জুবেদ আহমেদ
প্রকাশিত: ০৪:৫২, ১৮ মে ২০২০
আপডেট: ০৫:০২, ১৮ মে ২০২০
আপডেট: ০৫:০২, ১৮ মে ২০২০
অদৃশ্য দানবকে বন্দি করে পৃথিবীকে বাঁচিয়েছিলেন যারা
৭০-এর দশকের আগেরকার কথা।তখনও রেফ্রিজারেটর আবিষ্কৃত হয়নি।তখনকার দিনে খাবারের পচন রোধ করা ছিল দুষ্কর।সেইসময় যুক্তরাষ্ট্রে 'আইসম্যান' নামক এক ধরণের পেশা ছিল।আইসম্যানরা বিভিন্ন এলাকায় ঘরে ঘরে বরফ পৌঁছে দিতেন।বরফগুলো আইসবক্স নামক যন্ত্রে রেখে খাবারের পচন রোধ করার চেষ্টা করা হতো।কিন্তু বরফ গলে পানি ছড়ানোর কারণে এ পদ্ধতিটি মোটেও সুবিধাজনক ছিল না।
সমস্যাটি সমাধানে ফার্দিনান্দ ক্যারে নামের এক ব্যক্তি গ্যাসচালিত রেফ্রিজারেটর উদ্ভাবন করেন।এ যন্ত্রে শীতলকারক হিসেবে এমেনিয়া অথবা সালফার ডাই অক্সাইড ব্যবহার করা হতো।কিন্তু দুটি গ্যাসই ছিল বিষাক্ত এবং দূর্গন্ধযুক্ত।এইসব গ্যাস অনেকসময় পাইপ ফুটো হয়ে খাবারে সঙ্গে মিশে যেতো।এর ফলে নিরাপদ আর উত্তম শীতলকারক একটি পদার্থের প্রয়োজন অনুভূত হয়।কিন্তু পরিবেশে এমন কোনো পদার্থের অস্তিত্ব ছিল না।
যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা সিএফসি নামক এক ধরণের পদার্থ তৈরি করেন।নতুন এই পদার্থটি শুধুমাত্র শীতলকারক হিসেবেই নয়,শেভিং ফোম এবং চুলের জেলসহ অনেক পণ্যে হয়ে উঠে অত্যাবশকীয় উপাদান।এমনকি অগ্নিনির্বাপক ও পরিষ্কারক হিসেবেও ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠে।
সিএফসির মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল ফ্রিয়ন।এটি যুগের পর যুগ বহুল ব্যবহৃত হয়ে আসলেও এর কোনো ক্ষতিকর দিক পরিলক্ষিত হয় নি।কিন্তু ৭০ এর দশকে মলিনা এবং রোন্যাল্ড নামক দুজন বিজ্ঞানী সিএফসির ক্ষতিকর দিক আবিষ্কার করেন।তারা দেখতে পান সিএফসির প্রভাবে পৃথিবীর ওজোনস্তর ইতিমধ্যে পাতলা হয়ে গিয়েছে।
সিএফসির অণুর একটিমাত্র ক্লোরিন পরমাণু ১ লক্ষ ওজোন পরমাণুকে ভেঙ্গে দিতে সক্ষম।ওজোনস্তর সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনী রশ্মি থেকে পৃথিবীর জীবজগতকে রক্ষা করে।ওজোনস্তর না থাকলে পৃথিবীতে জীবের টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
এদিকে সিএফসির ব্যবহার ছিল বিপুলসংখ্যক পণ্যে।এটি ছাড়াও পৃথিবী কল্পনা করাও ছিল দুষ্কর।শিল্পপতিরা বিজ্ঞানীদের দেয়া বিপদসংকেত ভিন্ন দিকে নেয়ার অপচেষ্টা করেন।তবে বিজ্ঞানী মলিনা এবং রোল্যান্ড হাল ছাড়েন নি।তারা মানুষকে সচেতন করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালান।
অবশেষে ৮০'র দশকে শুরু হয় সিএফসির বিরুদ্ধে বৈশ্বিক আন্দোলন।সারা বিশ্বের অসংখ্য সাধারণ মানুষ সিএফসিকে নিষিদ্ধের দাবীতে রাস্তায় নেমে আসেন।একসময় বিশ্বনেতৃবৃন্দেরও টনক নড়ে উঠে।সিএফসি নিষিদ্ধ হয় সবগুলো দেশে।তারপর দীর্ঘদিন এই অদৃশ্য দানবের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হওয়া ওজোনস্তর ধীরে ধীরে সুস্থ হতে শুরু করে।
আরও পড়ুন
ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
- কেএফসির মালিকের জীবন কাহিনী
- প্রজাপতি: আশ্চর্য এই প্রাণীর সবার ভাগ্যে মিলন জোটে না!
- মা-শাশুড়িকে হারিয়েও করোনার যুদ্ধে পিছিয়ে যাননি এই চিকিৎসক
- বিশ্বের অদ্ভুত কিছু গাছের ছবি
- সোনার দাম এত কেন : কোন দেশের সোনা ভালো?
- যেখানে এক কাপ চা পুরো একটি পত্রিকার সমান!
- তিন রঙের পদ্মফুলের দেখা মিলবে এই বিলে
- রহস্যময় গ্রামটি লাখো পাখির সুইসাইড স্পট
- ২০২৩ সালে পৃথিবীর শক্তিশালী ১০টি দেশ!
- বায়েজিদ বোস্তামি: মাতৃভক্তির এক অনন্য উদাহরণ
সর্বশেষ
জনপ্রিয়