শ্যামলাল গোঁসাই
আপডেট: ১৬:২৫, ১৯ জানুয়ারি ২০২১
এক যে আছে মজার ভাষা
ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ভাষার নামটা বেশ মজার। উচ্চারণ ও শ্রবণ দুই ক্ষেত্রেই নামটি একটু অদ্ভুত ঠেকে। ভাষার নামটি হচ্ছে ‘ককবরক’। মোটা দাগে ‘ককবরক’ নামে পরিচিত ত্রিপুরা ভাষার আরও একটি নাম আছে। সেটি হচ্ছে, ‘তিপ্রাকক’ বা ‘ত্রিপুরি’।
তবে সকলের কাছে ভাষাটির নাম ‘ককবরক’। ১৯৭৯ সালে ককবরক ভাষাকে ভারতের ত্রিপুরা অঙ্গরাজ্যের সরকারি ভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এরপর থেকে প্রতিবছরের ১৯ জানুয়ারি এই জাতিগোষ্ঠীর লোকেরা ভাষা দিবস হিশেবে পালন করে আসছেন। বর্তমানে এই নিয়ে বিতর্ক চলছে যে এই ভাষাটিকে ভারতের জাতীয় ভাষাগুলোর মর্যাদা দেওয়া হবে কিনা। হয়তো খুব শীঘ্রই ককবরক ভাষাটিও জাতীয় ভাষার স্বীকৃতি পাবে।
বিশ্বের প্রত্যেকটা ভাষাই ভিন্ন ভাষাগোষ্ঠীর কাছে মজার মনে হয়। যেমন আমরা যারা বাঙালি তাদের কাছে অন্য অনেক দেশের ভাষাকে মজার ভাষা মনে হয়। এর মানে কিন্তু এই নয় যে, মজার বলে ভাষাকে ছোট করা হচ্ছে। আসলে ভাষার উচ্চারণগুলো অন্যরকম ঠেকে বলেই ভাষাকে মজার মনে হয়। আর ভাষার ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে প্রত্যেকটা ভাষার সূচনায় ছিলো কিছু মজার মজার শব্দ। যেগুলো আজ বর্ণ বা অক্ষরের জামা পড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে আমাদের মুখে মুখে।
'ককবরক' ভাষার বর্ণমালা ও চিহ্ন
‘ককবরক’ শব্দটি মজার মনে হলেও এই শব্দের পেছনে রয়েছে সুন্দর দুইটি অর্থ। কক এবং বরক এই দুইটি অংশ নিয়ে হয়েছে ‘ককবরক’। কক অর্থ ‘ভাষা’ আর বরক অর্থ ‘মানুষ’। পুরো মানেটা দাঁড়ায় ‘মানুষের ভাষা’। আসলে এখানে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী অন্তর্ভুক্ত মানুষদের কথা বলা হয়েছে; যারা এই ভাষায় কথা বলেন।
ককবরক ভাষাটি বিভিন্ন রূপে প্রথম শতাব্দী থেকেই এই অঞ্চলে প্রচলিত। ঐ শতকে ত্রিপুরার রাজাদের ইতিহাস লিখিত আকারে প্রথম সংরক্ষণ করা শুরু হয়। এই ভাষায় লেখার ক্ষেত্রে কেলোমা লিপি ব্যবহার করা হতো। তাই এই ভাষায় লেখা কোনো বই যদি আমরা পাই-ও সে বইয়ের কোনো অর্থই বোধগম্য হবে না। কিন্তু এটিও একটি ভাষা। ভাষা এমনই। বলা হয় ‘এক দেশের বুলি আরেক দেশের গালি’।
ত্রিপুরা রাজাদের আমলে ‘রাজরত্নকর’ নামের গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করা হতো রাজ্যের রাজাদের সব ঘটনা। এই বইটি আদিতে দুর্লবেন্দ্র চোনতাই কোলোমা লিপি ব্যবহার করে ককবরক ভাষাতে রচনা করেছিলেন। তাই বুঝাই যাচ্ছে ত্রিপুরাদের এই ভাষার নাম শুনতে মজার হলেও এর রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস।
শুক্রেশ্বর ও বাণেশ্বর নামের দুই ব্রাহ্মণ গ্রন্থটিকে প্রথমে সংস্কৃত ভাষায় ও পরে ১৪শ শতকে বাঙলায় অনুবাদ করেন। কিন্তু ককবরক ভাষায় লেখা আদিগ্রন্থটির আজ আর কোনও অস্তিত্ব নেই। ভাষার ইতিহাস ধরে রাখতে প্রয়োজন ছিলো গ্রন্থটির অস্বিত্ব রাখার। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেন নি। তবে কী ককবরক ভাষার সাহিত্যিকরা তখন কিচ্ছু রচনা করেন নি?
১৪শ শতক থেকে ২০০০ অব্দ পর্যন্ত ককবরক ভাষাকে স্থানীয় মানুষের মুখের ভাষায় পর্যবসিত করা হয় এবং বাংলা ভাষাকে ত্রিপুরার রাজদরবারের ভাষা বানানো হয়।
‘ককবরক’ ভাষার লিখন পদ্ধতি হলো পূর্ব নাগরী বর্ণমালা। এই নাগরী কিন্তু আবার বাংলাদেশের আরেকটি স্বতন্ত্র্য প্রাচীন ভাষা। যেই ভাষায় সাহিত্য চর্চা হয়েছে প্রায় ছয়শো বছর। নাগরী ভাষার রয়েছে আলাদা বর্ণমালা। রয়েছে স্বরবর্ণ, ব্যাঞ্জণবর্ণ। এই পূর্ব নাগরীর সাথে সম্পর্ক রয়েছে ‘ককবরক’ ভাষার।
'ককবরক' ভাষাভাষী একজন ত্রিপুরা নারী। ছবি: রণজিৎ জনি
ভাষা এমনি। আদিতে সে কোনো এক বা একাধিক মানুষের মুখ থেকে বেরিয়ে যে যাত্রা শুরু করেছিলো তা আজও চলছে। একারণেই খোঁজ খবর নিলে দেখা যাবে প্রত্যেকটি ভাষার সাথেই সম্পর্ক রয়েছে অন্য একটি ভাষার উচ্চারণে, লেখায়।
- কেএফসির মালিকের জীবন কাহিনী
- প্রজাপতি: আশ্চর্য এই প্রাণীর সবার ভাগ্যে মিলন জোটে না!
- মা-শাশুড়িকে হারিয়েও করোনার যুদ্ধে পিছিয়ে যাননি এই চিকিৎসক
- বিশ্বের অদ্ভুত কিছু গাছের ছবি
- সোনার দাম এত কেন : কোন দেশের সোনা ভালো?
- যেখানে এক কাপ চা পুরো একটি পত্রিকার সমান!
- তিন রঙের পদ্মফুলের দেখা মিলবে এই বিলে
- রহস্যময় গ্রামটি লাখো পাখির সুইসাইড স্পট
- ২০২৩ সালে পৃথিবীর শক্তিশালী ১০টি দেশ!
- বায়েজিদ বোস্তামি: মাতৃভক্তির এক অনন্য উদাহরণ