Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, বুধবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৫,   বৈশাখ ২ ১৪৩২

ফিচার প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৩:৫৭, ৭ আগস্ট ২০২০
আপডেট: ১৩:৫৮, ৭ আগস্ট ২০২০

এক নৌকাতেই জীবনপার

ছবি- সংগৃহীত

ছবি- সংগৃহীত

করোনার কারণে থাকতে হচ্ছে নৌকায়। আগের মতো যাওয়া হচ্ছে না পাড়া-মহল্লায়, গ্রাম থেকে গ্রামে। তাই উপার্জনের সব আশা মিশে গেছে করোনায়। এখন দিন কাটছে খেয়ে না খেয়ে। এমন চিত্র দেখা গেছে আমাদের প্রান্তিক সমাজের বসবাস করা বেদে পল্লীর বাসিন্দাদের জীবনে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেদে পল্লীর এসব মানুষ একটি ভাসমান ও ভ্রাম্যমাণ জনগোষ্ঠী। আঞ্চলিক ভাষায় তাদের বাদিয়া বা বাইদ্যা বলা হয়। কথিত আছে ১৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে শরণার্থী আরাকানরাজ বল্লাল রাজার সঙ্গে তারা ঢাকায় এসেছিল। তারা প্রথমে বিক্রমপুরে বসবাস শুরু করে এবং পরে সেখান থেকে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণত নৌকায় তাদের জীবন-মৃত্যু হয়।

বেদে মহিলারা বেশিরভাগ সিঙ্গা লাগানো, দাঁতের পোকা ফেলানোসহ ঝাড়ফুঁক করে নিজেদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। আবার কিছু বেদে নারী ঘুরে ফিরে চুড়ি-ফিতা বিক্রি করে। তবে কিছু পুরুষ বেদে নদীতে মাছ শিকার আর সাপের খেলা দেখালেও বেশিরভাগ বেদে পুরুষের সময় কাটে অলসভাবে।

বিসিসি নগরীর ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের গড়িয়ারপাড় এলাকার বেদে পল্লীর বাসিন্দা জাকির ও শাবনুর। তারা বলেন, করেনাকালীন সময়ে আমাদের আয় রোজগার নেই বললেই চলে। এখন সারাদিন ঘরে সর্বোচ্চ ১০০-২০০ টাকা পর্যন্ত উপার্জন হচ্ছে। তবে বেশিরভাগ সময় একেবারে খালি হাতেই ফিরতে হয়। আর এ দিন না খেয়েই থাকতে হয়।

তারা বলেন, করোনার আগে আমরা বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে আয় করেছি। কিন্তু করোনার সময়ে মানুষ আমাদের গ্রামে ঢুকতে দেয় না। তাই উপার্জন একরকম বন্ধ হয়ে গেছে।

একইভাবে দুর্দশার কথা তুলে ধরেন গড়িয়ারপাড় এলাকার বেদে পল্লীর বাসিন্দা নৈদার চান। তিনি বলেন, করোনার সময়েও কেউ আমাদের খোঁজখবর নিতে আসেনি। অথচ ভোট এলেই জনপ্রতিনিধিরা আশ্বাসের ফুলঝুড়ি নিয়ে আসে। ভোট শেষে তাদের আর কোনো খবর থাকে না।

অপরদিকে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের শিকারপুর ব্রিজ সংলগ্নে গড়ে উঠেছে অনেক বড় একটি বেদে পল্লী। এছাড়া বরিশাল শহরের অদূরে কীর্তনখোলা নদীর তীরবর্তী তালতলী, চরমোনাই, শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতুর ঢালে এবং সদর উপজেলার বন্দর থানা এলাকায় রয়েছে বেদে পল্লীর ঘাঁটি।

এসব পল্লীর কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, আমরা পেশার পরিবর্তন চাই। অন্যান্য মানুষের মতোই সমাজে উপার্জন করে বেঁচে থাকতে চাই। কিন্তু সমাজ আমাদের সেই সুযোগ দিচ্ছে না। আমরা পড়াশোনা না জানায় অন্য পেশায় যেতে পারছি না। কেউ কাজে নিতে চাচ্ছে না। সন্তানটিকে পর্যন্ত লেখাপড়া করাতে পারছি না।

বরিশালের ডিসি এসএম অজিয়র রহমান বলেন, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত বেদে পল্লীর বাসিন্দাদের মাঝে ত্রাণ সহায়তা বিতরণ করা হয়েছে। আর এ কার্যক্রম এখনো চলমান রয়েছে। তাই কেউ একদমই সহায়তা পাননি এটা সঠিক নয়। তারপরও কেউ যথাযথভাবে আবেদন করলে সহায়তা দেয়ার বিষয়টি বিবেচনায় আনা হবে।

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়