Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, বুধবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৫,   বৈশাখ ২ ১৪৩২

ফিচার ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১:৪১, ৩০ আগস্ট ২০২০

শরতের কাশফুলের আদি নিবাস কোথায়?

ছয় ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। ঋতু পরিবর্তনের এই সময়ে শুরু হয়েছে শরৎকাল। আর শরৎকাল মানেই আকাশে মেঘের খেলা, সেই সঙ্গে খোলা মাঠে কাশফুলের দোল। অসম্ভব সুন্দর এই দৃশ্য থাকবে ভাদ্র-আশ্বিন এই দুই মাসজুড়েই।

শরৎ ও কাশফুলের বন্দনা তাই তো কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতায়, ‘কাশফুল মনে সাদা শিহরণ জাগায়, মন বলে কত সুন্দর প্রকৃতি, স্রষ্টার কি অপার সৃষ্টি।’ রবীন্দ্রনাথ প্রাচীন গ্রন্থ ‘কুশজাতক’র কাহিনি অবলম্বন করে ‘শাপমোচন’ নৃত্যনাট্য রচনা করেছেন। কবি জীবনানন্দ দাশ শরৎকে দেখেছেন এভাবে, ‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর।’ শরতের অপরূপ এই রূপ দেখে মুগ্ধ কবি অবলীলায় পৃথিবীকে আর দেখার প্রয়োজন মনে করেননি।

করোনার আতঙ্ক আর যাপিত জীবনের নানা ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে খুব গোপনেই এসেছে শরৎ। চুপিসারে আসা শরৎ শেষও হয়ে যায় বেশ দ্রুতই। তবে যাওয়ার আগে শরতের আকাশ সবার মনকেই চাঙা করে দিয়ে যায়। সঙ্গে কাশফুলের শুভ্রতা সহসাই সবার মন ছুঁয়ে যায়। শরৎ আসলে এমনই, স্নিগ্ধতার আবেশ ছড়িয়ে স্মৃতিতে দোলা দেয়।

মূলত কাশফুলই প্রকৃতিতে শরতের আগমনের খবর জানান দেয়। এ ঋতুতেই পালকের মতো নরম এবং ধবধবে সাদা রঙের কাশফুল ফোটে। বর্ষা ঋতুকে বিদায় জানিয়ে নীল আকাশে সাদা তুলোর মত মেঘের সঙ্গে কাশফুলের মৃদু বাতাসে দোল খাওয়া প্রকৃতিতে শুধুই মুগ্ধতা ছড়ায়। নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা শরৎ ছাড়া আর কে ভাসাতে পারে? তাই নীল আকাশের নিচে সাদা কাশফুল যখন বাতাসে দুলতে থাকে; তখন মনে হয় শ্বেত বসনা একঝাঁক নৃত্যশিল্পী নৃত্য করছে।

রোমানিয়ার আদি নিবাসী কাশফুল বেশ প্রাচীনকাল থেকেই বাংলাদেশে শুভ্রতা ছড়িয়ে আসছে। কাশফুল মূলত ছন গোত্রীয় একধরনের ঘাস। ঘাসজাতীয় উদ্ভিদটি উচ্চতায় সাধারণত ৩ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। গাছটির চিরল পাতার দুই পাশ বেশ ধারালো। নদীর ধার, জলাভূমি, চরাঞ্চল, শুকনো এলাকা, পাহাড় কিংবা গ্রামের কোনো উঁচু জায়গায় কাশের ঝাড় বেড়ে ওঠে। তবে নদীর তীরেই এদের বেশি জন্মাতে দেখা যায়।

নদীর তীরে পলিমাটির আস্তর থাকে। এই মাটিতে কাশের মূল সহজে সম্প্রসারিত হতে পারে। বাংলাদেশের সব অঞ্চলেই কাশফুল দেখতে পাওয়া যায়। রাজধানী ঢাকার আশপাশ যেমন দিয়াবাড়ি, ৩০০ ফিট সড়ক, আফতাবনগর, কেরাণীগঞ্জের হযরতপুরের কালিগঙ্গা নদীর তীর, ঢাকা-মাওয়া সড়কের কুচিয়ামারা ও ধলেশ্বরী নদীর তীর, মায়াদ্বীপ ও মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ এলাকায় প্রচুর কাশফুল ফোটে।

কাশফুলের বেশ কিছু ওষুধি গুণ রয়েছে। যেমন- পিত্তথলিতে পাথর হলে নিয়মিত গাছের মূলসহ অন্যান্য উপাদান দিয়ে ওষুধ তৈরি করে পান করলে পিত্তথলির পাথর দূর হয়। কাশমূল বেটে চন্দনের মতো নিয়মিত গায়ে মাখলে গায়ের দুর্গন্ধ দূর হয়। এছাড়াও শরীরে ব্যথানাশক ফোঁড়ার চিকিৎসায় কাশের মূল ব্যবহৃত হয়। কাশফুল আগাছা হিসেবে বিবেচিত হলেও শুকনো কাশগাছ খুব কাজের জিনিস। তাই এর বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে।

কাশ দিয়ে গ্রামের বধূরা ঝাঁটা, ডালি, মাদুর তৈরি করে থাকে। ঘরের চাল, বাড়ির সীমানার বেড়া ও কৃষকের মাথাল তৈরিতেও কাশগাছ ব্যবহার করা হয়। গ্রামবাংলায় বিশ্বাস করা হয়, কাশফুল মনের কালিমা দূর করে। তাই শুভ কাজে কাশফুলের পাতা বা ফুল ব্যবহার করা হয়

আইনিউজ/এসডিপি

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়