Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, বুধবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৫,   বৈশাখ ২ ১৪৩২

ফিচার ডেস্ক

প্রকাশিত: ২২:১১, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০
আপডেট: ২২:১৮, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০

আকাশে আলোর খেলার কারণে ডুবেছিল টাইটানিক!

টাইটানিক। ফাইল ছবি

টাইটানিক। ফাইল ছবি

১৯১২ সালের ১৪ এপ্রিল দিবাগত রাতে ডুবে যায় বিশ্বখ্যাত জাহাজ আর.এম.এস. টাইটানিক। টাইটানিক ডুবে যাওয়ার ঘটনা নিয়ে এখনো কৌতূহল বিশ্ববাসী। এ নিয়ে যুগে যুগে নানা রহস্য উদঘাটনও হয়েছে।

তারই পরিপ্রেক্ষিতে জানা গেল নতুন এক বিষয়। সেটা হলো আকাশে আলোর খেলার কারণেই ডুবে যায় টাইটানিক। যেদিন টাইটানিক ডুবে সেদিন আকাশে চাঁদ না উঠলেও, একেবারের নিকষ অন্ধকারও ছিল না। বরং আকাশে ছিল নর্দার্ন লাইটস বা মেরুপ্রভা।

পৃথিবীর চুম্বক ক্ষেত্রে প্রবল সৌর ঝড় যখন আঘাত হানে, আকাশে টেনে নেওয়া অক্সিজেন ও নাইট্রোজেনের কারণে সৃষ্টি হয় মেরুপ্রভা। আর মনোমুগ্ধকর আলোর ঘূর্ণি করে খেলা তখন।

বিজ্ঞানভিত্তিক ওয়েবসাইট লাইভ সায়েন্সের প্রতিবেদক মিন্ডি ওইবার্জারের মতে, সৌর ঝড়ে সৃষ্ট ওই আলোর কারণে ম্যাগনেটিক সিগন্যাল ও রেডিও ওয়েভ হতে পারে বাধাগ্রস্ত। এই রকম বিঘ্নের ওপর ভর দিয়েই, টাইটানিক নিয়ে গবেষণারত স্বাধীন গবেষক মিলা জিনকোভা সম্প্রতি একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করছেন।

'ওয়েদার' জার্নালে প্রকাশিত ওই গবেষণাপত্রে মিলা দেখিয়েছেন, অপার্থিব ওই আলোর কারণেই ডুবে গেছে টাইটানিক। এজন্য আরও অনেক কারণের পাশাপাশি তিনি সৌর ঝড়কেও দায়ী করেছেন। তার মতে, সেটির কারণেই জাহাজটির কম্পাস ঠিকমতো কাজ করছিল না; আর তাই টাইটানিক ডোবার জন্য দায়ী করা হয়ে যে হিমবাহ বা আইসবার্গকে, সেটির সঙ্গে জাহাজটির সংঘাত এড়াতে পারেননি এর নাবিক।

'কম্পাসটিকে যদি মাত্র ১ ডিগ্রিও মুভ করানো যেত, তাহলে ইতিহাস হতো অন্য রকম,' হাকাই ম্যাগাজিনের ক্রিস বারানিয়াককে বলেন অবসরপ্রাপ্ত কম্পিউটার প্রোগ্রামার মিলা।

এদিকে, ডুবন্ত টাইটানিক থেকে ৭০৫ জনকে উদ্ধার করতে পাঠানো আর.এম.এস. কারপাথিয়া জাহাজের কর্মকর্তা জেমস বিসেটও তার লগবুকে ১৪ এপ্রিল আকাশে আলোর খেলা চলার কথা উল্লেখ করেছেন।

'আকাশে চাঁদ ছিল না, তবে এত আলোকিত মেরুপ্রভা ছিল, যেন উত্তর দিগন্ত থেকে চাঁদের আলো ঠিকড়ে পড়ছে,' তার এই উদ্ধৃতি প্রকাশ পেয়েছে লাইভ সায়েন্সে।

বিসেট আরও লিখেছেন, পাঁচ ঘণ্টা পর তিনি 'সবুজাভ কড়িকাঠে'র দেখা পেলেন; তার মানে, টাইটানিকের লাইফবোটগুলো চোখে পড়ল তার।

টাইটানিক ডুবে যাওয়ার মূহুর্ত

সে রাতের আরেক প্রত্যক্ষদর্শী, টাইটানিকের বেঁচে যাওয়া যাত্রী লরেন্স বিসলি পরবর্তীকালে জানিয়েছিলেন, মরুপ্রভা যেন 'উত্তর আকাশ দখলে নিয়েছিল, আর চোখ ধাঁধানো আলোকরশ্মি ছাড়িয়ে গিয়েছিল মেরু।'

নাসার তথ্যমতে, মহাশূন্যে প্রবল বৈদ্যুতিক কণার তরঙ্গ নিক্ষেপের জন্য খ্যাতি রয়েছে সৌর ঝড়ের। পৃথিবী যখন সেই তরঙ্গের কবলে পড়ে, এই গ্রহের চৌম্বক ক্ষেত্র থেকে শক্তি যোগায় সেই কণাগুলো, আর অক্সিজেনের সঙ্গে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি করে লাল ও সবুজ আলো এবং নাইট্রোজেনের সঙ্গে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে নীল ও বেগুনি আলোর জন্ম দেয়।

বেশির ভাগ সৌর ঝড়ের প্রভাব থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করে এর চৌম্বক ক্ষেত্র। তারপরও মহাশূন্যের প্রতিকূল আবহাওয়া কম্পাস, ইলেকট্রিক্যাল গ্রিড ও স্পেস ট্রাফিকের মতো ম্যাগনেটিক যন্ত্রপাতির কাজ বাধাগ্রস্ত করতে সক্ষম।

টাইটানিকের বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা লাইফবোটে মিলা জানান, সৌর ঝড়ের কারণেই সম্ভবত টাইটানিকের কম্পাস ভুল দিকে ঘুরে গিয়ে, জাহাজটিকে বিপদের কাছে টেনে নিয়েছিল।

ওই সৌর ঝড় টাইটানিকের রেডিও ট্রান্সমিশনেও বিঘ্ন ঘটিয়েছে বলে গবেষণাপত্রে দাবি করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এ কারণেই নিকটবর্তী লা প্রোভেন্স জাহাজটি টাইটানিকের সিগন্যাল পায়নি। 

এদিকে, হিমবাহের সঙ্গে টাইটানিকের সংঘর্ষ নিয়ে এর আগে গবেষণা করা ইতিহাসবিদ টিম ম্যালটিনও একমত পোষণ করে বলেছেন, ১৯১২ সালের ১৪ এপ্রিল সম্ভবত একটি সৌর ঝড় হয়েছিল।

সূত্র: স্মার্ট নিউজ ম্যাগাজিন

আইনিউজ/এসডিপি

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়