সীমান্ত দাস
আপডেট: ১৪:৩৩, ৩ ডিসেম্বর ২০২১
মিডিয়া নিজেই খবর চেপে যায় মালিকের চাপে? নাকি সরকারের?
৩ মে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস। সারা বিশ্বে দিবসটি ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে’ নামে পরিচিত। দিবসটির স্লোগান ছিল তথ্য জনগণের পণ্য'। তবে আসলেই কতোটা স্বাধীনতা পাচ্ছে গণমাধ্যম? এই দিবসে উঠে এসেছে এমন প্রশ্ন।
সাংবাদিকতার স্বাধীনতা ও মুক্ত গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠার মৌলিক নীতিমালা অনুসরণ, বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মূল্যায়ন, স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ প্রতিহত করার শপথ গ্রহণ এবং পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ক্ষতিগ্রস্ত ও জীবনদানকারী সাংবাদিকদের স্মরণ ও তাদের স্মৃতির প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয় বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে।
তবে আসলেই কতোটা স্বাধীনতা পাচ্ছে গণমাধ্যম? এই দিবসে উঠে এসেছে এমন প্রশ্ন। অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায়, সেলফ সেন্সরশীপ, অর্থাৎ নিজেরাই খবর চেপে যাওয়া বা প্রকাশ না করার ঘটনা গণমাধ্যমের। এ কথা শুধু সাধারণ পাঠকেরই নয়, বাংলাদেশে গণমাধ্যমের সাথে জড়িতদের অনেকে স্বীকারও করছেন।
অনেকেই বলেন সরকারের চাপে গণমাধ্যমে উঠে আসতে পারেনা অনেক খবর। কিন্তু গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পথে বাধা কি কেবল সরকার? গণমাধ্যমের মালিক যারা- তারা নিজেরাও কি স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে বাধা সৃষ্টি করছেন না?
জনপ্রিয় গণমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য। বিবিসি তাদের প্রতিবেদনে জানাচ্ছে, বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রশ্ন উঠলে সাধারণত সরকারের নানা কালাকানুন, বিধিনিষেধ বা চাপের প্রতি ইঙ্গিত করেন অনেকে। বিশেষ করে বর্তমান সরকারের আমলে করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কথা উল্লেখ করা হয়।
বাংলাদেশের সম্পাদক এবং সাংবাদিকরা স্বীকার করছেন, গণমাধ্যমে বিগত দশকগুলোতে যে ধরণের পুঁজির লগ্নি হয়েছে, তাতে করে মালিকের ব্যবসায়িক স্বার্থ প্রাধান্য পাচ্ছে এবং সাংবাদিকতার নয়, মালিকের স্বাধীনতার নিশ্চিত হচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের মুল ধারার গণমাধ্যমের প্রতি মানুষের আস্থার সংকটের অভিযোগ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা চলছে।
মুনিয়ার আত্মহত্যার ঘটনায় আনভীরের নাম নেয়নি অধিকাংশ গণমাধ্যম
সম্প্রতি ঢাকার গুলশানে কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মুনিয়ার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। কিন্তু এই মুনিয়ার আত্নহত্যায় প্ররোচনা দেয়ার অভিযোগে সম্প্রতি যে মামলা হয়, মামলাটির খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে মুলধারার কিছু প্রভাবশালী সংবাদ মাধ্যমে প্রথমে অভিযুক্ত বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের নাম প্রকাশ করা হয়নি। শুধু প্রথমে আনভীরের নাম নেওয়া হয়নি এমনও না, কিছু সংবাদমাধ্যম এখনও এই বিষয়ে কোনও খবরই প্রকাশ করেনি।
অবশ্য তাতেও এমন কিছু লাভ হয়নি আনভীরের। বাঘা তিন আইনজীবী নিয়েও তার আগাম জামিন কোর্টে উঠেনি। বিস্তারিত...
সেই প্রেক্ষাপটে গণমাধ্যমে সেলফ সেন্সরশিপের ইস্যু আবারও আলোচনায় এসেছে। এই প্রবণতা উদ্বেগজনকহারে বেড়ে চলেছে বলে গণমাধ্যমের সাথে জড়িতদের অনেকে মনে করেন।
কি জানাচ্ছেন গণমাধ্যমকর্মীরা
বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ বিষয়ে ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলী স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম জানান, তিনি গণমাধ্যমে সেলফ সেন্সরশিপের প্রবণতা বৃদ্ধির পেছনে বড় কারণ হিসাবে দেখেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে।
তিনি আরও বলেন,
সামগ্রিকভাবে আমাদের পেশাটা একটুখানি হুমকির মুখে। তারপর এই যে কোভিড এবং ডিজাটাল যে ট্রানজিশন-সব মিলিয়ে প্রিন্ট মিডিয়া বেশ কিছুভাবে আক্রান্ত বলা যেতে পারে। কিন্তু আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন একটা ভয়াবহ পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। যেখানে সঠিক এবং স্বাধীন সাংবাদিকতা করা অত্যন্ত দুরহ ব্যাপার হয়ে গেছে।
সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ বলেছেন, গণমাধ্যমে প্রশ্নবিদ্ধ পুঁজি এবং কর্পোরেট হাউজের বিনিয়োগ বেড়েই চলেছে।
তিনি মনে করেন, বিনিয়োগকারিদের অনেকে তাদের ব্যবসার স্বার্থে এবং অনেক ক্ষেত্রে ক্ষমতা বা রাজনৈতিক স্বার্থে গণমাধ্যমকে ঢাল হিসাবে ব্যবহারের চেষ্টা করেন।
'মালিকদের অনেকে ক্ষমতার অংশীদার। সেই মালিকরা তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থ এবং রাজনৈতিক ক্ষমতার স্বার্থে তার প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করছে। এটি ব্যবহার করতে যেয়ে সেলফ সেন্সরশিপটা চলে এসেছে এবং এক ধরনের কর্পোরেট সাংবাদিকতার মধ্যে চলে গেছে।'
এছাড়াও এ বিষয়ে বিবিসিকে বেসরকারি টেলিভিশন এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী সম্পাদক মুন্নী সাহা বলেছেন, নানা কারণে পেশাদারিত্বই হুমকির মুখে পড়েছে।
আমাদের এখনকার অবস্থাটা এমন দাঁড়িয়েছে যে, আমরা তারাই ভাল সম্পাদক বা ম্যানেজার, যারা ব্যবসায়িক স্বার্থটা ঠিক করে সেন্স করতে পারি, মালিকের স্বার্থটা ঠিকভাবে সেন্স করতে পারি। এছাড়া সরকারের অহেতুক খবরদারি থাকে অনেক সময়, সেগুলো যারা সেন্স করতে পারি, তারাই এখন ভাল সাংবাদিক।
তিনি আরও বলেন, কী করবো বা কী করবো না- সেটা্ও একেক সময় একেকভাবে প্রকাশিত হয়। আগ বাড়িয়ে কিন্তু আমরা এখন আর সাংবাদিকতা করতে পারি না।
মুক্ত গণমাধ্যম দিবস: কতোটা পিছিয়ে বাংলাদেশ?
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশ গত বছরের তুলনায় এবছর আরও এক ধাপ পিছিয়েছে। গত ২০ এপ্রিল রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) ২০২১ সালের এই সূচক প্রকাশ করে। ২০১৯ সাল থেকে প্রতিবছর সেই সূচকে এক ধাপ করে পেছাচ্ছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশে যারা গণমাধ্যমের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা বলছেন, এরপরও মুক্ত গণমাধ্যম সম্ভব। আমরা সাংবাদিকতার দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছি। এটাকে চাকরি হিসেবে নেইনি। দায় আমাদের, সমাধানের দায়িত্বও আমাদের। অন্য কেউ সমাধান এনে দেবে না।
সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫২তম। সূচকে সবার শীর্ষে রয়েছে নরওয়ে। ২০২০ সালের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৫১তম। আর ২০১৯ সালের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৫০তম। অর্থাৎ, গতবারের সূচকেও বাংলাদেশের এক ধাপ অবনতি হয়েছিল।
প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সবার নিচে। বাংলাদেশের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তান (১৪৫), ভারত (১৪২), মিয়ানমার (১৪০), শ্রীলঙ্কা (১২৭), আফগানিস্তান (১২২), নেপাল (১০৬), মালদ্বীপ (৭৯), ভুটান (৬৫)। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গণমাধ্যম কতটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে, তার ভিত্তিতে ২০০২ সাল থেকে আরএসএফ এই সূচক প্রকাশ করে আসছে। এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত...
আইনিউজ/এসডি
- কেএফসির মালিকের জীবন কাহিনী
- প্রজাপতি: আশ্চর্য এই প্রাণীর সবার ভাগ্যে মিলন জোটে না!
- মা-শাশুড়িকে হারিয়েও করোনার যুদ্ধে পিছিয়ে যাননি এই চিকিৎসক
- বিশ্বের অদ্ভুত কিছু গাছের ছবি
- সোনার দাম এত কেন : কোন দেশের সোনা ভালো?
- যেখানে এক কাপ চা পুরো একটি পত্রিকার সমান!
- তিন রঙের পদ্মফুলের দেখা মিলবে এই বিলে
- রহস্যময় গ্রামটি লাখো পাখির সুইসাইড স্পট
- ২০২৩ সালে পৃথিবীর শক্তিশালী ১০টি দেশ!
- বায়েজিদ বোস্তামি: মাতৃভক্তির এক অনন্য উদাহরণ