Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, বুধবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৫,   বৈশাখ ২ ১৪৩২

হেলাল আহমেদ

প্রকাশিত: ১৫:৪১, ১০ মে ২০২০

বায়েজিদ বোস্তামি: মাতৃভক্তির এক অনন্য উদাহরণ

আজ বিশ্ব মা দিবস।  এই দিবসে প্রত্যেকেই তাদের মায়ের প্রতি একটু বেশিই ভালোবাসা প্রদর্শন করে থাকেন।  বছর ঘুরে এই দিবসটি আমাদের মাতৃভক্তি বাড়িয়ে দেয়।  মাতৃভক্তি নিয়ে আমাদের ছোট বেলায় সবথেকে প্রচলিত যে কয়টি গল্প বা রূপকথা শোনা যেতো সেগুলোর মধ্যে অন্যতম সূফি সাধক বায়েজিদ বোস্তামির গল্প। 

বায়েজিদ বোস্তামিকে সকলেই আমরা ছোট থেকেই চিনে এসেছি। বিখ্যাত এই সুফি সাধক অনেকের কাছেই পরিচিত তার মা ভক্তির গল্প থেকে। কেমন ছিল তার জীবন? আজকের লেখাটি তাঁকে ঘিরেই।

শোনা যায় বায়েজিদ বোস্তামির জন্ম ইরানের বোস্তাম শহরে। বাবার নাম তাইফুর। বায়েজিদের আসল নাম আবু ইয়াজিদ তাইফুর ইবনে ইসা ইবনে সুরাশান আল বিস্তামি। তিনি ৮০৪ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন।

বায়েজিদ বোস্তামির ছেলেবেলা তেমন কিছুই আসলে জানা যায় না। শুধু এটুকুই জানা যায় যে, বায়েজিদ বোস্তামি দিনের বেশিরভাগ সময়ই মসজিদ নয়তো ঘরে কাটাতেন। তার বাবা-মা দুজনেই ছিলেন ধার্মিক।

বায়েজিদ বোস্তামির যে গল্পটি আমরা ছোটবেলা থেকেই শোনে এসেছি সেটা এবার বলা যাক। এক রাতে তার ধার্মিক মার ঘুম ভেঙে গেলে তিনি বায়েজিদের কাছে পানি পান করতে চাইলেন। কেননা তিনি প্রচুর তৃষ্ণার্থ ছিলেন।

তবে ওইসময় ঘরের কলসিতে বিন্দু পরিমাণও পানি ছিলো না। এদিকে মা পানির তেষ্টা পেয়েছে। বালক বায়েজিদ বোস্তামি সিদ্ধান্ত নিলেন গভীর রাতেই তিনি বাইরে গিয়ে পানি নিয়ে আসবেন।

গভীর রাতে হাঁটতে হাঁটতে বায়েজিদ গিয়ে পৌঁছালেন দূরের এক ঝর্ণার ধারে। এবার মাকে পানি পান করাতে পারবেন ভেবে কিশোর বায়েজিদ মনে মনে সৃষ্টিকর্তার প্রতি শুকরিয়া আদায় করলেন।

এদিকে পানি পেয়ে ঝর্ণা থেকে পানি ভরে তিনি যখন ঘরে ফিরলেন অবশেষে, তখন তার মা আর জেগে নেই, আবারো ঘুমিয়ে পড়েছেন। বায়েজিদ তাঁর ঘুমন্ত মাকে ডেকে তুলার সাহস পেলেন না। কারণ, মা তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।

তাই বায়েজিদ মায়ের ঘুম না ভাঙিয়ে মায়ের কাছে সারা রাত দাঁড়িয়ে রইলেন পানির গ্লাস হাতে করে, পাছে মা আবার উঠে পানি পান করতে চান। রাত পেরিয়ে সকাল হলে মা’র ঘুম ভাঙল। তিনি দেখলেন বায়েজিদ দাঁড়িয়ে পানির গ্লাস হাতে নিয়ে। মায়ের প্রতি এই আবেগ দেখে মা উদ্বেলিত হয়ে পড়লেন। এসময় বায়েজিদ বোস্তামির মা বায়েজিদকে এই বলে আশির্বাদ করেন যে, বায়েজিদ একদিন অনেক বড় হবেন।

মায়ের আশির্বাদ হয়তো সত্যি হয়েছিলো। কেননা আমরা জানি পরবর্তীতে বায়েজিদ বোস্তামি অনেক বড় একজন ধর্ম প্রচারক হয়েছিলেন। তাঁর স্মৃতি ধরে রাখতে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় গড়ে ওঠেছে বায়েজিদ বোস্তামির মাজার।  

তবে বায়েজিদ বোস্তামির এ কাহিনীটা আমরা কোনো জীবনীগ্রন্থে পাই না, পাই কেবল লোককাহিনী আর কবিতাগ্রন্থে। যেমন কালিদাসের কবিতায় আমরা এ কাহিনী পাই, যেখানে মা আবেগে বলে উঠেনঃ

“কহিল মা, মরি মরি!

বাছারে আমার পানি হাতে করে সারা রাত্রটি ধরি

দাঁড়াইয়া আছো? ঘুমাওনি আজ? চোখে এলো জল ভরি।”

 

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়