শ্যামলাল গোঁসাই
আপডেট: ০০:০৯, ১০ জানুয়ারি ২০২১
যে `মাছের মেলা` মিস করবে সিলেটবাসী
মাছের মেলা
ঋতুচক্রে যখন শীতকাল আর মাসের নাম যখন পৌষ, তখন মৌলভীবাজারের কুশিয়ারা নদীর পাড়ের মানুষদের মাঝে উৎসব উৎসব সাঁজ। নদী পাড়ের এসব মানুষদের সখ্যতা নদীর সাথেই বেশি। আর তাই নদীকে ঘিরেই এক উৎসব গত দুইশো বছর ধরে পালন করে আসছে কুশিয়ারা পাড়ের বাসিন্দারা। কিন্তু এবছর করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে দুইশো বছরের এ ধারাবাহিকতার ছন্দপতন হয়েছে। অনুষ্ঠিত হবে না নদীপাড়ের উৎসবটি। ফলে প্রবাসী অধ্যুষিত সৌখিন সিলেটবাসীর দেখা হবে না ঐতিহ্যবাহী এই মেলার এবারের মাছ।
২০০ বছর ধরে চলছে এই মেলা!
বলছিলাম সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শেরপুরে কুশিয়ারা নদীর পাড়ে বসা ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলার কথা। পৌষের রাতে ঘন কুয়াশার মাঝে এই অঞ্চলের মাছ ব্যবসায়ীরা উৎসবে মেতে ওঠেন।
মাছের মেলায় দেখা মিলে দ্বৈত্যাকার কিছু মাছেরও
কবে থেকে এই মেলা পালন হয়ে আসছে এ নিয়ে বিভিন্ন ধরণের তথ্য রয়েছে। কেউ কেউ বলে থাকেন যে, এই মেলা গত দুইশো বছর ধরে চলে আসছে। আবার কেউ দাবি করছেন এই মেলার বয়স অর্ধশত বছর। তবে নিশ্চিত হবার মতো কোনো তথ্য না থাকলেও মাছের মেলা এই অঞ্চলের মানুষদের ঐতিহ্যের একটা অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বলা হয় পূজা পার্বন আর উৎসবের দেশ বাংলাদেশ। এখানকার বেশিরভাগ উৎসবের সাথে জড়িয়ে আছে ছয়টি ঋতু, বারোটি মাস। জনশ্রুতি আছে শেরপুরের এই ঐতিহ্যবাহী মেলা শুরু পৌষ সংক্রান্তিকে কেন্দ্র করে।
পৌষসংক্রান্তি উপলক্ষে কুশিয়ারা নদীর পশ্চিম পাড়ে মাছের এই মেলা বসে। তবে এখন যেখানে মেলা বসে অতীতে এখানে বসতো না। স্থানীয় বাসীন্দাদের মতে, মাছের মেলা একসময় বসত মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মনুমুখে। পরবর্তীতে মনুমুখের বাজারটি নদীভাঙনে বিলীন হয়ে গেলে স্থান পরিবর্তন হয়ে মেলাটি সরে যায় শেরপুর এলাকার হামরকোনায়। সেখান থেকে পরে কুশিয়ারার পাড়ে।
দিনের আলো থাকতেই বসলেও যতো রাত গভীর হয় ততোই জমতে থাকে শেরপুরের মাছের মেলা
দূর-দূরান্ত থেকে আসেন সৌখিন ক্রেতারা
শেরপুরে আয়োজিত মাছের মেলার সাথে জড়িয়ে আছে এই হাওরবেষ্টিত অঞ্চলের সংস্কৃতি আর ঐতিহ্য। সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, জকিগঞ্জ, শ্রীমঙ্গলসহ বিভিন্ন জায়গার পাইকাররা এই মেলায় মাছ নিয়ে আসেন। শোনা যায় এই মেলার শুরুর দিকে কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকেও এই মেলায় পাইকাররা আসতেন মাছ বিক্রির জন্য।
কুশিয়ারা পাড়ে আয়োজিত এই মেলা দিনের আলো থাকতেই বসলেও যতো রাত গভীর হয় ততোই জমতে থাকে মেলা। বৈদ্যুতিক বাল্ব আর কুপি বাতির আগুনরাঙা রঙে রঙিন হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গণ। বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা সৌখিন মাছ ক্রেতারা মাছের দরদাম করেন, পছন্দ হলে কেউ কিনেও নেন।
শেরপুরের মাছের মেলায় অনেকেই শুধুমাত্র মাছ দেখতে আর ঘুরতে আসেন। ঐতিহ্যবাহী এই মেলায় ওঠে দৈত্যাকার সব মাছ। এসবের মধ্যে রয়েছে মাছ চিতল, বোয়াল্ আইড়-বাগাইড়, ফলি কাঙলাসহ আরও অনেক মাছ। একসঙ্গে বড় আকারের বিভিন্ন জাতের এত মাছ দেখার সুযোগ হাতছাড়া না করতে আসেন অনেক দর্শকও। তাঁরা ঘুরে ঘুরে মাছ দেখেন, দাম জানতে চান।
শেরপুরের মাছের মেলায় ওঠা মাছের দাম শুনলেও চোখে সর্ষে ফোটবে। দেড়-দুই লক্ষ টাকায়ও এই মেলায় মাছ ক্রয়-বিক্রয় হয়।
মেলাকে ঘিরে আছে রীতিনীতি!
শেরপুরের মেলা নিয়ে সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামেও নানা ধরণের রীতিনীতিও রয়েছে। যেমন কিছুকাল আগেও এই অঞ্চলের অনেক ঘরে পৌষ সংক্রান্তিতে যখন জামাই নাইওর আসতো তখন নতুন জামাইকে টাকা আর বাজারের থলি দিয়ে এই মাছের মেলায় পাঠানো হতো। নতুন জামাই মাছের মেলা থেকে বিভিন্ন জাতের মাছ কিনে নিয়ে গেলে তা রান্না করে খাওয়া হতো।
গত বছর তার প্রায় ১০ কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয়েছিল
সময়ের সাথে এসব হারিয়ে গেলেও এখনো শেরপুরের মাছের মেলায় দর্শক উপস্থিতি কমেনি। অনেকেই বাচ্চাদেরকে নিয়ে এই মেলায় আসেন মাছের জাত চেনানোর জন্য। কেননা এই মেলায় পাওয়া যায় দেশের বিলুপ্তিপ্রায় মাছের জাতসহ অনেক নাম না জানা মাছ।
এ বছর হবে না মেলা
তবে এবছর মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে স্থগিত করা হয়েছে ঐতিহ্যবাহী এই মেলাটি। প্রায় দুইশো বছরের ধারাবাহিকতার ছন্দপতন ঘটলো এবছর। নদীর পাড়ে আয়োজন হবে না মাছের মেলা।
শেরপুরের বাসীন্দা মিলাদ হোসেন বলেন, ‘প্রতিবছর মাছের মেলায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যাই। বিভিন্ন জাতের স্থানীয় মাছ দেখি, দরদাম করি। ঐতিহ্যবাহী এই মেলা থেকে মাছ কিনি। এবছর করোনার কারণে মেলা বসবে না। ফলে দেখাও হবে না!।‘
গত বছরের মেলার ইজারাদার মো আশরাফ আলী জানান, গত বছর তার প্রায় ১০ কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয়েছিল। এ বছর মেলা হবে কিনা তা নিয়ে আমরা আগেই দ্বিধায় ছিলাম। কারণ করোনার কারণে গত বছরের মার্চ থেকেই পরিস্থিতি বদলে গেছে। জেলা প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই।
মেলা বন্ধের ফলে ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতার ছন্দপতন ঘটলেও করোনার প্রতিরোধে এই সিদ্ধান্ত অধিক কার্যকরী
নিষেধাজ্ঞা জারির বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান জানান, মৌলভীবাজারবাসীকে করোনামুক্ত রাখতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। করোনার প্রভাব কেটে যাওয়ার পর যখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরব তখন যদি এলাকাবাসী অন্য কোন তারিখে এই মেলা আয়োজন করতে চায় আমরা সহযোগিতা করব।
সিলেটের কাজী টুলা থেকে এই মাছের মেলায় আসতেন নাহিদ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘মেলা বন্ধের ফলে ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতার ছন্দপতন ঘটলেও করোনার প্রতিরোধে এই সিদ্ধান্ত অধিক কার্যকরী। তাই মেলা বন্ধের সিদ্ধান্তে আমাদেরও এগিয়ে আসা উচিৎ।‘
- কেএফসির মালিকের জীবন কাহিনী
- প্রজাপতি: আশ্চর্য এই প্রাণীর সবার ভাগ্যে মিলন জোটে না!
- মা-শাশুড়িকে হারিয়েও করোনার যুদ্ধে পিছিয়ে যাননি এই চিকিৎসক
- বিশ্বের অদ্ভুত কিছু গাছের ছবি
- সোনার দাম এত কেন : কোন দেশের সোনা ভালো?
- যেখানে এক কাপ চা পুরো একটি পত্রিকার সমান!
- তিন রঙের পদ্মফুলের দেখা মিলবে এই বিলে
- রহস্যময় গ্রামটি লাখো পাখির সুইসাইড স্পট
- ২০২৩ সালে পৃথিবীর শক্তিশালী ১০টি দেশ!
- বায়েজিদ বোস্তামি: মাতৃভক্তির এক অনন্য উদাহরণ