Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, বুধবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৫,   বৈশাখ ২ ১৪৩২

ফিচার ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৬:২৮, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০
আপডেট: ১৬:৩০, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০

৪ নয় ‘হাট্টিমাটিম টিম’ ৫২ লাইনের ছড়া!

‘হাট্টিমাটিম টিম’। তারা মাঠে পাড়ে ডিম, তাদের খাড়া দুটো শিং, তারা হাট্টিমাটিম টিম। এই ছড়াটি ছোটবেলায় পড়েনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। মোটামুটি কথা ফুটলেই বাঙালি শিশুদের যে কয়েকটি ছড়া কণ্ঠস্থ করানো হয়, তার মধ্যে এটি একটি।

বাংলা ভাষায় লেখা রোকনুজ্জামান খান এর এই ছড়াটি খুবই মজার। যে কোন বয়সের মানুষের পছন্দের একটি ছড়া । কিন্তু মজার ব্যাপার হল সবাই ছড়াটির ৪-টি লাইনই জানেন কিন্তু সত্যিকার অর্থে আসল হাট্টিমা টিম টিম ছড়াটি মোট ৫২ লাইন।

হাট্টিমাটিম হচ্ছে এক ধরনের অতিথি হাঁস। যারা কিনা শীতের সময় আমাদের দেশের বিভিন্ন জলাশয় এবং মাঠে আশ্রয় নেয়। সেখানেই তারা ডিম পাড়ে। সেখান থেকে বাচ্চা। সেই বাচ্চাগুলো আবার বড় হয়। এরপর সময় হলে তারা আবার উড়ে চলে যায় নিজ দেশে। হাট্টিমাটিমদের খাঁড়া দুটি শিং থাকে। তবে ছড়াকার রোকনুজ্জামান খানের লেখা হাট্টিমাটিম টিম ছড়ার গল্পটা ছিল একটু অন্যরকম। কিছুটা ছন্দ আর মনের খেয়াল মিশিয়ে রচনা করেছিলেন কবিতাটি।    

বাঙালির ছোটবেলায় পড়া এই ছড়াটি কোনো দিনই ভুলবেন না কেউ। তবে মাত্র চার লাইনেই সবাই সীমাবদ্ধ থেকেছে। অনেকে এখনো জানেন না এর বাকি লাইনগুলো। ১৯৬২ সালে রচিত হয় ছড়াটি। ১৯৬৮ সালে বাংলা একাডেমিতে সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত করা হয় ছড়াকার রোকনুজ্জামানকে। তার জন্ম অবিভক্ত বঙ্গের ফরিদপুর জেলায় ১৯২৫ সালের ৯ এপ্রিল। বাংলাদেশে দাদাভাই নামে পরিচিত ছিলেন রোকনুজ্জামান খান। সেদেশের জনপ্রিয় সংবাদপত্রের শিশু-কিশোরদের বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন বহু বছর। তার রচনার বেশিরভাগই শিশু-কিশোরদের জন্য। হাট্টিমাটিমও তার সেসব রচনাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়। 

১৯৯৯ সালে মারা যান রোকনুজ্জামান। তবে এখনো বাঙালি তাকে খুব একটা মনে না করলেও তার কবিতা সন্তানকে শেখাতে ভোলেন না।

জেনে নিন হাট্টিমাটিম টিম ছড়াটির সবগুলো লাইন-

টাট্টুকে আজ আনতে দিলাম 
বাজার থেকে শিম
মনের ভুলে আনল কিনে 
মস্ত একটা ডিম। 

বলল এটা ফ্রি পেয়েছে
নেয়নি কোনো দাম
ফুটলে বাঘের ছা বেরোবে
করবে ঘরের কাম।

সন্ধ্যা সকাল যখন দেখো 
দিচ্ছে ডিমে তা 
ডিম ফুটে আজ বের হয়েছে
লম্বা দুটো পা। 

উল্টে দিয়ে পানির কলস
উল্টে দিয়ে হাড়ি 
আজব দু'পা বেড়ায় ঘুরে 
গাঁয়ের যত বাড়ি। 

সপ্তা বাদে ডিমের থেকে
বের হল দুই হাত 
কুপি জ্বালায় দিনের শেষে 
যখন নামে রাত। 

উঠোন ঝাড়ে বাসন মাজে 
করে ঘরের কাম 
দেখলে সবাই রেগে মরে
বলে এবার থাম।

চোখ না থাকায় এ দুর্গতি 
ডিমের কি দোষ ভাই
উঠোন ঝেড়ে ময়লা ধুলায়
ঘর করে বোঝাই। 

বাসন মেজে সামলে রাখে 
ময়লা ফেলার ভাঁড়ে 
কাণ্ড দেখে টাট্টু বাড়ি
নিজের মাথায় মারে। 

শিঙের দেখা মিলল ডিমে 
মাস খানিকের মাঝে 
কেমনতর ডিম তা নিয়ে
বসলো বিচার সাঁঝে। 

গাঁয়ের মোড়ল পান চিবিয়ে 
বলল বিচার শেষ 
এই গাঁয়ে ডিম আর রবে না 
তবেই হবে বেশ। 

মনের দুখে ঘর ছেড়ে ডিম
চলল একা হেঁটে 
গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে
ডিম গেলো হায় ফেটে। 

গাঁয়ের মানুষ একসাথে সব; 
সবাই ভয়ে হিম 
ডিম ফেটে যা বের হল তা
হাট্টিমাটিম টিম। 

হাট্টিমাটিম টিম- 
তারা মাঠে পাড়ে ডিম
তাদের খাড়া দুটো শিং
তারা হাট্টিমাটিম টিম।

আইনিউজ/এসপি

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়