ধর্ষণ ইস্যুতে মন্তব্য করে সমালোচনার মুখে পড়েছেন ঢাকাই সিনেমার চিত্রনায়ক ও প্রযোজক অনন্ত জলিল। নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আজ রোববার সকালে ‘ধর্ষকদের শিক্ষা দিলেন অনন্ত জলিল’ শিরোনামের একটি ভিডিও-বার্তায় এ অভিনেতা নারীদের ‘ভাই’ হিসেবে উল্লেখ করে ধর্ষণ ঠেকাতে ‘শালীন পোশাক’ পরার আহ্বান জানিয়েছেন।
ছয় মিনিট ১৭ সেকেন্ডের ভিডিও-বার্তার এক পর্যায়ে নারীদের উদ্দেশে অনন্ত জলিল বলেন, ‘সিনেমা, টেলিভিশন, সোশ্যাল মিডিয়াতে অন্যান্য দেশের মেয়েদের অশ্লীল ড্রেসআপ দেখে; এই অশালীন ড্রেসআপ দেখে নিজেরাও ফলো করার চেষ্টা করো, এমনকি এই ফলো করে সেইম ড্রেসআপ পরে ঘোরাঘুরি করো। তোমাদের এই ড্রেসআপ দেখে আল্লাহতায়ালা তোমাদের যে চেহারাটা দিয়েছেন, এই চেহারাটার দিকে বখাটে ছেলেরা না তাকিয়ে, মানুষ না তাকিয়ে তোমাদের ফিগারের দিকে তাকায়। এই তোমাদের অশালীন ড্রেসের কারণে তোমাদের ফিগারের দিকে তাকিয়ে তারা বিভিন্নভাবে মন্তব্য করে, বখাটে ছেলেরা। এবং র্যাপ (রেপ) করার চিন্তা তাদের মাথায় আসে।’
অনন্ত আরো বলেন, ‘তোমরা কি নিজেদেরকে মডার্ন করে করো? হ্যাঁ, এটা কি মডার্ন ড্রেস, না কি অশালীন ড্রেস? এটা মডার্ন ড্রেস হতে পারে না। মডার্ন ড্রেস যেটা হবে, সেটা হচ্ছে তোমার যে ফেসটা আছে, এই ফেসটা দেখা যাবে যেটা আল্লাহতায়ালা তোমাকে দিয়েছে। কিন্তু যে বডিটা আছে, সেটাকে শালীনতা বজায় রাখতে হবে। যে ড্রেসটা পরলে তোমাকে ভালো লাগবে... আমার কথাগুলো আজকে তিতে মনে হতে পারে। কারণ, এর আগে আমি কখনো এই ধরনের কথা বলি নাই। খুব তিতা মনে হবে, বাট এটা সত্য কথা। কেন এই ধরনের ড্রেস পরতে হবে, নিজেকে পাশের একজন ভদ্র মেয়ের কাছে জিজ্ঞেস করে দেখো, তোমাকে কত বাজে লাগে দেখতে। ছেলেদের মতো একটা টি-শার্ট পরে রাস্তায় বের হয়ে যাও। মডার্ন মেয়ে তুমি, খুব মডার্ন। তারপর ইজ্জত শেষ করে যখন বাসায় যাও, হয় আত্মহত্যা করো, আর যদি আত্মহত্যা না করো মানুষের সামনে আর মুখ দেখাতে পারো না। তখন কোথায় থাকে এই মডার্নগিরি?...’
ভিডিও-বার্তায় এমন মন্তব্যের পর পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার মুখে পড়েন অনন্ত জলিল। সমালোচনার তালিকায় যোগ দিয়েছেন শোবিজ তারকারাও। ফেসবুকে অভিনেত্রী ও পরিচালক মেহের আফরোজ শাওন লিখেছেন, ‘আমি মেহের আফরোজ শাওন, বাংলাদেশের একজন চলচ্চিত্র ও মিডিয়াকর্মী এবং স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের সচেতন নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশের নারীদের প্রতি কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য এবং অসংলগ্ন বক্তব্য সম্বলিত ভিডিও বার্তা দেয়ার জন্য জনাব অনন্ত জলিলকে বয়কট করলাম।’
এদিকে, এ সংক্রান্ত এক সংবাদের নিচে অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাস মন্তব্য করেছেন, ‘ছেলেরাও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে, সেখানে কী বলবেন অর্থবান নায়ক?’ অভিনেত্রী নিপুণ আক্তার মন্তব্য করেছেন, ‘বোরকা পরতে হবে।’ অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি মন্তব্য করেছেন, ‘বর্ষার (অনন্ত জলিলের স্ত্রী) প্রোফাইল পিকচারটা বদলায় নাই কেন এখনো!’ এমন অসংখ্য সমালোচনামূলক মন্তব্য ভাসছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমজুড়ে।
অন্তর্জালে সমালোচনার পর অনন্ত জলিল নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক থেকে ভিডিও-বার্তাটি সরিয়ে নিয়েছেন। তবে এ প্রতিবেদন লেখার সময় তাঁর স্ত্রী বর্ষার ফেসবুক পেজে ভিডিও-বার্তাটি দেখা যাচ্ছিল।