ফিচার ডেস্ক
গায়ে রঙের বাহার, বৃহৎ প্রজাতির পাখি
সংগৃহীত ছবি
গাঢ় নীল, আকাশি, কালো, ধূসর, সাদা ও গাঢ় বাদামি রঙের সম্ভার তাদের শরীরে। অসম্ভব সুন্দর পাখি বলে যে কেউ তাদের দেখলেই মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকবে। সর্ববৃহৎ প্রজাতির গিনিফাউল পাখি তারা। ভলচুরাইন বা শকুনি গিনিফাউল নামেই পরিচিত এই পক্ষীকূল।
অন্যান্য গিনিফাউল বর্গ থেকে এই প্রজাতির বেশ পার্থক্য রয়েছে। তবে হোয়াইট ব্রেস্টেড গিনিফাউলের সঙ্গে এদের অনেক মিল আছে। ভলচুরাইন গিনিফাউলের বসবাস মধ্য আফ্রিকার বনাঞ্চলে। শরীরের আকৃতির জন্য এর নাম ভলচুরাইন বা শকুনি গিনিফাউল। মাথা এবং গলার পালক ছাড়া এই প্রজাতির গিনিফাউলের সঙ্গে শকুনের অনেক মিল আছে। সে কারণেই এর নাম শকুনি গিনিফাউল।
মাথা টাক হলেও এই গিনিফাউল পাখি দেখতে অনেক সুন্দর এবং শরীরে বাহারি রঙের পালক আছে। একটি পূর্ণ বয়স্ক ভলচুরাইন গিনিফাউল ৬১ থেকে ৭১ সেন্টিমিটার পর্যন্ত দীর্ঘ হতে পারে। এই প্রজাতির পাখির শরীরের তুলনায় মাথা অনেক ছোট। পূর্ণবয়স্ক এই প্রজাতির গিনিফাউলের শরীরের পালক অনেকটা গাঢ় ধূসর রঙের এবং সূক্ষ্ম সাদা দাগযুক্ত।
তাদের বক্র সরু লেজ। পাখির ডানাগুলো ছোট ও গোলাকার। পাখির পুরো শরীর জুড়েই নীল ও বেগুনি রঙের সম্ভার। গলার রং কালো। এদের বুকের পালক গাঢ় নীল রঙের হয়। পাখিটির চোখগুলো গাড় লাল রঙের, পাগুলো বেশ লম্বা ও ধূসর বর্ণের। ভলচুরাইন গিনিফাউল পাখির পুরুষ এবং স্ত্রী উভয় প্রজাতির পালক একই রকম। তবে স্ত্রী পাখির আকার তুলনামূলকভাবে ছোট।
বাচ্চা পাখিদের রং ধূসর বাদামি হয় এবং বুকে গাঢ় নীল রঙের ছোট ছোট পশম থাকে। ভলচুরাইন গিনিফাউল নিম্ন বনভূমি অঞ্চলে বসবাস করলেও অনেকটা ফাঁকা এবং শুষ্ক জায়গায় বিচরণ করে। শুষ্ক, অর্ধ-শুষ্ক, বনাঞ্চল এবং তৃণভূমিতেও এদের বিচরণ রয়েছে। দক্ষিণ ইথোপিয়া, পশ্চিম সোমালিয়া, কেনিয়া এবং তাঞ্জানিয়ার শুষ্ক অঞ্চল এই প্রজাতির গিনিফাউলের মূল আবাসভূমি।
ভলচুরাইন গিনিফাউল বীজ, পাতা, বেরি, ফল, শিকড়, সবুজ কুঁড়ি প্রভৃতি উদ্ভিদজাত খাদ্য হিসেবে খায়। এছাড়া বড় পোকামাকড়, বিচ্ছু, মাকড়সা এবং ছোট অণুজীবও তারা খেয়ে থাকে। পাখিটি মূলত পায়ে হেঁটে স্থলে বিচরণ করে। তবে ফল খাওয়ার জন্য ছোট গাছেও থাকে। ভলচুরাইন গিনিফাউলের খুবই কম পানি পান করার প্রয়োজন হয়। কারণ উদ্ভিদ জাতীয় খাবার গ্রহণ করায় সেখান থেকেই শরীরের প্রয়োজনীয় পানি পেয়ে থাকে তারা।
ভলচুরাইন গিনিফাউল পক্ষীকূল দলবদ্ধভাবে থাকতেই পছন্দ করে। প্রজনন মৌসুম বাদে অন্য সময় ২০ থেকে ৩০টি পাখি একটি দলে থাকে। তবে প্রজনন মৌসুমে এদের দল ভেঙে যায়। তখন তারা একা অথবা জোড়ায় থাকে। পাখিটি তখন আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে এবং প্রতিদ্বন্দ্বী পুরুষদের মধ্যে লড়াই হয়। লড়াইয়ের পর জোড় পাতে নারী পাখির সঙ্গে। সঙ্গীর সঙ্গে বন্ধন অটুট রাখতে কণ্ঠ ও অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে তারা একে অপরকে সংকেত দেয় এবং যোগাযোগ করে।
জোড় বাধা পাখি অনুরাগ প্রকাশ করতে একে অপরকে খায়িয়ে দেয়। পাখিটির প্রজনন মৌসুম জুন এবং ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারি মাসে। মাটিতে ঘাস বা খড় দিয়ে স্ত্রী পাখি বাসা বাঁধে। অনেক সময় শুষ্ক ভূমির ঘাস বা গুল্মলতার মধ্যে ডিম পাড়ে। স্ত্রী পাখি সাধারণত ১৩ থেকে ১৫টি ডিম পাড়ে। একই বাসায় দুটি স্ত্রী পাখিও ডিম পাড়তে পারে। ডিমগুলো ক্রিম সাদা অথবা ফ্যাকাশে বাদামি রঙের হয়। প্রায় ২৮ দিন তা দেয়ার পর বাচ্চা ফোটে।
বাচ্চাগুলো কয়েক দিনের মধ্যে একা একা খাওয়া শিখে যায়। বাসা ছেড়ে বেরও হয়ে যায় তারা। তবে কিছু দিন বাবা ও মা পাখি তাদের নিরাপত্তার জন্য দেখে রাখে। শত্রুর হাত থেকে বাবা-মা উভয় পাখিই লড়াই করে। মোটামুটি ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে বাচ্চাগুলো উড়তে শিখে যায়। বাচ্চা পাখি দুই থেকে তিন মাস পর্যন্ত পারিবারিক দলে থাকে। ভলচুরাইন গিনিফাউল দলবদ্ধভাবে চলার সময় একটি জটিল সামাজিক কাঠামো অনুসরণ করে।
এই পাখিগুলো অন্যান্য প্রজাতির পাখি ছাড়াও স্তন্যপায়ী প্রাণীর সঙ্গেও সংযুক্ত থাকে। এরা প্রায়শই বৃক্ষবাসী বানরদের অনুসরণ করে। কারণ গাছ থেকে মাটিতে ফল ফেলে বানরের দল। যা পাখিটির খাদ্যের জোগান দেয়। ভলচুরাইন গিনিফাউলেরও খুব কমই উড়তে দেখা যায়। বিপদ দেখলেও তারা না উড়ে বরং দৌঁড়ায়। তবে তারা উড়তেও বেশ দক্ষ। প্রয়োজনে ৫০০ মিটার পর্যন্ত উড়তে পারে।
- কেএফসির মালিকের জীবন কাহিনী
- প্রজাপতি: আশ্চর্য এই প্রাণীর সবার ভাগ্যে মিলন জোটে না!
- মা-শাশুড়িকে হারিয়েও করোনার যুদ্ধে পিছিয়ে যাননি এই চিকিৎসক
- বিশ্বের অদ্ভুত কিছু গাছের ছবি
- সোনার দাম এত কেন : কোন দেশের সোনা ভালো?
- যেখানে এক কাপ চা পুরো একটি পত্রিকার সমান!
- তিন রঙের পদ্মফুলের দেখা মিলবে এই বিলে
- রহস্যময় গ্রামটি লাখো পাখির সুইসাইড স্পট
- ২০২৩ সালে পৃথিবীর শক্তিশালী ১০টি দেশ!
- বায়েজিদ বোস্তামি: মাতৃভক্তির এক অনন্য উদাহরণ