ফিচার ডেস্ক
আপডেট: ২২:২৯, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০
শতবর্ষ ধরে গ্রামটিতে মানুষ-চিতাবাঘের একসঙ্গে বসবাস
মানুষ ও চিতাবাঘের সহাবস্থান
ভারতের রাজস্থানের একটি খেয়ালি আধা শহর, আধা গ্রাম, যার নাম বেরা। শান্ত এ অঞ্চল রমরমা পর্যটন কেন্দ্রও। উদয়পুর ও যোধপুরের মাঝামাঝি এ অঞ্চল 'চিতাবাঘের গ্রাম' নামে পরিচিত।
এ শহর ঘিরে রয়েছে অনন্য সব গাছগাছালি আর প্রাণীতে ভরা বন। এরই মধ্যে রয়েছে ক্যাটকি, টাওয়ারিং কিকার ও পলাশসহ মরু অঞ্চলের বিভিন্ন গাছ। ঝোঁপের আড়ালে জীবন কাটায় হায়েনা, খরগোশ, শিয়াল ও বনবিড়ালের মতো প্রাণী।
পক্ষীবিজ্ঞানীদের জন্যও বেরা একটি স্বপ্নের গ্রাম। এখানে দুই শতাধিক প্রজাতির পাখির বসবাস। এর মধ্যে রয়েছে চাতক, ধূসর পায়ের রাজহংসী, চড়ুই, সারস ও ভারতীয় তিতির।
হনুমান ও ময়ূরেরও দেখা মেলে হুটহাট। অন্যদিকে ১৫ ফুট দৈর্ঘ্যের কুমির ভেসে বেড়ায় জাওয়াই নদীর পাড়ে যোধপুরের সাবেক মহারাজা উমাইদ সিংয়ের গড়া জাওয়াই বাঁধে।
তবে এই গ্রামকে সত্যিকার অর্থেই অনন্য করে তুলেছে চিতাবাঘের বসবাস। পৃথিবীর বুকে এটিই সম্ভবত একমাত্র প্রাকৃতিক পরিবেশ, যেখানে ভারতের সবচেয়ে আতঙ্কজনক শিকারি প্রাণীগুলোর একটির সঙ্গে এক শতাব্দীরও বেশিকাল ধরে প্রতিবেশীর মতো জীবন কাটাচ্ছে মানুষ।
এই এলাকার কাঁটাযুক্ত ছোট ছোট ঝোঁপে অন্তত ৯০টি চিতা বাঘের বাস। প্রায় হাজার বছর আগে ইরান থেকে আফগানিস্তান হয়ে রাজস্থানে পাড়ি জমানো রাখাল জনগোষ্ঠী রাবারির সঙ্গে বেশ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ওই বাঘগুলোর।
এখানে এ গোত্রের দীর্ঘকায় ও কোমলদেহী আদিবাসী পুরুষেরা গরু ও ভেড়ার পাল চড়ান। তাদের গায়ে থাকে সাদা ধুতি, লাল পাগড়ি ও রূপালি মাদুলি। কাঁধে লম্বা ছড়ি। তাদের অধিকাংশের মুখেই দীর্ঘ গোঁফ খেলা করে; সেগুলোকে তারা বেশ সৃজনশীল তরিকায় পাকিয়ে রাখেন।
স্থানীয়দের বিশ্বাস, রাবারি গোত্রের সঙ্গে চিতাবাঘের সহাবস্থানের নেপথ্যে রয়েছে একটি গভীর আধ্যাত্মিক সংযোগ।
রাবারি জনগোষ্ঠী
বেরার সাফারি কোম্পানি জাওয়াই ওয়াইল্ড ক্যাম্পের মালিক দিলীপ সিং দেওরা বলেছেন, 'রাবারিরা অভিভাবকতুল্য দেবতা হিসেবে পশুদের মান্য ও পূজা করেন। চিতাবাঘ কোনো রাবারির প্রাণ কেড়ে নিলে এই গোত্রের লোকেরা ওই শিকারি প্রাণীকে বাধা দেন না। তাদের বিশ্বাস, নিজের প্রতি উৎসর্গকৃত এই প্রাণবলির বিনিময়ে শিব তাদের পালিত পশুর সংখ্যা বাড়িয়ে দেবেন এবং তাদের পুরস্কৃত করবেন।'
চারপাশে ছড়িয়ে থাকা দেবি মন্দিরগুলোতে ওই শিকারি প্রাণীগুলোর অবাধ বিচরণ। বেড়ার ১০-১২টি গ্রামে ছড়িয়ে রয়েছে এমন অনেক মন্দির। 'গ্রামের মন্দিরে চিতাবাঘের এমন বিচরণ অনেক পর্যটককে বিস্মিত করে; সেই পরিবেশেই পুরোহিতকে দৈনন্দিন আরাধনা করতে দেখা তারা রীতিমতো চমকে যান,' হাসি মুখে বলেন দেওরা। 'তবু, বেরার প্রাত্যহিক জীবন বরাবরই এমন।'
চিতাবাঘের সংখ্যা দিন-দিন বাড়তে থাকায় স্থানীয় সাফারি প্যাকেজগুলো একটা সুনিশ্চিয়তা দিতেই পারে: 'চিতাবাঘের দেখা না পেলে পয়সা ফেরত!' পর্যটকের সংখ্যা দিন-দিন বাড়ার পাশাপাশি এখানে বছরের পর বছর ধরে গবেষক ও পক্ষীবিজ্ঞানীদেরও দেখা মেলে।
ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে বাঘ, বিশেষ করে চিতাবাঘ মানুষের ওপর আক্রমণকারী হিসেবেই পরিচিত। খাদ্যসংকট, আবাস দখল, নির্বিচারে অবকাঠামো নির্মাণ ও অনিয়ন্ত্রিত পর্যটনের কারণে ওইসব অঞ্চল বাঘের জন্য অরক্ষিত হয়ে পড়েছে।
মানুষ ও পশুর এমন সহাবস্থান এই শহরকে অনন্য করে তুলেছে। ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে বাঘ, বিশেষ করে চিতাবাঘ মানুষের ওপর আক্রমণকারী হিসেবেই পরিচিত। খাদ্যসংকট, আবাস দখল, নির্বিচারে অবকাঠামো নির্মাণ ও অনিয়ন্ত্রিত পর্যটনের কারণে ওইসব অঞ্চল বাঘের জন্য অরক্ষিত হয়ে পড়েছে।
ভারতে প্রায় ১৪ হাজার চিতা বাঘের বসবাস। দেশটির সব বণ্যপ্রাণীর মতো ওদেরও সুরক্ষার আইনি বিধান রয়েছে। তবে দিল্লি, বেঙ্গালুরু ও মুম্বাইয়ের মতো শহরগুলোর নগর বসতিতে চিতাবাঘের আক্রমণ ও মানুষ খুনের ঘটনা দিন-দিন বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ রমন তিয়াগি।
রাবারিরা যদিও নিজস্ব পোশাক পরেন, তবু তাদের অনেকেই, বিশেষত তরুণ প্রজন্ম ধীরে ধীরে এই যাযাবর গোষ্ঠীর জীবনচর্চা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। তাদের কেউ কেউ ভালো চাকরির সুযোগে বিভিন্ন শহরে চলে গেছেন। অন্যরা কাজ করছেন স্থানীয় পর্যটন ক্ষেত্রে।
জলবায়ু পরিবর্তন, অরণ্যনিধন ও নৃতাত্ত্বিক নানা কারণে পৃথিবীতে যখন মানুষ-পশু সংঘাত দিন-দিন বাড়ছে, তখন সহনশীলতা ও শ্রদ্ধাবোধ সহকারে বিভিন্ন প্রাণীর শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের এক শক্তিশালী বার্তা দেয় বেরার কাহিনী।
আইনিউজ/এসডিপি
- কেএফসির মালিকের জীবন কাহিনী
- প্রজাপতি: আশ্চর্য এই প্রাণীর সবার ভাগ্যে মিলন জোটে না!
- মা-শাশুড়িকে হারিয়েও করোনার যুদ্ধে পিছিয়ে যাননি এই চিকিৎসক
- বিশ্বের অদ্ভুত কিছু গাছের ছবি
- সোনার দাম এত কেন : কোন দেশের সোনা ভালো?
- যেখানে এক কাপ চা পুরো একটি পত্রিকার সমান!
- তিন রঙের পদ্মফুলের দেখা মিলবে এই বিলে
- রহস্যময় গ্রামটি লাখো পাখির সুইসাইড স্পট
- ২০২৩ সালে পৃথিবীর শক্তিশালী ১০টি দেশ!
- বায়েজিদ বোস্তামি: মাতৃভক্তির এক অনন্য উদাহরণ