ফিচার প্রতিবেদক
আপডেট: ১০:৩২, ৪ জুলাই ২০২০
নাচে পটু ‘কোড়া’র গল্প
ছবি তুলেছেন: সানজিদ কাজী
দেশের নাচনেওয়ালি পাখি নামে বিখ্যাত ‘কোড়া’। নাচে তারা পটু। এদের নাচ সাধারণত ভাদ্র মাসে দেখা যায়। বর্ষাকালে টুব-টুব-টুব করে পুরুষ কোড়া ডাকলেই আরেকটি স্ত্রী কোড়া পাখি দূর থেকে উত্তর দেয়ার দৃশ্য খুব কম মানুষই দেখেছেন। কেননা সময়ের বিবর্তনে তা বিলীনের পথে। কোড়ার আবাসস্থল ধানিজমি, ঝোপঝাড়, জঙ্গল কমে যাওয়া আর হাওর-বাঁওড় বিলীনের কারণে সেই চিরচেনা কোড়া পাখিও হারিয়ে যাচ্ছে।
আবাসস্থল:
সিলেটের ওসমানীনগর-বালাগঞ্জ ছিল এক সময় এ পাখির আবাসস্থল। এক সময় এ এলাকার সৌখিন মানুষেরা কোড়া পাখি পুষে অন্য পাখি শিকার করতেন। বর্ষাকালে এ অঞ্চলের প্রতিটি জনপদে শোনা যেত পুরুষ কোড়ার গর্জন। বিশাল এলাকাজুড়েই ১০ থেকে ১২ জাতের কোড়া পাখির বসবাস ছিল বলে জানা যায়। প্রবীণ শিকারিরা কয়েক দিনের খানিসহ নৌকা নিয়ে এক হাওর থেকে অন্য হাওরে ছুটে যেতেন কোড়া শিকারে।
দেশের ইতিহাসের সঙ্গে যেভাবে জড়িত:
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ওসমানীনগর পাশ্ববর্তী উপজেলা বিশ্বনাথের জমিদার মরমী কবি হাছন রাজার অন্যতম শখ ছিল কোড়া শিকার। কোনো পাইক পেয়াদা যখনই খবর দিতেন হাওরে কোড়া দেখা গেছে, তখনই তিনি বিলম্ব না করে নিজের পানশি আর পোষা শিকারি কোড়া পাখি নিয়ে সেখানে রওনা দিতেন। একদিন কোড়া শিকার করতে গিয়ে সারাদিন কোনো খাবার তার পেটে পড়েনি। অদূরে এক দরিদ্র বিধবা মহিলার ঘর দেখলেন এবং সেখানে গিয়ে খাবার চাইলেন। মহিলা তাকে ভাত খাওয়ালেন। বিনিময়ে হাছন রাজা তাকে বিশ বিঘা জমির মালিকানা কাগজপত্র দিয়ে দেন। হাছন রাজার পছন্দ মতো ওই গাঁয়ের নাম হলো ‘বেটিরগাঁও’। যা আজো বিদ্যমান। এছাড়া এদেশের সঙ্গে ধান ও কোড়ার সম্পর্ক পাওয়া যায় দেশের একটি গ্রামের নাম ‘ধানকোড়া’ রাখার মধ্য দিয়ে।
চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য:
জানা যায়, কিছুটা লাজুক প্রকৃতির কোড়া পাখি আড়ালে থাকতে ভালোবাসে। কোড়া পাখির আরেক নাম জলমোরগ। সিলেটের অঞ্চলে নরকে কোড়া, মেদিকে কুড়ি বলে। এ পাখির ইংরেজি নাম: ‘ওয়াটার কক্’ (Watercock), বৈজ্ঞানিক নাম: Gallicrex cinerea। লম্বায় পুরুষ পাখি ৪৩ সেন্টিমিটার, স্ত্রী পাখি ৩৬ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই হলেও প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখির রঙ ভিন্নরূপ ধারণ করে। এ সময় পুরুষ পাখির গায়ের রঙ নীলচে কালো দেখায়। প্রজনন ঋতুর বাইরে উভয়ের দেহের উপরের দিক পাটকিলের ওপর গাঢ় রেখা দেখা যায়। দূর থেকে পিঠের পালক আঁশালো দেখায়। লেজ খাটো। দেহের নিম্নাংশ হলুদাভ-পাটকিলের ওপর সরু কালো টান। কপালে লাল ত্রিকোণ বর্ম। যা সামনে থেকে পেছনের দিকে খাড়া হয়ে মাথার উপরে উঠে গেছে। চোখের তারা গাঢ় বাদামি। পা হলুদাভ-সবুজ।
প্রধান খাবার:
জলজ উদ্ভিদের বীজ ও কচিডগা, জলজ পোকামাকড় ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম জুন থেকে জুলাই। বাসা বাধে ভাসমান জলদামে অথবা ধানক্ষেতে বা আখক্ষেতে ঘাস-লতা বিছিয়ে। ডিম পাড়ে ৩-৬টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৫-১৬ দিন।
এরা দারুণ শিকারিও:
পোষা কোড়াদের সামনে আয়না ধরলে প্রতিপক্ষ ভেবে দারুণভাবে খেপে যায়। বুনো পুরুষ কোড়ার লড়াই দারুণ আনন্দ দিয়ে থাকে। এই লড়াইতে মত্ত থাকার সময় দুটিকে ধরে ফেলাও সম্ভব। তিন মিনিটের লড়াইয়েই সে প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে দিতে পারে। এদের লড়াইটা চেয়ে দেখার মতো। লড়াই দেখতে পোষা মোরগের মতো দেখায়। লড়াইয়ের সময় মুখোমুখি হয়। চোখে রাখে চোখ। প্রতিদ্বন্দ্বীর অসতর্ক মুহূর্তেই ঝাঁপিয়ে পড়ে। ঠোঁট চালায়, পা দিয়ে লাথি কষে। লড়াইয়ের সময় পাঁঠা-ছাগলের মতো ঠেলাঠেলি করে। একটু পিছিয়ে এসে ছাগলের কায়দাতেই একটু লাফিয়ে উঠে পরস্পরের শক্ত বর্মে আঘাত করে। সবচেয়ে বড় অস্ত্র হলো প্রতিপক্ষের পায়ের ৪টি লম্বা নখ। নিজের নখরে কষে আঁকড়ে ধরা। পোষা কোড়া বিজয়ী হলে তার মূল্য বেড়ে যায়। একটা ভালো শিকারি কোড়ার মূল্য ১০ থকে ১৫ হাজার টাকা হয়।
কোড়া পাখির সংখ্যা অনেক বেশি থাকলেও কয়েক দশক ধরে এলাকায় এদের সংখ্যা ক্রমেই কমছে। এ সমস্যা প্রাকৃতিক কারণে না হলেও মানবসৃষ্ট কারণই এর পেছনে দায়ী বলে শিকারিরা মনে করছেন। অনেকেই মনে করছেন, শিকারিরা ডিম ও মাংসের জন্য এদের শিকার করে এদের সংখ্যা কমিয়ে দিচ্ছে। সারা বছর অবাধে এদের দেখা না মিললেও বৈশাখ মাস থেকে এদের আউশ-আমন ধানের ক্ষেতে এবং ভরা বর্ষে হাওর-বাঁওড় ও জলাশয়ে দেখা মেলে। ধানি জমির ধরন পরিবর্তন, বাড়িঘর নির্মাণ ও বনজঙ্গল অবাধে উজাড় করার ফলে এখন আর দেখা মিলে না কোড়া পাখির। ফলে বর্ষাকালে পুরুষ কোড়ার ডাক টুব-টুব-টুব-টুব শোনাও যায় না।
আইনিউজ/এইচ
- কেএফসির মালিকের জীবন কাহিনী
- প্রজাপতি: আশ্চর্য এই প্রাণীর সবার ভাগ্যে মিলন জোটে না!
- মা-শাশুড়িকে হারিয়েও করোনার যুদ্ধে পিছিয়ে যাননি এই চিকিৎসক
- বিশ্বের অদ্ভুত কিছু গাছের ছবি
- সোনার দাম এত কেন : কোন দেশের সোনা ভালো?
- যেখানে এক কাপ চা পুরো একটি পত্রিকার সমান!
- তিন রঙের পদ্মফুলের দেখা মিলবে এই বিলে
- রহস্যময় গ্রামটি লাখো পাখির সুইসাইড স্পট
- ২০২৩ সালে পৃথিবীর শক্তিশালী ১০টি দেশ!
- বায়েজিদ বোস্তামি: মাতৃভক্তির এক অনন্য উদাহরণ