মাসুদ হাসান
আপডেট: ২৩:৪৮, ১৩ মে ২০২১
ঈদ-উল-ফিতর এলো যেমন করে
মুসলমানদের জীবনে সবচেয়ে বড় উৎসবের দিন হল ঈদের দিন। ঈদ শব্দটি আরবি। এর অর্থ আনন্দ উৎসব। যদি শব্দটি আদত থেকে উৎপত্তি হয়, তবে এর অর্থ হয় অভ্যাস। আর যদি আদা-ইয়াউদু থেকে উৎপত্তি হয় তবে এর অর্থ হয় ফিরে ফিরে আসা। বছরে বছরে এটা পালিত হয় বলে এই উৎসবের নাম হয়েছে তাই ঈদ।
এ সময় অবাস্তবায়নযোগ্য ও সমাজে হানিকর কোনো পরিকল্পনা যেমন গ্রহণ করা হয়নি, তেমনি জাহিলিয়া বা তার পূর্ব যুগের সব আচার-আচরণের রহিতকরণেরও নির্দেশ দেয়া হয়নি। বরং পূর্ব যুগের কল্যাণকর অনেক রীতি ও অনুষ্ঠান বহাল রাখা হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আবার সংশোধিত আকারে পূর্ব যুগের অনুষ্ঠান চালু রাখা হয়েছে। মোট কথা জাহিলিয়া যুগের কল্যাণকর কার্যাবলী এবং সদগুণাবলী ইসলামে সমাদৃত হয়েছে।
প্রতি বছর দুইবার আসে ঈদ
এই ঈদ প্রতি বছর দুইবার মুসলমানদের জীবনে ফিরে আসে। প্রথমটি উদযাপিত হয় দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখার পর। যাকে বলা হয় ঈদ-উল-ফিতর বা রোজার ঈদ, আর অন্যটি আত্মত্যাগের কোরবানীর ঈদ বা ঈদ-উল-আজহা। মুসলমানের জীবনে দুটি উৎসব পালনের নির্দেশ কোরআনের সঙ্গে জড়িত। কোরআনের নির্দেশ মোতাবেক এক মাস সিয়াম পালন শেষে ঈদুল ফিতর উৎসব পালনের নির্দেশ পালিত হয়।
নওরোজ এবং মেহেরজান উৎসব
ঈদ সংস্কৃতি মহানবী (সা.) এর মাদানি জীবনেরই একটি অবিচ্ছেদ্য ঘটনা। ইসলাম ধর্মের ইতিহাস ও বর্ণনামতে কোরআনে পূর্ববর্তী যুগের বহু কুসংস্কার যেমন-কন্যাসন্তান জীবন্ত কবর দেয়া, সৎ মাকে বিবাহ করা, সুদ প্রতিহত করা, গৃহের পেছন থেকে বের হওয়া ইত্যাদি দূর করে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ জীবন সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে। এ সময় অবাস্তবায়নযোগ্য ও সমাজে হানিকর কোনো পরিকল্পনা যেমন গ্রহণ করা হয়নি, তেমনি জাহিলিয়া বা তার পূর্ব যুগের সব আচার-আচরণের রহিতকরণেরও নির্দেশ দেয়া হয়নি। বরং পূর্ব যুগের কল্যাণকর অনেক রীতি ও অনুষ্ঠান বহাল রাখা হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আবার সংশোধিত আকারে পূর্ব যুগের অনুষ্ঠান চালু রাখা হয়েছে। মোট কথা জাহিলিয়া যুগের কল্যাণকর কার্যাবলী এবং সদগুণাবলী ইসলামে সমাদৃত হয়েছে।
হযরত মোহাম্মদ (স.) মক্কায় ১৩ বছর থাকাকালীন সিয়াম ও ঈদের বিধান ছিল না। অতঃপর মক্কার কাফিরদের অবর্ণনীয় নির্যাতনে আল্লাহর নির্দেশে তিনি মদীনায় হিজরত করেন। মদীনায় মুশরিকরা বছরে দুইটি দিন পালন করত। সাহাবীদের মতে, ইচ্ছামত খেল তামাশা, গানবাজনা, রঙ তামাশা ও লাগামহীন উচ্ছৃঙ্খলতায় তারা এই উৎসব দুটি পালন করতো। দুইটি উৎসবের একটি নওরোজ এবং অন্যটি মেহেরজান উৎসব নামে পরিচিত ছিল। এটা ছিল পারসিক সংস্কৃতির উপাদান থেকে ধার করা। মক্কার পৌত্তলিকরা অগ্নি উপাসক পারসিক সংস্কৃতিতে প্রভাবিত ছিল।
যেমন করে ঈদ উৎসবের শুরু
মদিনায় আসার পর সাহাবিরা এর বিকল্প একটি উৎসব পালনের তীব্র প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। তখনই কোরআন নাজিলের সঙ্গে সম্পৃক্ত রমজান মাসে সিয়াম পালন শেষে ঈদ উৎসবের নির্দেশ জারি করা হয়। দুনিয়ার জীবন থেকে আখেরাতের জীবনকে প্রাধান্য দেয়ার অনুভূতি নিয়েই এ উৎসব পালনের নির্দেশ এসেছিল। ফলে পূত-পবিত্র অনুভূতি এবং আধ্যাত্মিক শক্তি নিয়ে, ধনী-গরিব সব ভেদাভেদ ভুলে এক কাতারে শামিল হয়ে মুসলিম শান্তি ও সংহতি প্রতিষ্ঠা পায়।
বঙ্গদেশে ঈদোৎসব
১২০৪ খৃস্টাব্দে বঙ্গদেশ মুসলিম অধিকারে এলেও নামাজ, রোজা ও ঈদোৎসবের প্রচলন হয়েছে তার বেশ আগে থেকেই। বঙ্গদেশে মধ্য ও পশ্চিম এশিয়া থেকে মুসলিম সুফি, দরবেশ ও সাধকরা ধর্ম-প্রচারের লক্ষ্যে এসেছিলেন। অন্যদিকে আরবীয় এবং অন্যান্য মুসলিম দেশের বণিকেরা চট্টগ্রাম নৌবন্দরের মাধ্যমেও বাংলার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। এভাবেই বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশে ঈদের প্রচলন হয়েছিল।
যেভাবে পালন হয় ঈদ
গোসল করা, খুশবু ব্যবহার করা, সাধ্যমতো ভালো পোশাক পরা, ঘরে ঘরে ভোজের আয়োজন করা, নামাজ আদায় করা, আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে কুশল বিনিময় করা, সালাম ও শুভেচ্ছা জানানো, ঈদকার্ড বিনিময় করা, গরিবদের মাঝে ফিতরা দেয়া ইত্যাদির মাধ্যমে মুসলমানগণ ঈদ-উল-ফিতর পালন করে থাকেন।
যখন পালন হয় ঈদ
ঈদ-উল-ফিতরকে "রোজা ভাঙার দিবস" ও বলা হয়। হিজরি বর্ষপঞ্জী অনুসারে রমজান মাসের শেষে শাওয়াল মাসের ১ তারিখে ঈদ-উল-ফিতর পালন করা হয়। এই পঞ্জিকা অনুসারে কোনও অবস্থাতে রমজান মাস ৩০ দিনের বেশী দীর্ঘ হবে না। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে রমজানের সমাপ্তিতে শাওয়ালের প্রারম্ভ গণনা করা হয়।
ঈদ-উল-ফিতর লুনার বা চান্দ্র ক্যালেন্ডারের ওপর নির্ভরশীল। সৌর ক্যালেন্ডারের থেকে চান্দ্র ক্যালেন্ডার ১১ দিন ছোট হয়। তাই প্রতি বছর ঈদের দিন আলাদা আলাদা হয়। রমজান মাস শেষ হবার মোটামুটি ৭০ দিন পরে ও ইসলামিক ক্যালেন্ডার জিলহজ মাসের ১০ তারিখে কোরবানির ঈদ বা ঈদ-উল-আজহা পালন করা হয়।
যেভাবে পালিত হয় ঈদ
পৃথিবীর বিভিন্ন ধর্মের জাতি-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক উৎসব পালন করে থাকে। তবে মুসলমানদের উৎসব ও অন্যান্য জাতি-গোষ্ঠীর উৎসবের মধ্যে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। মুসলমানদের জীবনে উৎসব পালিত হয় ভাবগাম্ভীর্য এবং তাকওয়া সৃষ্টির প্রেরণা নিয়ে, যা অন্যান্য ধর্মে পালিত উৎসবে কল্পনাও করা যায় না। নারী-পুরুষ ও শিশুদের মধ্যে পবিত্র ভাব সৃষ্টি করাই হয় তার মূল লক্ষ্য। হোক তা হজ, সিয়াম কিংবা সালাত। ওজু-গোসল করে পূত-পবিত্র অনুভূতি নিয়ে এসব উৎসবে যোগদান করতে হয়। চোখ, হাত, পা- প্রত্যেকটি অঙ্গকে শালীনতার সঙ্গে পরিচালনা করতে হয়।
ঈদগাহে নামাজ পড়ার সেই পরিচিত দৃশ্য এবারও দেখা যাবে না
তবে এই বছর করোনা অতিমারীর জন্য ঈদ-উল-ফিতরে সেভাবে জমায়েত হবে না। অনেকে মিলে ঈদের নামাজ পড়ার সেই পরিচিত দৃশ্যও এবার দেখা যাবে না। সরকারের পক্ষ থেকে উন্মুক্ত প্রাঙ্গনে নামাজ না পড়ে মসজিদে পড়ার জন্যে বলা হয়েছে। নিজকে এবং পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে অনেক মানুষ এবার নিজের নিজের বাড়িতেই নামাজ পড়বেন।
মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ
সারা বিশ্বে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হলো এই ঈদ-উল-ফিতর ও ঈদ-উল-আজহা। আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, ধনী-দরিদ্র সবাই মিলে এই দিনটিকে খুবই আনন্দের সঙ্গে পালন করেন। এই উৎসবে ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সবাই এক হয়ে যান। এই উৎসবে কোনও ভেদাভেদ থাকে না। ঈদের নামাজ পড়তে যাওয়ার আগে একটি খেজুর কিংবা খোরমা অথবা মিষ্টান্ন খেয়ে রওনা হওয়া সওয়াবের কাজ।
ফিৎরা আদায় করার বিধান
মুসলমানদের ঈদ-উল-ফিতরের তাৎপর্য অনেক। ঈদ অর্থ খুশি এবং ফিতর এসেছে ফিতরা থেকে। সুতরাং ঈদুল ফিতরের অর্থ দাড়ায় দানখয়রাতের মাধ্যমে পবিত্র ঈদের উৎসবকে আনন্দে উদ্ভাসিত করে তোলা। ঈদের নামাজের পূর্বেই ফিৎরা আদায় করার বিধান রয়েছে। জাকাত-ফিতরার মাধ্যমে ধনী ও গরিবের মধ্যকার ভেদাভেদ দূরীভূত হয়।
- কেএফসির মালিকের জীবন কাহিনী
- প্রজাপতি: আশ্চর্য এই প্রাণীর সবার ভাগ্যে মিলন জোটে না!
- মা-শাশুড়িকে হারিয়েও করোনার যুদ্ধে পিছিয়ে যাননি এই চিকিৎসক
- বিশ্বের অদ্ভুত কিছু গাছের ছবি
- সোনার দাম এত কেন : কোন দেশের সোনা ভালো?
- যেখানে এক কাপ চা পুরো একটি পত্রিকার সমান!
- তিন রঙের পদ্মফুলের দেখা মিলবে এই বিলে
- রহস্যময় গ্রামটি লাখো পাখির সুইসাইড স্পট
- ২০২৩ সালে পৃথিবীর শক্তিশালী ১০টি দেশ!
- বায়েজিদ বোস্তামি: মাতৃভক্তির এক অনন্য উদাহরণ