ফিচার ডেস্ক
আপডেট: ১২:৩৮, ১৩ জুন ২০২০
চখাচখি: রাজশাহীর পাখিদের ব্র্যান্ড এম্বাসেডর
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের এক পরিযায়ী পাখি হলো চখাচখি। সাধারণত রাজশাহী অঞ্চলে এদের দেখা যায়। অনেকে এটিকে রাজশাহীর পাখিদের ব্র্যান্ড এম্বাসেডর বলেও অভিহিত করেন। সাধারণত মে-জুন মাসের সময় এরা ডিম পাড়ে। চখাচখি ৬ থেকে ১০টি পর্যন্ত ডিম পাড়ে। মালভূমির উঁচু এলাকা ও জলাভূমির পাশে মাটিতে গর্ত করে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে এরা। ২৮ থেকে ৩০ দিনেই ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। এরপর ছোট এ ছানাগুলো ৫৫ দিন হলেই উড়তে শেখে।
চখাচখির বৈজ্ঞানিক নাম কি?
চখাচখির বৈজ্ঞানিক নাম হলো -Tadorna ferruginea এর অর্থ মরচে-রঙ চখাচখি এবং ইংরেজি নাম: Ruddy Shelduck। সারা পৃথিবীতে এক বিশাল এলাকাজুড়ে এই পাখির আবাস। এদের বাস প্রায় ৮৪ লাখ ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার। তবে এই পাখি শিকারীদের শিকারে বিপন্ন হতে থাকলেও আশংকাজনক পর্যায়ে এখনও পৌঁছে যায়নি।
চখাচখি নামটি কোথা থেকে এলো?
চখাচখি কিন্তু একটি পাখিকে বুঝায় না। এরা জোড়ায় জোড়ায় থাকে বলেই পুরুষটি চখা আর স্ত্রীটিকে চখি নামে অভিহিত করা হয়েছে। সবসময় মানিকজোড়ের মতো একসঙ্গে থাকে বলে এদের একবারেই ডেকে ফেলা হয়। শুধুমাত্র চখার এবং চখির মাঝে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। চখা কমলা ও বাদামি থেকে দারুচিনি রংয়ের। মাথা ও ঘাড় হালকা বাদামি বর্ণের হয়। ধাতব সবুজ পতাকা বর্ণের ডানা ও সাদা পালকের ঢাকনি। চখার লেজ কালো আর গলায় থাকে সরু কালো বলয়। চখার চেয়ে চখি আকারে সামান্য ছোট। ফিকে রংয়ের মাথাওয়ালা চখির গলায় বলয় থাকে না। চখাচখির চোখ হয় বাদামি। আর ঠোঁট, পা ও পায়ের পাতা হয় কালো।
বাংলাদেশে কোথা থেকে আসে?
শীতে যখন নদীর পানি কমে যায় ঠিক তখনই দেখা মেলে চখাচখির ঝাঁক। বড় নদী বা চরাঞ্চলের মানুষ ছাড়া এই পাখিকে খুব কম মানুষই চেনে। পাখিটি দেখতে কিন্তু বেশ মনোরম, অনেকটা হাঁসের মতোই। এরা আসলে পরিযায়ী পাখি। এশিয়া, ইউরোপ এবং আফ্রিকার উত্তর ও দক্ষিণাংশে চখাচখি দেখা যায়। এশিয়ায় তুরস্ক হতে জাপান পর্যন্ত এই পাখির বিস্তৃতি। শীতকালে বাংলাদেশের বরিশাল, চট্টগ্রাম, ঢাকা, রাজশাহী এবং সিলেট বিভাগের হাওর বা নদ-নদীতে এদের দেখা যায়।
বাংলাদেশে এদের বেশি বিচরণ রাজশাহী অঞ্চলে। অতিথি পাখিদের মধ্যে এই চখাচখি সবার আগে আসে। এরপর এদের দেখাদেখি অন্যান্য পাখিরা আসে। তাই এদের রাজশাহীতে আসা অতিথি পাখিদের ব্র্যান্ড এম্বাসেডর বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের রাজশাহী শাখার জুনিয়র ওয়াইল্ডলাইফ স্কাউট মিজানুর রহমান আইনিউজকে জানান, শীত মৌসুমে এরা পরিযায়ী পাখি হিসাবে বাংলাদেশে আসে। আমাদের দেশের বন্যপ্রাণী আইনে এরা সংরক্ষিত। এসব পরিযায়ী পাখি রক্ষায় রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হয়ে থাকে। সাধারণত শীতের সময়ে খাবার বা প্রজননের উদ্দেশ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এখানে আসে। এ সুযোগে শিকারিরা ফাঁদ পেতে রাখে। তবে আমাদের নিয়মিত অভিযানের ফলে আমরা প্রায়ই ফাঁদে পড়ে আহত হওয়া এসব পাখি উদ্ধার করে পুনর্বাসন কেন্দ্রে চিকিৎসা দিয়ে আবার নিরাপদ পরিবেশে অবমুক্ত করে দেই।
এরা কি খায়?
চখাচখি পলিময় উপকূল, হ্রদ, বড় নদীর চরে বিচরণ করে। জোড়ায় জোড়ায় থাকলেও শীতকালে ঝাঁক বেঁধেই চলে এই নিশাচর পাখি। ভোরবেলা ও সন্ধ্যাবেলায় বেশ সক্রিয় থাকে। কাদামাটিতে আবার তৃণভূমিতেও খাবার খুঁজে বেড়ায়। সর্বভূক পাখি হিসেবে শস্যদানা, অঙ্কুরিত উদ্ভিদ, নরম পাতা, চিংড়ি-- এই জাতীয় প্রাণী খেয়ে থাকে চখাচখি। শামুক, কেঁচো, ব্যাঙও এদের খাদ্য।
অসাধারণ ক্ষমতা আছে এদের?
পানিতে এরা দেহের সামনের দিক পানিতে ডুবিয়ে চলাচল করে। মনে হয় যেন গলাপর্যন্ত পানিতে ঢোবানো। যদিও এরা পানিতেই থাকতে ভালবাসে তবে উড়াউড়িও ভালোই করে। তবে ডিম পাড়ার সময় এক মাস পর্যন্ত উড়তে পারে না। এসময় এদের শরীরের সমস্ত পালক পরিবর্তিত হয়। বিষয়টি মনে হয় খানিকটা কষ্টদায়ক কারণ তখন এদের ভয়ে উচ্চস্বরে ডাকতে শোনা যায়। যখন এরা আকাশে উড়ে, তখন আবার ‘আঙক’, ‘আঙক’ আওয়াজ তোলে। যেন অন্যদের সাবধান করে দেয় ওরা যাচ্ছে। মাঝে মাঝে আবার হাঁসের মতো ‘প্যাক’, ‘প্যাক’ শব্দও করে।
- কেএফসির মালিকের জীবন কাহিনী
- প্রজাপতি: আশ্চর্য এই প্রাণীর সবার ভাগ্যে মিলন জোটে না!
- মা-শাশুড়িকে হারিয়েও করোনার যুদ্ধে পিছিয়ে যাননি এই চিকিৎসক
- বিশ্বের অদ্ভুত কিছু গাছের ছবি
- সোনার দাম এত কেন : কোন দেশের সোনা ভালো?
- যেখানে এক কাপ চা পুরো একটি পত্রিকার সমান!
- তিন রঙের পদ্মফুলের দেখা মিলবে এই বিলে
- রহস্যময় গ্রামটি লাখো পাখির সুইসাইড স্পট
- ২০২৩ সালে পৃথিবীর শক্তিশালী ১০টি দেশ!
- বায়েজিদ বোস্তামি: মাতৃভক্তির এক অনন্য উদাহরণ