হেলাল আহমেদ
আপডেট: ১৮:০৪, ১৮ জানুয়ারি ২০২১
ব্যোমকেশ বক্সী: বাঙলা সাহিত্যের গোয়েন্দাদের গুরু
বিশ্ব সাহিত্যের জনপ্রিয় ডিটেক্টিব চরিত্র বা গোয়েন্দাদের নাম বলতে বলা হলে জেমস বন্ড, শার্লক হোমস বা মাইক হেমারসহ আরও অনেকের নামই হয়তো চলে আসবে। কিন্তু যদি পাঠককে প্রশ্ন করা হয় বাঙালি গোয়েন্দাদের নিয়ে তখন ‘ব্যোমকেশ বক্সী’র নাম আসবেই।
শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৃষ্টি এই গোয়েন্দা চরিত্রটি এর রচয়িতাকেও জনপ্রিয়তায় হার মানিয়েছে। বাঙলা সাহিত্যে ব্যোমকেশ বক্সীর আগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বা প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়ের হাতে আরও কিছু গোয়েন্দা চরিত্র সৃষ্টি হলেও ‘ব্যোমকেশ বক্সী’কে দিয়েই মূলত বাঙলা গোয়েন্দারা আলোচনায় আসতে থাকেন।
শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৃষ্ট চরিত্র হিসেবে ব্যোমকেশ বক্সীর আবির্ভাব হয় সত্যান্বেষী গল্পে। ১৩৩১ বঙ্গাব্দে কলকাতার চীনাবাজার অঞ্চলে পরপর কয়েকটি খুনের ঘটনার কিনারা করতে 'বে-সরকারী ডিটেকটিভ' ব্যোমকেশ বক্সী পুলিশ কমিশনারের অনুমতি নিয়ে অতুলচন্দ্র মিত্র ছদ্মনামে এই অঞ্চলে এক মেসে বসবাস শুরু করেছিলেন।
এই মেসে তার ঘরের অন্য ভাড়াটিয়া অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের কলমে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যোমকেশের অধিকাংশ গোয়েন্দা গল্পগুলি লিখিয়েছিলেন।
'ব্যোমকেশ বক্সী' সিরিজের গল্পে বলিউডেও নির্মাণ করা হয়েছে সিনেমা। এই সিনেমার মূল চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন প্রয়াত জনপ্রিয় তরুণ অভিনেতা সুশান্ত রাজপুথ।
তবে মূলত গোয়েন্দা গল্প হলেও শরদিন্দু ব্যোমকেশ বক্সী’কে হাজির সামনে হাজির করেছেন সত্যান্বেষী হিশেবে। সত্যান্বেষী গল্পে ব্যোমকেশের বিবরণ দিতে গিয়ে অজিত বলেছেন, ...তাহার বয়স বোধকরি তেইশ-চব্বিশ হইবে, দেখিলে শিক্ষিত ভদ্রলোক বলিয়া মনে হয়। গায়ের রঙ ফরসা, বেশ সুশ্রী সুগঠিত চেহারা-মুখে চোখে বুদ্ধির একটা ছাপ আছে।
এই গল্পের শেষে জানা যায়, হ্যারিসন রোডের একটি বাড়ীর তিনতলা ভাড়া নিয়ে ব্যোমকেশ বসবাস করেন। এই বাড়িতে ব্যোমকেশ ছাড়া দ্বিতীয় ব্যক্তি তার পরিচারক পুঁটিরাম।
বাড়ীর দরজায় পেতলের ফলকে লেখা ছিল শ্রীব্যোমকেশ বক্সী, সত্যান্বেষী। সত্যান্বেষীর অর্থ জিজ্ঞাসা করায় অজিতকে ব্যোমকেশ বলেন, ওটা আমার পরিচয়। ডিটেকটিভ কথা শুনতে ভালো নয়, গোয়েন্দা শব্দটা আরও খারাপ, তাই নিজের খেতাব দিয়েছি সত্যান্বেষী।
ব্যোমকেশ সিরিজের প্রথম গল্প পথের কাঁটা (৭ই আষাঢ়, ১৩৩৯ বঙ্গাব্দ) এবং দ্বিতীয় গল্প সীমন্ত-হীরা (৩রা অগ্রহায়ণ, ১৩৩৯ বঙ্গাব্দ)। এই দুইটি গল্প লেখার পর শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যোমকেশ বক্সী চরিত্র নিয়ে সিরিজ লেখার কথা চিন্তা করে ১৩৩৯ বঙ্গাব্দের ২৪শে মাঘ সত্যান্বেষী গল্প রচনা শেষ করে ব্যোমকেশ চরিত্রকে পাঠকের সামনে উপস্থিত করেন। সেই কারণে সত্যান্বেষী গল্পটিকে ব্যোমকেশ সিরিজের প্রথম গল্প হিসেবে ধরা হয়ে থাকে।
কলকাতায়ও এই জনপ্রিয় গোয়েন্দা চরিত্রকে ঘিরে নির্মিত হয়েছে বেশ কয়েকটি সিনেমা। যেগুলো ব্যাপক দর্শকপ্রিয় হয়।
১৩৩৯ থেকে ১৩৪৩ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত দশটি গল্প লেখার পর পাঠকদের ভালো লাগবে না ভেবে পনেরো বছর ব্যোমকেশকে নিয়ে আর কোন গল্প লেখেননি। এরপর কলকাতার পরিমল গোস্বামীর বাড়ির ছেলেমেয়েদের অনুরোধে ১৩৫৮ বঙ্গাব্দের ৮ই পৌষ চিত্রচোর গল্পটি লেখেন।
শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যোমকেশ চরিত্র নিয়ে তেত্রিশটি কাহিনী রচনা করেছেন। এর মাঝে বিশুপাল বধ গল্পটি তিনি সম্পূর্ণ করে যেতে পারেননি। পরবর্তীতে এই গল্প সম্পূর্ণ করেন সাহিত্যিক নারায়ন সান্যাল।
বাঙলা সাহিত্যে আধুনিক বাংলা গোয়েন্দা কাহিনির জনক ধরা হয় শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তার গোয়েন্দা ব্যোমকেশ ও সহকারী অজিত তৎকালীন বাংলার পাঠকমহলে গভীর ছাপ ফেলতে সক্ষম হয়েছিলো। যার ফলে ‘ব্যোমকেশ বক্সী’ সিরিজের অনেক গল্প নিয়ে ধারাবাহিক চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছে।
‘ব্যোমকেশ বক্সী’র সম্পর্কে কথা উঠলে বলা হয় যে, বাঙলা গোয়েন্দার এই চরিত্রটি এর সৃষ্টিকর্তাকেও ছাপিয়ে গেছে। ‘ব্যোমকেশ বক্সী’ চরিত্রটি জনপ্রিয় এর রচয়িতা থেকেও।
- কেএফসির মালিকের জীবন কাহিনী
- প্রজাপতি: আশ্চর্য এই প্রাণীর সবার ভাগ্যে মিলন জোটে না!
- মা-শাশুড়িকে হারিয়েও করোনার যুদ্ধে পিছিয়ে যাননি এই চিকিৎসক
- বিশ্বের অদ্ভুত কিছু গাছের ছবি
- সোনার দাম এত কেন : কোন দেশের সোনা ভালো?
- যেখানে এক কাপ চা পুরো একটি পত্রিকার সমান!
- তিন রঙের পদ্মফুলের দেখা মিলবে এই বিলে
- রহস্যময় গ্রামটি লাখো পাখির সুইসাইড স্পট
- ২০২৩ সালে পৃথিবীর শক্তিশালী ১০টি দেশ!
- বায়েজিদ বোস্তামি: মাতৃভক্তির এক অনন্য উদাহরণ