালিত হয় এবং এটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি প্রোগ্রাম।
স্নাতকোত্তর ডিগ্রি (এমএ/এমএসসি/এমকম): স্নাতক ডিগ্রির পরে, শিক্ষার্থীরা স্নাতকোত্তর পর্যায়ে তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেন। দুই বছরের এই প্রোগ্রামটি শিক্ষার্থীদের গবেষণায় মনোনিবেশ করায় এবং তাদের শিক্ষার উচ্চতর স্তরে নিয়ে যায়।
ডক্টরাল প্রোগ্রাম: যারা উচ্চতর গবেষণায় আগ্রহী, তাদের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রাম অফার করে। এসব প্রোগ্রামে গবেষণা ও উন্নয়নমূলক কাজের ওপর জোর দেওয়া হয়।
শিক্ষার গুণগত মান এবং চ্যালেঞ্জ
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় একটি সমস্যা হলো তার অধিভুক্ত কলেজগুলোর শিক্ষার গুণগত মান বজায় রাখা। প্রচুর সংখ্যক শিক্ষার্থী এবং কলেজ থাকায়, সবার জন্য সমান মানের শিক্ষা প্রদান করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া, পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের বিলম্ব, পর্যাপ্ত সংখ্যক দক্ষ শিক্ষক ও আধুনিক শিক্ষার সুবিধার অভাব, এবং প্রশাসনিক জটিলতাও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু সাধারণ সমস্যা হিসেবে দেখা যায়।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। একটি বড় পদক্ষেপ ছিল অনলাইন সিস্টেম চালু করা। ২০২০ সালে COVID-19 মহামারির সময়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন শিক্ষার দিকে বেশি মনোযোগ দেয় এবং শিক্ষার্থীদের অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেয়।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় অবদান হলো দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দেওয়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্যান্য বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ না পাওয়া শিক্ষার্থীরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ কলেজে পড়াশোনা করার মাধ্যমে উচ্চশিক্ষা অর্জনের সুযোগ পান। এটি গ্রামীণ ও মফস্বল এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বড় সুযোগ, যারা শহুরে শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে পারত।
এছাড়াও, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা কলেজগুলোতে বিভিন্ন ধরনের স্কলারশিপ, গবেষণা সহায়তা, এবং প্রশিক্ষণের সুযোগ পাওয়া যায়, যা শিক্ষার্থীদের পেশাগত জীবনে প্রবেশ করতে সহায়ক।
প্রশাসনিক কাঠামো
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামোতে একটি সিন্ডিকেট বোর্ড, একাডেমিক কাউন্সিল, এবং বিভিন্ন বিভাগ ও অনুষদ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হলেন উপাচার্য, যিনি শিক্ষা, প্রশাসন এবং নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব প্রদান করেন। এছাড়াও, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজকর্ম পরিচালনার জন্য বিভিন্ন ডিন, রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা কাজ করে থাকেন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দেশের উচ্চশিক্ষা খাতে আরও উন্নতি আনার জন্য ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
গবেষণার সুযোগ বৃদ্ধি: দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে উন্নয়নের লক্ষ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণার সুযোগ আরও বৃদ্ধি করতে চায়। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা তহবিল গঠন, উচ্চমানের গবেষণাগার স্থাপন, এবং গবেষণার জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ওপর জোর দিচ্ছে।
ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবস্থার প্রসার: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তার শিক্ষার্থীদের জন্য আরও উন্নত ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে চায়। অনলাইন ক্লাস ও পরীক্ষার সিস্টেম আরও উন্নত করা হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা সহজেই যেকোনো স্থান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।
শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধি: শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন কর্মশালা ও প্রশিক্ষণ কোর্স পরিচালনা করছে। এর মাধ্যমে শিক্ষকদের শিক্ষাদানে নতুন পদ্ধতি ও প্রযুক্তি ব্যবহার করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
বিনিয়োগ ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন: বিভিন্ন কলেজের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, নতুন ভবন নির্মাণ, এবং গবেষণাগার স্থাপনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। এর ফলে শিক্ষার্থীরা আরও উন্নত পরিবেশে পড়াশোনা করতে পারবে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এর অধীনে লক্ষাধিক শিক্ষার্থী শিক্ষা গ্রহণ করে এবং তাদের ভবিষ্যৎ গঠনের পথে অগ্রসর হয়। যদিও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মুখে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তবে কর্তৃপক্ষ সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়নে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
- মাস্টার্স পরীক্ষার ফলাফল ২০২৩
- এসএসসি বোর্ড চ্যালেঞ্জ এর রেজাল্ট ২০২৩
- এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট ২০২৩ | এসএসসি ফলাফল
- অনার্স ১ম বর্ষ পরীক্ষা রুটিন ২০২৩
- এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট ২০২৩ কবে হবে
- চবি ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট ২০২৩
- ‘বাঁচতে চাইলে পরীক্ষায় এ্যাটেন্ড কর’, ছাত্রীকে শাবি শিক্ষক
- ওসমানী মেডিকেলে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, আন্দোলনে ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা
- স্বপ্ন চার্টার্ড একাউন্টেন্ট হওয়া
টিউশনী করে পরীক্ষা দিয়ে গোল্ডেন এ প্লাস পেল সরকারি কলেজের সুমাইয়া - গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট ২০২৩