Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, শুক্রবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৫,   বৈশাখ ৫ ১৪৩২

শ্যামলাল গোঁসাই

প্রকাশিত: ১৬:৪৮, ২৩ নভেম্বর ২০২০
আপডেট: ১৩:২৭, ২৩ ডিসেম্বর ২০২০

সানি লিওনের যতো গোপন কথা

পরিবারের সদস্যদের সাথে হাসিখুশি সানি লিওন

পরিবারের সদস্যদের সাথে হাসিখুশি সানি লিওন

সানি লিওন, নামটি বললেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ‘নীল জগতের’ এক নারীর শরীর। একটা সময়ে  সানি লিওন হিসেবে বিশ্বের জনপ্রিয় পর্ণতারকা ছিলেন। জীবনের এই অধ্যায়টি ছেড়ে সানি এখন বলিউডের দামী নায়িকাদের একজন। দিয়ে যাচ্ছেন একের পর এক সুপারহিট সিনেমা।

মানুষের কাছে সানি লিওন নায়িকার চেয়েও বেশি পরিচিত পর্ণস্টার হিসেবেই। যে জীবন সানি লিওন ছেড়ে সানি ফিরে এসেছেন সেই জীবনের পরিচয়ের গ্লানিই যেন এখনো বয়ে বেড়াতে হচ্ছে সানি লিওনকে। যেকারণে এখনো সানি লিওন দর্শকদের কাছে একজন পর্ণ তারকা।

তবে বাহ্যিক এই জীবন ব্যবস্থার বাইরেও রয়েছে সানি লিওনের অন্য একটি জীবন। যেখানে তাঁর পরিচয় ‘হট সানি লিওন’ নয় ‘করণজিৎ কৌর’। এই করণজিৎ কৌর আবার কারো স্ত্র, কারো মা আবার কারো বোন। পর্ণস্টার ‘সানি লিওন’ সম্পর্কে মানুষ যতোকিছু জানে ততোকিছু জানা নেই বাস্তব জীবনের ‘করণজিৎ কৌর’ এর সম্পর্কে। আজকের লেখায় একটি শিখ পরিবারের মেয়ে ‘করণজিৎ কৌরে’র পর্ণ তারকা সানি লিওন হয়ে ওঠার পেছনের গল্পই বলবো।

সানি লিওন কুমারিত্ব হারান মাত্র ১৩ বছর বয়সে একজন বাস্কেটবল খেলোয়াড়ের কাছে

সানি লিওন ১৯৮১ সালের ১৩ই মে তারিখে কানাডার অন্টারিওর সার্নিয়া শহরে এক শিখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা-মা’র দেওয়া নাম ‘করণজিৎ কৌর বোহরা’। কিন্তু পরবর্তীতে সানি লিওন যখন পর্ণ স্টার হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করেন তখন এই নাম নিয়ে আপত্তি তোলে শিখ ধর্মের শীর্ষ সংগঠন।  শিখ ধর্মের শীর্ষ সংগঠন শিরোমণি গুরুদোয়ারা প্রবন্ধক কমিটি আপত্তি তুলেছিল। তাদের বক্তব্য ছিল 'কৌর' পদবীটা শিখ ধর্মে খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে সানির মতো একজন ব্যক্তি, যিনি পর্ণ ফিল্মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাঁর জীবনী নিয়ে তৈরী ওয়েব সিরিজে ওই পদবী ব্যবহার করা অনুচিত।

২০১৮ সালে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সানির কাছে এই প্রসঙ্গটা তোললে তিনি বলেছিলেন, "এই নামটাই তো তাঁর পাসপোর্টে রয়েছে! বাবা-মায়ের দেওয়া নাম এটা। ওটাই তো আমার আসল নাম। কাজের ক্ষেত্রে সানি লিওনি নামটা ব্যবহার করি।"

সানি লিওনের বাবা ছিলেন তিব্বতের মানুষ, শৈশব কেটেছে দিল্লিতে। অপরদিকে সানি লিওনের মা ছিলেন হিমাচল প্রদেশের সিরমৌর জেলার বাসিন্দা। খেলাধুলার প্রতি তাঁর বিশেষ আকর্ষণ ছিলো। জানা যায় যে, তিনি মাঝে মধ্যে রাস্তায় ছেলেদের সঙ্গেও হকি খেলতেন।

১৩ বছর বয়সে সানি লিওনের পরিবার যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানের ফোর্ট গ্রাটিয়টে চলে যান। কিন্তু সেখানে বেশি থাকা হয়নি তাদের।

সানি লিওন কুমারিত্ব হারান মাত্র ১৩ বছর বয়সে একজন বাস্কেটবল খেলোয়াড়ের কাছে। এই ঘটনা তার জীবনে অনেক খারাপ প্রভাব ফেলে। এই ঘটনার পর চলে সানি লিওনের পরিবার চলে যায় ক্যালিফোর্নিয়ার লেক ফরেস্টে।

সাধারণত সানি লিওনকে মানুষ পর্ণস্টার হিসেবে জানলেও তাঁর আগের জীবন সম্পর্কে অনেকেরই ধারণা নেই। পর্ণ জগতে কাজ করার পূর্বে, তিনি প্রথমে জিফি লুবে নামক একটি জার্মান বেকারিতে কাজ করেছেন এবং পরবর্তীতে একটি ট্যাক্স এবং রিটায়ারমেন্ট ফার্মে কাজ করেছেন।

সানি অভিনীত প্রথম ছবিটির নাম ছিল সানি, যেটি ২০০৫ সালের ডিসেম্বর মাসে মুক্তি পেয়েছে।

২০০২ সালে এডাল্ট এন্টারটেনমেন্ট এক্সপোতে সানি অরেঞ্জ কাউন্টিতে একজন পিডিএট্রিক নার্স হিসেবে অধ্যয়নকালে, তার এক বহিরাগত নৃত্যশিল্পী এবং সহপাঠীর মাধ্যমে জন স্টিভেনসের সাথে তার পরিচয় হয়। স্টিভেনস, যিনি একজন প্রতিনিধি ছিলেন, পরবর্তীতে তাকে পেন্টহাউস ম্যাগাজিনের আলোকচিত্রী জে অ্যালেনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। তার প্রাপ্তবয়স্ক কর্মজীবনের জন্য একটি নাম ঠিক করতে, তিনি আসল নাম হিসেবে সানি নামটি উল্লেখ করেছিলেন এবং লিয়ন নামটি ঠিক করেন পেন্টহাউস ম্যাগাজিনের সাবেক মালিক বব গুচ্চিওনে। তিনি পেন্টহাউস ম্যাগাজিনের জন্য পেন্টহাউস মাসের সেরা পেট হিসেবে ২০০১ সালের মার্চ মাসের সংস্করণের জন্যে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান, পরবর্তীতে একই বছরে হাসলার ম্যাগাজিনের হলিডে ফিচারে "হাসলার হানি" হিসেবে উপস্থিত হয়েছে। অতঃপর তিনি অনেকগুলো ম্যাগাজিনের কভার গার্ল হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন; যার মধ্যে চেরি, মায়েস্টিকু ম্যাগাজিন, হাই সোসাইটি, শয়ানক, এভিএন অনলাইন, লেগ ওয়ার্ল্ড, ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল এবং লোরিডার অন্যতম। 

২০০৩ সাল সানি লিওনের ক্যারিয়ার দারুণভাবে মোড় নেয়। এই বছর তিনি ‘পেন্টহাউস পেট’ নির্বাচিত হন। এবং পর্নোগ্রাফিক চলচ্চিত্র জগতের অন্যতম সেরা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ভিডিও এন্টারটেইনমেন্টের  সঙ্গে তিন বছরের একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। তবে এই চুক্তির শর্ত অনুসারে তিনি কেবল সমকামি মহিলার চরিত্রে অভিনয় করেছেন। সানি অভিনীত প্রথম ছবিটির নাম ছিল সানি, যেটি ২০০৫ সালের ডিসেম্বর মাসে মুক্তি পেয়েছে।

সানির বাবা-মা’র দেওয়া নাম ‘করণজিৎ কৌর বোহরা নিয়ে একসময় আপত্তি তোলে শিখ ধর্মের প্রধান সংগঠনের শিখ ধর্মগুরুরা

২০০৭ সালের মার্চ মাসে সানি ভিভিড এন্টারটেইনমেন্টের আরও একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তির আওতায় তিনি ছয়টি ছবিতে অভিনয় করেছেন। আর এই চুক্তির অধীনেই প্রথমবারের মতো তিনি প্রথম কোনো পুরুষ অভিনেতার সঙ্গে কাজ করেছেন। সানির বাগদত্তা ম্যাট এরিকসন এই ছবিতে তার সহ-শিল্পীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। পুরুষের সঙ্গে তার অভিনীত প্রথম ছবিটির নাম ছিল ‘সানি লাভস ম্যাট’।

বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, ২০১৮ সালের জরিপ অনুযায়ী পাঁচ বছর ধরে ভারতে সবথেকে বেশী গুগল করা হয়েছে করা হয়েছে যার নাম তিনি সানি লিওন। মানুষ তাঁকে দেখতে চান, তাঁর সম্বন্ধে জানতে চান।

২০১৮-১৯ সালে সানি লিওনের জীবনি নিয়ে ‘করণজিৎ কাওর- দ্য আনটোল্ড স্টোরি অব সানি লিওন’ নামে একটি বায়োপিক তৈরি করা হয়। সেই বায়োপিকে দেখানো হয়েছে সানি লিওনের জীবনের সেই অন্ধকার জীবনের গল্পকে।

জীবনের অন্ধকার অধ্যায় সম্বন্ধে সানি গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘‘আমার জীবনের কিছু অন্ধকার অধ্যায় রয়েছে। সেগুলোতে ফিরে যাওয়া, অভিনয়েই হোক না কেন, আমার জন্য খুব সহজ কাজ নয়। আমি যেগুলো পেরিয়ে এসেছি, সে সব আমার কাছে এখন দুঃস্বপ্নের মতো। মা মারা গেলেন, বাবার ক্যানসার ছিল, কিছুদিনের মধ্যে বাবাও চলে গিয়েছিলেন। বিয়ে করলাম। টিভি শো শুরু করলাম। সে সব দিন খুব দ্রুত কেটে গিয়েছিল। এমন অনেক স্মৃতি রয়েছে, সে সব আর ফিরে দেখতে চাই না।’’

অন্ধকার জীবন থেকে আলোকিত জীবনের বাসিন্দা সানি লিওন এখন তিন সন্তানের মা। একটি মেয়েকে তিনি দত্তক নিয়েছেন, আর সারোগেসির মাধ্যমে তাঁর দুই ছেলে হয়েছে। সানি মনে করেন যে তাঁর সন্তানরা অনেক উঁচুতে উঠুক, এমনকি মঙ্গলগ্রহে যাক তারা, এটাও চান সানি লিওন।

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়