ফিচার ডেস্ক
আপডেট: ১৯:০২, ১০ জুন ২০২০
যে কবরস্থানে বাস করে ১০ হাজার জীবিত মানুষ
ছবি: সংগৃহীত
মৃত্যু প্রতিটি প্রাণীর জন্যই অনিবার্য। কিছুদিন আগে কিংবা পরে, এই সুন্দর পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে সবাইকে চলে যেতেই হবে। মানুষ মারা যাওয়ার পর ধর্মভেদে তাদের মৃতদেহ দাফন, পোড়ানো কিংবা বাক্সবন্দী করে রাখা হয়। আবার মৃতদের জন্য সমাধিস্থান তৈরি করা হয়। নিশ্চয়ই জানেন, মৃতদের এসব সমাধিস্থানে কখনোই কোনো জীবিত মানুষ থাকে না।
তবে আপনার চোখ কপালে উঠে যাবে ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় এক সমাধিক্ষেত্র দেখলে। না, ভয়ের কিছু নেই। সেখানে কোনো ভূত-প্রেতের উপস্থিতি নেই। সমাধিক্ষেত্রের শিহরণ জাগানো নীরবতা এখানে একদমই নেই। বরং সে জায়গাটি দেখে মনে হবে আপনি কোনো ছোট একটি শহরে এসেছেন।
জায়গাটি কোলাহলে পরিপূর্ণ। এই সমাধিক্ষেত্রেই রয়েছে অনেক দোকান। যেখানে বিক্রি হয় সার্ডিন নামের সামুদ্রিক মাছ, নুডলস, চকলেট, মোমবাতি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস। এমনকি এখানে প্রিপেইড মোবাইল কার্ডও বিক্রি হয়। এই সমাধিক্ষেত্রের কবরগুলোর মধ্যে গড়ে উঠেছে অস্থায়ী রেস্তোরাঁ। যেখানে বিক্রি হয় খাদ্য ও পানীয়। উঠানামার সুবিধার্থে দেয়ালগুলোতে ঝোলানো হয়েছে জন্য মই।
নিশ্চয়ই ভেবে অবাক হচ্ছেন, মৃতদের জন্য এতো আয়োজন! আসলে এত সব আয়োজন মৃতদের জন্য নয় বরং জীবিত মানুষের জন্য! ম্যানিলার হাজার হাজার মানুষ এই সমাধিক্ষেত্রকে বেছে নিয়েছে বসবাস করার জন্য। ফিলিপাইনের রাজধানীতে অবস্থিত এই ‘নর্থ সিমেট্রি’ এখন মোটামুটি ছোট একটি গ্রামের মতো, যাতে অধিবাসীর সংখ্যা দশ হাজার!
এই সমাধিক্ষেত্রে বসবাসকারী অধিবাসীদের অনেকেরই দাদা-পরদাদা এখানেই বাস করে এখানেই মারা গেছেন। বেশ কয়েক প্রজন্ম ধরে তারা এখানেই বাস করছে। তবে এই সমাধিক্ষেত্রের বেশিরভাগ মানুষ এসেছে ফিলিপাইনের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে। তারা রাজধানী ম্যানিলায় এসেছিল ভাগ্যের অন্বেষণে। ব্যর্থ হয়ে আশ্রয় নিতে শুরু করে এই সমাধিক্ষেত্রে।
পানীয় ও খাবার দোকান চালানো ছাড়াও এখানকার অধিবাসীরা কবরকেই বেছে নিয়েছে তাদের উপার্জনের উপায় হিসেবে। শেষকৃত্যানুষ্ঠানে এখানকার কিশোররা ৫০ পেসো (৫০ সেন্ট) বিনিময়ে কফিন বহন করে। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষরা তাদেরকে ভাড়া করা হয় কবরের রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের কাজে। আর নারীরা ধুয়ে-মুছে সমাধিগুলোকে রাখেন ঝকঝকে-তকতকে। আর শিশুরা প্লাস্টিক, ফেলে দেয়া জিনিস সংগ্রহ করে, যেগুলো পরে বিক্রি করে দেয়া হয়।
আরো মজার বিষয় হলো, এখানে যারা আছে তারা কিন্তু বেশ আনন্দেই আছে। তাদের জীবনধারা হয়তো খুব আকর্ষণীয় নয়, কিন্তু মৃতদের মাঝেই বেঁচে থাকার এই সংগ্রামের জন্য তারা প্রশংসা পেতেই পারে। শুধু তাই নয়, বেশ কিছু খালি সমাধি এখন টিভি ও সেট তৈরির জন্য ভাড়া দেয়া হয়। যে কেউ ৫ পেসোর বিনিময়ে সেখানে গান গাইতে পারে। এছাড়া এই সমাধিক্ষেত্রে আছে দর্জি, বিউটিশিয়ান ও স্কুলশিক্ষক।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বাসস্থান সুবিধাসহ তাদেরকে অন্যত্র সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু সফল হয় নি। কবরস্থানের জীবিত অধিবাসীরা তাদের এই অদ্ভুত গ্রাম ছেড়ে কোথাও যেতে রাজি নয়। এছাড়া তাদের জীবিকাও যে সমাধিক্ষেত্রকে ঘিরেই। তাই তারা আর এই স্থানটি ছাড়তে সক্ষম নয়। তাইতো কথায় আছে ‘home, sweet home!” হোক না তা কবরস্থানের ভেতরে! সব সুখ নিজের ঘরেই নিহিত থাকে।
- কেএফসির মালিকের জীবন কাহিনী
- প্রজাপতি: আশ্চর্য এই প্রাণীর সবার ভাগ্যে মিলন জোটে না!
- মা-শাশুড়িকে হারিয়েও করোনার যুদ্ধে পিছিয়ে যাননি এই চিকিৎসক
- বিশ্বের অদ্ভুত কিছু গাছের ছবি
- সোনার দাম এত কেন : কোন দেশের সোনা ভালো?
- যেখানে এক কাপ চা পুরো একটি পত্রিকার সমান!
- তিন রঙের পদ্মফুলের দেখা মিলবে এই বিলে
- রহস্যময় গ্রামটি লাখো পাখির সুইসাইড স্পট
- ২০২৩ সালে পৃথিবীর শক্তিশালী ১০টি দেশ!
- বায়েজিদ বোস্তামি: মাতৃভক্তির এক অনন্য উদাহরণ