হেলাল আহমেদ
প্রকাশিত: ১৯:২২, ১০ নভেম্বর ২০২০
আপডেট: ১৬:৫২, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২
আপডেট: ১৬:৫২, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২
এলিজাবেথ বাথোরি: ইতিহাসের প্রথম নারী সিরিয়াল কিলার!
ইতিহাসের বিতর্কিত এক নারী এলিজাবেথ বাথোরি
পৃথিবীতে হয়তো এমন নারী খুঁজে পাওয়া মুশকিল যিনি নিজেকে সুন্দর রাখতে চান না। প্রত্যেক নারীই অন্যের সামনে নিজের সৌন্দর্য্য তোলে ধরতে পছন্দ করেন। এজন্য অনেকেই নামকরা প্রসাধনী ব্যবহার করেন। এবং এ বিষয়টি প্রত্যেকটি নারীর ক্ষেত্রেই স্বাভাবিক। কিন্তু যখন কোনো নারী নিজের ত্বকের সৌন্দর্য্য ও যৌবন ধরে রাখার জন্য অন্য একটি কুমারি মেয়ের রক্ত পান করে নেন তখন সেটি অস্বাভাবিকতার মাত্রাকেও ছাড়িয়ে যায়।
এই অস্বাভাবিক ঘটনাটিই পৃথীবির ইতিহাসে ঘটে গেছে আজ থেকে প্রায় ৪১০ বছর আগে। অবিশ্বাস্য হলেও এটা সত্যি যে, ৪১০ বছর আগে একজন নারী তাঁর যৌবন এবং সৌন্দর্য্য ধরে রাখার জন্য ৬৫০ জন কুমারি মেয়েকে হত্যা করে তাদের রক্ত পান করেন। শুধু তাই নয় সেই রক্ত নিজের সর্বাঙ্গে মাখেন!
এই ঘটনার সাথে জড়িত যেই নারী তাঁকে ইতিহাসের প্রথম নারী সিরিয়াল কিলার বলা হয়ে থাকে। যে কিনা ৬৫০টি মেয়েকে হত্যা করলেও প্রমাণ হয়েছিলো মাত্র ৮০টি হত্যাকাণ্ড! ইতিহাসের এই কালো অধ্যায়ের সূচনা করেন এলিজাবেথ বাথোরি। যার আরেক নাম ছিলো “ব্লাডকাউন্টেস” বা “কাউন্টেস ড্রাকুলা”। কারণ, তিনি হলিউড সিনেমার ভ্যাম্পায়ারদের মতোই মেয়েদের হত্যা করে তাদের রক্ত পান করতেন।
এলিজাবেথ বাথোরি ১৫৬০ সালের ৭ আগষ্ট হাঙ্গেরীর একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ফলে তাঁর বিয়েও হয় আরেকটি সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলের সাথে। তাঁর স্বামী ফ্যারেন্স নাওদাসদ ছিলেন বিখ্যাত যোদ্ধা। তাঁকে বলা হতো 'ব্ল্যাক হিরো অব হাঙ্গেরী'। মাত্র ১৫ বছর বয়সে ফ্যারেন্সের সাথে বিয়ে হয় এলিজাবেথ বাথোরির।
বিয়ের কিছুদিন পরেই ফ্যারেন্স যুদ্ধে চলে যান। ফলে ফ্যারেন্স পরিবারের পুরো দায়িত্ব এসে পড়ে বাথোরির ওপর। বলা হয়ে থাকে এই সময়টাতেই বাথোরি তাঁর এসব বিকৃত চিন্তার বাস্তবিক রূপ দেন। কারণ ফ্যারেন্স যুদ্ধে চলে যাবার পর রানী এলিজাবেথের সখ্যতা তৈরি হয় তাঁর এক চাচার সাথে। যে কিনা কালোজাদু বিদ্যায় পারোদর্শী ছিলেন। তাই চাচার প্রভাবে তখন থেকেই রানী এলিজাবেথ বাথোরি রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে কুমারি মেয়েদেরকে এনে তাদের রক্ত দিয়ে গোসল করতেন এবং শয়তানের উপাসনা করে সেই রক্ত পান করতেন।
বলা হয়ে থাকে যে মেয়েকে রানী একবার তাঁর ঘরে ডেকে নিতেন তাকে আর কোনোদিন ঘর থেকে বের হতে দেখা যায়নি। গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ডে এই নারীকে সবচেয়ে ধূর্ত ও বর্বর খুনি বলা হয়েছে। ইতিহাসের সবথেকে রহস্যময়ী নারি এলিজাবেথ বাথোরি। কুমারি মেয়েদের প্রতি রানী এলিজাবেথ বাথোরির বিশেষ দুর্বলতা ছিলো। তাই তিনি তাঁর ব্যাক্তিগত বিভিন্ন কাজের জন্য সবসবময় কুমারি মেয়দেরকেই ব্যবহার করতেন।
কেন কুমারি মেয়েদের হত্যা করতেন এলিজাবেথ বাথোরি?
রানী এলিজাবেথ বাথোরি কালোজাদু দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। তিনি শয়তানের একজন উপাসক ছিলেন। তিনি একদিন তাঁর এক দাসীর উপর খুবই ক্ষিপ্ত হোন এবং তাঁকে খুব জোরে আঘাত করেন। ফলে ওই দাসীর রক্ত এসে তাঁর গায়ে ছিটকে পড়ে। এবং তখন তাঁর মনে হয় যে এই দাসীর রক্ত গায়ে লাগায় তাঁর ত্বক আরো বেশি উজ্জ্বল হয়েছে! তখন থেকেই তাঁর মাথায় এই বিকৃত চিন্তাটিকে বাস্তবিক রূপ দেয়ার পরিকল্পনা ঘুড়তে থাকে। এজন্য তিনি রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে কাজের কথা বলে কুমারি মেয়েদেরকে সংগ্রহ করতে থাকেন।
যেহেতু তাঁর স্বামী ফ্যারেন্স নাওদাসদ যুদ্ধে ছিলেন এবং বাথোরির ওপরেই পরিবারের সকল দায়িত্ব ছিলো তাই কেউ ঘুনাক্ষরেও বুঝতে পারেনি যে, অন্দরমহলে তাদের রানী বাথোরি এসব মেয়েদের এনে হত্যা করছেন।
শুধু তাই নয় বাথোরির হত্যা করার পুরো কার্যক্রমটিও ছিলো নৃশংস। ১৬১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর রানী এলিজাবেথ বাথোরির বিরুদ্ধে একটি গোপন অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে রাজা ম্যাথিয়ার কাউন্ট তর্যুকে বাথোরির রাজপ্রাসাদে পাঠালে সেখানে তর্যু যা দেখলেন তা দেখে তিনি শিউরে উঠেন।
তিনি বাথোরির ঘরে গিয়ে দেখেন একটি মেয়ে কাঁতরাচ্ছে, কারণ তাঁর পাঁজরের হাড় ভেঙে দেওয়া হয়েছিলো। আরেকটি ঘরে গিয়ে দেখেন একটি মেয়ের ঝুলন্ত লাশ রয়েছে, এর দেহ থেকে রক্ত বের করে নেওয়া হয়েছে। তর্যু সবথেকে বেশি ভয় পেয়ে যান যখন দেখেন যে, একটি জীবন্ত মেয়ের শরীর থেকে রক্ত বের করে নেওয়া হচ্ছে এবং সেই মেয়েটি আর্তচিৎকার করছিলো।
বলা হয়ে থাকে রানী এলিজাবেথ বাথোরি রক্ত বের করে নেওয়ার সময় মেয়েদের আর্তচিৎকার শোনে পৈশাচিক আনন্দ পেতেন । এসব ছাড়াও আরো বিভিন্ন কায়দায় রানী এলিজাবেথ বাথোরি কুমারি মেয়দের শরীর থেকে রক্ত বের করে নিতেন। সবশেষে বাথোরির রাজপ্রাসাদের নিচ থেকে আরো ৫০টি মেয়ের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এক পর্যায়ে বাথোরির এই ভয়ংকর কর্মকাণ্ডের কথা অনেকে জানতে পারলেও তাঁর স্বামী ফ্যারেন্স নাওদাসদ এর ভয়ে কেউ কিছু বলতো না। অবশ্য এ কাজ তিনি একা করতেন না। মেয়েদের রাজপ্রাসাদে আনা, তাদের রক্ত বের করে নেওয়ার কাজে তাঁকে সহায়তা করতেন তাঁর আরো দুই সহযোগী। পরে বিচারে এই দুইজনের কাউকেই আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে এতোকিছুর পরেও শেষ রক্ষা হয়নি রানি এলিজাবেথ বাথোরির। যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে ফ্যারেন্স নাওদাসদ কার স্ত্রীর এই ভয়ংকর কর্মকাণদের কথা জানতে পারেন। তিনি বাথোরির বিরুদ্ধে একটি অভিযোগপত্র গঠন করেন।
জানা যায় রানী এলিজাবেথ বাথোরি ৬৫০জন মেয়েকে এতো সুক্ষভাবে হত্যা করেছিলেন যে তাঁর প্রমাণের জন্য অনেক কাঠখড় পোহাতে হয়েছে। ৬৫০টি হত্যাকাণ্ড ঘটালেও সে সময় বিচার মহল প্রমাণ করতে পেরেছিলো মাত্র ৮০টি হত্যার। যদিও পরে বাথোরির এক সহযোগীর মাধ্যমে বাথোরির একটি ডায়রি পাওয়া যায়। যেখানে ৬৫০জন কুমারি মেয়ের নামের তালিকা পাওয়া গিয়েছিলো। যাদের রক্ত দিয়ে রানী এলিজাবেথ বাথোরি গোসল করেছিলেন। সবশেষে ৮০টি মেয়েকে হত্যার দায়ে রানী এলিজাবেথ বাথোরিকে নিজ ঘরেই নির্বাসন দেওয়া হয়।
নির্বাসনে থাকা অবস্থায় ১৬১৪ সালের ২১ আগষ্ট ৫৪ বছর বয়সে এই ভয়ংকর নারী মারা যান। তবে আজও রানী এলিজাবেথ বাথোরি পৃথীবির ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায়ের রচয়িতা হিসেবে রয়ে গেছেন। হয়তো তাঁর এই ভয়ংকর নৃশংস কর্মকাণ্ডের কারণে আরো অনেকদিন তাঁকে মনে রাখবে বিশ্ব।
আরও পড়ুন
ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
- কেএফসির মালিকের জীবন কাহিনী
- প্রজাপতি: আশ্চর্য এই প্রাণীর সবার ভাগ্যে মিলন জোটে না!
- মা-শাশুড়িকে হারিয়েও করোনার যুদ্ধে পিছিয়ে যাননি এই চিকিৎসক
- বিশ্বের অদ্ভুত কিছু গাছের ছবি
- সোনার দাম এত কেন : কোন দেশের সোনা ভালো?
- যেখানে এক কাপ চা পুরো একটি পত্রিকার সমান!
- তিন রঙের পদ্মফুলের দেখা মিলবে এই বিলে
- রহস্যময় গ্রামটি লাখো পাখির সুইসাইড স্পট
- ২০২৩ সালে পৃথিবীর শক্তিশালী ১০টি দেশ!
- বায়েজিদ বোস্তামি: মাতৃভক্তির এক অনন্য উদাহরণ
সর্বশেষ
জনপ্রিয়