হেলাল আহমেদ
একটি পাখির বিলাপ শোনে পদ্মার চরে পাখি শিকার বন্ধ করেছিলেন তিনি
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে প্রেমের কবি বলতেই বেশিরভাগ লোক পছন্দ করেন। যদিও রবীন্দ্র সাহিত্য চর্চায় শুধু প্রেমই মূখ্য ছিলো না। বরং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শুধুমাত্র প্রেম কেন্দ্রিক চিন্তায় আটকে না থেকে কবিতায় মানবজীবনকে প্রতিফলিত করার চেষ্টাও করেছেন এবং এদিক থেকে অনেকটা সফলও হয়েছেন। তাঁর বিভিন্ন কাব্য, গল্পে আমরা বাস্তব জীবনের ছাপ খুঁজে পাই। যেগুলোকে তিনি বিভিন্ন চরিত্র শব্দের মাধুর্য দিয়ে উপস্থাপন করেছেন সাহিত্য প্রেমিদের কাছে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বড়ো ছেলের নাম রথীন্দ্রনাথ। যার জন্ম হয়েছিল, ১৮৮৮ সালে। পরবর্তী রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর একজন বিশিষ্ট কৃষিবিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ এবং লেখক হয়ে উঠেছিলেন। জানা যায়, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছেলে রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ছোটোবেলায় তিনি ছিলেন রুগ্ন। স্বাস্থ্য খুব একটা ভালো ছিল না। এই নিয়ে উদ্বেগে থাকতেন পিতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
রবি ঠাকুরের জীবনী ঘাঁটলে দেখা যায় তাঁর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ কেটেছে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে। এখানেই রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজরিত কুটির বাড়িটি। ১৮৮৯ সালে রবি ঠাকুর এখানে জমিদার হয়ে আসেন এবং ১৯০১ সাল পর্যন্ত শিলাইদহে জমিদারি করেন। এখানে বসেই তিনি রচনা করেছিলেন তাঁর বিখ্যাত সোনার তরী, চিত্রা, চৈতালি'র মতো গ্রন্থগুলো। এদিকে জগদীশচন্দ্র বসু, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, প্রমথ চৌধুরীর মতো মণীষীরা শিলাইদহে আসতেন রবি ঠাকুরের সঙ্গে দেখা করতে।
রবি ঠাকুরের ছেলে রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বয়স তখন দশ-বারো বছর। বাবার সাথে জমিদারি দেখতে শিলাইদহে এসে মনের আনন্দে দিন কাটাতেন রথিও। ঘুরে বেড়াতেন পদ্মার বিস্তীর্ণ চরে। বিশাল ফাঁকা চর, মানুষের বসতি নেই। মানুষের কোলাহল থেকে দূরে এমন জায়গা পাখিদের কাছে খুব লোভনীয়। তাই প্রচুর পাখির সমাগম হত সেখানে। আর যেহেতু পদ্মার চরে প্রচুর পাখির আনাগুনা ছিলো তাঁর সেখানে হানা দিতো পাখি শিকারীরা।
রবি ঠাকুরের কর্মচারীদের মধ্যেও কেউ কেউ ছিলেন দক্ষ শিকারি। তাঁদের থেকে শিকারের নেশা পেয়ে বসল বালক রথীন্দ্রনাথকে। তাই মাঝেমাঝে রবি ঠাকুরর ছেলেও চলে যেতেন পদ্মাচরের বিলে পাখি শিকারের জন্য। তখন ঘাড়ে থাকত বন্দুক। এদিকে ছেলের এমন কাজকর্ম খুব একটা পছন্দ করতেন না রবি ঠাকুর। কিন্তু বারণও করতেন না তিনি। কারণ, ঘন ঘন শিকারে গিয়ে রথীন্দ্রনাথের স্বাস্থ্য ক্রমেই উন্নত হচ্ছিল। কায়িক পরিশ্রম, পদ্মার নির্মল বাতাস সেবন, মনের আনন্দ – সব কিছুর ইতিবাচক প্রভাব পড়ছিল শরীরে।
ওই সময়ে পদ্মার চড়ে এক জোড়া চখাচখি এসেছিল। মনের আনন্দে তারা ঘুরে বেড়াত। চখাচখি দারুচিনি রং-এর এক প্রজাতির বড়ো আকারের হাঁস। এরা জোড়ায় থাকে। পুরুষ পাখিটিকে চখা আর মেয়েটিকে চখি বলা হয়। এইধরনের পাখি নানা দেশে পাড়ি দেয় পরিযায়ী হয়ে। শীতকালে ঝাঁক বেঁধে বাংলাতেও আসে।
শিকারের সময়ে রথীন্দ্রনাথের প্রধান সঙ্গী হিসেবে থাকতেন ঠাকুরবাড়ির বোটের এক মাঝি। অসমসাহসী সেই মাঝি নিজেও ছিলেন অভিজ্ঞ শিকারি। তাঁর গুলির নিশানা ছিল অব্যর্থ। একদিন পাখি শিকারে গিয়ে গুলি করে তিনি ওই দু’টি পাখির একটিকে মেরে ফেলেন। আরেকটি পাখি প্রাণে বেঁচে যায়। সে করুণ সুরে বিলাপ করতে থাকে। তার অনবরত ক্রন্দন নির্জন চরের নৈঃশব্দকে ভেঙে খানখান করে দেয়।
সেদিন সঙ্গীহারা ওই একটি পাখির বিলাপ তোলপাড় করে দিয়েছিলো কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের সংবেদনশীল মন। তিনি অশান্ত হয়ে ওঠেছিলেন ওই পাখিটিকে মারার পর। সাথীহারা পাখিটির কান্না সেদিন যেন অনুভব করেছিলেন রবি ঠাকুর। তিনি সিদ্ধান্ত তাঁর জমিদারির অন্তর্গত পদ্মার চরে আর একটি পাখিকেও শিকার করতে দেবেন না। তাই তিনি তাঁদের জমিদারির অন্তর্গত পদ্মার চরে পাখি শিকার তিনি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।
- কেএফসির মালিকের জীবন কাহিনী
- প্রজাপতি: আশ্চর্য এই প্রাণীর সবার ভাগ্যে মিলন জোটে না!
- মা-শাশুড়িকে হারিয়েও করোনার যুদ্ধে পিছিয়ে যাননি এই চিকিৎসক
- বিশ্বের অদ্ভুত কিছু গাছের ছবি
- সোনার দাম এত কেন : কোন দেশের সোনা ভালো?
- যেখানে এক কাপ চা পুরো একটি পত্রিকার সমান!
- তিন রঙের পদ্মফুলের দেখা মিলবে এই বিলে
- রহস্যময় গ্রামটি লাখো পাখির সুইসাইড স্পট
- ২০২৩ সালে পৃথিবীর শক্তিশালী ১০টি দেশ!
- বায়েজিদ বোস্তামি: মাতৃভক্তির এক অনন্য উদাহরণ