শ্যামলাল গোঁসাই
আপডেট: ১৭:৩৯, ২৫ নভেম্বর ২০২০
উগান্ডা: দরিদ্র এই দেশটিরও রয়েছে শোষণ আর স্বাধীনতার ইতিহাস
বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ উগান্ডা
প্রায়সই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘উগান্ডা’ শব্দটিকে জড়িয়ে ট্রল করতে দেখা যায়। এসব ট্রল আমাদেরকে হাসায়, মোদ্দা কথা উগান্ডা নামটি আমাদেরকে ভার্চুয়াল জগতে বিনোদিত করে। উগান্ডা নামটি একটা দেশের নাম, একটা রাষ্ট্রের পরিচয়ের বাহক।
তদুপরি ‘উগান্ডা’ নামটি কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাস্যরসাত্মক একটি নাম হয়েই আছে। এই হাস্য রসের বাইরে গেলে দেখা যায় দরিদ্র দেশ উগান্ডাতেও রয়েছে নিজস্ব ইতিহাস, ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির মেলবন্ধন। রয়েছে উত্থান-পতনের গল্প। আজকে জানবো ‘উগান্ডা’ সম্পর্কে অজানা সেসব গল্পের কিছু।
উগান্ডার শোষণ আর স্বাধীনতার ইতিহাস
উগান্ডা বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ। বান্টু ভাষাভাষীর জনগণ খুব সম্ভবত মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকা থেকে দেশটির দক্ষিণাংশে অভিবাসী হয়ে এসে বসবাস শুরু করে। চৌদ্দ’শ ও পনের’শ শতকে রাজত্ব বিস্তারকারী কিতারা সাম্রাজ্য এখানকার প্রাচীনতম রাজনৈতিক বা রাষ্ট্রীয় সংগঠন। এই সাম্রাজ্যের পর দেশটিতে উত্থান ঘটে বুনিইওরো-কিতারা, বুগান্ডা, তোরো, আনকোলে এবং বুসোগা সম্রাজ্যের। পরবর্তী শতকগুলোতেও এভাবেই ক্ষমতার পালাবদল অব্যাহত ছিল।
এর দীর্ঘ সময় পরে ১৮৩০ সালে আরব ব্যবসায়ীরা পূর্ব আফ্রিকার ভারত মহাসাগর উপকূল থেকে অভ্যন্তরীণ স্থানান্তরিত হয়েছিল এ অঞ্চলে। ফলে সেখানে মুসলিম সংস্কৃতিরও কিছুটা মিশ্রণ ঘটে আরও বৈচিত্র্যপূর্ণ হয় উগান্ডার ইতিহাস। পরবর্তীতে ১৮৬০ এর দশকে নীল নদের উৎস অনুসন্ধান করে উগান্ডায় আগমন ঘটে ব্রিটিশদের। উগান্ডায় সূচনা ঘটে ব্রিটিশ শাসনের। ব্রিটিশরা উগান্ডা শাসন করে শতাধিক বছর। সর্বশেষ ১৯৬২ সালে যখন উগান্ডা ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে তখন উগান্ডার রানী ছিলেন কুইন দ্বিতীয় এলিজাবেথ। ১৯৬২ সালের ৯ই ডিসেম্বর ব্রিটিশ কতৃক একশ বছর শোষিত থাকার পর স্বাধীনতা আদায় করে উগান্ডার অধিবাসীরা।
উগান্ডায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বার্ষিক ২০ ইঞ্চি বা ৫০০ মিমি-র চেয়ে কম
ব্রিটিশদের থেকে স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৬৩ সালে উগান্ডায় প্রজাতন্ত্র মতে দেশ চলতে থাকে। ১৯৭০ এর দশকে উগান্ডার স্বৈরশাসক ছিলেন ইদি আমিন। ১৯৭৯ সালে তানজানিয়া আর উগান্ডার যুদ্ধ বাঁধে। যুদ্ধের এক পর্যায়ে তানজানিয়ার সৈন্যরা উগান্ডার রাজধানী কাম্পালায় প্রবেশ করে, তখন পতন ঘটেছিল ইদি আমিনের।
আয়তনের দিক থেকে উগান্ডা ২,৪১,০৩৮ বর্গকিলোমিটার (৯৩,০৬৫ বর্গমাইল) এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এই আয়তনের ১৫.৩৯ শতাংশ রয়েছে পানি দিয়ে ঘেরা। বিশ্বে ৭৯তম বৃহত্তম এ দেশটিকে ঘিরে রেখেছে এডওয়ার্ড লেক, আলবার্ট লেক এবং ভিক্টোরিয়া লেক নামের বেশ কয়েকটি বৃহদাকার লেক। তবে উগান্ডার আয়তনের প্রায় ৬০% ই সংরক্ষিত।
পর্যটকদের আকর্ষণের জন্যও বেশ কিছু জায়গা রয়েছে দরিদ্র এই দেশটিতে। দেখার মতো রয়েছে বিউইন্ডি ইমপেনট্রেবেল ন্যাশনাল পার্ক, রিউঞ্জরি মাউন্টেইন ন্যাশনাল পার্ক (দুটিই ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের অন্তর্ভুক্ত), কুইন এলিজাবেথ ন্যাশনাল পার্ক, মুরচিসন ফলস ন্যাশনাল পার্ক, কিবালে ফরেস্ট ন্যাশনাল পার্ক, কিদেপো ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কসহ বিভিন্ন পার্ক।
অপরূপ সৌন্দর্যে শোভিত উগান্ডার এই জলপ্রপাতটি মুহূর্তেই পর্যটকদের মোহিত করে
রাজনীতিতে উগান্ডা
উগান্ডার রাষ্ট্রপতি একাই রাষ্ট্রপ্রধান এবং সরকারপ্রধান উভয় দায়িত্ব পালন করেন। রাষ্ট্রপতি তাকে প্রশাসনে সহায়তার জন্য একজন সহ-রাষ্ট্রপতি এবং একজন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। বর্তমানে উগান্ডার রাষ্ট্রপতি ইওয়ারি মুসাভেনি (Yoweri Museveni)। ১৯৮৬ সালের ২৯ শে জানুয়ারী থেকে তিনি উগান্ডার রাষ্ট্রপতি পদে আছেন। এরফলে তিনিই হলেন দেশেটির সবচেয়ে বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা রাষ্ট্রপতি, এবং ইদি আমিনের পর দেশের দ্বিতীয় একনায়ক।
উগান্ডার অর্থনীতি
উগান্ডার অর্থনীতি মূলত কৃষিকাজ নির্ভর, এবং শ্রমজীবী জনসংখ্যার প্রায় ৮০%ই কৃষিকাজ করে জীবন ধারন করছে। উগান্ডার সহনীয় মাত্রার আবহাওয়া প্রাণিসম্পদ এবং ফসল উভয়ই উৎপাদনের জন্য উপযোগী। ২০১৫ সালে উগান্ডা বেশকিছু পণ্যদ্রব্য রপ্তানি করে, যারমধ্যে আছে কফি ($৪০২.৬৩ মিলিয়ন), তেল ($১৩১.২৫ মিলিয়ন), মাছ ($১১৭.৫৬ মিলিয়ন), ভুট্টা ($৯০.৯৭ মিলিয়ন), সিমেন্ট ($৮০.১৩ মিলিয়ন), তামাক ($৭৩.১৩ মিলিয়ন), চা ($৬৯.৯৪ মিলিয়ন), চিনি ($৬৬.৪৩ মিলিয়ন), ফুল ($৫১.৪৪ মিলিয়ন) ইত্যাদি।
উগান্ডা বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ। ২০১২ সালে জনসংখ্যার ৩৭.৮ শতাংশ প্রতিদিন ১.২৫ ডলারেরও নিচে বাস করত। ১৯৯৯ সালে দেশব্যাপী দারিদ্র্যের পরিমাণ ৫৬ শতাংশ থেকে ২০০৯ সালে ২৪.৫ শতাংশে হ্রাস পায়। তবে ব্যাপক অগ্রগতি সত্ত্বেও, দেশের গ্রামীণ অঞ্চলে দারিদ্র্যতা এখনো রয়ে গেছ। আর গ্রামীণ অঞ্চলই উগান্ডার ৮৮ শতাংশ মানুষের আবাসস্থল।
উগান্ডার অর্থনীতি মূলত কৃষিকাজ নির্ভর, এবং শ্রমজীবী জনসংখ্যার প্রায় ৮০%ই কৃষিকাজের সাথে সম্পৃক্ত
ধর্মীয় বৈচিত্র
৪ কোটি জনগণের এই দেশটিতে জনসংখ্যার অধিকাংশই খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। যার মধ্যে ৩৯.৩ শতাংশ রোমান ক্যাথলিক চার্চের অনুগামী এবং ৩২ শতাংশ উগান্ডার অ্যাংলিকান চার্চের অনুগামী। আগেই বলেছি অন্যান্য জাতি গোষ্ঠীর সাথে মুসলিমরাও এ অঞ্চলে আসে। ফলে এখানে মুসলিম সংস্কৃতিরও প্রভাব পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই তখন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তাই উগান্ডার সর্বাধিক প্রচারিত ধর্ম হল ইসলাম। জনসংখ্যার ১৩.৭ শতাংশই এখানে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত।
প্রচুর সংখ্যক সম্প্রদায়ের কারণে উগান্ডার সংস্কৃতিতে এসেছে বৈচিত্র্য। রয়েছে বুদ্ধিবৃত্তিক ও শিল্পকলাসমৃদ্ধ এক সংস্কৃতি। উন্নয়নশীল এই দরিদ্র রাষ্ট্রটি মূলত কৃষিপ্রধান। পুরুষদের জাতীয় পোশাক হল কানজু। মধ্য ও পূর্ব উগান্ডার মহিলারা গোমেসি নামে পরিচিত একটি পোশাক পরেন।
খেলাধুলায় উগান্ডা
উগান্ডার জাতীয় খেলা ফুটবল। যদিও তারা কখনো বিশ্বকাপ ফুটবল খেলেনি, ১৯৭৮ সালে আফ্রিকান নেশন্স কাপে দ্বিতীয় হওয়াই তাদের সেরা সাফল্য। আর ক্রিকেট খেলায় তারা পূর্ব আফ্রিকা ক্রিকেট দলের হয়ে ১৯৭৫ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলে। তবে দেশটি অলিম্পিকে পদকজয়ী। ২০১৬ অলিম্পিক পর্যন্ত, উগান্ডা মোট দুটি স্বর্ণ, তিনটি রৌপ্য এবং দুটি ব্রোঞ্জ পদক জিতেছে; যার মধ্যে চারটি বক্সিং এবং তিনটি অ্যাথলেটিকসে ছিল।
- কেএফসির মালিকের জীবন কাহিনী
- প্রজাপতি: আশ্চর্য এই প্রাণীর সবার ভাগ্যে মিলন জোটে না!
- মা-শাশুড়িকে হারিয়েও করোনার যুদ্ধে পিছিয়ে যাননি এই চিকিৎসক
- বিশ্বের অদ্ভুত কিছু গাছের ছবি
- সোনার দাম এত কেন : কোন দেশের সোনা ভালো?
- যেখানে এক কাপ চা পুরো একটি পত্রিকার সমান!
- তিন রঙের পদ্মফুলের দেখা মিলবে এই বিলে
- রহস্যময় গ্রামটি লাখো পাখির সুইসাইড স্পট
- ২০২৩ সালে পৃথিবীর শক্তিশালী ১০টি দেশ!
- বায়েজিদ বোস্তামি: মাতৃভক্তির এক অনন্য উদাহরণ