নিউজরুম
আপডেট: ১৬:১৭, ৩ আগস্ট ২০২০
অলিম্পিক গেমস: বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধে সমুজ্জ্বল খেলাধুলার যে আসর
বর্তমানে পৃথিবীর সবথেকে বড় খেলার আসরের নাম কী জানতে চাইলে যেকেউ বলে দিবে অলিম্পিক গেমসের কথা। আর কেনইবা বলবেন না? জনপ্রিয় খেলা ফুটবল, ক্রিকেট থেকে শুরু করে আধুনিক সব খেলাই যে এই আসরে পাওয়া যায়। তবে এই অলিম্পিক গেমসের আদিতে রয়েছে আরও অনেক গল্প। আজ থেকে প্রায় ২ হাজার ২৪৪ বছর আগে শুরু হওয়া অলিম্পিয়া অনুষ্ঠান কিভাবে আজকের অলিম্পিক গেমস হলো তা নিয়ে আজকে লিখবো।
অলিম্পিক গেমসের ইতিহাস খুঁজলে পাওয়া যায় এই গেমসের জন্ম প্রাচীন গ্রীসে। মুটামুটি ৭৭৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে এই আসরের আয়োজন হতে থাকে। তখনো প্রতি চার বছরের ব্যবধানে একবার বসতো খেলাধুলার প্রাচীন এই আসর। এই আসরকে ঘিরে তখন সমগ্র গ্রীসে বন্ধ রাখা হতো যুদ্ধ বিগ্রহ। আসরে জড়ো হতে তৎকালীন গ্রীসের রাষ্ট্রনেতা, কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী, ব্যবসায়ী ব্যক্তিবর্গ।
গ্রীসের দক্ষিণ-পূর্বদিকে রয়েছে একটি পাহাড়ে ঘেরা উপত্যকা, যার নাম অলিম্পিয়া। এই অলিম্পিয়াতেই প্রথম বসেছিলো খেলাধুলার এই আসর। যার ফলে এর নামও হয়ে গেলো অলিম্পিক।
তবে অতীতের অলিম্পিক খেলার সাথে বর্তমানের অলিম্পিকের অনেকটা পার্থক্য রয়েছে। অতীতের অলিম্পিকের খেলা ঠিক কেমন ছিলো এর কিছু কিছু বিবরণ ইতিহাসের পাতায় পাওয়া গেছে। এসব ইতিহাস থেকে জানা যায়, তৎকালীন অলিম্পিক খেলায় যোগ দেওয়া খুব সহজ কোনো ব্যাপার ছিলো না। কেননা, যেকোনো প্রতিযোগীকেই নিঃসংশয়ে প্রমাণ করতে হতো নিজের যোগ্যতা। প্রায় দশমাস অলিম্পিয়ার জিমন্যাশিয়ামে শরীরচর্চা করার পর প্রত্যেক প্রতিযোগীকে দিতে হতো যোগ্যতার পরীক্ষা। সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে তারপর সে প্রতিযোগী অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করতে পারতো।
এছাড়া গ্রীক ভাঁজের (নকশা- আঁকা ভাড় ও কলসী) গায়ে লালা বা কালো রঙের আঁকা ছবি দেখেও সেই সময়ে অলিম্পিকে বিজয়ীর পুরস্কার কী ছিলো তা আন্দাজ করা যায়। অতীতে অলিম্পিক প্রতিযোগিতায় যেসব তরুণ বিজয়ী হতেন তারা রাতারাতি হয়ে ওঠতেন গ্রীসের প্রিয়পাত্র। অথচ মজার ব্যাপার হলো বিশ্বের সবথেকে বড় খেলার আসর অলিম্পিকে তখন বিজয়ীর পুরস্কার ছিলো একগুচ্ছ অলিভ পাতা বা লরেন্স পাতা দিয়ে তৈরি একটি মুকুট! সেই মুকুটের সাথে পানিভর্তি একটি আমাফোরা বা কলসি। শুধুমাত্র এই কলসি জিতে নেবার জন্যই সেকালে হাসতে হাসতে প্রাণ দিতেন প্রস্তুত থাকতেন তরুণরা।
এই অলিম্পিকের নানা অনুষ্ঠানের মধ্যে তখন সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিলো রথ চালনা। রথ চালনার এই দৌড় প্রতিযোগিতাটি যেমন ছিলো আকর্ষণীয় তেমনি রোমহর্ষকও। চার-ঘোড়ার রথে চেপে প্রায় চল্লিশজন প্রতিযোগি যখন খেলার আঙিনায় গিয়ে দাঁড়াতেন তখন উল্লাসে ফেটে পড়তো অলিম্পিয়ার সমস্ত দর্শক। আর এই রথ চালনা প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়েই শুরু হতো অলিম্পিকের অনুষ্ঠান।
তারপর একে একে দূর ও নিকটপাল্লার দৌড়, ঢাল তলোয়ার নিয়ে দৌড়, বিনা লাগামে ঘোড়া দৌড়ানো, প্যাঙ্ক্রেশন (কুস্তি আর বক্সিং এর মাঝামাঝি এক ধরনের মারাত্মক দন্দ্বযুদ্ধ), ডিসকাস ছোড়া, লাফ, ঝাঁপ, দৌড় প্রভৃতি বিষয়ে পরপর অংশ্রগহণ করতে হতো প্রতিযোগীকে।
অলিম্পিক খেলার প্রতিষ্ঠাতা বা প্রথম উদ্যোক্তা কে এ নিয়ে নানা মতভেদ রয়েছে। শোনা যায়, কোরিকস নামে এক দৌড়বিদের চেষ্টাতেই অলিম্পিক খেলাধুলার গোড়াপত্তন হয়েছিলো। যদিও এর ঐতিহাসিক কোনো প্রমাণ নেই।
অতীত মানুষের জীবনের বৃহৎ অংশ জুড়ে ছিলো ধর্ম। আর তাই তারা নাচ, গান এমনকি খেলাধুলার সাথেও কিছু ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান জুড়ে না দিয়ে তৃপ্ত হতো না। অলিম্পিকের সঙ্গেও যুক্ত হয়েছিলো ধর্মের আচার-অনুষ্ঠান আর দেবতার নাম। অলিম্পিয়ার একপ্রান্তে আলটিস নামক স্থানে ছিলো গ্রীকদের দেবরাজ জিউসের মন্দির। এই জিউস গ্রীকদের কতো প্রিয় দেবতা তা গ্রীক রূপকথা পড়লেই অনুধাবন করা যাবে। তাই তার নামে উৎসর্গ করা হয়েছিলো অলিম্পিক অনুষ্ঠান। জিউস মন্দিরের পূজারিণী বিশেষ তিথীতে পবিত্র ওলিভকুঞ্জে জ্বালাতেন অলিম্পিক মশাল। সেই মশাল আবার জ্বালানো হতো সূর্যের রশ্মি থেকে। তারপর সেই আগুনবাহী মশাল অলিম্পিয়ার আসরে নিয়ে যেতেন গ্রীসের সেরা খেলোয়াড়রা। যে কয়দিন খেলা চলতো, সেই কদিন অনির্বাণ রাখা হতো ওই জিউসের আগুন। সাধারণত সাতদিন ধরে চলত অলিম্পিয়ার এই অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠান শেষে নিজের হাতে সেই আগুন নেভাতেন জিউসের পূজারিণী।
অলিম্পিয়ার মাঠ ঘিরে গ্রীক-স্থপতিরা এক অপূর্ব স্টেডিয়াম তৈরি করেছিলেন। আগাগোড়া শ্বেতপাথরে তৈরি সেই স্টেডিয়াম ও জিউস মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ এখনো সেদেশে ঘুরতে গেলে দেখতে পাওয়া যায়। এই স্টেডিয়ামের পাশেই ছিলো হিপোড্রাম ও জিমন্যাশিয়াম। এই হিপোড্রামটি নাকি ৩ হাজার মূর্তি দিয়ে সাজানো ছিলো। যার কিছু কিছু নিদর্শন এখনো বিশ্বের বিভিন্ন মিউজিয়ামে রয়েছে।
শোনা যায়, অলিম্পিয়ায় শেষ খেলাধুলার আসর বসেছিলো ৩৯৪ খ্রিষ্টাব্দে। সেবছর ছিলো অলিম্পিকের ২৯৩ তম আসর। এরপর রাজা থয়োডোসিরসের নির্দেশে বন্ধ হয়ে যায় সুপ্রাচীন অলিম্পিক খেলা। এখন পুরোনো অলিম্পিক অনুষ্ঠানকে বলা হয় ‘অলিম্পিক্স’।
আধুনিক অলিম্পিক গেমসের যাত্রা শুরু হয় ফ্রান্সের একজন বিখ্যাত ক্রীড়াসংগঠক ব্যারন পিয়ের দ্য কুবার্তার হাত ধরে। ১৮৯৬ সালে গ্রীসের ঐতিহ্যবাহী এথেন্সে আধুনিক অলিম্পিক খেলার আসর বসে তারই উদ্যোগে। এরপরে প্রতি চার বছর পরপর অনুষ্ঠিত হতে থাকে অলিম্পিক। প্রতি চার বছর পর পর সব দেশের সেরা ক্রীড়াবিদদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধে সমুজ্জ্বল হয়ে ওঠে অলিম্পিকের আসর।
- কেএফসির মালিকের জীবন কাহিনী
- প্রজাপতি: আশ্চর্য এই প্রাণীর সবার ভাগ্যে মিলন জোটে না!
- মা-শাশুড়িকে হারিয়েও করোনার যুদ্ধে পিছিয়ে যাননি এই চিকিৎসক
- বিশ্বের অদ্ভুত কিছু গাছের ছবি
- সোনার দাম এত কেন : কোন দেশের সোনা ভালো?
- যেখানে এক কাপ চা পুরো একটি পত্রিকার সমান!
- তিন রঙের পদ্মফুলের দেখা মিলবে এই বিলে
- রহস্যময় গ্রামটি লাখো পাখির সুইসাইড স্পট
- ২০২৩ সালে পৃথিবীর শক্তিশালী ১০টি দেশ!
- বায়েজিদ বোস্তামি: মাতৃভক্তির এক অনন্য উদাহরণ